ঢাকা ০২:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনী পরিবেশ উন্নত হোক

নির্বাচন কমিশনের দেয়া পূর্বভাস মোতাবেক আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন। সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষমতাসীন নেতারা বার বার দাবি করছেন এই নির্বাচন হবে সুষ্ঠু। কিন্তু বিরোধী শিবির তাতে কোনোভাবেই আশ^স্ত হতে পারছে না। তারা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপর্যস্তভাবে হেরে তারা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়া সঠিক ছিল। অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে যেতে মোটেই আস্থা পাচ্ছে না।

বছরের শুরু থেকেই আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিদেশীরাও আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। এমনকি বিদেশী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সফর ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং আরো হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া এবং ভারত রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশকে চীনা বলয় থেকে বের করে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র জোর চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের মঙ্গলের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক ফায়দার জন্যই আমাদের নির্বাচন নিয়ে এত উদগ্রীব বলে অনেকেই ধারণা করছেন। চীন ও রাশিয়াকেও মাঝে-মধ্যেই এ বিষয়ে বেশ সরব হতে দেখা যায়। কিন্তু ভারতের ভূমিকা রহস্যাবৃত্ত রয়েছে এখন পর্যন্ত। বিশেষ করে ব্রিকস-এ আমাদের সদস্যপদ না পাওয়ার কারণে এই রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে বলে বোদ্ধারা মনে করেন। তবে সরকারি পর্যায়ে ভারত নীরব থাকলেও তাদের একটি গোষ্ঠীকে বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন আর্টিকেল প্রকাশের মাধ্যমে পশ্চিমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই আঞ্চলিক ভারসাম্য, নিরাপত্তা এবং জঙ্গিবাদ দমনের জন্য উপযুক্ত। আর মার্কিনিদের চাপের মুখে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা আরো চীনমুখী হয়ে যেতে পারে বলে তারা সংশ্লিষ্টদেরকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। কাজেই ভারতের এই গোষ্ঠীটি আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরকেই ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আসার পর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে একটি নিষ্পত্তিমূলক ইস্যু ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অন্যদিকে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নসমূহ এখন যথেষ্ট পুরনো হয়ে পড়েছে। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল দেখে সমালোচকরা মনে করেন সেই নির্বাচন আসলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। তৃণমূলের ক্ষমতাসীন নেতারা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়াতেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মাত্র সাতটি আসনে জয় পেয়েছিল এবং অনেক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার ঘটনাও ঘটেছিল! যা হাইকমান্ডের কাক্সিক্ষত ছিল না বলে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন! কাজেই এবারের নির্বাচনী পরিবেশটাও আলোচনার দাবি রাখে। একদিকে বিরোধী দলের সমাবেশসমূহ বাধাগ্রস্ত করার জন্য ব্যাপক ধড়-পাকড় এবং সড়ক-রেল-নৌপথসমূহ অলিখিত অবরোধের কবলে পড়েছে। এমনকি তাদের নেতাকর্মী প্রাণও হারিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি দল রেলগাড়ি, বাস-ট্রাক ইত্যাদি রিজার্ভ করে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে সমাবেশ করছেন, আগামী নির্বাচনের জন্য ভোট চাচ্ছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়, আবার নিহত-আহত হওয়ার পরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকরা মামলা করছেন। এসব মামলায় গ্রেফতারও হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের জেলে আবদ্ধ করাসহ রাজনীতির মাঠে তাদেরকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এভাবে সরকারি দলের আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নানাবিধ বাধা-বিপত্তির চাপে একেবারে কোণঠাসা হয়ে আছে বিরোধী দলগুলো।

রাজনৈতিক ময়দানে ও রাজপথে কোণঠাসা হওয়ার পাশাপাশি বিরোধী শিবির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর জালে রয়েছে, যতই নড়াচাড়া করছে ততই তাদের জালে আরো বেশি জড়িয়ে যাচ্ছে। ঘটনা প্রতি একশ’ থেকে হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা, অজ্ঞতানামা আসামি, গায়েবি মামলা, বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা, নাশকতার পরিকল্পনা এইসব ঘটছে রাজনীতি ঘিরে। বিদেশে থেকে, জেলে থেকে এবং এমনকি কবরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে। ১৮ জুলাই বিএনপির একটি মিছিল মিরপুর বাংলা কলেজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কলেজের ভিতর থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা ঢিল ছুড়লে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে দু’টি মামলায় ১২০০ জন বিএনপির নেতাকর্মী আসামি হয়। এদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম এবং আব্দুল জব্বার নামের দু’জন সাবেক স্থানীয় বিএনপি নেতাকে আসামি করা হয় যারা এক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন (ডেইলি স্টার : ২৪/০৭/২০২৩)। জুন-জুলাই মাসে ৩০০ এর বেশি মামলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে (প্রাগুক্ত)। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানায় দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন এবং ভাঙচুর ও মারধরের মামলা হয় ২৮ জুলাই। কিন্তু আসামিদ্বয়ের ভাষ্যমতে, তারা হজ পালন শেষে ৩০ জুলাই দেশে ফিরেছেন (প্রথম আলো : ০২/০৮/২০২৩)। গত ২ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী শহরে দুই মামলায় বিএনপির ২৭০০ এবং নান্দাইলে এক মামলায় ১১১ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয় (প্রথম আলো : ০৪/০৯/২০২৩)। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘সাধারণত পুলিশ, পুলিশের সোর্স ও সরকারি দলের নেতারা রাজনৈতিক কারণে গায়েবি মামলা করে থাকেন। ২০১৮ সালে শুধু সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২০ দিনে বিরোধীসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৭৩৬টি গায়েবি মামলা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রিট শুনানির সময় হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, এ ধরনের মামলায় পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ^াসযোগ্যতা নষ্ট হয়’ (প্রাগুক্ত : ০৭/০৮/২০২৩)।

২২ জুলাই প্রথম আলোর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান গত নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সাত মাসের একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। এই সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারা বাদি হয়ে ৪০টি এবং পুলিশ বাদি হয়ে ১০টি মামলা করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়। এতে দেখা যায় ১৭টি মামলার ঘটনাস্থলের মধ্যে ১৫টি স্থানের লোকজন সেখানে কোনো হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা দেখেননি বা শোনেননি। কিন্তু ৫০টি মামলার এজাহার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে ৮৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন এবং ২৯টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের ঘটনা ঘটেছে গত আগস্ট মাসে। বিএনপির অভিযোগ মতে, ছাত্রদলের ছয়জন নেতাকর্মীকে সাদা পোশাকধারী লোকজন বিভিন্ন স্থান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার একদিন পর দেখা যায় তাদেরকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কয়েকবার বলেছিলেন বিএনপি অস্ত্র সংগ্রহ করছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। অথচ সরকার সংশ্লিষ্ট দলের নেতাকর্মীদের অস্ত্রসহ মহড়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলেও তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সমকাল পত্রিকার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার এবং এগুলোর আসামির সংখ্যা ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৯২। আর নির্বাচন সামনে রেখে মামলাভুক্ত আসামিদের বিচার ত্বরান্বিত করতে পুলিশ নির্দেশিত হয়েছে এবং আদেশ প্রতিপালনে তারা তৎপর (প্রাগুক্ত: ০৭/০৯/২০২৩)।

এ দিকে ১৩ বছর আগের এক মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরো সাত নেতার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের মায়লার গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে জামালপুরে গত ২৯ জুলাই থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৬ দিনে বিএনপির দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩০টি মামলা হয়েছে সহিংসতা ও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে। প্রথম আলোর দু’জন প্রতিনিধি মামলায় উল্লিখিত ১০টি স্থানে সরেজমিন গিয়ে অভিযোগসমূহের সন্ধান পাননি (প্রথম আলো : ০৭/০৯/২০২৩)।

নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম বিরোধী দলগুলোকে আরো হতাশ করছে। বিরোধী শিবির নির্বাচনের জন্য সমতল মাঠের কোনো সম্ভাবনাই দেখছে না। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচনে একজন প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকরা মারধর করার পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন যে, তিনি (ভিকটিম প্রার্থী) কি ইন্তেকাল করেছেন? এরপর ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বেদম প্রহার করলে নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশাব্যঞ্জক। আর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাকে ভোটকেন্দ্রের বাইরে আক্রমণ করা হয়েছে! নিবন্ধন দেয়া নিয়েও নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ৯৩টি দল আবেদন করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (ইঘগ) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (ইঝচ) নামক দু’টি দলকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই দল দু’টির বিষয়ে ‘ইসি’ ঘোষণা দেয়ার আগে দেশের রাজনীতির মাঠে কোনো পরিচিতিই ছিল না। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ৬৮টি বেসরকারি সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করেছে ‘ইসি’। এর মধ্যে ৭টি সংস্থার কোনো কার্যক্রম নেই এবং ১০টি সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে থাকা ব্যক্তি এবং তাদের নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে (প্রথম আলো : ১১/০৮/২০২৩)। সম্প্রতি ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’ নামের একটি বিদেশী পর্যবেক্ষক দল নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। নির্বাচন নিয়ে তাদের আগাম বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও গণমাধ্যমে যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়। (প্রাগুক্ত : ০৩/০৯/২০২৩)।

