ঢাকা ১১:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছিলেন শ্রমিক; এখন ভারতে রাজনৈতিক ফান্ডে সর্বাধিক অর্থ দানকারী সে

স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি অঙ্কের নির্বাচনী বন্ড কিনেছে ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’ - ছবি : বিবিসি

ভারতে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরে নানা ধরনের চমকপ্রদ বিষয় বেরিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক অনুদান দেয়ার জন্য স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নির্বাচনী বন্ড ছেড়েছিল। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছেন একজন লটারি ব্যবসায়ী, যিনি একসময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আদালতের নির্দেশনার পর ভারতের নির্বাচন কমিশন এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি গত পাঁচ বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছে।

বন্ড ছাড়ার সময় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নিশ্চয়তা দিয়েছিল যারা বন্ড ক্রয় করবে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে যারা বন্ড ক্রয় করবে এবং যেসব রাজনৈতিক দল এর মাধ্যমে অর্থ পাবে সবকিছুই বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে।

এ ধরনের বন্ড ছাড়ার বিষয়টি অসাংবিধানিক হিসেবে বর্ণনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের রায় অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে কারা এসব বন্ড ক্রয় করেছে, সেটি কত টাকার এবং কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে এসব কিছুর বিস্তারিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

আদালতের নির্দেশ মতে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার এসব তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে এবং কমিশন এসব তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে ১৫ মার্চের মধ্যে।

নির্বাচনী বন্ডের ইউনিক নম্বর জানানোর জন্য স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তারা সেটি করেনি। আগামী সোমবারের মধ্যে তা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

বন্ডের ওই ইউনিক নম্বরের সাহায্যে জানা যাবে, কোন দাতা কোন রাজনৈতিক দলকে কত অর্থ দিয়েছেন।

এর মাধ্যমে আরো স্পষ্ট হবে, যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই নির্বাচনী বন্ড কিনেছে তার সাথে যে রাজনৈতিক দল ওই বন্ড ভাঙিয়েছে তার সম্পর্ক। সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর পরিবর্তে কোনো বিশেষ সুবিধা পেয়েছিল কি না এটাও জানা যাবে।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর ভারতে নির্বাচনী স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করে। নির্বাচনী বন্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ওই সংস্থা।

এডিআরের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ত্রিলোচন শাস্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ওয়াবসাইটে এখন সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। মানুষ জানতে পারবে কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে অনুদান হিসেবে। একইসাথে জানা যাবে দাতাদের নাম, এতদিন যা মানুষের অগোচরে ছিল। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।’

বেশি বন্ড কিনেছে কে?
আর নির্বাচনী বন্ড যারা সবচাইতে বেশি কিনেছে সেই তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’।

তারা প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। ওই সংস্থার মালিক সান্টিয়াগো মার্টিন। গত কয়েক বছর যাবত এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট বা ইডির নজরে রয়েছে ওই সংস্থা।

তার এই বন্ড ক্রয়ের অর্থ কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে সেটি এখনো জানা যায়নি। ইউনিক নম্বর প্রকাশিত হওয়ার পরে সেটির বিস্তারিত জানা যাবে।

নব্বই দশকে শুরু হওয়া ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’ এর নাম আগে ছিল ‘মার্টিন লটারি এজেন্সিস লিমিটেড’।

২০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি টার্নওভারসহ এই সংস্থাটি ভারতে সবচেয়ে বড় লটারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম।

যেসব রাজ্যে লটারি বিক্রির অনুমতি আছে সেই রাজ্যের ডিলার এবং এজেন্টদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে তারা।

রাজ্য সরকার অনুমোদিত পেপার লটারির বিতরণ এবং মার্কেটিংসহ একাধিক বিষয় তারা দেখে।

সান্টিয়াগো মার্টিন কে?
সান্টিয়াগো মার্টিন এই কোম্পানির চেয়ারম্যান। তাকে ‘লটারি কিং’ও বলা হয়। কর্মজীবন শুরু মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে। সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

