ঢাকা ০১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪৪০ বছরের পুরনো মুঘলদের নিয়ম বাতিল

বাংলা সাল অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ৪৪০ বছরের পুরোনো মুঘল প্রথা বাংলাদেশ থেকে বাতিল করা হয়েছে। চলতি মাস থেকে অর্থবছরের সাথে সঙ্গতি রেখে অর্থাৎ পহেলা জুলাই থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত কর আদায়ের প্রথা কার্যকর করা হয়েছে।

এতোদিন ভূমি কর আদায় করা হতো পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০শে চৈত্র পর্যন্ত। এই রীতি চালু হয়েছিল প্রায় ৪৪০ বছর আগে। তবে এখন থেকে সেটা খ্রিষ্ট্রীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে অর্থবছরের সাথে মিল রেখে আদায় করা হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কৃষি ফসল ওঠার উপর নির্ভর করে মুঘল আমলে খাজনা আদায় করা হতো। সেই কৃষির ফলনের ঋতু পরিবর্তন হয়েছে।

একইসাথে আর্থিক কাঠামোর সাথে সঙ্গতি রেখে হিসাব ব্যবস্থাপনা সহজ করার লক্ষ্যে অর্থবছর অনুযায়ী ভূমি কর আদায়ের উদ্দেশ্যেই শতশত বছরের পুরোনো এ রীতি পরিবর্তন করা হয়েছে।

মুঘল আমলে যেভাবে ভূমির খাজনা আদায় প্রবর্তন হয়
যুগের পর যুগ ধরে বাংলার গ্রামীণ সমাজ ও কৃষিখাতে নানা উপলক্ষে বাংলা সন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইতিহাসের বিভিন্ন বইতে দেখা যায়, মুঘল আমলে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত ছিল কৃষি। তখন ফসল থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সব কাজেই বাংলা সন ব্যবহার করা হতো।

মুঘল সম্রাট আকবরের দরবারের ঐতিহাসিক আবুল ফজল তার শাসনকালের ইতিহাস নিয়ে তিন খণ্ডে লিখেছেন ‘আকবর-নামা’। এর তৃতীয় খণ্ড ‘আইন ই আকবরী’। এতে সম্রাট আকবরের সরকার ব্যবস্থা, বহুবিধ প্রশাসনিক বিভাগ, যুদ্ধ, বিজয় এবং বংশের উত্থান-পতনসহ সবকিছু লেখা হয়েছে।

ইতিহাস অনুযায়ী, সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন হিজরি সন ছিল ৯৬৩ এবং বাংলা সনও ছিল ৯৬৩ বঙ্গাব্দ।

এই আইন- ই – আকবরী বইয়ে আবুল ফজল বাংলার ইতিহাস ও ভৌগোলিক বর্ণনা লিখেছেন। একইসাথে ১৯টি ভাগে বিভক্ত বাংলার কৃষি ও শিল্প উৎপাদনসহ কর আরোপের বিস্তারিত বিবরণ লিখেছেন।

এই বইয়ের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, মুঘল আমলে বাংলা সুবা ১৯টি সরকারে এবং প্রতিটি সরকার অনেকগুলো মহল বা পরগনায় বিভক্ত ছিল। সে সময় মোট করের পরিমাণ এক কোটি টাকারও বেশি ছিল।

ইতিহাস গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলা অঞ্চল তখন হিজরি সনে পরিচালিত হতো। কিন্তু বাংলা ছিল কৃষি প্রধান অঞ্চল। ফলে খাজনা দেয়াসহ নানা কাজে বছরের শুরুটা হিসাব করতে সমস্যা হতো। এ কারণে সম্রাট আকবর তখন বাংলা সন প্রবর্তন করেছেন, পহেলা বৈশাখ দিয়ে যার শুরু।

বাংলা সন নিয়ে গবেষণা করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক শারমিন রেজওয়ানা জানান, সম্রাট আকবর বঙ্গাব্দ যে সন চালু করেছিলেন সেটি কৃষকদের কর দেয়ার সাথে সম্পর্কিত।

“তখন কর দেয়ার সময়ে ফসল উঠতো না। ফলে কৃষকদের কর দিতে সমস্যা হতো। সে কারণেই সম্রাট আকবর পহেলা বৈশাখের প্রথা প্রচলন করেন”।

ইতিহাসের বিভিন্ন বইতে পাওয়া যায়, আকবরের আগে দুইজন মুসলিম শাসক আলাউদ্দিন খিলজী এবং শের শাহ ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন করেছিলেন।

পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরই ভূমি রাজস্ব পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাকে সাজাতে ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে রাজা টোডরমলকে দেওয়ান পদে নিয়োগ দেন তিনি।

পরে আকবরের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেন রাজা, যা টোডরমল সুপারিশ বা টোডরমল বন্দোবস্ত নামেই পরিচিত।

রাজা টোডরমল কয়েক প্রকার ভূমি রাজস্ব চালু করেন। জাবতি, গালাবক্স এবং নাসক প্রথা এদের মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন উপায়ে ভূমির খাজনা আদায় করা হতো।

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইরফান হাবিব তার “মুঘল ভারতের কৃষি ব্যবস্থা” নামক বইয়ে সে সময়কার কৃষিসহ রাজস্বের বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।

এ বইয়ে তিনি লিখেছেন, জাবত পদ্ধতিতে শুধু আবাদি জমির পরিমাপ করে পূর্ব নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারণ করা হবে। এই পদ্ধতিতে প্রতিবার ফসল তোলার সময় এলাকা জরিপ করতে হয়। এই পদ্ধতিতে আবাদি জমির একাংশে ফসল না হলে রাজস্বের একাংশ বাদ যেত। এই পদ্ধতিতে আবার কৃষি জমিকে আবাদি-অনাবাদীর ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করা হয়।

জাবতি ব্যবস্থার জন্যই রাজা টোডরমল রাজস্ব ব্যবস্থায় ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। এই ব্যবস্থায় নগদ অর্থে রাজস্ব দেয়া যেত। জমির উৎপাদনের হার বাড়লে রাজস্বও বাড়তো।

এ ব্যবস্থায় জমিকে সরেশ, মাঝারি, নিরেশ এই তিন ভাগে ভাগ করে প্রতি বিভাগের ১০ বছরের মোট উৎপাদনের গড় করে সেই গড় উৎপাদনের তিনভাগের একভাগ ছিল সরকারি ভূমি রাজস্ব।

এ পদ্ধতির আরো পরিণত রূপ ছিল নাসক ব্যবস্থা। কারণ জাবত ব্যবস্থায় প্রতি বছর জমি জরিপ জটিলতার সৃষ্টি করতো। এ সমস্যার সমাধান করা হয় নাসক রাজস্ব ব্যবস্থায়।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মুঘল শাসকরা রাজস্ব আদায়ের জন্য জমিদার ও তালুকদার নিয়োগ করতেন।

মুঘল বাংলায় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রথম বাংলা সন গণনা করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে খাজনা আদায়ের জন্য পূর্বের তারিখ দেখিয়ে এই গণনা কার্যকর করা হয়েছিল ১৫৫৬ সাল থেকে।

যেভাবে ভূমি কর পরিশোধ করতে হয়
ভূমি উন্নয়ন কর হালসনের হিসাব অনুযায়ী পরিশোধ করতে হয় বলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি বছরের ভূমি উন্নয়ন কর ওই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জরিমানা ছাড়া আদায় করা যাবে।

কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবার-ভিত্তিক কৃষি জমির মোট পরিমাণ আট দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। তবে এই জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে সম্পূর্ণ কৃষিজমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে বলে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।

এছাড়া, অকৃষি ভূমিকে ব্যবহার ভিত্তিক বাণিজ্যিক, শিল্প এবং আবাসিক ও অন্যান্য শ্রেণিতে বিভাজন করে সরকার কর আদায় করে থাকে।

যা বলছে সরকার
গত বছর ১৯৭৬ সালের ভূমি উন্নয়ন কর আইন রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। এটি ভূমি উন্নয়ন কর আইন ২০২৩ নামে পরিচিত।

“২০২৩ সালে যে আইন হয়েছে সেটার আর্থিক কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই হিসাব সহজ করার জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছে ” বলেন ভূমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

বাংলা সনে ভূমি কর আদায়ের ৪৪০ বছরের পুরনো রীতি পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, “ যেহেতু এটা সরকারের রেভিনিউ সেকশন তাই অর্থবছরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটা পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের অর্থবছর হচ্ছে পহেলা জুলাই থেকে ৩০শে জুন। ফলে হিসাব – নিকাশ সহজ করার জন্য এ পরিবর্তন।”