এরই মধ্যে কুমিল্লা নাঙ্গল কোট থানার ওসি কুমিল্লা-১০ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীকে আবারো নির্বাচনে জয়ী করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানান। আর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি এক সভায় আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপুল ভোটে জয়ী করার আহ্বান জানান (প্রথম আলো : ১৯ এবং ২৬ আগস্ট ২০২৩)। গত ১১ আগস্ট জামালপুরের ডিসি একটি অনুষ্ঠানে এই সরকারকে আবার নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন (প্রথম আলো : ১৩/০৯/২০২৩)। উল্লেখ্য, এই ডিসিরাই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন! বিচারাঙ্গনেও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের বক্তব্যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।

সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে নিক্তি একটি মাত্র দলের দিকেই হেলে রয়েছে বা একটি মাত্র দলের দিকেই মাঠ উঁচু হয়ে আছে! এমন একটি পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করলেও কি সেই নির্বাচনটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব? এমনকি বিরোধী দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিলেও কি বর্তমান কাঠামোতে প্রকৃত জনমত যাচাইয়ের নির্বাচন করা সম্ভব হবে? এ দিকে ডেঙ্গু মহামারী, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মুদ্রাস্ফীতি, লোডশেডিং ইত্যাদি বড় বড় সমস্যা দেশে বিরাজমান থাকলেও সেগুলো এই নির্বাচন বিতর্কের নিচেই চাপা পড়ে রয়েছে।

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

আপলোডকারীর তথ্য

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

নির্বাচনী পরিবেশ উন্নত হোক

আপডেট সময় ০১:১১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নির্বাচন কমিশনের দেয়া পূর্বভাস মোতাবেক আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন। সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষমতাসীন নেতারা বার বার দাবি করছেন এই নির্বাচন হবে সুষ্ঠু। কিন্তু বিরোধী শিবির তাতে কোনোভাবেই আশ^স্ত হতে পারছে না। তারা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপর্যস্তভাবে হেরে তারা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়া সঠিক ছিল। অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে যেতে মোটেই আস্থা পাচ্ছে না।

বছরের শুরু থেকেই আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিদেশীরাও আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। এমনকি বিদেশী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সফর ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং আরো হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া এবং ভারত রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশকে চীনা বলয় থেকে বের করে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র জোর চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের মঙ্গলের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক ফায়দার জন্যই আমাদের নির্বাচন নিয়ে এত উদগ্রীব বলে অনেকেই ধারণা করছেন। চীন ও রাশিয়াকেও মাঝে-মধ্যেই এ বিষয়ে বেশ সরব হতে দেখা যায়। কিন্তু ভারতের ভূমিকা রহস্যাবৃত্ত রয়েছে এখন পর্যন্ত। বিশেষ করে ব্রিকস-এ আমাদের সদস্যপদ না পাওয়ার কারণে এই রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে বলে বোদ্ধারা মনে করেন। তবে সরকারি পর্যায়ে ভারত নীরব থাকলেও তাদের একটি গোষ্ঠীকে বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন আর্টিকেল প্রকাশের মাধ্যমে পশ্চিমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই আঞ্চলিক ভারসাম্য, নিরাপত্তা এবং জঙ্গিবাদ দমনের জন্য উপযুক্ত। আর মার্কিনিদের চাপের মুখে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা আরো চীনমুখী হয়ে যেতে পারে বলে তারা সংশ্লিষ্টদেরকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। কাজেই ভারতের এই গোষ্ঠীটি আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরকেই ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আসার পর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে একটি নিষ্পত্তিমূলক ইস্যু ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অন্যদিকে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নসমূহ এখন যথেষ্ট পুরনো হয়ে পড়েছে। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল দেখে সমালোচকরা মনে করেন সেই নির্বাচন আসলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। তৃণমূলের ক্ষমতাসীন নেতারা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়াতেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মাত্র সাতটি আসনে জয় পেয়েছিল এবং অনেক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার ঘটনাও ঘটেছিল! যা হাইকমান্ডের কাক্সিক্ষত ছিল না বলে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন! কাজেই এবারের নির্বাচনী পরিবেশটাও আলোচনার দাবি রাখে। একদিকে বিরোধী দলের সমাবেশসমূহ বাধাগ্রস্ত করার জন্য ব্যাপক ধড়-পাকড় এবং সড়ক-রেল-নৌপথসমূহ অলিখিত অবরোধের কবলে পড়েছে। এমনকি তাদের নেতাকর্মী প্রাণও হারিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি দল রেলগাড়ি, বাস-ট্রাক ইত্যাদি রিজার্ভ করে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে সমাবেশ করছেন, আগামী নির্বাচনের জন্য ভোট চাচ্ছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়, আবার নিহত-আহত হওয়ার পরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকরা মামলা করছেন। এসব মামলায় গ্রেফতারও হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের জেলে আবদ্ধ করাসহ রাজনীতির মাঠে তাদেরকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এভাবে সরকারি দলের আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নানাবিধ বাধা-বিপত্তির চাপে একেবারে কোণঠাসা হয়ে আছে বিরোধী দলগুলো।

