ঢাকা ০৪:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসিনা-মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক : বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার বিকেলে দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই ও প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ বৈঠক নিয়ে অনেকের আগ্রহ রাজনৈতিক বিষয়ের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এটি শেষ বৈঠক।

জি২০’র বর্তমান সভাপতি ভারত যে ৯টি দেশকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। শেখ হাসিনার এই সফর এমন এক সময় হচ্ছে যখন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে।

বলা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার এই ভারত সফর বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।


ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হবে?

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিরোধ তীব্র হয়েছে।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধীতা করে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারের উপর জোরালো চাপ সৃষ্টি করেছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমেরিকার মনোভাব অটল থাকবে নাকি ভারতের প্রভাবে মার্কিন নীতির পরিবর্তন হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন।

কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে আমেরিকাকে বার্তা দিয়েছে ভারত। এ খবর প্রকাশিত হবার পর বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা প্রতিক্র্রিয়া তৈরি করেছে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতের অবস্থান কী হবে, এই বৈঠকেই সেই বার্তা পরিস্কার হয়ে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে।

সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন বলছেন, বাংলাদেশ নিয়ে শেষপর্যন্ত ভারতের অবস্থান কী হবে, এই বৈঠকেই সেই বার্তা পরিস্কার হয়ে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে।

সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন বলছেন, বাংলাদেশ নিয়ে শেষপর্যন্ত ভারতের অবস্থান কী হবে, এই বৈঠকেই সেই বার্তা পরিস্কার হয়ে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এতোটা আগ্রহ নিয়ে অতীতের নির্বাচনগুলোতে ‘হস্তক্ষেপ’ করেনি।

“এবার তারা করছে, মানে হচ্ছে তারা এ ব্যপারে আগের চেয়ে বেশি সিরিয়াস যে এখানে একটি যথাযথ নির্বাচন হোক,” বলেন মি, হোসেন।

বাংলাদেশে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে শেখ হাসিনার সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়া হয়েছে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবেলায় ভারত কী ভূমিকা নেবে সেদিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে।

“স্বাভাবিকভাবে ভারত এখানে চাইবে যে একটা স্থিতাবস্থা বজায় থাকুক। এটা তাদের জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু তারা কতটুকু এবার এর পক্ষে নামবে সেটা আমরা জানি না এখনো। আদৌ নামবে কি-না, সেটাও জানি না। কারণ তাদের এখানে বহুমাত্রিক সম্পর্কের বিষয় আছে,” বলেন তৌহিদ হোসেন।

“আমরা এটাও জানি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট এবং ভারতের মধ্যে এ বিষয়ে কোন কথা হয়েছে কি-না বা কী কথা হয়েছে। এগুলো দুই নেতার বৈঠকের পরেই স্পষ্ট হবে।”

তবে মি. হোসেন বলছেন, বৈঠকে ভারত তার অবস্থান বাংলাদেশের কাছে স্পষ্ট করলেও সেটা হয়তো বাইরে থেকে দৃশ্যমান হবে না কিংবা দৃশ্যমান হলেও সময় লাগবে।

তবে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে হয়তো বোঝা যাবে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের মনোভাবে কোন পরিবর্তন এসেছে কি-না।

আওয়ামী লীগ কী চায়?

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকটিকে রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনার সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ লাঘব করা এবং আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে ভারত।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে। সে সম্পর্ককেই কাজে লাগাতে চায় সরকার।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে ‘অস্বাভাবিক সরকার’ আসুক সেটা কোন দেশের চাওয়া উচিত নয়। এখানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা থাকুক, এটাই সবাই চাইবে।

“এখানে ভারত সবসময়ই বাংলাদেশে যেটা সঠিক, সেটাকেই সমর্থন করে। ভারত কখনো বাংলাদেশে অনৈতিক, অবৈধ কিছুকে সমর্থন করে না। যেহেতু সামনে নির্বাচন, আমরা এটুকু আশা করবো যে ভারত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে, সঠিক সমর্থনটা দেবে, মৌলবাদীদের সমর্থন দেবে না।”

স্বাগতিক ভারত ছাড়া জি২০ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ। অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও সাইডলাইনে বৈঠকের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

তবে ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলোর সঙ্গে এ ধরণের বৈঠক হলেও সেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ হবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যে চ্যালেঞ্জে পড়েছে এবং দলটির নেতারা ভারতের যে দৃঢ় সমর্থন প্রত্যাশা করেন, সেখানে ভারত কতটা এগিয়ে আসবে?

