ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদুল আজহা সবার জীবনে কল্যাণ বয়ে আনুক

আগামী ১৭ই জুন, রোববার পারিত হবে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পরম আনন্দের একটি দিন। সারা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা লাভে গৃহপালিত পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহর কাছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও হজরত ইসমাইল আ: এর সুমহান ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির মহিমা আমাদের অন্তর্লোকের সঙ্কীর্ণতা ধুয়ে দেয়। ইসলামের এ মহান চেতনা ধারণ করে ত্যাগ, ধৈর্য ও তিতিক্ষার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষায় আমরা ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনকে গৌরবান্বিত করে তুলতে পারি।

সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক, মুকিম (মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি) ব্যক্তি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিসাব (সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা সেই পরিমাণ নগদ অর্থ) পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য জাকাতের নিসাবের মতো সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়; বরং যে অবস্থায় সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ওই অবস্থায় কোরবানিও ওয়াজিব হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, পঞ্চম খণ্ড; মুফতি কিফায়তুল্লাহ দেহলভী, কিফায়তুল মুফতি, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩; মুফতি তাকি ওসমানী, দারসে তিরমিজি, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১১৪-১১৫)

হজরত ইবরাহিমের আ:-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুসলিম সমাজে পশু কোরবানির প্রবর্তন হয়েছে। এটি আল্লাহর প্রেম ও তাঁর কাছে আত্মনিবেদনের এক অনন্য প্রতীক। এ প্রসঙ্গে নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করবে না, সে যেন আমার ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ; ইবনে কুদামাহ, আল মুঘনি, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬১৭)
আমাদের দেশে কোরবানির ঈদে নতুন করে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন পাড়া বা গোষ্ঠীভিত্তিক সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার চিত্র লক্ষ করা যায়। নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরিক করা ঈদুল আজহার শিক্ষা। কোরবানিকৃত পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করে এক অংশ নিজের জন্য সংরক্ষণ, দ্বিতীয় অংশ আত্মীয়-স্বজনকে প্রদান এবং তৃতীয় অংশ সমাজের অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া ইসলামের বিধান। আল্লাহ তায়ালা কোরবানির পশুর গোশতের একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। (আল কুরআন, সূরা হজ : ২৭, ২৮, ৩৬) যারা কোরবানি দিতে পারবেন না, তাদের আনন্দে শামিল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকতে হবে। এটি দ্বীন-দুঃখী, গরিব-মিসকিনসহ যত বেশি অভাবী মানুষকে দেয়া যায় তত উত্তম। মনে রাখতে হবে, কোরবানি আল্লাহর হুকুম ও কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশিত ইবাদত।

মুসলমানদের জীবনে ঈদুল আজহার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের জীবন আর ধর্ম একই সূত্রে গাঁথা। তাই ঈদ শুধু আনন্দের উৎস নয়; বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে কর্তব্যবোধ, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধে বৈশিষ্ট্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততার ভাবটি এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এলাকার লোকেরা ঈদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট ঈদগাহে সমবেত হয়। এতে সবার মধ্যে একাত্মতা ও সম্প্রীতি ফুটে ওঠে- ইসলামের মহান ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্দীপ্ত হয়। পরস্পর কোলাকুলির মাধ্যমে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর ভাই বলে গৃহীত হয়। ধনী-গরিবের ব্যবধান তখন প্রাধান্য পায় না। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়। এর ফলে ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়স্বজন সবাই পরস্পর ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। ঈদ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভোলার জন্য, মানুষের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার জন্য পরম মিলনের বাণী নিয়ে আসে। ঈদুল আজহার যে কোরবানি দেয়া হয় তার মাধ্যমে মানুষের মনের পরীক্ষা হয়, কোরবানির রক্ত-গোশত কখনো আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। শুধু দেখা হয় মানুষের হৃদয়। ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়। পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন।

পবিত্র ঈদুল আযহা সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশে^। হিংসা-হানাহানি ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হোক সবাই। সাপ্তাহিক চলমান বার্তার পক্ষ থেকে সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভাশিস। ঈদ মোবারক।

আরো পড়ুন : বেনজীর, আজিজের ‘দুর্নীতি’ ও ভারতে এমপি খুন; সরকারের করণীয়

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ঈদুল আজহা সবার জীবনে কল্যাণ বয়ে আনুক

