ঢাকা ০৭:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেল ট্রানজিট ইস্যু; কী হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে সম্প্রতি যে দশটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে, সেগুলোর একটি হচ্ছে রেল ট্রানজিট। বিষয়টিকে বড় ধরনের রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে চাইছে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো। এসব দলের নেতারা মনে করছেন সামনের দিনগুলোতে ‘এটিই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু’।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “সরকার এভাবে সব কিছু ভারতের হাতে তুলে দিতে পারে না। আমরা সবার সাথে যোগাযোগ করছি। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো।”

এর আগে বিএনপির সমমনা দলগুলো ভারতীয় পণ্য বয়কটের যে কর্মসূচি দিয়েছিলো তাতেও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আনুষ্ঠানিকভাবে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন যে, তিনি মনে করেন এটিই হবে আগামী দিনের বড় রাজনৈতিক ইস্যু এবং এর বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম দলের এক সমাবেশে বলেছেন, “তিস্তার কথা নেই। পানির কথা নেই। সীমান্ত হত্যা নিয়ে চুক্তি নেই। চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে ট্রেন ভারতে যাবে। নৌ বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দিতে হবে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না”।

জামায়াতে ইসলামীও এক বিবৃতিতে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলোর তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, আওয়ামী লীগ প্রতিবারই প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করে ভারতের হস্তক্ষেপে বারবার ক্ষমতায় আসে। “ফলে জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বরাবরই ভারতকে তুষ্ট করতে হয়”।

তবে এ বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন যে, “চুক্তিতে কি আছে বিস্তারিত কেউ তা জানে না এবং সরকারও তা প্রকাশ করেনি। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই যে কোন দেশের সঙ্গে চুক্তি হতে হবে পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, যাতে উভয় পক্ষ সমানে সমানে লাভবান হতে পারে”।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা দেখা যাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। যদিও আওয়ামী লীগ বলছে এগুলো বিরোধীদের ‘পলিটিক্যাল প্রোপাগান্ডা’, যার সাথে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বিরোধী দলগুলো চেষ্টা করতে পারে কিন্তু তাতে জনগণের সমর্থন থাকবে না বলে তিনি মনে করেন। তার মতে ভারতের সাথে ‘কানেক্টিভিটির কারণে’ মানুষ উপকৃত হচ্ছে বলে রাজনীতির মাঠে ‘ভারত ইস্যু’র এখন আর কোন গুরুত্বই নেই। এর আগে মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে ভারতের দীর্ঘদিনের জোরালো দাবি পূরণ করেছিলো বাংলাদেশ। এগুলোর বিনিময়ে বাংলাদেশ কতটা অর্থ আয় করছে তা নিয়েও বড় প্রশ্ন আছে।

যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভারতকে রেল ট্রানজিট দেয়ার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হবে না।

ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে রেলযোগে দেশের এক অংশ থেকে আরেক অংশে সরাসরি নিজেদের পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে ভারত, যা দীর্ঘদিন ধরেই দেশটি চেয়ে আসছিলো বলে প্রচার আছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, রেল ট্রানজিটের বিষয় রাজনৈতিক ময়দানে বড় কোন ইস্যু হয়ে উঠবে কি না, সেটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে।

ভারতের সাথে হওয়া চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক নিয়ে ইস্যুতে যা হচ্ছে সেটা হলো রাজনৈতিক বাহাস এবং এটি তখনই ইস্যু হবে যখন সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে। দেখার বিষয় হবে বিরোধী দলগুলো সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে কি-না। সেটি না করতে পারলে সরকারের জন্য খুব একটা চিন্তার কারণ হবে বলে মনে হয় না। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সরকার দেশের স্বার্থ পরিপন্থী এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সরকারকেও গণমানুষের মনের অব্যক্ত বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

আরো পড়ুন : ঈদুল আজহা সবার জীবনে কল্যাণ বয়ে আনুক

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

রেল ট্রানজিট ইস্যু; কী হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে?

