ঢাকা ১০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপজেলা নির্বাচন; অবহেলিত আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা!

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো চলতি উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের হাই কমাণ্ড থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। স্বতন্ত্রের বড় একটা অংশ নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকেরা কড়াভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা তাদের আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু দলের হাই কমাণ্ডের নির্দেশ অমান্য করে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা গণহারে তাদের আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।

বিগত নির্বাচনগুলোতে নেতাদের একটা বিষয় বদ্ধমুল ধারণা হয়েছে, সরকারের আনুকূল্যে বা ক্ষমতাসীন দলের টিকেটে মনোনয়ন পেলে বিজয় সুনিশ্চিত। যদিও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ব্যত্যয় হয়েছে। নৌকা প্রতীককে হারিয়ে ৬২জন সতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারপরও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মনে বিশ^াস, ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেলে জয় পাওয়াটা বেশ সহজ।

আমাদের দেশে রাজনীতিতে উত্তরাধিকার নির্বাচনের এক অসম প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা তাদের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর সেলক্ষ্যে উপজেলা নির্বাচনে স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা ও আত্মীয়স্বজনদের মনোনয়নের ব্যবস্থা করছেন, সহযোগিতা করছেন। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। এর ফলে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন, এভাবে মন্ত্রী-এমপিরা দলীয় নির্দেশ অমান্য করে যদি প্রভাব বিস্তার করেন, তাহলে নিজেদের মধ্যেই সংঘাতের সৃষ্টি হবে। ফলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা আর সম্ভব হবে না; যা দেশ-বিদেশে সমালোচনার জন্ম দেবে।

উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে দলের কেন্দ্র থেকে সবার উদ্দেশে কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যদি কেউ ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে কেউ ব্যর্থ হলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। ভবিষ্যতে দলীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থাতেই উপজেলা নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন না। এমনিতেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রবিমুখ হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে এমন কিছু দল ছাড়া অধিকাংশ বিরোধীদল এ সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না। এ নিয়ে অনেক বদনামও আছে। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে এ বদনাম ঘোচাতে। সরকার চাচ্ছে এমন একটি নির্বাচন করতে, যাতে দেশের মানুষের ভোটের প্রতি আস্থা ফিরে আসে। তারা চাচ্ছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থীরা যেন জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন।

এবারের উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আগের ধারাবাহিকতা অনুসরণ না করে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য হলো, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি এ নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা। জাতীয় নির্বাচনের পরপরই সরকার আর বদনাম নিতে রাজি নয়। দলের প্রভাবশালীরা যাতে প্রশাসনকে প্রভাবিত করতে না পারেন, এজন্য সরকার স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া জেলা-উপজেলার প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বলেছে। এ বিষয়গুলো পুরোপুরি মেনে চললে বিএনপি’র অনুপস্থিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে আমরা, আমরাই যে একটা স্বস্তিদায়ক উপলব্ধি বিরাজ করছে- সেটি আর থাকবে না। তাছাড়া প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকায় ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন।

আরো  পড়ুন : তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

উপজেলা নির্বাচন; অবহেলিত আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা!

আপডেট সময় ০৮:১২:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০২৪

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো চলতি উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের হাই কমাণ্ড থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। স্বতন্ত্রের বড় একটা অংশ নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকেরা কড়াভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা তাদের আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু দলের হাই কমাণ্ডের নির্দেশ অমান্য করে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা গণহারে তাদের আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।

বিগত নির্বাচনগুলোতে নেতাদের একটা বিষয় বদ্ধমুল ধারণা হয়েছে, সরকারের আনুকূল্যে বা ক্ষমতাসীন দলের টিকেটে মনোনয়ন পেলে বিজয় সুনিশ্চিত। যদিও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ব্যত্যয় হয়েছে। নৌকা প্রতীককে হারিয়ে ৬২জন সতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারপরও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মনে বিশ^াস, ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেলে জয় পাওয়াটা বেশ সহজ।

আমাদের দেশে রাজনীতিতে উত্তরাধিকার নির্বাচনের এক অসম প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা তাদের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর সেলক্ষ্যে উপজেলা নির্বাচনে স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা ও আত্মীয়স্বজনদের মনোনয়নের ব্যবস্থা করছেন, সহযোগিতা করছেন। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। এর ফলে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন, এভাবে মন্ত্রী-এমপিরা দলীয় নির্দেশ অমান্য করে যদি প্রভাব বিস্তার করেন, তাহলে নিজেদের মধ্যেই সংঘাতের সৃষ্টি হবে। ফলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা আর সম্ভব হবে না; যা দেশ-বিদেশে সমালোচনার জন্ম দেবে।

উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে দলের কেন্দ্র থেকে সবার উদ্দেশে কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যদি কেউ ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে কেউ ব্যর্থ হলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। ভবিষ্যতে দলীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থাতেই উপজেলা নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন না। এমনিতেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রবিমুখ হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে এমন কিছু দল ছাড়া অধিকাংশ বিরোধীদল এ সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না। এ নিয়ে অনেক বদনামও আছে। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে এ বদনাম ঘোচাতে। সরকার চাচ্ছে এমন একটি নির্বাচন করতে, যাতে দেশের মানুষের ভোটের প্রতি আস্থা ফিরে আসে। তারা চাচ্ছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থীরা যেন জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন।

এবারের উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আগের ধারাবাহিকতা অনুসরণ না করে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য হলো, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি এ নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা। জাতীয় নির্বাচনের পরপরই সরকার আর বদনাম নিতে রাজি নয়। দলের প্রভাবশালীরা যাতে প্রশাসনকে প্রভাবিত করতে না পারেন, এজন্য সরকার স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া জেলা-উপজেলার প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বলেছে। এ বিষয়গুলো পুরোপুরি মেনে চললে বিএনপি’র অনুপস্থিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে আমরা, আমরাই যে একটা স্বস্তিদায়ক উপলব্ধি বিরাজ করছে- সেটি আর থাকবে না। তাছাড়া প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকায় ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন।

আরো  পড়ুন : তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