ঢাকা ০৭:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেনজীর, আজিজের ‘দুর্নীতি’ ও ভারতে এমপি খুন; সরকারের করণীয়

ভারতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের পরপরই সামনে এসেছে অপরাধ জগতের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নিয়ে দুদকের তৎপরতার ঘটনায় চলছে তোলপাড়।

টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলীয় সংসদ সদস্য আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে থেকে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের জন্য মারাত্মক ‘ভাবমূর্তির সংকট’ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
কারণ যাদের বিরুদ্ধে এখন অভিযোগ উঠেছে তাদের প্রত্যেকেই যার যার জায়গায় বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোর প্রভাবশালী পদে অবস্থান করেছেন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য খুন হওয়ার পর তার ব্যাপারে চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ আসছে তা ছিল স্থানীয় মানুষের কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে অপরাধ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হবার পরেও একজন ব্যক্তি কীভাবে বার বার সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন?

পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন শীর্ষ পদে কর্মরত থাকার সময় ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে লোকমুখে আলোচনা ছিল আরো অনেক আগে থেকে।

অন্যদিকে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন থেকে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাইদের নানা সুবিধা দেবার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রচার হয়েছে।

রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ আসছে তা সম্পাদনের সুযোগ পেল কী করে?

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসব ঘটনার দায় সরকার রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না। এখন সরকারকে দায় অবশ্যই নিতে হবে কারণ সরকারের দায় আছে। কারণ হচ্ছে যারা এই তিনটি ক্ষেত্রেই যে অপরাধের কারণে নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের সার্বিক চিত্র এগুলো কিন্তু এককভাবে এই তিনজন সম্পন্ন করেননি এই অপরাধগুলো।

দুর্নীতি হোক, অবৈধ সম্পদের মালিকানা হোক, চোরাকারবারি হোক, স্বর্ণ পাচার হোক পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে কিন্তু অংশীজন আরো অনেকেই ছিলেন, জোগসাজসকারী অনেকেই ছিলেন, সুরক্ষাকারী অনেকেই ছিলেন।

আলোচিত তিনটি ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন অভিযুক্তদের সরকার কোনো সুরক্ষা দেবে না।

বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদলও এখন সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে। নিয়মিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

আলোচিত তিনটি ঘটনায় সরকারের অবস্থান প্রশংসনীয় হলেও রাজনীতিতে শুদ্ধ চর্চা করা সময়ের দাবি। আর অপরাধী যেই হোক, তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া সরকাররের দায়িত্ব।

আরো পড়ুন : সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা; কী বার্তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

বেনজীর, আজিজের ‘দুর্নীতি’ ও ভারতে এমপি খুন; সরকারের করণীয়

আপডেট সময় ১১:২০:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪

ভারতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের পরপরই সামনে এসেছে অপরাধ জগতের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নিয়ে দুদকের তৎপরতার ঘটনায় চলছে তোলপাড়।

টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলীয় সংসদ সদস্য আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে থেকে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের জন্য মারাত্মক ‘ভাবমূর্তির সংকট’ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
কারণ যাদের বিরুদ্ধে এখন অভিযোগ উঠেছে তাদের প্রত্যেকেই যার যার জায়গায় বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোর প্রভাবশালী পদে অবস্থান করেছেন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য খুন হওয়ার পর তার ব্যাপারে চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ আসছে তা ছিল স্থানীয় মানুষের কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে অপরাধ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হবার পরেও একজন ব্যক্তি কীভাবে বার বার সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন?

পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন শীর্ষ পদে কর্মরত থাকার সময় ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে লোকমুখে আলোচনা ছিল আরো অনেক আগে থেকে।

অন্যদিকে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন থেকে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাইদের নানা সুবিধা দেবার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রচার হয়েছে।

রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ আসছে তা সম্পাদনের সুযোগ পেল কী করে?

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসব ঘটনার দায় সরকার রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না। এখন সরকারকে দায় অবশ্যই নিতে হবে কারণ সরকারের দায় আছে। কারণ হচ্ছে যারা এই তিনটি ক্ষেত্রেই যে অপরাধের কারণে নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের সার্বিক চিত্র এগুলো কিন্তু এককভাবে এই তিনজন সম্পন্ন করেননি এই অপরাধগুলো।

দুর্নীতি হোক, অবৈধ সম্পদের মালিকানা হোক, চোরাকারবারি হোক, স্বর্ণ পাচার হোক পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে কিন্তু অংশীজন আরো অনেকেই ছিলেন, জোগসাজসকারী অনেকেই ছিলেন, সুরক্ষাকারী অনেকেই ছিলেন।

আলোচিত তিনটি ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন অভিযুক্তদের সরকার কোনো সুরক্ষা দেবে না।

বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদলও এখন সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে। নিয়মিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

আলোচিত তিনটি ঘটনায় সরকারের অবস্থান প্রশংসনীয় হলেও রাজনীতিতে শুদ্ধ চর্চা করা সময়ের দাবি। আর অপরাধী যেই হোক, তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া সরকাররের দায়িত্ব।

আরো পড়ুন : সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা; কী বার্তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?