ঢাকা ১১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ

ডেস্ক রিপোর্ট: 
ভারতে আসন্ন লোকসভা ভোটের আগেই পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল। গত আটই মার্চ নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দেননি তিনি।

লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে চলেছে শীঘ্রই। রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করছে। এরই মাঝে নির্বাচনি কর্মসূচি ঘোষণার ঠিক আগে অরুণ গোয়েলের হঠাৎ পদত্যাগের কারণ ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও।

দেশটির আইন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শনিবার নয়ই মার্চ, ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকরও হয়েছে।

পদত্যাগপত্রে অরুণ গোয়েল ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছিলেন। তবে তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগে ইস্তফা দেওয়াটা ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতিতে হতে পারে না। কারও মতে নির্বাচনি বিষয়ে ‘মতবিরোধ’ একটা কারণ হতে পারে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক নেতারাও এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে ‘রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্ক’ বলে উল্লেখ করেছেন।

অন্যদিকে পদত্যাগের পিছনে অন্যান্য কারণের মধ্যে নির্বাচনে দাঁড়ানোও একটা কারণ হতে পারে বলে মনে করেন অনেক নেতা।

কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির মতো মি. গোয়েলও ভোটের লড়াইয়ে সামিল হতে চলেছেন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড জয়রাম রমেশ। একই সঙ্গে অন্যান্য সম্ভাব্য কারণের বিষয়েও উল্লেখ করেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ভারতের নির্বাচন কমিশন তিনজন কমিশনারকে নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে একজন হলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার অর্থাৎ সিইসি। বর্তমানে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অবসর নেন অনুপচন্দ্র পাণ্ডে। তার পদে এখনও কেউ যোগ দেননি। এরমধ্যেই হঠাৎই ইস্তফা দিয়েছেন অরুণ গোয়েল।

এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনে একমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারই রয়েছেন।

‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ইস্তফা দেননি’
নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অরুণ গোয়েলের হঠাৎ ইস্তফা দেওয়ার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও তিনি ব্যক্তিগত কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তবে যে কারণেই পদত্যাগ হয়ে থাকুক তা সাধারণ পরিস্থিতিতে ঘটেনি এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতের নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর সদস্য জগদীপ চোকার বলেন, “অস্পষ্ট পরিস্থিতিতে একজন নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ করাটা স্বাভাবিক নয়। এই বিষয়টা অস্বাভাবিক এবং এর সঠিক কারণ খুব কম ক্ষেত্রেই জানা যায়।”

জগদীপ চোকার বলেন, “আমরা জানি না তার পদত্যাগের পিছনে ব্যক্তিগত কারণটা কী? নির্বাচন কমিশনে তার কথা শোনা হচ্ছিল না, এটাও তো ব্যক্তিগত কারণ।”

“তিনি খুব অসুস্থ, এটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে যতক্ষণ এই পদত্যাগের প্রকৃত কারণ জানা যাচ্ছে ততক্ষণ কিছু বলা যাচ্ছে না।”

একই ভাবে প্রবীণ সাংবাদিক হেমন্ত আত্রি মনে করেন নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অরুণ গোয়েলের পদত্যাগ করাটা স্বাভাবিক নয়।

হেমন্ত আত্রি বলেন, “অরুণ গোয়েল খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ। নির্বাচন কমিশনার হওয়ার আগে তিনি একজন হাই প্রোফাইল অফিসার ছিলেন। তার মেয়াদের এখনও প্রায় তিন বছর বাকি। এই অবস্থায় হঠাৎ তার পদত্যাগ করার বিষয়টি কিন্তু স্বাভাবিক নয়।”

“শুধুমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনারই নন সরকারের সঙ্গেও অরুণ গোয়েলের মতপার্থক্য ছিল বলে মনে হচ্ছে। সেই কারণে সময়ের আগেই পদত্যাগ করতে হয়েছে তাকে। অন্যথায়, সিইসির সঙ্গে মতভেদ তো সরকারি হস্তক্ষেপে তাৎক্ষণিকভাবে মেটানো যেতে পারে,” যোগ করেন মি. আত্রি।

নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন
পাঞ্জাব ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আইএএস কর্মকর্তা অরুণ গোয়েল। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন তিনি।

গোয়েলের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়।

অরুণ গোয়েল ৩৭ বছর ধরে আইএএস পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালের ৩১ই ডিসেম্বর তার অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিক তার এক মাস আগে, ২০২২ সালের ১৮ই নভেম্বর তিনি স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছিলেন।