আপডেট সময় ০৩:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে সম্প্রতি যে দশটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে, সেগুলোর একটি হচ্ছে রেল ট্রানজিট। বিষয়টিকে বড় ধরনের রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে চাইছে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো। এসব দলের নেতারা মনে করছেন সামনের দিনগুলোতে ‘এটিই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু’।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “সরকার এভাবে সব কিছু ভারতের হাতে তুলে দিতে পারে না। আমরা সবার সাথে যোগাযোগ করছি। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো।”

এর আগে বিএনপির সমমনা দলগুলো ভারতীয় পণ্য বয়কটের যে কর্মসূচি দিয়েছিলো তাতেও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আনুষ্ঠানিকভাবে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন যে, তিনি মনে করেন এটিই হবে আগামী দিনের বড় রাজনৈতিক ইস্যু এবং এর বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম দলের এক সমাবেশে বলেছেন, “তিস্তার কথা নেই। পানির কথা নেই। সীমান্ত হত্যা নিয়ে চুক্তি নেই। চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে ট্রেন ভারতে যাবে। নৌ বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দিতে হবে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না”।

জামায়াতে ইসলামীও এক বিবৃতিতে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলোর তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, আওয়ামী লীগ প্রতিবারই প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করে ভারতের হস্তক্ষেপে বারবার ক্ষমতায় আসে। “ফলে জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বরাবরই ভারতকে তুষ্ট করতে হয়”।

তবে এ বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন যে, “চুক্তিতে কি আছে বিস্তারিত কেউ তা জানে না এবং সরকারও তা প্রকাশ করেনি। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই যে কোন দেশের সঙ্গে চুক্তি হতে হবে পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, যাতে উভয় পক্ষ সমানে সমানে লাভবান হতে পারে”।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা দেখা যাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। যদিও আওয়ামী লীগ বলছে এগুলো বিরোধীদের ‘পলিটিক্যাল প্রোপাগান্ডা’, যার সাথে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বিরোধী দলগুলো চেষ্টা করতে পারে কিন্তু তাতে জনগণের সমর্থন থাকবে না বলে তিনি মনে করেন। তার মতে ভারতের সাথে ‘কানেক্টিভিটির কারণে’ মানুষ উপকৃত হচ্ছে বলে রাজনীতির মাঠে ‘ভারত ইস্যু’র এখন আর কোন গুরুত্বই নেই। এর আগে মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে ভারতের দীর্ঘদিনের জোরালো দাবি পূরণ করেছিলো বাংলাদেশ। এগুলোর বিনিময়ে বাংলাদেশ কতটা অর্থ আয় করছে তা নিয়েও বড় প্রশ্ন আছে।

যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভারতকে রেল ট্রানজিট দেয়ার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হবে না।

ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে রেলযোগে দেশের এক অংশ থেকে আরেক অংশে সরাসরি নিজেদের পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে ভারত, যা দীর্ঘদিন ধরেই দেশটি চেয়ে আসছিলো বলে প্রচার আছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, রেল ট্রানজিটের বিষয় রাজনৈতিক ময়দানে বড় কোন ইস্যু হয়ে উঠবে কি না, সেটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে।

ভারতের সাথে হওয়া চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক নিয়ে ইস্যুতে যা হচ্ছে সেটা হলো রাজনৈতিক বাহাস এবং এটি তখনই ইস্যু হবে যখন সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে। দেখার বিষয় হবে বিরোধী দলগুলো সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে কি-না। সেটি না করতে পারলে সরকারের জন্য খুব একটা চিন্তার কারণ হবে বলে মনে হয় না। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সরকার দেশের স্বার্থ পরিপন্থী এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সরকারকেও গণমানুষের মনের অব্যক্ত বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

আরো পড়ুন : ঈদুল আজহা সবার জীবনে কল্যাণ বয়ে আনুক