ঢাকা ০৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাইলাতুল ক্বদরের তাৎপর্য

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী
লাইলাতুল ক্বদর অর্থ মহাসম্মানিত রাত, সৌভাগ্যের রাত এবং ভাগ্যোন্নয়নের রাত। সকল অর্থই এখানে প্রযোজ্য। এ রাতের মর্যাদা প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’। সূরা দুখানে বলা হয়েছে, ‘এ রজনীতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে বিজ্ঞোচিত ফয়সালা করা হয়’। সূরা ক্বদরে আরো বলা হয়েছে, ‘ফেরেশতা ও রুহ এ রাত্রিতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন। সে রাত্রি পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার-ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত’। বুখারি ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত্রিতে ঈমানের সাথে শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হবে আল্লাহ তার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দিবেন’।
উপরে কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতির আলোকে আমরা সহজেই লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। প্রশ্ন জাগে-কেন এ গুরুত্ব? জবাবও আল্লাহ দিয়েছেন-‘নিশ্চয়ই আমি ইহা (কুরআন) ক্বদরের রাত্রিতে নাজিল করেছি’। রমযানের রোযা ফরজ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘রমযান মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হেদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন উপদেশাবলীতে পূর্ণ যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। কাজেই এখন থেকে যারাই এ মাসের সম্মুখীন হবে তাদের একান্ত কর্তব্য পূর্ণ মাস রোযা রাখা’। এতে স্পষ্ট যে কুরআন নাজিলের কারণেই লাইলাতুল ক্বদরের এত মর্যাদা এবং রমযান মাসে রোযা ফরজ করা হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, রমযান মাসের কোন তারিখটি লাইলাতুল ক্বদর। সঠিক তারিখের উল্লেখ কুরআনে না থাকলেও হাদিসে এর বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘নবী করীম (সাঃ) ক্বদরের রাত্রি সম্পর্কে বলেছেন, ‘উহা ২৭তম বা ২৯তম রাত্রি’। হযরত আবু যার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘হযরত ওমর (রাঃ), হযরত হুযাইফা (রাঃ) এবং রসুল (সাঃ)-এর সাহাবীদের মধ্যে বহু সংখ্যকের এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ ছিল না যে, উহা ২৭তম রাত্রি’। হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় রমযান মাসের শেষ দশ রাত্রিতে ইতেকাফ করেছেন। হাদিসের এসব আলোচনার প্রেক্ষিতে পূর্বকালের আলেমদের অধিকাংশই ২৭তম রাত্রিকেই লাইলাতুল ক্বদর বলে মনে করতেন। আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট করে একটি রাত্রি উল্লেখ না থাকায় মনে হয়, মহান আল্লাহ চান লাইলাতুল ক্বদরের খোঁজে তাঁর বান্দারা বেশি বেশি রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে অতিবাহিত করুক।

মানুষের জন্য আল্লাহপাকের হাজারো নেয়ামতের মধ্যে সর্বোত্তম নেয়ামত হচ্ছে হেদায়াত বা পথ প্রদর্শন। মানুষ আল্লাহতায়ালার অত্যন্ত প্রিয় ও সেরা সৃষ্টি। আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে তিনি তাঁকে স্থান দিয়েছিলেন জান্নাতে। শয়তানের প্ররোচনায় তিনি আল্লাহর হুকুম অমান্য করে বসেন। তাৎক্ষণিক তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-কে ক্ষমা করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুনিয়াতে পাঠান। সে সময় তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে আল্লাহ বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে যে হেদায়াত যাবে, যারা তা অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই’। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রথম মানুষকে তিনি নবী হিসেবে প্রেরণের সাথে সাথে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসুল প্রেরণ করেন এবং সর্বশেষ নবী হলেন আমাদের প্রিয়তম নবী ও সাইয়েদুল মুরসালিন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। আল্লাহতায়ালা সর্বশেষ কিতাব আল কুরআন তাঁর প্রিয়তম নবীর প্রতি নাজিল করেন পবিত্র রমযান মাসের মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল ক্বদরে। কুরআনের বদৌলতে মাস ও রাত হয়ে পড়ে মহাসম্মানিত। ঘোষিত হয় রমযান মাসের একটি ফরজ অন্য সময়ের সত্তরটি ফরজের সমান এবং একটি নফল অন্য সময়ের একটি ফরজের সমান। আর রাত হয়ে পড়ে হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। কুরআন মানার যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে মাসে কুরআন নাজিল হয় সে মাসে রোযা পালন ফরজ করে দেয়া হয়। কুরআন সকল মানুষের জন্য হেদায়াত হলেও এ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য প্রয়োজন তাকওয়া। কুরআনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘ইহা মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত’। আর রোযা ফরজ করার উদ্দেশ্যই হলো তাকওয়ার গুণ অর্জন বা মুত্তাকী বান্দাহ্ তৈরী করা।

আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, রমযান মাস ও লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা ও সম্মান মূলত কুরআনের কারণেই। বিষয়টি একটি বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে আরো স্পষ্ট করা যায়। ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এ দিনটি নানাভাবে উদযাপিত হয়। এ দিনে দেশের কৃতি সন্তানদেরকে তাদের বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়, অসংখ্য কয়েদীদেরকে মুক্তি দেয়া হয়, জেলখানা-হাসপাতাল-ইয়াতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত সম্মান ও মর্যাদা কি নিছক একটি তারিখ হওয়ার কারণে, না একটি ঘটনা সংঘঠিত হয়ে যাওয়ায় দিনটি হয়ে পড়েছে মহাসম্মানিত। ১৯৭১ সালের পূর্বে ২৬ মার্চ আমাদের জীবনে এসেছে। কিন্তু তখন তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ঐ দিনটিতে স্বাধীনতা ঘোষিত হওয়ার প্রেক্ষিতেই আমাদের কাছে মর্যাদাপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রমযান মাস ও লাইলাতুল ক্বদরের বিষয়টিও এমনই। কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলেই মাস ও রাত গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। ২৬ মার্চ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় এবং জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ত্ব রক্ষায় নতুনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। তেমনি লাইলাতুল ক্বদরও মুসলমানদের কাছে এ আহবানই নিয়ে আসে যে, ব্যক্তিগত জীবনে কুরআন মানার সাথে সাথে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় তারা হবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

দুর্ভাগ্যই আমাদের! কুরআনের মত এতবড় নেয়ামতের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আজ আমরা অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত। বিশ্বব্যাপী আমাদের কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই। আল্লাহর দুশমনদের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। আজ ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশে^ নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ত ঝরছে। অথচ আমরা নামায আদায় করি, রোযা পালন করি এবং বরকতের আশায় লাইলাতুল ক্বদরে দন্ডায়মান হই। লাইলাতুল ক্বদরে ফেরেশতার আগমন ঘটে ঠিকই, কিন্তু তারা আমাদের ভাগ্যোন্নয়নের কোন ফয়সালা নিয়ে আসেন না। এর কারণ আমাদের বুঝতে হবে। কারণতো একটিই, স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই আমাদের সকল তৎপরতা সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। লাইলাতুল ক্বদরে আর আমরা কুরআনকে আঁকড়ে ধরার অঙ্গীকার করি না। অথচ প্রয়োজন ছিল কুরআনকে পরিপূর্ণভাবে নিজেদের জীবনে অনুসরণ এবং সমাজজীবনে এর পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালানো। আমরা যদি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম তাহলে গোটা পৃথিবীর কর্তৃত্ব আবার আমাদের হাতে চলে আসতো। এ বোধ-উপলব্ধি আমাদের না থাকলেও আমাদের দুশমনরা ঠিকই উপলব্ধি করে। ফলে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার আওয়াজ উত্থিত হলে ইসলামের দুশমনরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে তা প্রতিহত করার জন্য। হাজারো প্রচার-প্রপাগান্ডার পরও বিশ্বব্যাপী ইসলামের যে পুনর্জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আজ ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) সুদীর্ঘ ১৩টি বছর মক্কায় গোপনে ও প্রকাশ্যে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করেছেন। এ দাওয়াত দানে তিনি এবং তাঁর সাথীরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, কিন্তু কখনই সন্ত্রাসের আশ্রয় নেননি। সকল প্রতিকূল অবস্থায় তিনি তাঁর দাওয়াত অব্যাহত রেখেছেন। মদীনায় ইসলামী সরকার গঠনের পরই তিনি যুদ্ধ করেছেন। ফলে আজ যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাস বা জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে তারা দুশমনদের ক্রীড়নক এবং দেশ, জাতি ও ইসলামের দুশমন। তাদের প্রতি সামান্যতম অনুকম্পা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। এদের কেউ ভাড়াটে, আবার কেউবা বিভ্রান্ত। এ সকল অপতৎপরতা সম্পর্কে আমাদের যুব সমাজকে সচেতন থাকতে হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পন্থায়। দাওয়াত সম্প্রসারণ, চরিত্রগঠন (পরিশুদ্ধি) এবং নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে ও জনগণের সমর্থনেই কেবল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।