অবসর গ্রহণের একদিন পর রাষ্ট্রপতি তাকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ করেন।

অরুণ গোয়েল নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্ত হওয়ার পরের দিনই দায়িত্ব গ্রহণ করেন যে পদ ৫ই মে ২০২২ থেকে শূন্য ছিল।

তবে সুপ্রিম কোর্টে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে আবেদনের শুনানি চলছিল।

নির্বাচনে স্বচ্ছতার জন্য কাজ করা সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) মি. গোয়েলের নিয়োগকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।

এডিআর-এর যুক্তি ছিল মি. গোয়েল নিশ্চিতভাবে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের বিষয়ে জানতেন এবং সেই কারণেই নিয়োগের ঠিক একদিন আগে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন।

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্যানেল যে চারজন অফিসারকে বাছাই করেছিল, তাদের মধ্যে অরুণ গোয়েলের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কম।

গোয়েলের নিয়োগের সময় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আবেদনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার আদেশে একটি বিষয় উল্লেখ করেছিল। আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল নিয়োগকারী প্যানেল যেদিন গোয়েলের নাম বাছাই করা ব্যক্তিদের তালিকায় উল্লেখ করে, সেইদিনই তিনি স্বেচ্ছা অবসরের জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন গ্রহণও করা হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছিল, “এই ব্যাপারটা একটু অবাক করে যে কীভাবে এই কর্মকর্তা ১৮.১১.২০২২ স্বেচ্ছায় অবসরের জন্য আবেদন করেন যদি না তিনি নিয়োগের প্রস্তাবের বিষয়ে না জেনে থাকেন।”

সেই সময় বিরোধ এবং প্রশ্ন ওঠা সত্ত্বেও পদত্যাগ করেননি অরুণ গোয়েল। যদিও এখন হঠাৎই পদত্যাগ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি।

হেমন্ত আত্রি বলছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার তাকে নিয়োগ করার জন্য সমস্ত নিয়ম-বিধি উপেক্ষা করেছিল। সুপ্রিম কোর্টও কিন্তু কড়া মন্তব্য করেছিল এই ব্যাপারে। এখন তিনি হঠাৎই পদত্যাগ করেছেন। এতে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে নির্বাচন কমিশনে সবকিছু ঠিকঠাক নেই।”

কোন পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করলেন?
ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এপ্রিল-মে মাসে। যদিও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

এর আগে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়েছিল পাঁচই মার্চ। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের নির্বাচনের দিনক্ষণ দশই মার্চ ঘোষণা করা হয়েছিল।

এই অবস্থায় শীঘ্রই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, অরুণ গোয়েল গত পাঁচই মার্চ একটি রিভিউ বৈঠকে যোগ দিতে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলেন, কিন্তু হঠাৎই স্বাস্থ্যজনিত কারণ উল্লেখ করে তিনি দিল্লিতে ফিরে আসেন।

গত আটই মার্চ নির্বাচনের সময় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু মি. গোয়েল সেই বৈঠকে না গিয়ে সরাসরি পদত্যাগ করেন।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, অরুণ গোয়েলের পদত্যাগের সঙ্গে নির্বাচনি কর্মসূচির যোগসূত্র থাকতে পারে।

হেমন্ত আত্রি বলেন, “আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচনি কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। আমার মনে হয়, এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের কোনো না কোনোভাবে যোগ রয়েছে। হতে পারে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তার সঙ্গে কোনও মতবিরোধ হয়েছে।”

রাজনৈতিক নেতারা কী বলছেন?
নির্বাচন কমিশনারের হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের সঠিক কারণের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে রাজনৈতিক শিবিরগুলো। পশ্চিমবঙ্গ সফর এবং তার পদত্যাগের সময় একাধিক প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। অনেকে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের বিষয়ে তার সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য হয়েছে।

গোয়েলের পদত্যাগের বিষয়ে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গতকাল (শনিবার) একজন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। সংবাদপত্রে দেখলাম বাংলার নির্বাচনকে জোর করে দখল করার প্রচেষ্টা তিনি মেনে নিতে পারেননি।”

“কেন্দ্রীয় সরকারের (নির্বাচনে) লুঠ করার চেষ্টা তিনি মেনে নিতে পারেননি। এটা কেন্দ্রের সরকার নির্বাচনের ভোট। কেন্দ্রই ভোট পরিচালনা করছে।” সরব হয়েছে আম আদমি পার্টির নেতারাও।

“বিজেপি দ্বারা নিযুক্ত একজন কমিশনার, যার নিয়োগের পক্ষে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও কথা বলেছিল, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তার পদত্যাগের কারণ নিয়ে প্রশ্ন তো ওঠেই,” বলেন আম আদমি পার্টির মন্ত্রী অতীশি।

গোয়েলের পদত্যাগ সম্পর্কে তিনটি প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ।

তার কথায়, “অরুণ গোয়েলের পদত্যাগ তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। তিনি কি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেছেন, না কি মোদী সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেছেন?”