রাজনৈতিক ময়দানে ও রাজপথে কোণঠাসা হওয়ার পাশাপাশি বিরোধী শিবির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর জালে রয়েছে, যতই নড়াচাড়া করছে ততই তাদের জালে আরো বেশি জড়িয়ে যাচ্ছে। ঘটনা প্রতি একশ’ থেকে হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা, অজ্ঞতানামা আসামি, গায়েবি মামলা, বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা, নাশকতার পরিকল্পনা এইসব ঘটছে রাজনীতি ঘিরে। বিদেশে থেকে, জেলে থেকে এবং এমনকি কবরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে। ১৮ জুলাই বিএনপির একটি মিছিল মিরপুর বাংলা কলেজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কলেজের ভিতর থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা ঢিল ছুড়লে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে দু’টি মামলায় ১২০০ জন বিএনপির নেতাকর্মী আসামি হয়। এদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম এবং আব্দুল জব্বার নামের দু’জন সাবেক স্থানীয় বিএনপি নেতাকে আসামি করা হয় যারা এক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন (ডেইলি স্টার : ২৪/০৭/২০২৩)। জুন-জুলাই মাসে ৩০০ এর বেশি মামলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে (প্রাগুক্ত)। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানায় দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন এবং ভাঙচুর ও মারধরের মামলা হয় ২৮ জুলাই। কিন্তু আসামিদ্বয়ের ভাষ্যমতে, তারা হজ পালন শেষে ৩০ জুলাই দেশে ফিরেছেন (প্রথম আলো : ০২/০৮/২০২৩)। গত ২ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী শহরে দুই মামলায় বিএনপির ২৭০০ এবং নান্দাইলে এক মামলায় ১১১ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয় (প্রথম আলো : ০৪/০৯/২০২৩)। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘সাধারণত পুলিশ, পুলিশের সোর্স ও সরকারি দলের নেতারা রাজনৈতিক কারণে গায়েবি মামলা করে থাকেন। ২০১৮ সালে শুধু সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২০ দিনে বিরোধীসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৭৩৬টি গায়েবি মামলা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রিট শুনানির সময় হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, এ ধরনের মামলায় পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ^াসযোগ্যতা নষ্ট হয়’ (প্রাগুক্ত : ০৭/০৮/২০২৩)।