লাইলাতুল ক্বদর মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়। আজ আমরা পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবে আছি। শয়তান প্ররোচনা দেয় বাঁচার কোন পথ নেই। শাস্তিতো ভোগ করতেই হবে, তাই দুনিয়ার মজাটা আরো একটু বেশি করে ভোগ করে নাও। কিন্তু ইসলাম তা বলে না। মানুষের ভুল-ত্রুটি হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। ত্রুটি-বিচ্যুতির সাথে সাথে মানুষ যদি অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে, তাহলে আর পূর্বে কৃত অপরাধের জন্য শাস্তিযোগ্য থাকে না। আল্লাহতায়ালার একান্ত প্রত্যাশা যে তাঁর বান্দারা তাঁর কাছে ফিরে আসুক। গুনাহ মাফ করে নেয়ার এক অপূর্ব সুযোগ কুরআন নাজিলের রাত লাইলাতুল ক্বদর। আল্লাহর নাফরমান বান্দারা আবার তাঁর হেদায়াত অনুসরণ করে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের অধিকারী হোক এটা তাঁর একান্ত ইচ্ছা। তাই রসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে কেহ ঈমানের সাথে শুভফল লাভের প্রত্যাশায় লাইলাতুল ক্বদরে দন্ডায়মান হয় আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন’। এ যেন এক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা যাতে আল্লাহর বান্দারা ত্রুটিমুক্ত হয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পারে। আল্লাহর পথে ফিরে আসার একান্ত আকাক্সক্ষা নিয়ে এ পবিত্র রাতে আমাদের তাঁরই দরবারে ধর্ণা দিতে হবে। নিজেকে পরিশুদ্ধ করবার চেষ্টা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে আমাদের ভাগ্যের যে কোন পরিবর্তন হবে না তাতো বাস্তব জীবনেই আমরা লক্ষ্য করছি। আমাদের নামায, রোযা, শবে ক্বদর, রাত্রি জাগরণ কোন কিছুই আমাদের কোন কল্যাণ দিতে পারছে না।

আমাদের এ নিষ্প্রাণ ইবাদত-বন্দেগী যেন এক একটি মরা লাশ। লাশের চোখ-কান-হাত-পা সব কিছুই আছে, কিন্তু রুহ না থাকায় তা মূল্যহীন এবং আমরা তা মাটির গর্তে পুঁতে রাখি। আমাদের ইবাদত-বন্দেগীতে ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নাত-মুস্তাহাব যথাযথভাবে পালিত হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যবিবর্জিত হওয়ায় নিষ্প্রাণ। আজ আর নামায আমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করে দিয়ে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ-কর্ম থেকে বিরত রাখে না এবং রোযাও আল্লাহর ভয় অন্তরে সৃষ্টি করে সকল নাফরমানিমূলক কাজ-কর্ম থেকে মুক্ত রাখতে পারছে না। লাইলাতুল ক্বদরে রাত্রিজাগরণ কুরআনের পথে চলার শক্তি যোগায় না। মূলত মানুষকে সার্বক্ষণিক আল্লাহর গোলামীতে নিয়োজিত করার জন্যেই এসব ইবাদত ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। আমরা সে সব অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি। এ সব চেতনারিক্ত ও উদ্দেশ্যবিবর্জিত আনুষ্ঠানিকতা যে আল্লাহর কাছে মূল্যহীন তা তিনি সূরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ ফেরাও তাতে কোন পুণ্য নেই। বরং প্রকৃত পুণ্য রয়েছে কেহ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কেতাব ও নবীগণে ঈমান আনবে এবং আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রিয় ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্ত কাজে ব্যয় করবে। আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত আদায় করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং অভাব-অনটনে ও হক-বাতিলের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে পরম ধৈর্য অবলম্বন করবে। এরাই সত্যপন্থী এবং এরাই মুত্তাকী’। এখানে ঈমানের সাথে সাথে নেক আমল, আল্লাহর পথে অর্থব্যয় এবং বাতিলের মোকাবেলায় হক প্রতিষ্ঠায় ধৈর্য অবলম্বনসহ বহবিধ গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তিকেই মুত্তাকী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আজ আমাদের লেন-দেন ও আচার-আচরণে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠতা না থাকায় সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে।

শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিম প্রধান একটি দেশ বারবার দুর্নীতিতে প্রথম কাতারে স্থান পাওয়া শুধু লজ্জাজনকই নয় বরং আমাদের বিশ্বাসও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। আখেরাতে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির পক্ষে কি সম্ভব ঘুষ, দুর্নীতি, খাদ্যে ভেজাল বা ফরমালিন মেশানো বা ওজনে কম দেয়াসহ কোন অনৈতিক কাজে সংশ্লিষ্ট হওয়া। পবিত্র রমযান মাসে এবং লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রিতে মসজিদগুলো মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে পড়ার পরও আমাদের নৈতিক অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই। দ্বীন ও দুনিয়ার বিভাজন অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা-চেতনাই যে এর মূল কারণ তাতে কোন সন্দেহ নেই। এদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ অমান্য করবে। তাহলে দুনিয়ার জীবনে রয়েছে জিল্লতি ও আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি’। সারা বিশ্বব্যাপী আজ মুসলমানরা জিল্লতির মধ্যে নিমজ্জিত, আর আখেরাতে ভিন্নতর কিছু যে হবে না তাতো আল্লাহপাকের ঘোষণাতেই রয়েছে।