“নাকি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন? নাকি কয়েকদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির মতো তিনিও বিজেপির টিকিটে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পদত্যাগ করেছেন।”

নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। সেই দেশের সাধারণ নির্বাচন বিশ্বের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড।

তবে নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইভিএমের ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর ফলে ভারতের নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

হেমন্ত আত্রি বলেন, “আচমকা এই পদত্যাগের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা। নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।”

তবে এডিআর সদস্য জগদীশ চোকার মনে করেন, মি. গোয়েলের পদত্যাগ নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতায় কোনও প্রভাব ফেলবে না।

চোকার বলেন, “নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। পদত্যাগের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে এর কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।”

নতুন আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ
নির্বাচন কমিশনে দুটি নির্বাচন কমিশনারের পদই এখন শূন্য। রয়েছেন শুধুমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি ‘কলেজিয়াম’ (বিশেষজ্ঞ কমিটি) এর ব্যবস্থা করতে বলেছিল।

তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন আইন এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর আওতায় নির্বাচন কমিশনার কে হবেন তা স্থির করবে একটি নিয়োগকারী কমিটি। ওই কমিটিতে থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী।

তবে নতুন কমিশনারদের অবিলম্বে নিয়োগ করা হলেও দায়িত্ব পালনের জন্য তারা যথেষ্ট সময় পাবেন কি না সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

প্রবীণ সাংবাদিক হেমন্ত আত্রি বলছেন, “এখন নির্বাচন কমিশনে সিদ্ধান্ত নেবেন শুধু রাজীব কুমার। নতুন দু’জন কমিশনার নিয়োগ দিলেও তাদের কাজ বুঝে নিতে সময় লাগবে।” সূত্র : বিবিসি বাংলা

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ভারতে নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ

আপডেট সময় ০৭:০২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট: 
ভারতে আসন্ন লোকসভা ভোটের আগেই পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল। গত আটই মার্চ নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দেননি তিনি।

লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে চলেছে শীঘ্রই। রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করছে। এরই মাঝে নির্বাচনি কর্মসূচি ঘোষণার ঠিক আগে অরুণ গোয়েলের হঠাৎ পদত্যাগের কারণ ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও।

দেশটির আইন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শনিবার নয়ই মার্চ, ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকরও হয়েছে।

পদত্যাগপত্রে অরুণ গোয়েল ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছিলেন। তবে তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগে ইস্তফা দেওয়াটা ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতিতে হতে পারে না। কারও মতে নির্বাচনি বিষয়ে ‘মতবিরোধ’ একটা কারণ হতে পারে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক নেতারাও এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে ‘রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্ক’ বলে উল্লেখ করেছেন।

অন্যদিকে পদত্যাগের পিছনে অন্যান্য কারণের মধ্যে নির্বাচনে দাঁড়ানোও একটা কারণ হতে পারে বলে মনে করেন অনেক নেতা।

কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির মতো মি. গোয়েলও ভোটের লড়াইয়ে সামিল হতে চলেছেন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড জয়রাম রমেশ। একই সঙ্গে অন্যান্য সম্ভাব্য কারণের বিষয়েও উল্লেখ করেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ভারতের নির্বাচন কমিশন তিনজন কমিশনারকে নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে একজন হলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার অর্থাৎ সিইসি। বর্তমানে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অবসর নেন অনুপচন্দ্র পাণ্ডে। তার পদে এখনও কেউ যোগ দেননি। এরমধ্যেই হঠাৎই ইস্তফা দিয়েছেন অরুণ গোয়েল।

এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনে একমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারই রয়েছেন।

‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ইস্তফা দেননি’
নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অরুণ গোয়েলের হঠাৎ ইস্তফা দেওয়ার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও তিনি ব্যক্তিগত কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তবে যে কারণেই পদত্যাগ হয়ে থাকুক তা সাধারণ পরিস্থিতিতে ঘটেনি এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতের নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর সদস্য জগদীপ চোকার বলেন, “অস্পষ্ট পরিস্থিতিতে একজন নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ করাটা স্বাভাবিক নয়। এই বিষয়টা অস্বাভাবিক এবং এর সঠিক কারণ খুব কম ক্ষেত্রেই জানা যায়।”