এমন প্রশ্নে ভারতের দিল্লীতে বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো ড. শ্রীরাধা দত্ত বলছেন, ভারতের অবস্থান কী হবে ইতোমধ্যেই সে বার্তা দেয়া হয়ে গেছে। তবে এখানে ভারতেরও চাওয়া নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় এবং অংশগ্রহণমূলক হয়।

“ভারত চায় যে বাংলাদেশে বহুদলীয় নির্বাচনের পদ্ধতিটা ভালো করে হোক। কিন্তু আবার এমন কোন কিছু যেন না হয়, যেটা নিয়ে আবার বিতর্ক হতে পারে, অস্থিতিশীলতা হতে পারে।”

“ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সুসম্পর্ক আছে, আস্থা আছে। ভারত এটাও মনে করে, আওয়ামী লীগই আবারো ফেরত আসবে, কারণ তারা অনেক ভালো কাজ করেছে, উন্নয়ন করেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন শ্রীরাধা দত্ত।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং পারস্পরিক নানা স্বার্থও জড়িত। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হলেও আটকে আছে তিস্তা চুক্তি।

ভারত সফরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তিস্তা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে তেমন কোন অগ্রগতির আশা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

একই সঙ্গে ভারতের বিজেপি সরকারও সে দেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিস্তা ইস্যু নিয়ে ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন ঝামেলায়’ পড়তে চাইবে না বলেও মনে করেন ভারতীয় বিশ্লেষকরা।

সর্বোপরি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে এই সফরের গুরুত্ব হচ্ছে – নির্বাচন ইস্যুতে ভারতের সমর্থন ধরে রাখা। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

আপলোডকারীর তথ্য

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

হাসিনা-মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক : বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান

আপডেট সময় ০৯:৫৭:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার বিকেলে দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই ও প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ বৈঠক নিয়ে অনেকের আগ্রহ রাজনৈতিক বিষয়ের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এটি শেষ বৈঠক।

জি২০’র বর্তমান সভাপতি ভারত যে ৯টি দেশকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। শেখ হাসিনার এই সফর এমন এক সময় হচ্ছে যখন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে।

বলা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার এই ভারত সফর বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।


ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হবে?

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিরোধ তীব্র হয়েছে।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধীতা করে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারের উপর জোরালো চাপ সৃষ্টি করেছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমেরিকার মনোভাব অটল থাকবে নাকি ভারতের প্রভাবে মার্কিন নীতির পরিবর্তন হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন।

কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে আমেরিকাকে বার্তা দিয়েছে ভারত। এ খবর প্রকাশিত হবার পর বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা প্রতিক্র্রিয়া তৈরি করেছে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতের অবস্থান কী হবে, এই বৈঠকেই সেই বার্তা পরিস্কার হয়ে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে।

সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন বলছেন, বাংলাদেশ নিয়ে শেষপর্যন্ত ভারতের অবস্থান কী হবে, এই বৈঠকেই সেই বার্তা পরিস্কার হয়ে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে।

সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন বলছেন, বাংলাদেশ নিয়ে শেষপর্যন্ত ভারতের অবস্থান কী হবে, এই বৈঠকেই সেই বার্তা পরিস্কার হয়ে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এতোটা আগ্রহ নিয়ে অতীতের নির্বাচনগুলোতে ‘হস্তক্ষেপ’ করেনি।

“এবার তারা করছে, মানে হচ্ছে তারা এ ব্যপারে আগের চেয়ে বেশি সিরিয়াস যে এখানে একটি যথাযথ নির্বাচন হোক,” বলেন মি, হোসেন।

বাংলাদেশে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে শেখ হাসিনার সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়া হয়েছে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবেলায় ভারত কী ভূমিকা নেবে সেদিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে।