পরে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। ১৯৮৮ সালে তামিলনাড়ুতে লটারির ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে কর্ণাটক ও কেরালায় তার লটারির ব্যবসা প্রসারিত হয়। ধীরে ধীরে অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে তার ব্যবসা।

২০২৩ সালে চেন্নাইয়ের ফিউচার গেমিং সলিউশনস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে সান্টিয়াগো মার্টিন এবং অন্য কর্মকর্তাদের আবাসস্থল এবং কোয়েম্বাটুরের ব্যবসায়ীক প্রাঙ্গণে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সে সময় প্রায় ৪৫৭ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

২০২৩ সালে কলকাতার বিশেষ পিএমএলএ আদালতে ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এবং আরো ১৫টি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ইডি।

চাঁদা দেবার তালিকায় আরো যারা
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা প্রায় এক হাজার কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছে। হায়দরাবাদকেন্দ্রিক এই সংস্থা একাধিক সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ পেয়েছে বলেও জানা গেছে।

বন্ড ক্রয়ের তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে কিউইক সাপ্লাই চেইন প্রাইভেট লিমিটেড। তারা ৪১০ কোটি টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনেছে।

চতুর্থ স্থানে আছে বেদান্ত লিমিটেড। তাদের কেনা নির্বাচনী বন্ডের মূল্য ৪০০ কোটি টাকা। পাঁচ নম্বরে আছে হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড। তারা কিনেছে ৩৭৭ কোটি টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ড।

‘ভারতী গ্রুপ’ ২৪৭ কোটি টাকার বন্ড ক্রয় করে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। এর পরেই আছে ‘এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডস লিমিটেড’। তারা ২২৪ কোটি টাকা দান করেছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে।

শীর্ষ ১০ দাতার তালিকায় অন্য তিনটি সংস্থা হলো ‘ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড’, যারা ২২০ কোটি দিয়েছে।

এছাড়া ‘কেভেন্টার ফুডপার্ক ইনফ্রা লিমিটেড’ যারা ১৯৫ কোটি টাকা দিয়েছে এবং ‘মদনলাল লিমিটেড’ দিয়েছে ১৮৫ কোটি টাকা।

অনুদান পাওয়া রাজনৈতিক দল
এসবিআইয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজনৈতিক অনুদান দেয়া হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় দাতারা যারা বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে মোট রাজনৈতিক অনুদানের প্রায় ৪৮ শতাংশ টাকা জুগিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্বাচনী বন্ডের তালিকায় বিজেপি প্রথম এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

ওই বন্ডের মাধ্যমে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ১৪০০ কোটি টাকারও বেশি নির্বাচনী বন্ড নগদায়ন করেছে।

এর পরেই রয়েছে ভারত রাষ্ট্র সমিতি যারা ১২০০ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড পেয়েছে। অন্যদিকে, বিজু জনতা দল পেয়েছে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি নির্বাচনী বন্ড।

দক্ষিণ ভারত ডিএমকে এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস (যুবসেনা) পঞ্চম এবং ষষ্ঠ নম্বরে রয়েছে।

যে প্রশ্ন উঠছে
নির্বাচনে স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ফান্ডিং নিয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠেছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো যারা নির্বাচনী বন্ড কিনে রাজনৈতিক দলগুলোকে দান করেছে তার পরিবর্তে কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে কি না।

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় পিটিশনারদের হয়ে লড়ছেন প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এবং সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কপিল সিব্বল।

মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের নাম প্রকাশ্যে আসার পর তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ১০০ কোটি ইলেক্টোরাল বন্ড কাকে দিয়েছিল মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং? এক মাসের মধ্যেই কিন্তু বিজেপির মহারাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বরাত পেয়ে যায় তারা।‘

‘যদিও এসবিআই এই তথ্যে বন্ডের সংখ্যা লুকিয়ে রেখেছে, তবুও কিছু দাতা এবং যে রাজনৈতিক দলগুলো ওই অনুদান পেয়েছে তাদের সাথে মিলিয়ে একটি অনুমান করাই যেতে পারে। বেশির ভাগ অনুদান দেখে মনে হয়- এক হাতে দাও, অন্য হাত নাও।’

ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর এই বিপুল চাঁদা দেয়ার প্রবণতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র ডিরেক্টর শান্তনু ঘোষকে। তিনি সরাসরি বলেছেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।’

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘বেনামে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কে অনুদান দিচ্ছে এবং কোন রাজনৈতিক দল সেটা পাচ্ছে এটা স্পষ্ট হলে অনুদানের পরিবর্তে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। কালো টাকা সাদা করে ফেলার প্রবণতা কমবে।’

‘নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদানের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা ছিল, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও ছিল। এখন সেটা কমবে কারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধতার বিষয়টা রয়ে যাচ্ছে। এর ফলে যারা রাজনৈতিক দলগুলোকে ফান্ড দিচ্ছে এবং যারা এই অনুদান নিচ্ছে দুই পক্ষেই কিন্তু সজাগ থাকবে।’

জিন্দল স্কুল অফ গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক পলিসির অধ্যাপক দেবজিৎ ঝা বলেন, ‘প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বেশির ভাগ অনুদান এসেছে সেই সেক্টরগুলো থেকে যেখানে কাজ করার জন্য সরকারি লাইসেন্স দরকার হয়। এটা পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে যে সরকারের থেকে লাইসেন্স পাওয়া বা তার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টা কোথাও হয়তো এই অনুদানের পিছনে কারণ হিসেবে রয়ে গেছে।’

‘তবে যতক্ষণ না নির্বাচনী বন্ডের ইউনিক নম্বর পাওয়া না যাচ্ছে এবং মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে কোন সংস্থা নির্দিষ্টভাবে কোন রাজনৈতিক দলকে এই টাকা দিচ্ছে সেটা স্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না।’

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনী বন্ড মারফত রাজনৈতিক দলকে টাকা দেয়ার দুটো কারণ থাকতে পারে বলে ব্যাখা করেছেন তিনি।

অধ্যাপক দেবজিৎ ঝা বলেন, ‘একটা সম্ভাবনা সব সময়েই থেকে যায় যে আমার কোনো দলকে ভালো লাগে তাই অনুদান দিলাম।’

‘কিন্তু অন্য সম্ভাবনাটাও রয়েছে, যা মূলত গণতন্ত্রের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং সেটা হলো দানের পরিবর্তে কিছু পেলাম কি না। কিন্তু এই যোগসাজশ ততক্ষণ প্রমাণ করা যাবে না যতক্ষণ ইউনিক নম্বর হাতে আসে।’

উল্লেখ্য, সবচেয়ে বেশি অনুদান পাওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল। কিভাবে অন্যান্য জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে টেক্কা দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছল, সে বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি ব্যাখা করেছেন, বিজেপির বিরোধী জোট হিসেবে ইন্ডিয়া ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের একটা বড় ভূমিকা আছে।

‘ইন্ডিয়া জোটে মমতা ব্যানার্জি একটা বড় ভূমিকা পালন করছেন। যদি কোনোমতে এই জোট জিতে যায় তাহলে ভারতীয় রাজনীতিতে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যাবে। এটা মাথায় রেখে যদি ফান্ডিং হয়ে থাকে তাহলে সেটা গত এক বছরে হয়েছে, বলেছেন অধ্যাপক দেবজিৎ ঝা।

‘এর আগে যে চাঁদা পেয়েছে ওই দল সেটা মাথায় রাখলে যা দেখা যায় তা হলো ব্যবসায়ীদের সাথে সরকারের একটা আঁতাত আছে।’

এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর ফান্ডিং এবং নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সে কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলোর ফান্ডিং নিয়ে দিশা দেখাতে পারেনি।’

অধ্যাপক দেবজিৎ ঝাও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী বন্ডকে নিয়ে যেসব প্রশ্ন ছিল তার উত্তর আদালতের হস্তক্ষেপে পাওয়া গেলেও স্বচ্ছ ফান্ডিংয়ের বিষয়টি কিন্তু এখনো ভাববার বিষয়। আমাদের ভাবতে হবে নির্বাচনী বন্ডের বিকল্প হিসেবে কী হতে পারে।”