আরো পড়ুন : সাজা কখনও স্থগিত হয় না : হাইকোর্ট

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

৪৪০ বছরের পুরনো মুঘলদের নিয়ম বাতিল

আপডেট সময় ১০:৪৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

বাংলা সাল অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ৪৪০ বছরের পুরোনো মুঘল প্রথা বাংলাদেশ থেকে বাতিল করা হয়েছে। চলতি মাস থেকে অর্থবছরের সাথে সঙ্গতি রেখে অর্থাৎ পহেলা জুলাই থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত কর আদায়ের প্রথা কার্যকর করা হয়েছে।

এতোদিন ভূমি কর আদায় করা হতো পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০শে চৈত্র পর্যন্ত। এই রীতি চালু হয়েছিল প্রায় ৪৪০ বছর আগে। তবে এখন থেকে সেটা খ্রিষ্ট্রীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে অর্থবছরের সাথে মিল রেখে আদায় করা হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কৃষি ফসল ওঠার উপর নির্ভর করে মুঘল আমলে খাজনা আদায় করা হতো। সেই কৃষির ফলনের ঋতু পরিবর্তন হয়েছে।

একইসাথে আর্থিক কাঠামোর সাথে সঙ্গতি রেখে হিসাব ব্যবস্থাপনা সহজ করার লক্ষ্যে অর্থবছর অনুযায়ী ভূমি কর আদায়ের উদ্দেশ্যেই শতশত বছরের পুরোনো এ রীতি পরিবর্তন করা হয়েছে।

মুঘল আমলে যেভাবে ভূমির খাজনা আদায় প্রবর্তন হয়
যুগের পর যুগ ধরে বাংলার গ্রামীণ সমাজ ও কৃষিখাতে নানা উপলক্ষে বাংলা সন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইতিহাসের বিভিন্ন বইতে দেখা যায়, মুঘল আমলে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত ছিল কৃষি। তখন ফসল থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সব কাজেই বাংলা সন ব্যবহার করা হতো।

মুঘল সম্রাট আকবরের দরবারের ঐতিহাসিক আবুল ফজল তার শাসনকালের ইতিহাস নিয়ে তিন খণ্ডে লিখেছেন ‘আকবর-নামা’। এর তৃতীয় খণ্ড ‘আইন ই আকবরী’। এতে সম্রাট আকবরের সরকার ব্যবস্থা, বহুবিধ প্রশাসনিক বিভাগ, যুদ্ধ, বিজয় এবং বংশের উত্থান-পতনসহ সবকিছু লেখা হয়েছে।

ইতিহাস অনুযায়ী, সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন হিজরি সন ছিল ৯৬৩ এবং বাংলা সনও ছিল ৯৬৩ বঙ্গাব্দ।

এই আইন- ই – আকবরী বইয়ে আবুল ফজল বাংলার ইতিহাস ও ভৌগোলিক বর্ণনা লিখেছেন। একইসাথে ১৯টি ভাগে বিভক্ত বাংলার কৃষি ও শিল্প উৎপাদনসহ কর আরোপের বিস্তারিত বিবরণ লিখেছেন।

এই বইয়ের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, মুঘল আমলে বাংলা সুবা ১৯টি সরকারে এবং প্রতিটি সরকার অনেকগুলো মহল বা পরগনায় বিভক্ত ছিল। সে সময় মোট করের পরিমাণ এক কোটি টাকারও বেশি ছিল।

ইতিহাস গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলা অঞ্চল তখন হিজরি সনে পরিচালিত হতো। কিন্তু বাংলা ছিল কৃষি প্রধান অঞ্চল। ফলে খাজনা দেয়াসহ নানা কাজে বছরের শুরুটা হিসাব করতে সমস্যা হতো। এ কারণে সম্রাট আকবর তখন বাংলা সন প্রবর্তন করেছেন, পহেলা বৈশাখ দিয়ে যার শুরু।

বাংলা সন নিয়ে গবেষণা করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক শারমিন রেজওয়ানা জানান, সম্রাট আকবর বঙ্গাব্দ যে সন চালু করেছিলেন সেটি কৃষকদের কর দেয়ার সাথে সম্পর্কিত।

“তখন কর দেয়ার সময়ে ফসল উঠতো না। ফলে কৃষকদের কর দিতে সমস্যা হতো। সে কারণেই সম্রাট আকবর পহেলা বৈশাখের প্রথা প্রচলন করেন”।

ইতিহাসের বিভিন্ন বইতে পাওয়া যায়, আকবরের আগে দুইজন মুসলিম শাসক আলাউদ্দিন খিলজী এবং শের শাহ ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন করেছিলেন।

পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরই ভূমি রাজস্ব পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাকে সাজাতে ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে রাজা টোডরমলকে দেওয়ান পদে নিয়োগ দেন তিনি।

পরে আকবরের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেন রাজা, যা টোডরমল সুপারিশ বা টোডরমল বন্দোবস্ত নামেই পরিচিত।

রাজা টোডরমল কয়েক প্রকার ভূমি রাজস্ব চালু করেন। জাবতি, গালাবক্স এবং নাসক প্রথা এদের মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন উপায়ে ভূমির খাজনা আদায় করা হতো।

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইরফান হাবিব তার “মুঘল ভারতের কৃষি ব্যবস্থা” নামক বইয়ে সে সময়কার কৃষিসহ রাজস্বের বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।

এ বইয়ে তিনি লিখেছেন, জাবত পদ্ধতিতে শুধু আবাদি জমির পরিমাপ করে পূর্ব নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারণ করা হবে। এই পদ্ধতিতে প্রতিবার ফসল তোলার সময় এলাকা জরিপ করতে হয়। এই পদ্ধতিতে আবাদি জমির একাংশে ফসল না হলে রাজস্বের একাংশ বাদ যেত। এই পদ্ধতিতে আবার কৃষি জমিকে আবাদি-অনাবাদীর ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করা হয়।

জাবতি ব্যবস্থার জন্যই রাজা টোডরমল রাজস্ব ব্যবস্থায় ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। এই ব্যবস্থায় নগদ অর্থে রাজস্ব দেয়া যেত। জমির উৎপাদনের হার বাড়লে রাজস্বও বাড়তো।

এ ব্যবস্থায় জমিকে সরেশ, মাঝারি, নিরেশ এই তিন ভাগে ভাগ করে প্রতি বিভাগের ১০ বছরের মোট উৎপাদনের গড় করে সেই গড় উৎপাদনের তিনভাগের একভাগ ছিল সরকারি ভূমি রাজস্ব।

এ পদ্ধতির আরো পরিণত রূপ ছিল নাসক ব্যবস্থা। কারণ জাবত ব্যবস্থায় প্রতি বছর জমি জরিপ জটিলতার সৃষ্টি করতো। এ সমস্যার সমাধান করা হয় নাসক রাজস্ব ব্যবস্থায়।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মুঘল শাসকরা রাজস্ব আদায়ের জন্য জমিদার ও তালুকদার নিয়োগ করতেন।

মুঘল বাংলায় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রথম বাংলা সন গণনা করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে খাজনা আদায়ের জন্য পূর্বের তারিখ দেখিয়ে এই গণনা কার্যকর করা হয়েছিল ১৫৫৬ সাল থেকে।

যেভাবে ভূমি কর পরিশোধ করতে হয়
ভূমি উন্নয়ন কর হালসনের হিসাব অনুযায়ী পরিশোধ করতে হয় বলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি বছরের ভূমি উন্নয়ন কর ওই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জরিমানা ছাড়া আদায় করা যাবে।

কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবার-ভিত্তিক কৃষি জমির মোট পরিমাণ আট দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। তবে এই জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে সম্পূর্ণ কৃষিজমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে বলে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।

এছাড়া, অকৃষি ভূমিকে ব্যবহার ভিত্তিক বাণিজ্যিক, শিল্প এবং আবাসিক ও অন্যান্য শ্রেণিতে বিভাজন করে সরকার কর আদায় করে থাকে।

যা বলছে সরকার
গত বছর ১৯৭৬ সালের ভূমি উন্নয়ন কর আইন রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। এটি ভূমি উন্নয়ন কর আইন ২০২৩ নামে পরিচিত।

“২০২৩ সালে যে আইন হয়েছে সেটার আর্থিক কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই হিসাব সহজ করার জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছে ” বলেন ভূমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

বাংলা সনে ভূমি কর আদায়ের ৪৪০ বছরের পুরনো রীতি পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, “ যেহেতু এটা সরকারের রেভিনিউ সেকশন তাই অর্থবছরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটা পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের অর্থবছর হচ্ছে পহেলা জুলাই থেকে ৩০শে জুন। ফলে হিসাব – নিকাশ সহজ করার জন্য এ পরিবর্তন।”

আরো পড়ুন : সাজা কখনও স্থগিত হয় না : হাইকোর্ট