“স্বাভাবিকভাবে ভারত এখানে চাইবে যে একটা স্থিতাবস্থা বজায় থাকুক। এটা তাদের জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু তারা কতটুকু এবার এর পক্ষে নামবে সেটা আমরা জানি না এখনো। আদৌ নামবে কি-না, সেটাও জানি না। কারণ তাদের এখানে বহুমাত্রিক সম্পর্কের বিষয় আছে,” বলেন তৌহিদ হোসেন।

“আমরা এটাও জানি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট এবং ভারতের মধ্যে এ বিষয়ে কোন কথা হয়েছে কি-না বা কী কথা হয়েছে। এগুলো দুই নেতার বৈঠকের পরেই স্পষ্ট হবে।”

তবে মি. হোসেন বলছেন, বৈঠকে ভারত তার অবস্থান বাংলাদেশের কাছে স্পষ্ট করলেও সেটা হয়তো বাইরে থেকে দৃশ্যমান হবে না কিংবা দৃশ্যমান হলেও সময় লাগবে।

তবে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে হয়তো বোঝা যাবে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের মনোভাবে কোন পরিবর্তন এসেছে কি-না।

আওয়ামী লীগ কী চায়?

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকটিকে রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনার সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ লাঘব করা এবং আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে ভারত।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে। সে সম্পর্ককেই কাজে লাগাতে চায় সরকার।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে ‘অস্বাভাবিক সরকার’ আসুক সেটা কোন দেশের চাওয়া উচিত নয়। এখানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা থাকুক, এটাই সবাই চাইবে।

“এখানে ভারত সবসময়ই বাংলাদেশে যেটা সঠিক, সেটাকেই সমর্থন করে। ভারত কখনো বাংলাদেশে অনৈতিক, অবৈধ কিছুকে সমর্থন করে না। যেহেতু সামনে নির্বাচন, আমরা এটুকু আশা করবো যে ভারত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে, সঠিক সমর্থনটা দেবে, মৌলবাদীদের সমর্থন দেবে না।”

স্বাগতিক ভারত ছাড়া জি২০ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ। অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও সাইডলাইনে বৈঠকের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

তবে ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলোর সঙ্গে এ ধরণের বৈঠক হলেও সেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ হবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যে চ্যালেঞ্জে পড়েছে এবং দলটির নেতারা ভারতের যে দৃঢ় সমর্থন প্রত্যাশা করেন, সেখানে ভারত কতটা এগিয়ে আসবে?

এমন প্রশ্নে ভারতের দিল্লীতে বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো ড. শ্রীরাধা দত্ত বলছেন, ভারতের অবস্থান কী হবে ইতোমধ্যেই সে বার্তা দেয়া হয়ে গেছে। তবে এখানে ভারতেরও চাওয়া নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় এবং অংশগ্রহণমূলক হয়।

“ভারত চায় যে বাংলাদেশে বহুদলীয় নির্বাচনের পদ্ধতিটা ভালো করে হোক। কিন্তু আবার এমন কোন কিছু যেন না হয়, যেটা নিয়ে আবার বিতর্ক হতে পারে, অস্থিতিশীলতা হতে পারে।”

“ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সুসম্পর্ক আছে, আস্থা আছে। ভারত এটাও মনে করে, আওয়ামী লীগই আবারো ফেরত আসবে, কারণ তারা অনেক ভালো কাজ করেছে, উন্নয়ন করেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন শ্রীরাধা দত্ত।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং পারস্পরিক নানা স্বার্থও জড়িত। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হলেও আটকে আছে তিস্তা চুক্তি।

ভারত সফরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তিস্তা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে তেমন কোন অগ্রগতির আশা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

একই সঙ্গে ভারতের বিজেপি সরকারও সে দেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিস্তা ইস্যু নিয়ে ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন ঝামেলায়’ পড়তে চাইবে না বলেও মনে করেন ভারতীয় বিশ্লেষকরা।

সর্বোপরি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে এই সফরের গুরুত্ব হচ্ছে – নির্বাচন ইস্যুতে ভারতের সমর্থন ধরে রাখা। সূত্র : বিবিসি বাংলা।