লাইলাতুল ক্বদরের আর একটি শিক্ষা হলো, যে কুরআনের কারণে একটি রাত এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো সেই কুরআনকে আঁকড়ে ধরা। তাহলে রাতের মত জাতি হিসেবে আমরাও মর্যাদাবান হয়ে পড়বো এবং এর মাধ্যমেই আমাদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার পাওয়া সম্ভব। কুরআন আসছে হেদায়াতের উদ্দেশ্যে এবং দুনিয়ায় সকল বিধি-বিধানের ওপর একে বিজয়ী করার জন্য। দুর্ভাগ্যই মুসলমানদের! আজ আর কুরআন থেকে তারা হেদায়াত তালাশ করে না এবং এর প্রতিষ্ঠাও তাদের জীবনের উদ্দেশ্য নয়। বরং অনেকেই কুরআনের বিধানকে প্রতিরোধই তাদের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। এরা যে কতখানি আল্লাহর রোষানলে সে উপলব্ধিও তারা হারিয়ে ফেলেছে। তাই আজ আল্লাহর বিধান প্রতিরোধের পাশাপাশি যারা এর প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সে সব বরেণ্য আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ এবং ঈমানদারদের প্রতি সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনে একটুও তাদের হৃদয় কাঁপে না। ওরা বধির, ওরা অন্ধ, ওরা আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তির উপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ওদের ব্যাপারেই আল্লাহর কঠোর হুশিয়ারি- ‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অত:পর তাওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি’।

আবার অনেকে স্রেফ তেলাওয়াতকেই যথেষ্ট মনে করে। এর অর্থ বোঝা, নিজের জীবনে অনুসরণ এবং সমাজে প্রতিষ্ঠায় তাদের কোন চিন্তা-চেতনা নেই। দুনিয়ার সবকিছু পড়া হয় জানার জন্য আর কুরআন পড়া হয় নিছক পড়ার জন্য। ইহাও কুরআনের প্রতি এক অবিচার। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ও করুণাময়। একজন সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে তেলাওয়াতই যথেষ্ট হতে পারে। কিন্তু সমাজে যারা চিন্তাশীল-যাদের ওপর সাধারণ মানুষ নির্ভর করে তাদের অতটুকুতে সন্তুষ্ট না হয়ে মাতৃভাষায় কুরআনের মর্ম বোঝা এবং সাধারণ মানুষকে অবহিত করা একান্তই কর্তব্য। মূলত রসুল (সাঃ)-এর দাওয়াত ছিল কুরআনের দিকে অর্থাৎ তিনি মানুষকে কুরআন পড়ে পড়ে শোনাতেন এবং সে অনুসারে মানুষকে পরিশুদ্ধ করতেন। রসুল (সাঃ)-এর অনুসারী হিসেবে আমাদেরও একই দায়িত্ব। কুরআনের প্রতি মুসলমানদের এ অবিচার দেখে বড়ই আক্ষেপ করে লিখেছিলেন ভারতের নবম রাষ্ট্রপতি ড. পন্ডিত শঙ্কর দয়াল শর্মা নিম্নবর্ণিত কয়েকটি চরণ।

যা ছিল প্রাণ সঞ্চালনের গ্রন্থ
হয়ে গেল প্রার্থনার পুস্তক
যা ছিল অধ্যয়নের জন্য
হয়ে গেল আবৃত্তির জন্য
জীবন্তদের বিধান ছিল
হয়ে গেল মৃতদের ছাড়পত্র
জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা ছিল
পড়ে গেল মুর্খদের হাতে
সৃষ্টি বশ করার আহবান ছিল
থেমে গেল মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে
প্রাণহীনকে চেয়েছিল প্রাণবন্ত করতে
লেগে গেল বিদেহীদের পরিত্রাণকল্পে
ওহে মুসলমান! একি তুমি করলে!!
ওঠো, চোখ মেলো আর ভেবে দেখো।

লাইলাতুল ক্বদর বারবার আমাদের মাঝে হাজির হয়। আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহ যে, তিনি তাঁর বান্দাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে নতুন জীবন যাপনের সুযোগ করে দিতে চান। তাই আমাদের উচিত কোন চালাকির আশ্রয় না নিয়ে লাইলাতুল ক্বদরে নিজেদের গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহপাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে পরিপূর্ণভাবে তাঁর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করা। মুসলমান হিসেবে ইসলামে বিশ্বাস, ইসলাম অনুসরণ এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা চালানো ছাড়া আখেরাতে নাজাতের কোন পথ খোলা নেই। তাই এ সত্য উপলব্ধি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের আল্লাহর বিধানের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে তাঁর পথে পরিপূর্ণভাবে ফিরে আসার সুযোগ করে দিন-এ হোক এবারের লাইলাতুল ক্বদরে আমাদের প্রার্থনা। আমিন।

লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।

আরো পড়ুন : মসজিদুল হারামে ১৫ লাখের বেশি মুসল্লি

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

লাইলাতুল ক্বদরের তাৎপর্য

আপডেট সময় ১১:১৭:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী
লাইলাতুল ক্বদর অর্থ মহাসম্মানিত রাত, সৌভাগ্যের রাত এবং ভাগ্যোন্নয়নের রাত। সকল অর্থই এখানে প্রযোজ্য। এ রাতের মর্যাদা প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’। সূরা দুখানে বলা হয়েছে, ‘এ রজনীতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে বিজ্ঞোচিত ফয়সালা করা হয়’। সূরা ক্বদরে আরো বলা হয়েছে, ‘ফেরেশতা ও রুহ এ রাত্রিতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন। সে রাত্রি পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার-ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত’। বুখারি ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত্রিতে ঈমানের সাথে শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হবে আল্লাহ তার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দিবেন’।
উপরে কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতির আলোকে আমরা সহজেই লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। প্রশ্ন জাগে-কেন এ গুরুত্ব? জবাবও আল্লাহ দিয়েছেন-‘নিশ্চয়ই আমি ইহা (কুরআন) ক্বদরের রাত্রিতে নাজিল করেছি’। রমযানের রোযা ফরজ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘রমযান মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হেদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন উপদেশাবলীতে পূর্ণ যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। কাজেই এখন থেকে যারাই এ মাসের সম্মুখীন হবে তাদের একান্ত কর্তব্য পূর্ণ মাস রোযা রাখা’। এতে স্পষ্ট যে কুরআন নাজিলের কারণেই লাইলাতুল ক্বদরের এত মর্যাদা এবং রমযান মাসে রোযা ফরজ করা হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, রমযান মাসের কোন তারিখটি লাইলাতুল ক্বদর। সঠিক তারিখের উল্লেখ কুরআনে না থাকলেও হাদিসে এর বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘নবী করীম (সাঃ) ক্বদরের রাত্রি সম্পর্কে বলেছেন, ‘উহা ২৭তম বা ২৯তম রাত্রি’। হযরত আবু যার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘হযরত ওমর (রাঃ), হযরত হুযাইফা (রাঃ) এবং রসুল (সাঃ)-এর সাহাবীদের মধ্যে বহু সংখ্যকের এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ ছিল না যে, উহা ২৭তম রাত্রি’। হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় রমযান মাসের শেষ দশ রাত্রিতে ইতেকাফ করেছেন। হাদিসের এসব আলোচনার প্রেক্ষিতে পূর্বকালের আলেমদের অধিকাংশই ২৭তম রাত্রিকেই লাইলাতুল ক্বদর বলে মনে করতেন। আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট করে একটি রাত্রি উল্লেখ না থাকায় মনে হয়, মহান আল্লাহ চান লাইলাতুল ক্বদরের খোঁজে তাঁর বান্দারা বেশি বেশি রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে অতিবাহিত করুক।

মানুষের জন্য আল্লাহপাকের হাজারো নেয়ামতের মধ্যে সর্বোত্তম নেয়ামত হচ্ছে হেদায়াত বা পথ প্রদর্শন। মানুষ আল্লাহতায়ালার অত্যন্ত প্রিয় ও সেরা সৃষ্টি। আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে তিনি তাঁকে স্থান দিয়েছিলেন জান্নাতে। শয়তানের প্ররোচনায় তিনি আল্লাহর হুকুম অমান্য করে বসেন। তাৎক্ষণিক তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-কে ক্ষমা করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুনিয়াতে পাঠান। সে সময় তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে আল্লাহ বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে যে হেদায়াত যাবে, যারা তা অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই’। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রথম মানুষকে তিনি নবী হিসেবে প্রেরণের সাথে সাথে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসুল প্রেরণ করেন এবং সর্বশেষ নবী হলেন আমাদের প্রিয়তম নবী ও সাইয়েদুল মুরসালিন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। আল্লাহতায়ালা সর্বশেষ কিতাব আল কুরআন তাঁর প্রিয়তম নবীর প্রতি নাজিল করেন পবিত্র রমযান মাসের মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল ক্বদরে। কুরআনের বদৌলতে মাস ও রাত হয়ে পড়ে মহাসম্মানিত। ঘোষিত হয় রমযান মাসের একটি ফরজ অন্য সময়ের সত্তরটি ফরজের সমান এবং একটি নফল অন্য সময়ের একটি ফরজের সমান। আর রাত হয়ে পড়ে হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। কুরআন মানার যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে মাসে কুরআন নাজিল হয় সে মাসে রোযা পালন ফরজ করে দেয়া হয়। কুরআন সকল মানুষের জন্য হেদায়াত হলেও এ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য প্রয়োজন তাকওয়া। কুরআনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘ইহা মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত’। আর রোযা ফরজ করার উদ্দেশ্যই হলো তাকওয়ার গুণ অর্জন বা মুত্তাকী বান্দাহ্ তৈরী করা।

আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, রমযান মাস ও লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা ও সম্মান মূলত কুরআনের কারণেই। বিষয়টি একটি বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে আরো স্পষ্ট করা যায়। ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এ দিনটি নানাভাবে উদযাপিত হয়। এ দিনে দেশের কৃতি সন্তানদেরকে তাদের বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়, অসংখ্য কয়েদীদেরকে মুক্তি দেয়া হয়, জেলখানা-হাসপাতাল-ইয়াতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত সম্মান ও মর্যাদা কি নিছক একটি তারিখ হওয়ার কারণে, না একটি ঘটনা সংঘঠিত হয়ে যাওয়ায় দিনটি হয়ে পড়েছে মহাসম্মানিত। ১৯৭১ সালের পূর্বে ২৬ মার্চ আমাদের জীবনে এসেছে। কিন্তু তখন তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ঐ দিনটিতে স্বাধীনতা ঘোষিত হওয়ার প্রেক্ষিতেই আমাদের কাছে মর্যাদাপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রমযান মাস ও লাইলাতুল ক্বদরের বিষয়টিও এমনই। কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলেই মাস ও রাত গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। ২৬ মার্চ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় এবং জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ত্ব রক্ষায় নতুনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। তেমনি লাইলাতুল ক্বদরও মুসলমানদের কাছে এ আহবানই নিয়ে আসে যে, ব্যক্তিগত জীবনে কুরআন মানার সাথে সাথে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় তারা হবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

দুর্ভাগ্যই আমাদের! কুরআনের মত এতবড় নেয়ামতের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আজ আমরা অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত। বিশ্বব্যাপী আমাদের কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই। আল্লাহর দুশমনদের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। আজ ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশে^ নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ত ঝরছে। অথচ আমরা নামায আদায় করি, রোযা পালন করি এবং বরকতের আশায় লাইলাতুল ক্বদরে দন্ডায়মান হই। লাইলাতুল ক্বদরে ফেরেশতার আগমন ঘটে ঠিকই, কিন্তু তারা আমাদের ভাগ্যোন্নয়নের কোন ফয়সালা নিয়ে আসেন না। এর কারণ আমাদের বুঝতে হবে। কারণতো একটিই, স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই আমাদের সকল তৎপরতা সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। লাইলাতুল ক্বদরে আর আমরা কুরআনকে আঁকড়ে ধরার অঙ্গীকার করি না। অথচ প্রয়োজন ছিল কুরআনকে পরিপূর্ণভাবে নিজেদের জীবনে অনুসরণ এবং সমাজজীবনে এর পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালানো। আমরা যদি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম তাহলে গোটা পৃথিবীর কর্তৃত্ব আবার আমাদের হাতে চলে আসতো। এ বোধ-উপলব্ধি আমাদের না থাকলেও আমাদের দুশমনরা ঠিকই উপলব্ধি করে। ফলে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার আওয়াজ উত্থিত হলে ইসলামের দুশমনরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে তা প্রতিহত করার জন্য। হাজারো প্রচার-প্রপাগান্ডার পরও বিশ্বব্যাপী ইসলামের যে পুনর্জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আজ ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) সুদীর্ঘ ১৩টি বছর মক্কায় গোপনে ও প্রকাশ্যে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করেছেন। এ দাওয়াত দানে তিনি এবং তাঁর সাথীরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, কিন্তু কখনই সন্ত্রাসের আশ্রয় নেননি। সকল প্রতিকূল অবস্থায় তিনি তাঁর দাওয়াত অব্যাহত রেখেছেন। মদীনায় ইসলামী সরকার গঠনের পরই তিনি যুদ্ধ করেছেন। ফলে আজ যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাস বা জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে তারা দুশমনদের ক্রীড়নক এবং দেশ, জাতি ও ইসলামের দুশমন। তাদের প্রতি সামান্যতম অনুকম্পা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। এদের কেউ ভাড়াটে, আবার কেউবা বিভ্রান্ত। এ সকল অপতৎপরতা সম্পর্কে আমাদের যুব সমাজকে সচেতন থাকতে হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পন্থায়। দাওয়াত সম্প্রসারণ, চরিত্রগঠন (পরিশুদ্ধি) এবং নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে ও জনগণের সমর্থনেই কেবল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।

