ঢাকা ০২:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে নিষ্ক্রিয় তরুণ ১৮.৩৫, তরুণী ৬০.৮৫ শতাংশ

বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই আছেন নিষ্ক্রিয় অবস্থায়। অর্থাৎ তারা পড়াশোনা, কর্মসংস্থান কিংবা কোনও ধরনের প্রশিক্ষণে নেই। বাংলাদেশের ছেলেদের চেয়ে এই নিষ্ক্রিয়তার হার আবার তিনগুণেরও বেশি মেয়েদের ক্ষেত্রে।

১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েদের নিষ্ক্রিয়তার হার শতকার ৬০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিপরীতে ছেলেদের এই হার ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছেলে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস, ২০২৩ জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বিবিএস-এর এই জরিপে নিষ্ক্রিয় তরুণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়স সীমা ধরা হয়েছে ১৫ থেকে ২৪ বছর।

বিবিএস-এর জরিপ বলছে, নিষ্ক্রিয়তা বিবেচনায় তরুণীদের হার ৬০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যদিও আগের বছরের চেয়ে তা কিছুটা কমেছে।

আগের বছর এ হার ছিল ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ। অন্য দিকে তরুণদের মধ্যে এ হার ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন মেয়েদের বাল্যবিবাহ, দক্ষতার অভাব, শিক্ষার মানের ঘাটতি, জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা কিংবা মূল্যস্ফীতির কারণেই তরুণদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন বলেন, “১৫ থেকে ২৪ বছর হলো প্রাইম এইজ। এই বয়সের ৪০ শতাংশ তরুণ তরুণী কিছু করছে না, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।”

তিনি প্রশ্ন রাখেন, এই বয়সে যদি তারা পড়াশুনা বা কর্মসংস্থানে না থাকে তাহলে তারা করছে কী?

শিক্ষাবিদদের কেউ কেউ বলছেন, বাল্য বিবাহের কারণে অনেক নারীদের আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে নারীদের মধ্যে এই হারটা অনেক বেশি।

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “এই সব তরুণ-তরুণীদের অনেকে প্রথাগতভাবে পরিসংখ্যানের ভাষায় কোনও কিছুর মধ্যে নেই। যে সমস্ত জায়গায় তাদের কর্মসংস্থান সে সব জায়গাতেও তাদের সুযোগ কমে গেছে।”

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ। যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখই কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়েছে। যেটিকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় এনইইটি।

অর্থাৎ এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশের বেশি। বিবিএস-এর এই জরিপ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, যারা শিক্ষা কর্মসংস্থান কিংবা কোনও ধরণের প্রশিক্ষণের মধ্যে নেই তাদের বড় অংশের বসবাস গ্রামে। যাদের সংখ্যা ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর শহরে বসবাসের পরও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে ৩৫ দশমিক ২১ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে নিষ্ক্রিয় তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে। আর সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে।

বিবিএস-এর হিসেবে সিলেটে ৪৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৪৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ, খুলনায় ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ঢাকায় ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, রংপুরে ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বরিশালে ৩৮ দশমিক ৩২ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়।

অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “গ্রামাঞ্চলে এখনো দেখা যাচ্ছে বড় অংশের নারীদের বাল্য বিবাহ হচ্ছে, সে কারণে বড় একটা অংশ আর জব মার্কেটে আসছে না। তারাও যুক্ত হচ্ছে এই ক্যাটাগরিতে।”

আরো পড়ুন : দেশের প্রায় চল্লিশ শতাংশ তরুণ অলস সময় পার করছেন

 

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

দেশে নিষ্ক্রিয় তরুণ ১৮.৩৫, তরুণী ৬০.৮৫ শতাংশ

আপডেট সময় ১১:৫৩:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই আছেন নিষ্ক্রিয় অবস্থায়। অর্থাৎ তারা পড়াশোনা, কর্মসংস্থান কিংবা কোনও ধরনের প্রশিক্ষণে নেই। বাংলাদেশের ছেলেদের চেয়ে এই নিষ্ক্রিয়তার হার আবার তিনগুণেরও বেশি মেয়েদের ক্ষেত্রে।

১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েদের নিষ্ক্রিয়তার হার শতকার ৬০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিপরীতে ছেলেদের এই হার ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছেলে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস, ২০২৩ জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বিবিএস-এর এই জরিপে নিষ্ক্রিয় তরুণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়স সীমা ধরা হয়েছে ১৫ থেকে ২৪ বছর।

বিবিএস-এর জরিপ বলছে, নিষ্ক্রিয়তা বিবেচনায় তরুণীদের হার ৬০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যদিও আগের বছরের চেয়ে তা কিছুটা কমেছে।

আগের বছর এ হার ছিল ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ। অন্য দিকে তরুণদের মধ্যে এ হার ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন মেয়েদের বাল্যবিবাহ, দক্ষতার অভাব, শিক্ষার মানের ঘাটতি, জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা কিংবা মূল্যস্ফীতির কারণেই তরুণদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন বলেন, “১৫ থেকে ২৪ বছর হলো প্রাইম এইজ। এই বয়সের ৪০ শতাংশ তরুণ তরুণী কিছু করছে না, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।”

তিনি প্রশ্ন রাখেন, এই বয়সে যদি তারা পড়াশুনা বা কর্মসংস্থানে না থাকে তাহলে তারা করছে কী?

শিক্ষাবিদদের কেউ কেউ বলছেন, বাল্য বিবাহের কারণে অনেক নারীদের আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে নারীদের মধ্যে এই হারটা অনেক বেশি।

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “এই সব তরুণ-তরুণীদের অনেকে প্রথাগতভাবে পরিসংখ্যানের ভাষায় কোনও কিছুর মধ্যে নেই। যে সমস্ত জায়গায় তাদের কর্মসংস্থান সে সব জায়গাতেও তাদের সুযোগ কমে গেছে।”

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ। যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখই কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়েছে। যেটিকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় এনইইটি।

অর্থাৎ এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশের বেশি। বিবিএস-এর এই জরিপ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, যারা শিক্ষা কর্মসংস্থান কিংবা কোনও ধরণের প্রশিক্ষণের মধ্যে নেই তাদের বড় অংশের বসবাস গ্রামে। যাদের সংখ্যা ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর শহরে বসবাসের পরও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে ৩৫ দশমিক ২১ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে নিষ্ক্রিয় তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে। আর সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে।

বিবিএস-এর হিসেবে সিলেটে ৪৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৪৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ, খুলনায় ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ঢাকায় ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, রংপুরে ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বরিশালে ৩৮ দশমিক ৩২ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়।

অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “গ্রামাঞ্চলে এখনো দেখা যাচ্ছে বড় অংশের নারীদের বাল্য বিবাহ হচ্ছে, সে কারণে বড় একটা অংশ আর জব মার্কেটে আসছে না। তারাও যুক্ত হচ্ছে এই ক্যাটাগরিতে।”

আরো পড়ুন : দেশের প্রায় চল্লিশ শতাংশ তরুণ অলস সময় পার করছেন