ঢাকা ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাথমিক শিক্ষায় মানোন্নয়নে Triple Action Team গঠন

ভূমিকা:
প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের মানসিক, সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের মূল ভিত্তি। আর এই বিকাশের জন্য Triple Action Team খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে Triple Action Team গঠন একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে।
Triple Action Team কী?
Triple Action Team হলো Teacher, Student, ও Guardian এর সমন্বয়ে গঠিত একটি কার্যকরী Team। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত পাঠ যেমন Homework বা বাড়ির কাজ আদায়ে এটি একটি কার্যকরী পদ্ধতি। শুধুমাত্র একজন শিক্ষক অথবা একজন শিক্ষার্থী যেমন তার নিজস্ব মানোন্নয়ন করতে পারে না তেমনই  শুধুমাত্র একজন অভিভাবকও তার সন্তানের পড়ালেখার মানোন্নয়ন করতে পারে না। তাই এই তিনের সমন্বয় যদি ঘটে তবে পড়াশোনা অনেক ফলপ্রসূ হবে।
Triple Action Team গঠনের প্রক্রিয়াঃ
১. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রথানুযায়ী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধান হিসেবে মনোনীত করতে হবে।
২. অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনঃ অভিভাবকদের মধ্যে থেকে একজন দায়িত্বশীল ও সচেতন ব্যক্তিকে বেছে নিতে হবে।
৩. SMC’র সদস্য নির্বাচনঃ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন এক সদস্য এই দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
কার্যকারিতা:
Triple Action Team শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে। একজন শিক্ষার্থীর কী কী সমস্যা রয়েছে, সেসবই অভিভাবকদের সাথে অন্তত একদিন পর্যলোচনা করা প্রয়োজন। আর এই Triple Action Team-এর প্রধান ভূমিকায় থাকবেন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক – এই তিনের সম্মিলনে পাটদান ও বাড়ির কাজ আদায় করা হলে ১০০% ফলাফল অর্জন করা সম্ভব। পরিবারে যে শিক্ষার্থী নির্ভয়ে নিজের কথা বলতে পারে না, সে একইভাবে বিদ্যালয়ের বা পরিবারের বাইরেও কথা বলতে পারবে না। তাই শিশুর অংশগ্রহণের বা শিক্ষার অন্তর্ভুক্তির প্রাথমিক স্তর হচ্ছে পরিবার ও বিদ্যালয়।
সমস্যা সমাধান ও সহযোগিতা: শিশুরা আনন্দের মাধ্যমে শেখে। সারাদিন শুধু পড়ালেখার বোঝা চাপিয়ে দিলে তার ফল মোটেও ভালো হয় না। বরং শিক্ষার মানের আরো অবনতি হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ের একটি বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা থাকতে হবে, সেখানে শিক্ষা সফর, বনভোজন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ, স্কাউটিং এ বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। যে সকল বিদ্যালয় এগুলোর উপর বেশি জোর দেয়, দিনশেষে সেই বিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যায় এবং মান ভালো হয়। আর উপরোক্ত কার্যক্রম গুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে অভিভাবকদের ভালো করে অবহিত করতে হবে। তাদেরকে বাস্তবায়ন করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রথমে কিছুটা অনীহা থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে Triple বা ত্রিমুখী সহযোগিতার কারণে সব ধরনের সমস্যা দূর হবে।সব ছাত্রছাত্রীও খুব আনন্দের সাথে পাঠ গ্রহণ করে এবং কাজে আনন্দ পায়। এর ফলেই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আনন্দ করে, মজা করে শিক্ষালাভ করে। তখন তারা মনে করে না যে তারা বিদ্যালয়ে আছে। তারা মনে করে যে তারা কোনো পিকনিক পার্কে আছে।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায়, Triple action team এর সমন্বয়ে আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষাদান এবং বিদ্যালয় এলাকার সকল জনগণ, অভিভাবক, মায়েরা, শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে মিলে আনন্দঘন শিক্ষার জন্য সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসি। তবেই আমাদের শিশুরা আর বাড়িতে বসে থাকতে চাইবে না। তারা বিদ্যালয়ে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবে আর বিদ্যালয়ে আসলে বাড়ি যেতে চাইবে না। যার ফলে তাদের সকল ভয় ভীতি দূর হবে এবং শিখন স্থায়ী হবে। আর শিক্ষার্থীরা মোটেও ঝরে পড়বে না এবং দিনে দিনে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জিত হবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনে উচ্চশিক্ষা লাভ করে মানুষের মত মানুষ হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, ভেলাপুকুরি সপ্রাবি, বোদা,পঞ্চগড়।
ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