লাইলাতুল ক্বদর মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়। আজ আমরা পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবে আছি। শয়তান প্ররোচনা দেয় বাঁচার কোন পথ নেই। শাস্তিতো ভোগ করতেই হবে, তাই দুনিয়ার মজাটা আরো একটু বেশি করে ভোগ করে নাও। কিন্তু ইসলাম তা বলে না। মানুষের ভুল-ত্রুটি হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। ত্রুটি-বিচ্যুতির সাথে সাথে মানুষ যদি অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে, তাহলে আর পূর্বে কৃত অপরাধের জন্য শাস্তিযোগ্য থাকে না। আল্লাহতায়ালার একান্ত প্রত্যাশা যে তাঁর বান্দারা তাঁর কাছে ফিরে আসুক। গুনাহ মাফ করে নেয়ার এক অপূর্ব সুযোগ কুরআন নাজিলের রাত লাইলাতুল ক্বদর। আল্লাহর নাফরমান বান্দারা আবার তাঁর হেদায়াত অনুসরণ করে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের অধিকারী হোক এটা তাঁর একান্ত ইচ্ছা। তাই রসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে কেহ ঈমানের সাথে শুভফল লাভের প্রত্যাশায় লাইলাতুল ক্বদরে দন্ডায়মান হয় আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন’। এ যেন এক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা যাতে আল্লাহর বান্দারা ত্রুটিমুক্ত হয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পারে। আল্লাহর পথে ফিরে আসার একান্ত আকাক্সক্ষা নিয়ে এ পবিত্র রাতে আমাদের তাঁরই দরবারে ধর্ণা দিতে হবে। নিজেকে পরিশুদ্ধ করবার চেষ্টা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে আমাদের ভাগ্যের যে কোন পরিবর্তন হবে না তাতো বাস্তব জীবনেই আমরা লক্ষ্য করছি। আমাদের নামায, রোযা, শবে ক্বদর, রাত্রি জাগরণ কোন কিছুই আমাদের কোন কল্যাণ দিতে পারছে না।

আমাদের এ নিষ্প্রাণ ইবাদত-বন্দেগী যেন এক একটি মরা লাশ। লাশের চোখ-কান-হাত-পা সব কিছুই আছে, কিন্তু রুহ না থাকায় তা মূল্যহীন এবং আমরা তা মাটির গর্তে পুঁতে রাখি। আমাদের ইবাদত-বন্দেগীতে ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নাত-মুস্তাহাব যথাযথভাবে পালিত হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যবিবর্জিত হওয়ায় নিষ্প্রাণ। আজ আর নামায আমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করে দিয়ে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ-কর্ম থেকে বিরত রাখে না এবং রোযাও আল্লাহর ভয় অন্তরে সৃষ্টি করে সকল নাফরমানিমূলক কাজ-কর্ম থেকে মুক্ত রাখতে পারছে না। লাইলাতুল ক্বদরে রাত্রিজাগরণ কুরআনের পথে চলার শক্তি যোগায় না। মূলত মানুষকে সার্বক্ষণিক আল্লাহর গোলামীতে নিয়োজিত করার জন্যেই এসব ইবাদত ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। আমরা সে সব অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি। এ সব চেতনারিক্ত ও উদ্দেশ্যবিবর্জিত আনুষ্ঠানিকতা যে আল্লাহর কাছে মূল্যহীন তা তিনি সূরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ ফেরাও তাতে কোন পুণ্য নেই। বরং প্রকৃত পুণ্য রয়েছে কেহ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কেতাব ও নবীগণে ঈমান আনবে এবং আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রিয় ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্ত কাজে ব্যয় করবে। আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত আদায় করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং অভাব-অনটনে ও হক-বাতিলের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে পরম ধৈর্য অবলম্বন করবে। এরাই সত্যপন্থী এবং এরাই মুত্তাকী’। এখানে ঈমানের সাথে সাথে নেক আমল, আল্লাহর পথে অর্থব্যয় এবং বাতিলের মোকাবেলায় হক প্রতিষ্ঠায় ধৈর্য অবলম্বনসহ বহবিধ গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তিকেই মুত্তাকী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আজ আমাদের লেন-দেন ও আচার-আচরণে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠতা না থাকায় সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে।

শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিম প্রধান একটি দেশ বারবার দুর্নীতিতে প্রথম কাতারে স্থান পাওয়া শুধু লজ্জাজনকই নয় বরং আমাদের বিশ্বাসও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। আখেরাতে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির পক্ষে কি সম্ভব ঘুষ, দুর্নীতি, খাদ্যে ভেজাল বা ফরমালিন মেশানো বা ওজনে কম দেয়াসহ কোন অনৈতিক কাজে সংশ্লিষ্ট হওয়া। পবিত্র রমযান মাসে এবং লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রিতে মসজিদগুলো মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে পড়ার পরও আমাদের নৈতিক অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই। দ্বীন ও দুনিয়ার বিভাজন অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা-চেতনাই যে এর মূল কারণ তাতে কোন সন্দেহ নেই। এদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ অমান্য করবে। তাহলে দুনিয়ার জীবনে রয়েছে জিল্লতি ও আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি’। সারা বিশ্বব্যাপী আজ মুসলমানরা জিল্লতির মধ্যে নিমজ্জিত, আর আখেরাতে ভিন্নতর কিছু যে হবে না তাতো আল্লাহপাকের ঘোষণাতেই রয়েছে।

