ঢাকা ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন; উভয় সংকটে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের পাসপোর্টে সৌদি আরবে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা তৈরি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ দীর্ঘদিন আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা বাংলাদেশকে তাগাদা দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য।

গত রোববার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় সৌদি উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন দেরি হচ্ছে তা জানতে চেয়েছিল। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সৌদিতে থাকা ওই ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার পাসপোর্ট বাংলাদেশ নবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “তারা তো বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং আমরা শুধু তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করে দেব। তাদের নাম ঠিকানা পাসপোর্টে যেমন আছে, তেমন থাকবে”।

১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নিতে রাজি হয়েছিল সৌদি সরকার। বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু তখন রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমায়। তখন পাকিস্তান থাকা কিছু রোহিঙ্গাও একই প্রক্রিয়া সৌদি আরব যায়। এই অভিবাসন প্রক্রিয়ার জন্য মিয়ানমারের নাগরিক হলেও রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিয়েছিল বাংলাদেশ।

২০১০ সাল থেকেই রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব। তবে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য কয়েক ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। সৌদি আরবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ উভয় সংকট বা দু’ধারী তলোয়ারের মুখে পড়েছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।

১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা সৌদি আরবে পাড়ি জমালেও তাদের পাসপোর্ট নবায়নের তাগিদ দেয়া শুরু হয় মূলত ২০১০ সাল থেকে। তখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কম হলেও এখন আস্তে আস্তে সেটি বাড়তে শুরু করেছে।

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করে নতুন করে তিনটি সংকট বাংলাদেশের সামনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের আশঙ্কা, পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়ে গেলে সৌদি আরব যদি কোন কারণে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় তাহলে তাদের গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আগে থেকেই সহমর্মিতার জায়গায় ছিল সৌদি আরব। হয়ত সেখান থেকে তারা সরে এসেছে। নবায়নের পর সৌদি থেকে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা বেশি।

কূটনীতিকরা মনে করছেন, এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেয়া হলে যে ১২ লাখ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছে, তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ যে আলোচনা করছে আন্তর্জাতিক মহলে, সেখানেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।

তাহলে কী নবায়ন না করে এই ইস্যুর সমাধান সম্ভব? এমন প্রশ্নেও খুব একটা আশার আলো দেখছেন না অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার মাধ্যমে সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে বাংলাদেশকে।

সরকার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সৌদি সরকারের অনুরোধ মেনে নিলেও ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়াতে সরকারকে আরো বেশি কৌশলী হতে হবে।

আরো পড়ুন : আইএমএফের সাথে সরকারের সমঝোতা; শর্তে পূরণে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন; উভয় সংকটে বাংলাদেশ

আপডেট সময় ১২:৩৬:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

বাংলাদেশের পাসপোর্টে সৌদি আরবে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা তৈরি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ দীর্ঘদিন আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা বাংলাদেশকে তাগাদা দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য।

গত রোববার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় সৌদি উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন দেরি হচ্ছে তা জানতে চেয়েছিল। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সৌদিতে থাকা ওই ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার পাসপোর্ট বাংলাদেশ নবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “তারা তো বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং আমরা শুধু তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করে দেব। তাদের নাম ঠিকানা পাসপোর্টে যেমন আছে, তেমন থাকবে”।

১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নিতে রাজি হয়েছিল সৌদি সরকার। বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু তখন রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমায়। তখন পাকিস্তান থাকা কিছু রোহিঙ্গাও একই প্রক্রিয়া সৌদি আরব যায়। এই অভিবাসন প্রক্রিয়ার জন্য মিয়ানমারের নাগরিক হলেও রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিয়েছিল বাংলাদেশ।

২০১০ সাল থেকেই রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব। তবে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য কয়েক ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। সৌদি আরবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ উভয় সংকট বা দু’ধারী তলোয়ারের মুখে পড়েছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।

১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা সৌদি আরবে পাড়ি জমালেও তাদের পাসপোর্ট নবায়নের তাগিদ দেয়া শুরু হয় মূলত ২০১০ সাল থেকে। তখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কম হলেও এখন আস্তে আস্তে সেটি বাড়তে শুরু করেছে।

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করে নতুন করে তিনটি সংকট বাংলাদেশের সামনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের আশঙ্কা, পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়ে গেলে সৌদি আরব যদি কোন কারণে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় তাহলে তাদের গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আগে থেকেই সহমর্মিতার জায়গায় ছিল সৌদি আরব। হয়ত সেখান থেকে তারা সরে এসেছে। নবায়নের পর সৌদি থেকে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা বেশি।

কূটনীতিকরা মনে করছেন, এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেয়া হলে যে ১২ লাখ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছে, তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ যে আলোচনা করছে আন্তর্জাতিক মহলে, সেখানেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।

তাহলে কী নবায়ন না করে এই ইস্যুর সমাধান সম্ভব? এমন প্রশ্নেও খুব একটা আশার আলো দেখছেন না অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার মাধ্যমে সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে বাংলাদেশকে।

সরকার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সৌদি সরকারের অনুরোধ মেনে নিলেও ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়াতে সরকারকে আরো বেশি কৌশলী হতে হবে।

আরো পড়ুন : আইএমএফের সাথে সরকারের সমঝোতা; শর্তে পূরণে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