প্রাথমিক শিক্ষায় মানোন্নয়নে Triple Action Team গঠন

আপডেট সময় ০৭:২৮:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভূমিকা:
প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের মানসিক, সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের মূল ভিত্তি। আর এই বিকাশের জন্য Triple Action Team খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে Triple Action Team গঠন একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে।
Triple Action Team কী?
Triple Action Team হলো Teacher, Student, ও Guardian এর সমন্বয়ে গঠিত একটি কার্যকরী Team। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত পাঠ যেমন Homework বা বাড়ির কাজ আদায়ে এটি একটি কার্যকরী পদ্ধতি। শুধুমাত্র একজন শিক্ষক অথবা একজন শিক্ষার্থী যেমন তার নিজস্ব মানোন্নয়ন করতে পারে না তেমনই  শুধুমাত্র একজন অভিভাবকও তার সন্তানের পড়ালেখার মানোন্নয়ন করতে পারে না। তাই এই তিনের সমন্বয় যদি ঘটে তবে পড়াশোনা অনেক ফলপ্রসূ হবে।
Triple Action Team গঠনের প্রক্রিয়াঃ
১. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রথানুযায়ী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধান হিসেবে মনোনীত করতে হবে।
২. অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনঃ অভিভাবকদের মধ্যে থেকে একজন দায়িত্বশীল ও সচেতন ব্যক্তিকে বেছে নিতে হবে।
৩. SMC’র সদস্য নির্বাচনঃ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন এক সদস্য এই দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
কার্যকারিতা:
Triple Action Team শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে। একজন শিক্ষার্থীর কী কী সমস্যা রয়েছে, সেসবই অভিভাবকদের সাথে অন্তত একদিন পর্যলোচনা করা প্রয়োজন। আর এই Triple Action Team-এর প্রধান ভূমিকায় থাকবেন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক – এই তিনের সম্মিলনে পাটদান ও বাড়ির কাজ আদায় করা হলে ১০০% ফলাফল অর্জন করা সম্ভব। পরিবারে যে শিক্ষার্থী নির্ভয়ে নিজের কথা বলতে পারে না, সে একইভাবে বিদ্যালয়ের বা পরিবারের বাইরেও কথা বলতে পারবে না। তাই শিশুর অংশগ্রহণের বা শিক্ষার অন্তর্ভুক্তির প্রাথমিক স্তর হচ্ছে পরিবার ও বিদ্যালয়।
সমস্যা সমাধান ও সহযোগিতা: শিশুরা আনন্দের মাধ্যমে শেখে। সারাদিন শুধু পড়ালেখার বোঝা চাপিয়ে দিলে তার ফল মোটেও ভালো হয় না। বরং শিক্ষার মানের আরো অবনতি হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ের একটি বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা থাকতে হবে, সেখানে শিক্ষা সফর, বনভোজন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ, স্কাউটিং এ বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। যে সকল বিদ্যালয় এগুলোর উপর বেশি জোর দেয়, দিনশেষে সেই বিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যায় এবং মান ভালো হয়। আর উপরোক্ত কার্যক্রম গুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে অভিভাবকদের ভালো করে অবহিত করতে হবে। তাদেরকে বাস্তবায়ন করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রথমে কিছুটা অনীহা থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে Triple বা ত্রিমুখী সহযোগিতার কারণে সব ধরনের সমস্যা দূর হবে।সব ছাত্রছাত্রীও খুব আনন্দের সাথে পাঠ গ্রহণ করে এবং কাজে আনন্দ পায়। এর ফলেই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আনন্দ করে, মজা করে শিক্ষালাভ করে। তখন তারা মনে করে না যে তারা বিদ্যালয়ে আছে। তারা মনে করে যে তারা কোনো পিকনিক পার্কে আছে।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায়, Triple action team এর সমন্বয়ে আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষাদান এবং বিদ্যালয় এলাকার সকল জনগণ, অভিভাবক, মায়েরা, শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে মিলে আনন্দঘন শিক্ষার জন্য সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসি। তবেই আমাদের শিশুরা আর বাড়িতে বসে থাকতে চাইবে না। তারা বিদ্যালয়ে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবে আর বিদ্যালয়ে আসলে বাড়ি যেতে চাইবে না। যার ফলে তাদের সকল ভয় ভীতি দূর হবে এবং শিখন স্থায়ী হবে। আর শিক্ষার্থীরা মোটেও ঝরে পড়বে না এবং দিনে দিনে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জিত হবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনে উচ্চশিক্ষা লাভ করে মানুষের মত মানুষ হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, ভেলাপুকুরি সপ্রাবি, বোদা,পঞ্চগড়।