আপডেট সময় ০৯:১০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

আগামী ১৭ই জুন, রোববার পারিত হবে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পরম আনন্দের একটি দিন। সারা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা লাভে গৃহপালিত পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহর কাছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও হজরত ইসমাইল আ: এর সুমহান ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির মহিমা আমাদের অন্তর্লোকের সঙ্কীর্ণতা ধুয়ে দেয়। ইসলামের এ মহান চেতনা ধারণ করে ত্যাগ, ধৈর্য ও তিতিক্ষার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষায় আমরা ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনকে গৌরবান্বিত করে তুলতে পারি।

সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক, মুকিম (মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি) ব্যক্তি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিসাব (সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা সেই পরিমাণ নগদ অর্থ) পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য জাকাতের নিসাবের মতো সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়; বরং যে অবস্থায় সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ওই অবস্থায় কোরবানিও ওয়াজিব হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, পঞ্চম খণ্ড; মুফতি কিফায়তুল্লাহ দেহলভী, কিফায়তুল মুফতি, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩; মুফতি তাকি ওসমানী, দারসে তিরমিজি, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১১৪-১১৫)

হজরত ইবরাহিমের আ:-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুসলিম সমাজে পশু কোরবানির প্রবর্তন হয়েছে। এটি আল্লাহর প্রেম ও তাঁর কাছে আত্মনিবেদনের এক অনন্য প্রতীক। এ প্রসঙ্গে নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করবে না, সে যেন আমার ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ; ইবনে কুদামাহ, আল মুঘনি, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬১৭)
আমাদের দেশে কোরবানির ঈদে নতুন করে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন পাড়া বা গোষ্ঠীভিত্তিক সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার চিত্র লক্ষ করা যায়। নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরিক করা ঈদুল আজহার শিক্ষা। কোরবানিকৃত পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করে এক অংশ নিজের জন্য সংরক্ষণ, দ্বিতীয় অংশ আত্মীয়-স্বজনকে প্রদান এবং তৃতীয় অংশ সমাজের অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া ইসলামের বিধান। আল্লাহ তায়ালা কোরবানির পশুর গোশতের একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। (আল কুরআন, সূরা হজ : ২৭, ২৮, ৩৬) যারা কোরবানি দিতে পারবেন না, তাদের আনন্দে শামিল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকতে হবে। এটি দ্বীন-দুঃখী, গরিব-মিসকিনসহ যত বেশি অভাবী মানুষকে দেয়া যায় তত উত্তম। মনে রাখতে হবে, কোরবানি আল্লাহর হুকুম ও কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশিত ইবাদত।

মুসলমানদের জীবনে ঈদুল আজহার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের জীবন আর ধর্ম একই সূত্রে গাঁথা। তাই ঈদ শুধু আনন্দের উৎস নয়; বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে কর্তব্যবোধ, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধে বৈশিষ্ট্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততার ভাবটি এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এলাকার লোকেরা ঈদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট ঈদগাহে সমবেত হয়। এতে সবার মধ্যে একাত্মতা ও সম্প্রীতি ফুটে ওঠে- ইসলামের মহান ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্দীপ্ত হয়। পরস্পর কোলাকুলির মাধ্যমে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর ভাই বলে গৃহীত হয়। ধনী-গরিবের ব্যবধান তখন প্রাধান্য পায় না। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়। এর ফলে ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়স্বজন সবাই পরস্পর ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। ঈদ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভোলার জন্য, মানুষের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার জন্য পরম মিলনের বাণী নিয়ে আসে। ঈদুল আজহার যে কোরবানি দেয়া হয় তার মাধ্যমে মানুষের মনের পরীক্ষা হয়, কোরবানির রক্ত-গোশত কখনো আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। শুধু দেখা হয় মানুষের হৃদয়। ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়। পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন।

পবিত্র ঈদুল আযহা সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশে^। হিংসা-হানাহানি ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হোক সবাই। সাপ্তাহিক চলমান বার্তার পক্ষ থেকে সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভাশিস। ঈদ মোবারক।

আরো পড়ুন : বেনজীর, আজিজের ‘দুর্নীতি’ ও ভারতে এমপি খুন; সরকারের করণীয়