ঢাকা ০৬:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা; কী বার্তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করা ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

তবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় সাবেক এ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, শাস্তি পাওয়ার মতো কোন অপরাধ তিনি করেননি।

সেনাপ্রধানের পদ থেকে ২০২১ সালের ২৪শে জুন অবসরে যান জেনারেল আজিজ। তিনি দায়িত্বে থাকাকালেই তার বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ ওঠে।

কাতার ভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যম তার এবং পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং নানা ধরনের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করে। যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোর সাথে তাদের নিবিড় সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

তখন সরকার এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগগুলোকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে দাবি করা হয়েছিল। একাধিক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে আল জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রের ধারবাহিকতা বা ফলাফল বলে মনে করেন।

কিন্তু, এতোদিন পরে এসে, যখন আজিজ আহমদের অবসরের বয়সও তিন বছর হতে চললো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক নির্বাচন ও গণতন্ত্র ইস্যুতে সম্পর্কের ওঠা-নামাই আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠেছিল, তখন নতুন ঘোষণাটির তাৎপর্য কী?

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট ৭০৩১(সি) প্রয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের ক্ষেত্রে। দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত বিদেশি নাগরিকদের বেলায় এটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকলেই কেবল অ্যাক্ট ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের তরফে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, তার (সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ) তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারিয়েছে।

আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার দাবি, ব্যক্তি স্বার্থের বিনিময়ে সরকারি নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।

আরো বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর ঠিকাদারি অবৈধভাবে পাইয়ে দেয়ার জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন তিনি। তাছাড়া, তার ভাইয়ের অপরাধ সত্ত্বেও তাকে বাঁচাতে দুর্নীতির আশ্রয় নেন বলে দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার ধারাবাহিকতায় আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হলো।

আগে যারা আজিজ আহমদের দুর্নীতির বিষয়টি নাকচ করেছিলেন তারা এখন কী বলবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। যারা এখন দুর্নীতিতে যুক্ত আছেন তাদের জন্য একে একটা বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।

পরিস্থিতিটা এই রকম যে, যে কোনো সময় তারা বিপদগ্রস্ত হতে পারেন। যেভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, একসময় তাদেরকে তার জন্য মূল্য দিতে হবে।

আরো পড়ুন : সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন; উভয় সংকটে বাংলাদেশ

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা; কী বার্তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?

আপডেট সময় ০৬:৩৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করা ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

তবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় সাবেক এ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, শাস্তি পাওয়ার মতো কোন অপরাধ তিনি করেননি।

সেনাপ্রধানের পদ থেকে ২০২১ সালের ২৪শে জুন অবসরে যান জেনারেল আজিজ। তিনি দায়িত্বে থাকাকালেই তার বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ ওঠে।

কাতার ভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যম তার এবং পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং নানা ধরনের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করে। যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোর সাথে তাদের নিবিড় সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

তখন সরকার এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগগুলোকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে দাবি করা হয়েছিল। একাধিক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে আল জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রের ধারবাহিকতা বা ফলাফল বলে মনে করেন।

কিন্তু, এতোদিন পরে এসে, যখন আজিজ আহমদের অবসরের বয়সও তিন বছর হতে চললো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক নির্বাচন ও গণতন্ত্র ইস্যুতে সম্পর্কের ওঠা-নামাই আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠেছিল, তখন নতুন ঘোষণাটির তাৎপর্য কী?

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট ৭০৩১(সি) প্রয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের ক্ষেত্রে। দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত বিদেশি নাগরিকদের বেলায় এটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকলেই কেবল অ্যাক্ট ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের তরফে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, তার (সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ) তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারিয়েছে।

আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার দাবি, ব্যক্তি স্বার্থের বিনিময়ে সরকারি নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।

আরো বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর ঠিকাদারি অবৈধভাবে পাইয়ে দেয়ার জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন তিনি। তাছাড়া, তার ভাইয়ের অপরাধ সত্ত্বেও তাকে বাঁচাতে দুর্নীতির আশ্রয় নেন বলে দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার ধারাবাহিকতায় আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হলো।

আগে যারা আজিজ আহমদের দুর্নীতির বিষয়টি নাকচ করেছিলেন তারা এখন কী বলবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। যারা এখন দুর্নীতিতে যুক্ত আছেন তাদের জন্য একে একটা বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।

পরিস্থিতিটা এই রকম যে, যে কোনো সময় তারা বিপদগ্রস্ত হতে পারেন। যেভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, একসময় তাদেরকে তার জন্য মূল্য দিতে হবে।

আরো পড়ুন : সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন; উভয় সংকটে বাংলাদেশ