ঢাকা ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ব্লক রেইডে’ চলছে গণ-গ্রেফতার, আইন মানছেন না পুলিশের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয় মূলত ১৯ জুলাই থেকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকা ঘিরে মধ্যরাতে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে চলে গ্রেফতার অভিযান। এসব অভিযানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী তো বটেই, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, দিনমজুরসহ আটক হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

গত দু’সপ্তাহের অভিযানে দেশের গণমাধ্যমগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ১০ হাজারেরও বেশি আটকের তথ্য দিচ্ছে। এসব অভিযানে শুধু সাধারণ মানুষের হয়রানি নয়, বরং একইসাথে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যাচ্ছে, বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার, আটকের পর স্বীকার না করা, আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করা, গ্রেফতার অভিযানের সময় ভয়-ভীতি দেখানো, মারধর এমনকি গুলি করা এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন যার মধ্যে অন্যতম।

সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরমভাবে আইনের অবমাননা করছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলেও পুলিশ কারো বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান করতো না। বাড়ি ঘেরাও দিয়ে রেখে সকালে ঢুকতো। কিন্তু এখন মধ্যরাতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তারা গেটে ঠক ঠক করছে। এটা কি ৭১ সাল? ৭১ পাকিস্তান বাহিনী ঘরে ঘরে গিয়ে বলতো মুক্তি আছে? এখন এরা জিজ্ঞাসাবাদ করছে, ছাত্র আছে?’

জেড আই খান পান্না বলেন, পুলিশ গ্রেফতারের সময় আইন মানছে না। আইনে কোথাও নেই যে কাউকে বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে। এমনকি ৫৪ ধারায় কাউকে অ্যারেস্ট করলেও এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে। তিন ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে কী মামলায় এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হলো। এছাড়া তার নিকটআত্মীয় স্বজন, আইনজীবীর সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা তারা মানতে বাধ্য। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করছে। এছাড়া কোর্টে যাদের পাঠাচ্ছে, সেখানেও নাবালক দেখা যাচ্ছে। নাবালককে তো কোনো অবস্থাতেই জেলখানায় পাঠাতে পারে না।

তবে শুধু আটকের সময় আইনের লঙ্ঘন নয়, আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগও এখন জোরালো। যদিও হেফাজতে থাকাকালীন আটক ব্যক্তির সাথে আচরণ কী হবে সেটার বিস্তারিত বলা আছে নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে। যেখানে সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শাস্তি দেয়া এমনকি ভয়-ভীতি দেখানোও অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেড আই খান পান্না প্রশ্ন রাখেন, ‘সংবিধানেইতো আছে কোনো অবস্থাতেই গায়ে হাত দিতে পারবে না, জোর-জবরদস্তি করতে পারবে না। এছাড়া ডিবি অফিসে যে নিয়ে রাখা হচ্ছে, সেটারই বা আইন কোথায়? সেখানে কি থানা আছে, হাজতখানা আছে? আর সাদা পোশাকে যদি তুলে নেয়, তাহলে অবশ্যই সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়। ধরলাম, এটা যদি ডাকাতও তুলে নেয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটা ধরবে না?’

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ কেন উঠছে? জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের থেকে অবশ্য পাল্টা দাবি করা হয়, অভিযানে আইনের কোনো লঙ্ঘন হচ্ছে না।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। অ্যারেস্ট বা মামলা যেগুলো হচ্ছে, সেগুলো কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই হচ্ছে। এছাড়া আমরা যখন অভিযান করি তখন আমাদেরকে একটা প্রসিডিউর মেনেই করতে হয়, আইনের নিরিখেই করতে হয়। আপনি যেসব অভিযোগ করছেন, সেরকম কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। আইনি প্রক্রিয়া মেইনটেইন করেই আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
সূত্র : বিবিসি

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

‘ব্লক রেইডে’ চলছে গণ-গ্রেফতার, আইন মানছেন না পুলিশের

আপডেট সময় ০৯:৪৬:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয় মূলত ১৯ জুলাই থেকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকা ঘিরে মধ্যরাতে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে চলে গ্রেফতার অভিযান। এসব অভিযানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী তো বটেই, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, দিনমজুরসহ আটক হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

গত দু’সপ্তাহের অভিযানে দেশের গণমাধ্যমগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ১০ হাজারেরও বেশি আটকের তথ্য দিচ্ছে। এসব অভিযানে শুধু সাধারণ মানুষের হয়রানি নয়, বরং একইসাথে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যাচ্ছে, বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার, আটকের পর স্বীকার না করা, আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করা, গ্রেফতার অভিযানের সময় ভয়-ভীতি দেখানো, মারধর এমনকি গুলি করা এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন যার মধ্যে অন্যতম।

সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরমভাবে আইনের অবমাননা করছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলেও পুলিশ কারো বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান করতো না। বাড়ি ঘেরাও দিয়ে রেখে সকালে ঢুকতো। কিন্তু এখন মধ্যরাতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তারা গেটে ঠক ঠক করছে। এটা কি ৭১ সাল? ৭১ পাকিস্তান বাহিনী ঘরে ঘরে গিয়ে বলতো মুক্তি আছে? এখন এরা জিজ্ঞাসাবাদ করছে, ছাত্র আছে?’

জেড আই খান পান্না বলেন, পুলিশ গ্রেফতারের সময় আইন মানছে না। আইনে কোথাও নেই যে কাউকে বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে। এমনকি ৫৪ ধারায় কাউকে অ্যারেস্ট করলেও এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে। তিন ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে কী মামলায় এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হলো। এছাড়া তার নিকটআত্মীয় স্বজন, আইনজীবীর সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা তারা মানতে বাধ্য। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করছে। এছাড়া কোর্টে যাদের পাঠাচ্ছে, সেখানেও নাবালক দেখা যাচ্ছে। নাবালককে তো কোনো অবস্থাতেই জেলখানায় পাঠাতে পারে না।

তবে শুধু আটকের সময় আইনের লঙ্ঘন নয়, আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগও এখন জোরালো। যদিও হেফাজতে থাকাকালীন আটক ব্যক্তির সাথে আচরণ কী হবে সেটার বিস্তারিত বলা আছে নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে। যেখানে সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শাস্তি দেয়া এমনকি ভয়-ভীতি দেখানোও অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেড আই খান পান্না প্রশ্ন রাখেন, ‘সংবিধানেইতো আছে কোনো অবস্থাতেই গায়ে হাত দিতে পারবে না, জোর-জবরদস্তি করতে পারবে না। এছাড়া ডিবি অফিসে যে নিয়ে রাখা হচ্ছে, সেটারই বা আইন কোথায়? সেখানে কি থানা আছে, হাজতখানা আছে? আর সাদা পোশাকে যদি তুলে নেয়, তাহলে অবশ্যই সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়। ধরলাম, এটা যদি ডাকাতও তুলে নেয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটা ধরবে না?’

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ কেন উঠছে? জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের থেকে অবশ্য পাল্টা দাবি করা হয়, অভিযানে আইনের কোনো লঙ্ঘন হচ্ছে না।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। অ্যারেস্ট বা মামলা যেগুলো হচ্ছে, সেগুলো কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই হচ্ছে। এছাড়া আমরা যখন অভিযান করি তখন আমাদেরকে একটা প্রসিডিউর মেনেই করতে হয়, আইনের নিরিখেই করতে হয়। আপনি যেসব অভিযোগ করছেন, সেরকম কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। আইনি প্রক্রিয়া মেইনটেইন করেই আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
সূত্র : বিবিসি