লাইলাতুল ক্বদরের আর একটি শিক্ষা হলো, যে কুরআনের কারণে একটি রাত এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো সেই কুরআনকে আঁকড়ে ধরা। তাহলে রাতের মত জাতি হিসেবে আমরাও মর্যাদাবান হয়ে পড়বো এবং এর মাধ্যমেই আমাদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার পাওয়া সম্ভব। কুরআন আসছে হেদায়াতের উদ্দেশ্যে এবং দুনিয়ায় সকল বিধি-বিধানের ওপর একে বিজয়ী করার জন্য। দুর্ভাগ্যই মুসলমানদের! আজ আর কুরআন থেকে তারা হেদায়াত তালাশ করে না এবং এর প্রতিষ্ঠাও তাদের জীবনের উদ্দেশ্য নয়। বরং অনেকেই কুরআনের বিধানকে প্রতিরোধই তাদের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। এরা যে কতখানি আল্লাহর রোষানলে সে উপলব্ধিও তারা হারিয়ে ফেলেছে। তাই আজ আল্লাহর বিধান প্রতিরোধের পাশাপাশি যারা এর প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সে সব বরেণ্য আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ এবং ঈমানদারদের প্রতি সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনে একটুও তাদের হৃদয় কাঁপে না। ওরা বধির, ওরা অন্ধ, ওরা আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তির উপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ওদের ব্যাপারেই আল্লাহর কঠোর হুশিয়ারি- ‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অত:পর তাওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি’।

আবার অনেকে স্রেফ তেলাওয়াতকেই যথেষ্ট মনে করে। এর অর্থ বোঝা, নিজের জীবনে অনুসরণ এবং সমাজে প্রতিষ্ঠায় তাদের কোন চিন্তা-চেতনা নেই। দুনিয়ার সবকিছু পড়া হয় জানার জন্য আর কুরআন পড়া হয় নিছক পড়ার জন্য। ইহাও কুরআনের প্রতি এক অবিচার। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ও করুণাময়। একজন সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে তেলাওয়াতই যথেষ্ট হতে পারে। কিন্তু সমাজে যারা চিন্তাশীল-যাদের ওপর সাধারণ মানুষ নির্ভর করে তাদের অতটুকুতে সন্তুষ্ট না হয়ে মাতৃভাষায় কুরআনের মর্ম বোঝা এবং সাধারণ মানুষকে অবহিত করা একান্তই কর্তব্য। মূলত রসুল (সাঃ)-এর দাওয়াত ছিল কুরআনের দিকে অর্থাৎ তিনি মানুষকে কুরআন পড়ে পড়ে শোনাতেন এবং সে অনুসারে মানুষকে পরিশুদ্ধ করতেন। রসুল (সাঃ)-এর অনুসারী হিসেবে আমাদেরও একই দায়িত্ব। কুরআনের প্রতি মুসলমানদের এ অবিচার দেখে বড়ই আক্ষেপ করে লিখেছিলেন ভারতের নবম রাষ্ট্রপতি ড. পন্ডিত শঙ্কর দয়াল শর্মা নিম্নবর্ণিত কয়েকটি চরণ।

যা ছিল প্রাণ সঞ্চালনের গ্রন্থ
হয়ে গেল প্রার্থনার পুস্তক
যা ছিল অধ্যয়নের জন্য
হয়ে গেল আবৃত্তির জন্য
জীবন্তদের বিধান ছিল
হয়ে গেল মৃতদের ছাড়পত্র
জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা ছিল
পড়ে গেল মুর্খদের হাতে
সৃষ্টি বশ করার আহবান ছিল
থেমে গেল মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে
প্রাণহীনকে চেয়েছিল প্রাণবন্ত করতে
লেগে গেল বিদেহীদের পরিত্রাণকল্পে
ওহে মুসলমান! একি তুমি করলে!!
ওঠো, চোখ মেলো আর ভেবে দেখো।

লাইলাতুল ক্বদর বারবার আমাদের মাঝে হাজির হয়। আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহ যে, তিনি তাঁর বান্দাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে নতুন জীবন যাপনের সুযোগ করে দিতে চান। তাই আমাদের উচিত কোন চালাকির আশ্রয় না নিয়ে লাইলাতুল ক্বদরে নিজেদের গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহপাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে পরিপূর্ণভাবে তাঁর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করা। মুসলমান হিসেবে ইসলামে বিশ্বাস, ইসলাম অনুসরণ এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা চালানো ছাড়া আখেরাতে নাজাতের কোন পথ খোলা নেই। তাই এ সত্য উপলব্ধি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের আল্লাহর বিধানের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে তাঁর পথে পরিপূর্ণভাবে ফিরে আসার সুযোগ করে দিন-এ হোক এবারের লাইলাতুল ক্বদরে আমাদের প্রার্থনা। আমিন।

লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।

আরো পড়ুন : মসজিদুল হারামে ১৫ লাখের বেশি মুসল্লি