ঢাকা ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শান্তি প্রতিষ্ঠায় দরকার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা

এম. এস. খান

বিশে^র প্রতিটি দেশে রয়েছে মানবাধিকার সনদ। গুরুত্বের সাথে তা প্রণয়ন করলেও এই দেশগুলোই লঙ্ঘন করছে মানবাধিকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গঠিত হয় ইউনাইটেড ন্যাশন, বাংলায় জাতিসংঘ। সর্বস্তরের মানুষের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তথা নারী, পুরুষ, শিশু, নৃজাতি, রিফিউজি, অধিবাসী, রাষ্ট্রবিহীন অধিবাসী, পঙ্গু, অবহেলিত, সব মানুষের অধিকার রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে মানবাধিকার সনদ অনুমোদন হয়েছে। অধিকারকে আমরা দু’ভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো নৈতিক অধিকার, যা মানুষের বিবেকবোধ থেকে আসে। অপরটি হলো আইনগত অধিকার। আইনগত অধিকার আবার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক- এই তিনভাগে ভাগ করা যায়, যেসব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অধিকারের কথা দেশের সংবিধানে উল্লেখ থাকে এবং সরকার কর্তৃক অলঙ্ঘনীয় তাই মৌলিক অধিকার। আর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারই হলো মানবাধিকার।

বর্তমানে মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলা হচ্ছে। ক্ষমতাধর শাসকরা দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকারগুলো অবলীলায় হরণ ও দমন করে চলছে। আর দুর্বল জাতিগুলোর সঙ্গে সবল জাতিগুলোর আচরণ আজকাল মানবাধিকারকে একটি উপহাসের বস্তুতে পরিণত করেছে। ইসরাইলের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সারাবিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে এত সোচ্চার, সেই তাদের ইসরাইলের ক্ষেত্রে এসে মানবাধিকার থমকে যায়। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় যুদ্ধ চাপিয়ে মানুষ হত্যায় তারা মেতে উঠেছিল।

সেখানে যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তা নিয়ে কেন ভাবেনি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মানুষ নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা হলেও তা নিয়ে কোনো কথা বলে না। তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা বিদ্যমান, মানুষ হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু থেকে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকাও এখন স্পষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানেই তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠে। মানবাধিকার নিয়ে তাদের এই একচোখা নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মানবাধিকারের কথা বলা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের স্বার্থের অনুকূলে মানবাধিকারের ছবক দেয়া মানায় না, ফিলিস্তিনে ইসররাইল প্রায় প্রতিদিন যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইসরাইল যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার শত্রু হিসেবে বিবেচিত, তা আমলে নিচ্ছে না। জাতিসংঘও চুপ করে বসে আছে।

সবখানেই চলছে অধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব, এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। শুধু ক্ষমতার লোভে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বিশ্বের রাজনীতিকরা। সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করছে মানবতার কথিত রক্ষকরাই। গোটা বিশ্বের মানবতা আজ বিবেকের কাঠগড়ায়। মানবতা আজ বিবেক, আদর্শ আর নীতিনৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত নয় বরং তা অন্যদের বঞ্চিত করে নিজ দেশ আর সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। সভ্যতার বিকশিত সময় ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগেও মনুষ্য সমাজে সহিংসতা, রক্তপাত, হানাহানি, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা আর উন্মাদনার যে চিত্র প্রায় নিত্য ফুটে উঠছে, এতে মানবতা আজ বিপন্ন। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার। হিংসা-হানাহানি ভুলে ঐক্যের পতাকাতলে সবাইকে সমবেত হতে হবে, গড়ে তুলতে হবে নিরাপদ আবাসভূমি। অধিকার বঞ্চিত যেন হয় একটি মানুষ, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া বিশে^র সকল রাষ্ট্রপ্রধানদের নৈতিক দায়িত্ব।

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

শান্তি প্রতিষ্ঠায় দরকার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা

আপডেট সময় ১১:২৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

এম. এস. খান

বিশে^র প্রতিটি দেশে রয়েছে মানবাধিকার সনদ। গুরুত্বের সাথে তা প্রণয়ন করলেও এই দেশগুলোই লঙ্ঘন করছে মানবাধিকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গঠিত হয় ইউনাইটেড ন্যাশন, বাংলায় জাতিসংঘ। সর্বস্তরের মানুষের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তথা নারী, পুরুষ, শিশু, নৃজাতি, রিফিউজি, অধিবাসী, রাষ্ট্রবিহীন অধিবাসী, পঙ্গু, অবহেলিত, সব মানুষের অধিকার রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে মানবাধিকার সনদ অনুমোদন হয়েছে। অধিকারকে আমরা দু’ভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো নৈতিক অধিকার, যা মানুষের বিবেকবোধ থেকে আসে। অপরটি হলো আইনগত অধিকার। আইনগত অধিকার আবার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক- এই তিনভাগে ভাগ করা যায়, যেসব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অধিকারের কথা দেশের সংবিধানে উল্লেখ থাকে এবং সরকার কর্তৃক অলঙ্ঘনীয় তাই মৌলিক অধিকার। আর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারই হলো মানবাধিকার।

বর্তমানে মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলা হচ্ছে। ক্ষমতাধর শাসকরা দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকারগুলো অবলীলায় হরণ ও দমন করে চলছে। আর দুর্বল জাতিগুলোর সঙ্গে সবল জাতিগুলোর আচরণ আজকাল মানবাধিকারকে একটি উপহাসের বস্তুতে পরিণত করেছে। ইসরাইলের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সারাবিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে এত সোচ্চার, সেই তাদের ইসরাইলের ক্ষেত্রে এসে মানবাধিকার থমকে যায়। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় যুদ্ধ চাপিয়ে মানুষ হত্যায় তারা মেতে উঠেছিল।

সেখানে যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তা নিয়ে কেন ভাবেনি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মানুষ নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা হলেও তা নিয়ে কোনো কথা বলে না। তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা বিদ্যমান, মানুষ হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু থেকে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকাও এখন স্পষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানেই তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠে। মানবাধিকার নিয়ে তাদের এই একচোখা নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মানবাধিকারের কথা বলা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের স্বার্থের অনুকূলে মানবাধিকারের ছবক দেয়া মানায় না, ফিলিস্তিনে ইসররাইল প্রায় প্রতিদিন যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইসরাইল যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার শত্রু হিসেবে বিবেচিত, তা আমলে নিচ্ছে না। জাতিসংঘও চুপ করে বসে আছে।

সবখানেই চলছে অধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব, এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। শুধু ক্ষমতার লোভে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বিশ্বের রাজনীতিকরা। সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করছে মানবতার কথিত রক্ষকরাই। গোটা বিশ্বের মানবতা আজ বিবেকের কাঠগড়ায়। মানবতা আজ বিবেক, আদর্শ আর নীতিনৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত নয় বরং তা অন্যদের বঞ্চিত করে নিজ দেশ আর সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। সভ্যতার বিকশিত সময় ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগেও মনুষ্য সমাজে সহিংসতা, রক্তপাত, হানাহানি, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা আর উন্মাদনার যে চিত্র প্রায় নিত্য ফুটে উঠছে, এতে মানবতা আজ বিপন্ন। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার। হিংসা-হানাহানি ভুলে ঐক্যের পতাকাতলে সবাইকে সমবেত হতে হবে, গড়ে তুলতে হবে নিরাপদ আবাসভূমি। অধিকার বঞ্চিত যেন হয় একটি মানুষ, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া বিশে^র সকল রাষ্ট্রপ্রধানদের নৈতিক দায়িত্ব।