সূত্র : বিবিসি

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ছিলেন শ্রমিক; এখন ভারতে রাজনৈতিক ফান্ডে সর্বাধিক অর্থ দানকারী সে

আপডেট সময় ১০:১৩:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

ভারতে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরে নানা ধরনের চমকপ্রদ বিষয় বেরিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক অনুদান দেয়ার জন্য স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নির্বাচনী বন্ড ছেড়েছিল। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছেন একজন লটারি ব্যবসায়ী, যিনি একসময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আদালতের নির্দেশনার পর ভারতের নির্বাচন কমিশন এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি গত পাঁচ বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছে।

বন্ড ছাড়ার সময় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নিশ্চয়তা দিয়েছিল যারা বন্ড ক্রয় করবে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে যারা বন্ড ক্রয় করবে এবং যেসব রাজনৈতিক দল এর মাধ্যমে অর্থ পাবে সবকিছুই বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে।

এ ধরনের বন্ড ছাড়ার বিষয়টি অসাংবিধানিক হিসেবে বর্ণনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের রায় অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে কারা এসব বন্ড ক্রয় করেছে, সেটি কত টাকার এবং কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে এসব কিছুর বিস্তারিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

আদালতের নির্দেশ মতে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার এসব তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে এবং কমিশন এসব তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে ১৫ মার্চের মধ্যে।

নির্বাচনী বন্ডের ইউনিক নম্বর জানানোর জন্য স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তারা সেটি করেনি। আগামী সোমবারের মধ্যে তা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

বন্ডের ওই ইউনিক নম্বরের সাহায্যে জানা যাবে, কোন দাতা কোন রাজনৈতিক দলকে কত অর্থ দিয়েছেন।

এর মাধ্যমে আরো স্পষ্ট হবে, যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই নির্বাচনী বন্ড কিনেছে তার সাথে যে রাজনৈতিক দল ওই বন্ড ভাঙিয়েছে তার সম্পর্ক। সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর পরিবর্তে কোনো বিশেষ সুবিধা পেয়েছিল কি না এটাও জানা যাবে।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর ভারতে নির্বাচনী স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করে। নির্বাচনী বন্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ওই সংস্থা।

এডিআরের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ত্রিলোচন শাস্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ওয়াবসাইটে এখন সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। মানুষ জানতে পারবে কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে অনুদান হিসেবে। একইসাথে জানা যাবে দাতাদের নাম, এতদিন যা মানুষের অগোচরে ছিল। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।’

বেশি বন্ড কিনেছে কে?
আর নির্বাচনী বন্ড যারা সবচাইতে বেশি কিনেছে সেই তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’।

তারা প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। ওই সংস্থার মালিক সান্টিয়াগো মার্টিন। গত কয়েক বছর যাবত এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট বা ইডির নজরে রয়েছে ওই সংস্থা।

তার এই বন্ড ক্রয়ের অর্থ কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে সেটি এখনো জানা যায়নি। ইউনিক নম্বর প্রকাশিত হওয়ার পরে সেটির বিস্তারিত জানা যাবে।

নব্বই দশকে শুরু হওয়া ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’ এর নাম আগে ছিল ‘মার্টিন লটারি এজেন্সিস লিমিটেড’।

২০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি টার্নওভারসহ এই সংস্থাটি ভারতে সবচেয়ে বড় লটারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম।

যেসব রাজ্যে লটারি বিক্রির অনুমতি আছে সেই রাজ্যের ডিলার এবং এজেন্টদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে তারা।

রাজ্য সরকার অনুমোদিত পেপার লটারির বিতরণ এবং মার্কেটিংসহ একাধিক বিষয় তারা দেখে।

সান্টিয়াগো মার্টিন কে?
সান্টিয়াগো মার্টিন এই কোম্পানির চেয়ারম্যান। তাকে ‘লটারি কিং’ও বলা হয়। কর্মজীবন শুরু মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে। সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

