ঢাকা ০২:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ পবিত্র আশুরা

পবিত্র আশুরা আজ। ইতিহাসের ঘটনাবহুল দিন। কারবালার প্রান্তরে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা: এর নাতি হজরত হোসাইন (রা:)-এর শাহাদতের এ দিনটিকে বিশ্ববাসীর কাছে সর্বাধিক স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখলেও সৃষ্টির শুরু থেকেই মহররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য এ দিনটি পৃথিবীর ইতিহাসে খুবই তাৎপর্যময় একটি দিন। পবিত্র এ দিনটিতে মুসলমানরা নামাজ, রোজাসহ বিভিন্ন নফল ইবাদত করে থাকেন। শিয়া সম্প্রদায় দিনটিতে তাজিয়া মিছিল বের করে থাকে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে গতকাল পৃথক বাণী দিয়েছেন।

পবিত্র আশুরার দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। মহান আল্লাহ এ দিনে পৃথিবী এবং প্রথম মানব হজরত আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেছেন। এ দিন হজরত নূহ (আ:)-এর আমলের প্লাবন শেষ হয় এবং নূহ (আ:)-এর জাহাজ তুরস্কের ‘জুদি’ পর্বতে গিয়ে থামে। আশুরার দিন হজরত ইব্রাহিম (আ:) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পান। এ দিন হজরত ইউনুস (আ:) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আশুরার দিনে হজরত আইয়ুব (আ:) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এ দিন আল্লাহ জালিম বাদশা ফেরাউনকে দলবলসহ পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন এবং মূসা (আ:) ও তাঁর অনুসারীরা ফেরাউনের হাত থেকে নাজাত লাভ করেছেন। আশুরার দিন হজরত সুলাইমান (আ:) তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পান। এ দিনে হজরত ইয়াকুব (আ:) হারানো ছেলে হজরত ইউসুফ (আ:)-কে ফিরে পেয়েছিলেন। এ দিনে হজরত ঈসা (আ:) জন্মগ্রহণ করেন এবং এ দিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়।

১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নাতি হোসাইন (রা:)-এর শাহাদতের ঘটনা মুসলিম জাতির ইতিহাসে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা। এ ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আজও মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে কারবালার ঘটনা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়। হজরত হোসাইন (রা:) অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গিয়ে সে দিন কারবালা প্রান্তরে পরিবার-পরিজন নিয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন। রাসূল সা:-এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তাঁর সাহাবিদের প্রবর্তিত খেলাফতি শাসন ব্যবস্থা অক্ষুণœ রাখার সংগ্রামে তিনি শাহাদত বরণ করেন। ইসলামী খেলাফতের ব্যাপারে কোনো ধরনের আপস না করার কারণেই কারবালার ঘটনা ঘটেছিল। কারবালার ঘটনা আমাদেরকে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে সংগ্রাম করার কথাই শিক্ষা দেয়।

ইবাদত : আশুরার রোজা পালনে বিগত এক বছরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হলে আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচিত হয়। আশুরা দিবসে রোজা পালনের জন্য রাসূলুল্লাহ সা: নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা। আর ফরজের পরে সর্বাধিক উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ (সহিহ মুসলিম ১/৩৫৮)। হাদিসের প্রায় সব কিতাবে মহররম মাসের ফজিলত এবং এ মাসের ১০ তারিখ আশুরার রোজা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণিত একাধিক হাদিস রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সাথে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি’ (সহিহ বুখারি : ১/২১৮)।

আরো পড়ুন : মহররমের শিক্ষা; মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  পীরগঞ্জে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

আজ পবিত্র আশুরা

আপডেট সময় ১১:১৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪

পবিত্র আশুরা আজ। ইতিহাসের ঘটনাবহুল দিন। কারবালার প্রান্তরে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা: এর নাতি হজরত হোসাইন (রা:)-এর শাহাদতের এ দিনটিকে বিশ্ববাসীর কাছে সর্বাধিক স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখলেও সৃষ্টির শুরু থেকেই মহররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য এ দিনটি পৃথিবীর ইতিহাসে খুবই তাৎপর্যময় একটি দিন। পবিত্র এ দিনটিতে মুসলমানরা নামাজ, রোজাসহ বিভিন্ন নফল ইবাদত করে থাকেন। শিয়া সম্প্রদায় দিনটিতে তাজিয়া মিছিল বের করে থাকে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে গতকাল পৃথক বাণী দিয়েছেন।

পবিত্র আশুরার দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। মহান আল্লাহ এ দিনে পৃথিবী এবং প্রথম মানব হজরত আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেছেন। এ দিন হজরত নূহ (আ:)-এর আমলের প্লাবন শেষ হয় এবং নূহ (আ:)-এর জাহাজ তুরস্কের ‘জুদি’ পর্বতে গিয়ে থামে। আশুরার দিন হজরত ইব্রাহিম (আ:) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পান। এ দিন হজরত ইউনুস (আ:) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আশুরার দিনে হজরত আইয়ুব (আ:) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এ দিন আল্লাহ জালিম বাদশা ফেরাউনকে দলবলসহ পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন এবং মূসা (আ:) ও তাঁর অনুসারীরা ফেরাউনের হাত থেকে নাজাত লাভ করেছেন। আশুরার দিন হজরত সুলাইমান (আ:) তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পান। এ দিনে হজরত ইয়াকুব (আ:) হারানো ছেলে হজরত ইউসুফ (আ:)-কে ফিরে পেয়েছিলেন। এ দিনে হজরত ঈসা (আ:) জন্মগ্রহণ করেন এবং এ দিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়।

১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নাতি হোসাইন (রা:)-এর শাহাদতের ঘটনা মুসলিম জাতির ইতিহাসে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা। এ ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আজও মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে কারবালার ঘটনা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়। হজরত হোসাইন (রা:) অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গিয়ে সে দিন কারবালা প্রান্তরে পরিবার-পরিজন নিয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন। রাসূল সা:-এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তাঁর সাহাবিদের প্রবর্তিত খেলাফতি শাসন ব্যবস্থা অক্ষুণœ রাখার সংগ্রামে তিনি শাহাদত বরণ করেন। ইসলামী খেলাফতের ব্যাপারে কোনো ধরনের আপস না করার কারণেই কারবালার ঘটনা ঘটেছিল। কারবালার ঘটনা আমাদেরকে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে সংগ্রাম করার কথাই শিক্ষা দেয়।

ইবাদত : আশুরার রোজা পালনে বিগত এক বছরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হলে আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচিত হয়। আশুরা দিবসে রোজা পালনের জন্য রাসূলুল্লাহ সা: নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা। আর ফরজের পরে সর্বাধিক উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ (সহিহ মুসলিম ১/৩৫৮)। হাদিসের প্রায় সব কিতাবে মহররম মাসের ফজিলত এবং এ মাসের ১০ তারিখ আশুরার রোজা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণিত একাধিক হাদিস রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সাথে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি’ (সহিহ বুখারি : ১/২১৮)।

আরো পড়ুন : মহররমের শিক্ষা; মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা