ইউক্রেনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আগ্রাসী অভিযান শুরুর পর থেকে যে যুদ্ধের সূচনা হয় তার সমাপ্তি টানতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই যুদ্ধের ইতি টানতে পারেন। তবে বেশ কয়েক ধাপের শান্তি আলোচনা, টেলিফোনে কথাবার্তা ও কূটনৈতিক সফরের পরেও সফল হতে পারেননি তিনি। তবে নতুন করে তৈরি হওয়া সম্ভাবনার ক্ষেত্রে এই দুই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মধ্যে আলোচনার বিষয়টি এখন বাস্তব। দুই নেতার মধ্যে শীর্ষ সম্মেলন যে হতে চলেছে সে বিষয়ে আশাবাদী দুই দেশই।
কবে হতে পারে কাঙ্ক্ষিত সেই বৈঠক?
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুই দেশই নিশ্চিত করেছে যে, শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর সেই বৈঠকটি হতে পারে আগামী সপ্তাহে, তবে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
বুধবার (৭ আগস্ট) ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার সামনাসামনি বৈঠকটি ‘খুব শিগগিরই’ হতে যাচ্ছে। আর এ বিষয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘তারা (রুশ ও ইউক্রেন পক্ষ) আমার সঙ্গে বৈঠক করতে চায় এবং এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধে যা করা দরকার আমি তাই করবো।’
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বৃহস্পতিবার বলেছেন, রুশ-মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের জন্য দুপক্ষই আগ্রহ দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে ক্রেমলিনের বিশেষ সহকারি ইউরি উশাকভ বলেছেন, আগামী সপ্তাহের একটি দিনকে লক্ষ্য করে এগোচ্ছেন তারা।
বৈঠকে জেলেনস্কির থাকার সম্ভাবনা কতটুকু?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগে থেকেই ত্রিমুখী সম্মেলনের কথা বলে আসছেন। তিনি বলেছেন, শান্তি স্থাপনে অগ্রগতির প্রশ্নে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকই হবে সবচেয়ে ভালো উপায়।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এ সপ্তাহের শুরুতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনার সময় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। তবে পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণভাবে এই বিষয়ের বিরোধী আমি নই, এটা (বৈঠক) সম্ভব। তবে এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা খুবই জরুরি। কিন্তু সেই ধরনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।’
গত জুন মাসে ইস্তাম্বুলে আলোচনার সময় রুশ মধ্যস্থতাকারীরা বলেছিলেন, শান্তি স্থাপনে দুপক্ষ সম্মত হলে আলোচনার ‘চূড়ান্ত ধাপে’ পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠক হতে পারে।
কোথায় হতে পারে বৈঠক?
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক কোথায় অনুষ্ঠিত হতে পারে সে বিষয়ে স্থান এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ক্রেমলিনের বিশেষ দূত উশাকভ বলেছেন, দুপক্ষ ‘নীতিগতভাবে’ বৈঠকের স্থানের বিষয়ে একমত হয়েছে তবে তিনি বলেননি তা কোথায় হতে পারে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন বৈঠকের স্থান নির্ধারিত হয়েছে এমন খবর বাতিল করে দিয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, উপসাগরীয় দেশটি একটি উপযুক্ত স্থান হতে পারে।
এবছর তিন ধাপে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত দেশ হিসেবে তুরস্ক হতে পারে সম্ভাব্য আয়োজক দেশ। পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে রুশ ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের আলাদা আলোচনার আয়োজন করা সৌদি আরবও হতে পারে অন্যতম আমন্ত্রণকারী দেশ।
এছাড়া, চীনও হতে পারে সম্ভাব্য আলোচনার স্থান। ধারণা করা হচ্ছে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ট্রাম্প ও পুতিন দুই নেতাই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে সেখানে যেতে পারেন।
এছাড়াও ইউক্রেনের মিত্র ও ন্যাটো সদস্যদেশ ফিনল্যান্ড হতে পারে ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের আয়োজক দেশ।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রুশ নেতা পুতিনের বিরুদ্ধে থাকা পরোয়ানা বৈঠকের স্থান নির্ধারণে আলাদাভাবে গুরুত্ববহ হয়ে উঠতে পারে।