পরে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। ১৯৮৮ সালে তামিলনাড়ুতে লটারির ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে কর্ণাটক ও কেরালায় তার লটারির ব্যবসা প্রসারিত হয়। ধীরে ধীরে অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে তার ব্যবসা।

২০২৩ সালে চেন্নাইয়ের ফিউচার গেমিং সলিউশনস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে সান্টিয়াগো মার্টিন এবং অন্য কর্মকর্তাদের আবাসস্থল এবং কোয়েম্বাটুরের ব্যবসায়ীক প্রাঙ্গণে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সে সময় প্রায় ৪৫৭ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

২০২৩ সালে কলকাতার বিশেষ পিএমএলএ আদালতে ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এবং আরো ১৫টি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ইডি।

চাঁদা দেবার তালিকায় আরো যারা
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা প্রায় এক হাজার কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছে। হায়দরাবাদকেন্দ্রিক এই সংস্থা একাধিক সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ পেয়েছে বলেও জানা গেছে।

বন্ড ক্রয়ের তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে কিউইক সাপ্লাই চেইন প্রাইভেট লিমিটেড। তারা ৪১০ কোটি টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনেছে।

চতুর্থ স্থানে আছে বেদান্ত লিমিটেড। তাদের কেনা নির্বাচনী বন্ডের মূল্য ৪০০ কোটি টাকা। পাঁচ নম্বরে আছে হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড। তারা কিনেছে ৩৭৭ কোটি টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ড।

‘ভারতী গ্রুপ’ ২৪৭ কোটি টাকার বন্ড ক্রয় করে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। এর পরেই আছে ‘এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডস লিমিটেড’। তারা ২২৪ কোটি টাকা দান করেছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে।

শীর্ষ ১০ দাতার তালিকায় অন্য তিনটি সংস্থা হলো ‘ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড’, যারা ২২০ কোটি দিয়েছে।

এছাড়া ‘কেভেন্টার ফুডপার্ক ইনফ্রা লিমিটেড’ যারা ১৯৫ কোটি টাকা দিয়েছে এবং ‘মদনলাল লিমিটেড’ দিয়েছে ১৮৫ কোটি টাকা।

অনুদান পাওয়া রাজনৈতিক দল
এসবিআইয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজনৈতিক অনুদান দেয়া হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় দাতারা যারা বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে মোট রাজনৈতিক অনুদানের প্রায় ৪৮ শতাংশ টাকা জুগিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্বাচনী বন্ডের তালিকায় বিজেপি প্রথম এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

ওই বন্ডের মাধ্যমে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ১৪০০ কোটি টাকারও বেশি নির্বাচনী বন্ড নগদায়ন করেছে।

এর পরেই রয়েছে ভারত রাষ্ট্র সমিতি যারা ১২০০ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড পেয়েছে। অন্যদিকে, বিজু জনতা দল পেয়েছে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি নির্বাচনী বন্ড।

দক্ষিণ ভারত ডিএমকে এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস (যুবসেনা) পঞ্চম এবং ষষ্ঠ নম্বরে রয়েছে।

যে প্রশ্ন উঠছে
নির্বাচনে স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ফান্ডিং নিয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠেছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো যারা নির্বাচনী বন্ড কিনে রাজনৈতিক দলগুলোকে দান করেছে তার পরিবর্তে কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে কি না।

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় পিটিশনারদের হয়ে লড়ছেন প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এবং সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কপিল সিব্বল।

মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের নাম প্রকাশ্যে আসার পর তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ১০০ কোটি ইলেক্টোরাল বন্ড কাকে দিয়েছিল মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং? এক মাসের মধ্যেই কিন্তু বিজেপির মহারাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বরাত পেয়ে যায় তারা।‘

‘যদিও এসবিআই এই তথ্যে বন্ডের সংখ্যা লুকিয়ে রেখেছে, তবুও কিছু দাতা এবং যে রাজনৈতিক দলগুলো ওই অনুদান পেয়েছে তাদের সাথে মিলিয়ে একটি অনুমান করাই যেতে পারে। বেশির ভাগ অনুদান দেখে মনে হয়- এক হাতে দাও, অন্য হাত নাও।’

ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর এই বিপুল চাঁদা দেয়ার প্রবণতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র ডিরেক্টর শান্তনু ঘোষকে। তিনি সরাসরি বলেছেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।’

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘বেনামে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কে অনুদান দিচ্ছে এবং কোন রাজনৈতিক দল সেটা পাচ্ছে এটা স্পষ্ট হলে অনুদানের পরিবর্তে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। কালো টাকা সাদা করে ফেলার প্রবণতা কমবে।’

‘নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদানের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা ছিল, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও ছিল। এখন সেটা কমবে কারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধতার বিষয়টা রয়ে যাচ্ছে। এর ফলে যারা রাজনৈতিক দলগুলোকে ফান্ড দিচ্ছে এবং যারা এই অনুদান নিচ্ছে দুই পক্ষেই কিন্তু সজাগ থাকবে।’

জিন্দল স্কুল অফ গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক পলিসির অধ্যাপক দেবজিৎ ঝা বলেন, ‘প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বেশির ভাগ অনুদান এসেছে সেই সেক্টরগুলো থেকে যেখানে কাজ করার জন্য সরকারি লাইসেন্স দরকার হয়। এটা পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে যে সরকারের থেকে লাইসেন্স পাওয়া বা তার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টা কোথাও হয়তো এই অনুদানের পিছনে কারণ হিসেবে রয়ে গেছে।’

‘তবে যতক্ষণ না নির্বাচনী বন্ডের ইউনিক নম্বর পাওয়া না যাচ্ছে এবং মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে কোন সংস্থা নির্দিষ্টভাবে কোন রাজনৈতিক দলকে এই টাকা দিচ্ছে সেটা স্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না।’

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনী বন্ড মারফত রাজনৈতিক দলকে টাকা দেয়ার দুটো কারণ থাকতে পারে বলে ব্যাখা করেছেন তিনি।

অধ্যাপক দেবজিৎ ঝা বলেন, ‘একটা সম্ভাবনা সব সময়েই থেকে যায় যে আমার কোনো দলকে ভালো লাগে তাই অনুদান দিলাম।’

‘কিন্তু অন্য সম্ভাবনাটাও রয়েছে, যা মূলত গণতন্ত্রের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং সেটা হলো দানের পরিবর্তে কিছু পেলাম কি না। কিন্তু এই যোগসাজশ ততক্ষণ প্রমাণ করা যাবে না যতক্ষণ ইউনিক নম্বর হাতে আসে।’

উল্লেখ্য, সবচেয়ে বেশি অনুদান পাওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল। কিভাবে অন্যান্য জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে টেক্কা দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছল, সে বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি ব্যাখা করেছেন, বিজেপির বিরোধী জোট হিসেবে ইন্ডিয়া ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের একটা বড় ভূমিকা আছে।

‘ইন্ডিয়া জোটে মমতা ব্যানার্জি একটা বড় ভূমিকা পালন করছেন। যদি কোনোমতে এই জোট জিতে যায় তাহলে ভারতীয় রাজনীতিতে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যাবে। এটা মাথায় রেখে যদি ফান্ডিং হয়ে থাকে তাহলে সেটা গত এক বছরে হয়েছে, বলেছেন অধ্যাপক দেবজিৎ ঝা।

‘এর আগে যে চাঁদা পেয়েছে ওই দল সেটা মাথায় রাখলে যা দেখা যায় তা হলো ব্যবসায়ীদের সাথে সরকারের একটা আঁতাত আছে।’

এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর ফান্ডিং এবং নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সে কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলোর ফান্ডিং নিয়ে দিশা দেখাতে পারেনি।’

অধ্যাপক দেবজিৎ ঝাও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী বন্ডকে নিয়ে যেসব প্রশ্ন ছিল তার উত্তর আদালতের হস্তক্ষেপে পাওয়া গেলেও স্বচ্ছ ফান্ডিংয়ের বিষয়টি কিন্তু এখনো ভাববার বিষয়। আমাদের ভাবতে হবে নির্বাচনী বন্ডের বিকল্প হিসেবে কী হতে পারে।”

সূত্র : বিবিসি