আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে দেশে ‘অনেক গণ্ডগোলের’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে ‘অগ্নি সোশাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশ’ এর যৌথ উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দেশে অনেক গণ্ডগোল হবে। ভারতে আশ্রয় নেওয়া মাফিয়া নেত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে লন্ডভন্ড করার জন্যে, নির্বাচনকে বানচালের জন্যে অনেক সহিংস ঘটনার অবতারণা করবেন।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। আমরা দলমত নির্বিশেষে দেশবাসী সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই মাফিয়াদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করব, আজকের দিনে এই হোক অঙ্গীকার।’
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘এবারের নির্বাচন হবে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য, এবারের নির্বাচন হবে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য, এবারের নির্বাচন হবে এই হাসিনা মার্কা-আওয়ামী লীগ মার্কা দুঃশাসনকে চিরতরে নির্বাসনে দেবার জন্যে। সরকারের কাছে আহ্বান রইল, আপনারা এমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, যাকে নিয়ে দেশবাসী গর্ব করতে পারে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে, আমি আশা করব—একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণরায় প্রতিফলিত হবে। এই নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে। অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য এবং সুষ্ঠু নির্বাচন পাওয়ার জন্য।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এদেশের পুলিশ বাহিনী একটি পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল, বাংলাদেশ একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এক বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও পুলিশ বাহিনীতে কোনো সংস্কার হয়নি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই বাহিনী সঠিকভাবে আসন্ন নির্বাচন করতে পারবে কিনা, এ নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, র্যাবকে নির্বাচনের দায়িত্বে রাখা হবে। কিন্তু এই বাহিনীকে এখনও রাখা হলো কেন? বিএনপি থেকে যে একটা পুলিশ সংস্কার একটি কমিটি করা হয়েছিল, আমি সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। আমরা সুপারিশ করেছিলাম এই র্যাবকে বিলুপ্ত করে দেবার জন্যে। এত কলঙ্ক তারা লেপন করেছে, এত অত্যাচার-নির্যাতন করেছে এই বাহিনী সম্পর্কে উপযুক্ত কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখতে পারছি না।’
সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকার প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য যারা আছেন, তারা নিসন্দেহে ভালো লোক, কৃতি মানুষ। কিন্তু রাজনীতিতে একেবারেই অনভিজ্ঞ। অবশেষে, তাদের বোধদয় হয়েছে—নির্বাচিত সরকার ছাড়া বাংলাদেশের জনগণের এসব সমস্যার সমাধান কেউ করতে পারবে না। দেরিতে হলেও তারা উপলব্ধি করেছেন এবং প্রফেসর ইউনূস আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসে লন্ডনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে, এই প্রতিশ্রুতি পালন করার জন্য আমি প্রফেসর ইউনূসকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আশার করব, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন।’
বিএনপিনেতা হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনে সাধারণ মানুষ একজন ব্যক্তিকে ভোট দিতে চায়। যে দেশের মানুষের পাশে থাকবেন, যার কাছে গেলে পুলিশের অত্যাচার, সমাজপতিদের অত্যাচার, গ্রামাঞ্চলে বা শহরাঞ্চলে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, এমন একজন ব্যক্তিকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করলে তিনি হবেন তাদের কাছে আপাতত প্রধান আশ্রয়স্থল। জনগণ এভাবে সচেতন হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলো এতখানি পরিপক্কতার পরিচয় এত বছর দিতে পারে নাই—কেবল প্রতীকে ভোট দিলেই তাদের সমস্যার সমাধান হবে। ফলে সরাসরি ভোটের নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তনে আমরা কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ দেখি না।’
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ধরেই নিয়েছে, নির্বাচনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, তাদের পক্ষে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়। এই নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য তারা পি আর সিস্টেমের কথা বলে।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা ভেবেছে, বাংলাদেশের মানুষের স্মরণ শক্তি খুবই দুর্বল। ১৯৭১ সালে আন্দোলনের সময়ে এই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল। আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে, ৮১ বছর। সুতরাং সেদিনের কথা মনে আছে, আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি হয়েছিল। সেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল জামায়াতে ইসলামী, একাত্তর সালেও মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা বিরোধিতা করেছে। এখন তারা নতুন নতুন বাণী নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।’
অগ্নিসেনা সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তালুকদার জহিরুল হক তুহিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও বিএনপি নেতা রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলালসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।