২২ জুলাই প্রথম আলোর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান গত নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সাত মাসের একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। এই সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারা বাদি হয়ে ৪০টি এবং পুলিশ বাদি হয়ে ১০টি মামলা করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়। এতে দেখা যায় ১৭টি মামলার ঘটনাস্থলের মধ্যে ১৫টি স্থানের লোকজন সেখানে কোনো হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা দেখেননি বা শোনেননি। কিন্তু ৫০টি মামলার এজাহার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে ৮৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন এবং ২৯টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের ঘটনা ঘটেছে গত আগস্ট মাসে। বিএনপির অভিযোগ মতে, ছাত্রদলের ছয়জন নেতাকর্মীকে সাদা পোশাকধারী লোকজন বিভিন্ন স্থান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার একদিন পর দেখা যায় তাদেরকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কয়েকবার বলেছিলেন বিএনপি অস্ত্র সংগ্রহ করছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। অথচ সরকার সংশ্লিষ্ট দলের নেতাকর্মীদের অস্ত্রসহ মহড়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলেও তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সমকাল পত্রিকার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার এবং এগুলোর আসামির সংখ্যা ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৯২। আর নির্বাচন সামনে রেখে মামলাভুক্ত আসামিদের বিচার ত্বরান্বিত করতে পুলিশ নির্দেশিত হয়েছে এবং আদেশ প্রতিপালনে তারা তৎপর (প্রাগুক্ত: ০৭/০৯/২০২৩)।

এ দিকে ১৩ বছর আগের এক মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরো সাত নেতার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের মায়লার গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে জামালপুরে গত ২৯ জুলাই থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৬ দিনে বিএনপির দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩০টি মামলা হয়েছে সহিংসতা ও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে। প্রথম আলোর দু’জন প্রতিনিধি মামলায় উল্লিখিত ১০টি স্থানে সরেজমিন গিয়ে অভিযোগসমূহের সন্ধান পাননি (প্রথম আলো : ০৭/০৯/২০২৩)।

নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম বিরোধী দলগুলোকে আরো হতাশ করছে। বিরোধী শিবির নির্বাচনের জন্য সমতল মাঠের কোনো সম্ভাবনাই দেখছে না। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচনে একজন প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকরা মারধর করার পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন যে, তিনি (ভিকটিম প্রার্থী) কি ইন্তেকাল করেছেন? এরপর ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বেদম প্রহার করলে নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশাব্যঞ্জক। আর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাকে ভোটকেন্দ্রের বাইরে আক্রমণ করা হয়েছে! নিবন্ধন দেয়া নিয়েও নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ৯৩টি দল আবেদন করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (ইঘগ) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (ইঝচ) নামক দু’টি দলকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই দল দু’টির বিষয়ে ‘ইসি’ ঘোষণা দেয়ার আগে দেশের রাজনীতির মাঠে কোনো পরিচিতিই ছিল না। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ৬৮টি বেসরকারি সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করেছে ‘ইসি’। এর মধ্যে ৭টি সংস্থার কোনো কার্যক্রম নেই এবং ১০টি সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে থাকা ব্যক্তি এবং তাদের নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে (প্রথম আলো : ১১/০৮/২০২৩)। সম্প্রতি ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’ নামের একটি বিদেশী পর্যবেক্ষক দল নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। নির্বাচন নিয়ে তাদের আগাম বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও গণমাধ্যমে যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়। (প্রাগুক্ত : ০৩/০৯/২০২৩)।

এরই মধ্যে কুমিল্লা নাঙ্গল কোট থানার ওসি কুমিল্লা-১০ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীকে আবারো নির্বাচনে জয়ী করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানান। আর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি এক সভায় আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপুল ভোটে জয়ী করার আহ্বান জানান (প্রথম আলো : ১৯ এবং ২৬ আগস্ট ২০২৩)। গত ১১ আগস্ট জামালপুরের ডিসি একটি অনুষ্ঠানে এই সরকারকে আবার নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন (প্রথম আলো : ১৩/০৯/২০২৩)। উল্লেখ্য, এই ডিসিরাই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন! বিচারাঙ্গনেও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের বক্তব্যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।

সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে নিক্তি একটি মাত্র দলের দিকেই হেলে রয়েছে বা একটি মাত্র দলের দিকেই মাঠ উঁচু হয়ে আছে! এমন একটি পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করলেও কি সেই নির্বাচনটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব? এমনকি বিরোধী দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিলেও কি বর্তমান কাঠামোতে প্রকৃত জনমত যাচাইয়ের নির্বাচন করা সম্ভব হবে? এ দিকে ডেঙ্গু মহামারী, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মুদ্রাস্ফীতি, লোডশেডিং ইত্যাদি বড় বড় সমস্যা দেশে বিরাজমান থাকলেও সেগুলো এই নির্বাচন বিতর্কের নিচেই চাপা পড়ে রয়েছে।