জগদীপ চোকার বলেন, “আমরা জানি না তার পদত্যাগের পিছনে ব্যক্তিগত কারণটা কী? নির্বাচন কমিশনে তার কথা শোনা হচ্ছিল না, এটাও তো ব্যক্তিগত কারণ।”

“তিনি খুব অসুস্থ, এটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে যতক্ষণ এই পদত্যাগের প্রকৃত কারণ জানা যাচ্ছে ততক্ষণ কিছু বলা যাচ্ছে না।”

একই ভাবে প্রবীণ সাংবাদিক হেমন্ত আত্রি মনে করেন নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অরুণ গোয়েলের পদত্যাগ করাটা স্বাভাবিক নয়।

হেমন্ত আত্রি বলেন, “অরুণ গোয়েল খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ। নির্বাচন কমিশনার হওয়ার আগে তিনি একজন হাই প্রোফাইল অফিসার ছিলেন। তার মেয়াদের এখনও প্রায় তিন বছর বাকি। এই অবস্থায় হঠাৎ তার পদত্যাগ করার বিষয়টি কিন্তু স্বাভাবিক নয়।”

“শুধুমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনারই নন সরকারের সঙ্গেও অরুণ গোয়েলের মতপার্থক্য ছিল বলে মনে হচ্ছে। সেই কারণে সময়ের আগেই পদত্যাগ করতে হয়েছে তাকে। অন্যথায়, সিইসির সঙ্গে মতভেদ তো সরকারি হস্তক্ষেপে তাৎক্ষণিকভাবে মেটানো যেতে পারে,” যোগ করেন মি. আত্রি।

নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন
পাঞ্জাব ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আইএএস কর্মকর্তা অরুণ গোয়েল। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন তিনি।

গোয়েলের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়।

অরুণ গোয়েল ৩৭ বছর ধরে আইএএস পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালের ৩১ই ডিসেম্বর তার অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিক তার এক মাস আগে, ২০২২ সালের ১৮ই নভেম্বর তিনি স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছিলেন।

অবসর গ্রহণের একদিন পর রাষ্ট্রপতি তাকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ করেন।

অরুণ গোয়েল নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্ত হওয়ার পরের দিনই দায়িত্ব গ্রহণ করেন যে পদ ৫ই মে ২০২২ থেকে শূন্য ছিল।

তবে সুপ্রিম কোর্টে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে আবেদনের শুনানি চলছিল।

নির্বাচনে স্বচ্ছতার জন্য কাজ করা সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) মি. গোয়েলের নিয়োগকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।

এডিআর-এর যুক্তি ছিল মি. গোয়েল নিশ্চিতভাবে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের বিষয়ে জানতেন এবং সেই কারণেই নিয়োগের ঠিক একদিন আগে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন।

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্যানেল যে চারজন অফিসারকে বাছাই করেছিল, তাদের মধ্যে অরুণ গোয়েলের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কম।

গোয়েলের নিয়োগের সময় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আবেদনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার আদেশে একটি বিষয় উল্লেখ করেছিল। আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল নিয়োগকারী প্যানেল যেদিন গোয়েলের নাম বাছাই করা ব্যক্তিদের তালিকায় উল্লেখ করে, সেইদিনই তিনি স্বেচ্ছা অবসরের জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন গ্রহণও করা হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছিল, “এই ব্যাপারটা একটু অবাক করে যে কীভাবে এই কর্মকর্তা ১৮.১১.২০২২ স্বেচ্ছায় অবসরের জন্য আবেদন করেন যদি না তিনি নিয়োগের প্রস্তাবের বিষয়ে না জেনে থাকেন।”

সেই সময় বিরোধ এবং প্রশ্ন ওঠা সত্ত্বেও পদত্যাগ করেননি অরুণ গোয়েল। যদিও এখন হঠাৎই পদত্যাগ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি।

হেমন্ত আত্রি বলছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার তাকে নিয়োগ করার জন্য সমস্ত নিয়ম-বিধি উপেক্ষা করেছিল। সুপ্রিম কোর্টও কিন্তু কড়া মন্তব্য করেছিল এই ব্যাপারে। এখন তিনি হঠাৎই পদত্যাগ করেছেন। এতে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে নির্বাচন কমিশনে সবকিছু ঠিকঠাক নেই।”

