ঢাকা ০৪:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্ধ হোক ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ নামক সাত তলা একটি ভবনে আগুন লেগে প্রায় অর্ধশত মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে বহু মানুষ। গতবছরও ঢাকায় একাধিক বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যেমন- এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঈদের আগে রাজধানীর বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং অনেক ব্যবসায়ী হয়ে যায় সর্বশান্ত। এর কিছুদিন আগে পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার এবং বছর শেষে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে ৭৭টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে কয়েকশত মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন। কোনও আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবনে আগুন লাগার পর ঘুরে ফিরে প্রায়ই একটা বিষয় আলোচনায় আসে যে আগুন নেভানোর জন্য সেখানে কোনও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না। বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজে আগুন লাগার পরও একই প্রশ্ন সামনে এসেছে। ফায়ার সার্ভিস থেকে বলা হয়েছে, ভবনটিতে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই ছিলো না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ এবং আগুন নেভানোর জন্য সেসব ভবনে কোনওপ্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। তাই, খাওয়া-দাওয়া বা ঘোরাঘুরি, যে কোনও প্রয়োজনেই কোনো ভবনে প্রবেশ করার আগে ঐ ভবনটি কতটা নিরাপদ, তা যতটা সম্ভব যাচাই করে নেয়া দরকার। যদি বিষয় একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে খালি চোখে সেটা যাচাই-বাছাই করা প্রায় অসম্ভব। তবে কিছু বিষয় আছে, যা দেখে যেকোনও সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবেন যে ভবনটি তার জন্য কতটুকু নিরাপদ। সেসবের মাঝে সবচেয়ে সহজ হলো, ভবনের সামনে নিরাপত্তা সনদ বা সার্টিফিকেট প্রদর্শন করা আছে কি-না, তা দেখে ঐ ভবনে প্রবেশ করা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের আইন ও বিধিমালা মেনে যে ঐ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে কিনা এবং নির্মাণের পর সেখানকার সমস্ত কাজও যে আইন মেনে হচ্ছে কিনা তা যথাযথভাবে তদারকি করতে হবে। এ সকল ভবনের প্রবেশদ্বার কমপক্ষে তিন মিটার করতে হবে। থাকতে হবে পর্যাপ্ত সিঁড়ি ও অ্যালার্ম সিস্টেম। যাতে করে আগতরা আগুনের বিপদ আঁচ করলেই নিরাপদে বেড়িয়ে আসতে পারে। কোনও আবাসিক ভবন যদি ছয় তলার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী সেখানে চলাচলের জন্য দু’টি সিঁড়ি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে যেগুলো বাণিজ্যিক ভবন বা কারখানা, সেখানে সিঁড়ি সংখ্যা আরও বেশি হবে। জরুরী বহির্গমনের সিঁড়ির নির্মাণশৈলী সাধারণ সিঁড়ির চাইতে আলাদা হতে হবে। বাধ্যতামূলক করতে হবে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার বিষয়টি। এছাড়া আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

যেকোনো দেশের সকল ভবন সরকার নির্ধারিত বিধিমালা যথাযথ অনুসরণ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’। এর ব্যত্যয় হলে দায়ী বা দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

বন্ধ হোক ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’

আপডেট সময় ১১:৩৭:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ নামক সাত তলা একটি ভবনে আগুন লেগে প্রায় অর্ধশত মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে বহু মানুষ। গতবছরও ঢাকায় একাধিক বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যেমন- এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঈদের আগে রাজধানীর বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং অনেক ব্যবসায়ী হয়ে যায় সর্বশান্ত। এর কিছুদিন আগে পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার এবং বছর শেষে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে ৭৭টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে কয়েকশত মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন। কোনও আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবনে আগুন লাগার পর ঘুরে ফিরে প্রায়ই একটা বিষয় আলোচনায় আসে যে আগুন নেভানোর জন্য সেখানে কোনও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না। বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজে আগুন লাগার পরও একই প্রশ্ন সামনে এসেছে। ফায়ার সার্ভিস থেকে বলা হয়েছে, ভবনটিতে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই ছিলো না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ এবং আগুন নেভানোর জন্য সেসব ভবনে কোনওপ্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। তাই, খাওয়া-দাওয়া বা ঘোরাঘুরি, যে কোনও প্রয়োজনেই কোনো ভবনে প্রবেশ করার আগে ঐ ভবনটি কতটা নিরাপদ, তা যতটা সম্ভব যাচাই করে নেয়া দরকার। যদি বিষয় একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে খালি চোখে সেটা যাচাই-বাছাই করা প্রায় অসম্ভব। তবে কিছু বিষয় আছে, যা দেখে যেকোনও সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবেন যে ভবনটি তার জন্য কতটুকু নিরাপদ। সেসবের মাঝে সবচেয়ে সহজ হলো, ভবনের সামনে নিরাপত্তা সনদ বা সার্টিফিকেট প্রদর্শন করা আছে কি-না, তা দেখে ঐ ভবনে প্রবেশ করা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের আইন ও বিধিমালা মেনে যে ঐ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে কিনা এবং নির্মাণের পর সেখানকার সমস্ত কাজও যে আইন মেনে হচ্ছে কিনা তা যথাযথভাবে তদারকি করতে হবে। এ সকল ভবনের প্রবেশদ্বার কমপক্ষে তিন মিটার করতে হবে। থাকতে হবে পর্যাপ্ত সিঁড়ি ও অ্যালার্ম সিস্টেম। যাতে করে আগতরা আগুনের বিপদ আঁচ করলেই নিরাপদে বেড়িয়ে আসতে পারে। কোনও আবাসিক ভবন যদি ছয় তলার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী সেখানে চলাচলের জন্য দু’টি সিঁড়ি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে যেগুলো বাণিজ্যিক ভবন বা কারখানা, সেখানে সিঁড়ি সংখ্যা আরও বেশি হবে। জরুরী বহির্গমনের সিঁড়ির নির্মাণশৈলী সাধারণ সিঁড়ির চাইতে আলাদা হতে হবে। বাধ্যতামূলক করতে হবে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার বিষয়টি। এছাড়া আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

যেকোনো দেশের সকল ভবন সরকার নির্ধারিত বিধিমালা যথাযথ অনুসরণ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’। এর ব্যত্যয় হলে দায়ী বা দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।