কোন পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করলেন?
ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এপ্রিল-মে মাসে। যদিও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

এর আগে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়েছিল পাঁচই মার্চ। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের নির্বাচনের দিনক্ষণ দশই মার্চ ঘোষণা করা হয়েছিল।

এই অবস্থায় শীঘ্রই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, অরুণ গোয়েল গত পাঁচই মার্চ একটি রিভিউ বৈঠকে যোগ দিতে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলেন, কিন্তু হঠাৎই স্বাস্থ্যজনিত কারণ উল্লেখ করে তিনি দিল্লিতে ফিরে আসেন।

গত আটই মার্চ নির্বাচনের সময় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু মি. গোয়েল সেই বৈঠকে না গিয়ে সরাসরি পদত্যাগ করেন।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, অরুণ গোয়েলের পদত্যাগের সঙ্গে নির্বাচনি কর্মসূচির যোগসূত্র থাকতে পারে।

হেমন্ত আত্রি বলেন, “আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচনি কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। আমার মনে হয়, এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের কোনো না কোনোভাবে যোগ রয়েছে। হতে পারে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তার সঙ্গে কোনও মতবিরোধ হয়েছে।”

রাজনৈতিক নেতারা কী বলছেন?
নির্বাচন কমিশনারের হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের সঠিক কারণের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে রাজনৈতিক শিবিরগুলো। পশ্চিমবঙ্গ সফর এবং তার পদত্যাগের সময় একাধিক প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। অনেকে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের বিষয়ে তার সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য হয়েছে।

গোয়েলের পদত্যাগের বিষয়ে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গতকাল (শনিবার) একজন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। সংবাদপত্রে দেখলাম বাংলার নির্বাচনকে জোর করে দখল করার প্রচেষ্টা তিনি মেনে নিতে পারেননি।”

“কেন্দ্রীয় সরকারের (নির্বাচনে) লুঠ করার চেষ্টা তিনি মেনে নিতে পারেননি। এটা কেন্দ্রের সরকার নির্বাচনের ভোট। কেন্দ্রই ভোট পরিচালনা করছে।” সরব হয়েছে আম আদমি পার্টির নেতারাও।

“বিজেপি দ্বারা নিযুক্ত একজন কমিশনার, যার নিয়োগের পক্ষে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও কথা বলেছিল, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তার পদত্যাগের কারণ নিয়ে প্রশ্ন তো ওঠেই,” বলেন আম আদমি পার্টির মন্ত্রী অতীশি।

গোয়েলের পদত্যাগ সম্পর্কে তিনটি প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ।

তার কথায়, “অরুণ গোয়েলের পদত্যাগ তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। তিনি কি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেছেন, না কি মোদী সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেছেন?”

“নাকি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন? নাকি কয়েকদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির মতো তিনিও বিজেপির টিকিটে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পদত্যাগ করেছেন।”

নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। সেই দেশের সাধারণ নির্বাচন বিশ্বের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড।

তবে নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইভিএমের ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর ফলে ভারতের নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

হেমন্ত আত্রি বলেন, “আচমকা এই পদত্যাগের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা। নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।”

তবে এডিআর সদস্য জগদীশ চোকার মনে করেন, মি. গোয়েলের পদত্যাগ নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতায় কোনও প্রভাব ফেলবে না।

চোকার বলেন, “নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। পদত্যাগের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে এর কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।”

নতুন আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ
নির্বাচন কমিশনে দুটি নির্বাচন কমিশনারের পদই এখন শূন্য। রয়েছেন শুধুমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি ‘কলেজিয়াম’ (বিশেষজ্ঞ কমিটি) এর ব্যবস্থা করতে বলেছিল।

তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন আইন এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর আওতায় নির্বাচন কমিশনার কে হবেন তা স্থির করবে একটি নিয়োগকারী কমিটি। ওই কমিটিতে থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী।

তবে নতুন কমিশনারদের অবিলম্বে নিয়োগ করা হলেও দায়িত্ব পালনের জন্য তারা যথেষ্ট সময় পাবেন কি না সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

প্রবীণ সাংবাদিক হেমন্ত আত্রি বলছেন, “এখন নির্বাচন কমিশনে সিদ্ধান্ত নেবেন শুধু রাজীব কুমার। নতুন দু’জন কমিশনার নিয়োগ দিলেও তাদের কাজ বুঝে নিতে সময় লাগবে।” সূত্র : বিবিসি বাংলা