ঢাকা ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ছাত্রলীগের ৫০ নেতার পদত্যাগ!

কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) রাত ১০টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

জানা যায়, চলমান কোটা সংস্কারের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। এরইমধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ১৬তম ব্যাচের সব ছাত্রী ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তারা আর ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে যাবেন না।

কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রের শরীরে এমন নির্মমভাবে যারা আঘাত করতে পারে সেই দল থেকে তারা ইস্তফা নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের শিক্ষার্থী শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক তানভীর আহমেদ গাজী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমি আসলে রাজনীতিপ্রিয় মানুষ নই, বরং আমি একজন সাহিত্য এবং সংস্কৃতিমনা লোক। একদা এক সিনিয়র বলেছিলেন, দেখ গাজী তুই লেখক মানুষ, ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ, তুই পদে থাকলে আরও চারজন জুনিয়র আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমি বেচারা না কোনো মিছিলে গেলাম না কোনো মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। অটোমেটিক্যালি পদ পেয়ে গেলাম বাহ! আমি আমার ওয়ালে সেটা আদৌ পোস্ট করিনি, যারা উইস করেছিল তাদের কেবল ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। তো আজকের এই দিনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, আইন অনুষদ, শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক পদ হইতে ইস্তফা দিলাম। আমি একজন সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ, রাজনীতি আমার শোভা পায় না! আজকের বর্বরোচিত ঘটনা আমাকে সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে!’

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে প্রথম পদত্যাগকারী নুসরাত জাহান সুরভী বলেন, ‘আপনিও মানুষ আমিও মানুষ। আপনিও জানেন দেশে কী হচ্ছে। সেই মানবিক দিক বিবেচনা করে আমি শাখা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছি।’

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামিন বখশ সাদী লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। ছাত্র রাজনীতি ছিল আমার পছন্দের জায়গা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শেষের আমি এর বাস্তবতা বুঝতে পারি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে শুরু করি। যার কারণে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমিয়ে দিতে শুরু করি। কিন্তু আজকের এই ঘটনার পর আমার মনে হয় না এরকম কেনোকিছুর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। এমনিতেই অনেকদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। তারপরও বলতেছি আমাকে কেউ কখনো এসবের জন্য ডাক দিবেন না। ন্যায় এবং সত্যকে তুলে ধরতে না পারলে আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখি না। এই পদটি আমি আর হোল্ড করি না।’

আইন অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাসেল মিঞা লিখেছেন, ‘না বুঝার বয়সেই রাজনীতির প্রতি একটা প্যাশন সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এই বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতির চর্চা দেখে ধীরে ধীরে আমার মনে রাজনীতির প্রতি আবেগ, ভালোবাসা মরে যেতে লাগলো। কেনো জানি- আজকে তার চিরতরে সমাধি ঘটলো। সামর্থ্য হলে নিজের থেকে দেশ ও সমাজের জন্য ভূমিকা রাখবো ইনশাআল্লাহ। আর একটি ঘোষণা আমি দুটো পদ হোল্ড করতাম। আজকে সে দুটো পদ থেকে আমি সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম।’

আরো পড়ুন : কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, বাড়ছে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ছাত্রলীগের ৫০ নেতার পদত্যাগ!

আপডেট সময় ১২:৫৫:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) রাত ১০টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

জানা যায়, চলমান কোটা সংস্কারের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। এরইমধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ১৬তম ব্যাচের সব ছাত্রী ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তারা আর ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে যাবেন না।

কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রের শরীরে এমন নির্মমভাবে যারা আঘাত করতে পারে সেই দল থেকে তারা ইস্তফা নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের শিক্ষার্থী শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক তানভীর আহমেদ গাজী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমি আসলে রাজনীতিপ্রিয় মানুষ নই, বরং আমি একজন সাহিত্য এবং সংস্কৃতিমনা লোক। একদা এক সিনিয়র বলেছিলেন, দেখ গাজী তুই লেখক মানুষ, ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ, তুই পদে থাকলে আরও চারজন জুনিয়র আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমি বেচারা না কোনো মিছিলে গেলাম না কোনো মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। অটোমেটিক্যালি পদ পেয়ে গেলাম বাহ! আমি আমার ওয়ালে সেটা আদৌ পোস্ট করিনি, যারা উইস করেছিল তাদের কেবল ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। তো আজকের এই দিনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, আইন অনুষদ, শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক পদ হইতে ইস্তফা দিলাম। আমি একজন সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ, রাজনীতি আমার শোভা পায় না! আজকের বর্বরোচিত ঘটনা আমাকে সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে!’

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে প্রথম পদত্যাগকারী নুসরাত জাহান সুরভী বলেন, ‘আপনিও মানুষ আমিও মানুষ। আপনিও জানেন দেশে কী হচ্ছে। সেই মানবিক দিক বিবেচনা করে আমি শাখা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছি।’

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামিন বখশ সাদী লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। ছাত্র রাজনীতি ছিল আমার পছন্দের জায়গা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শেষের আমি এর বাস্তবতা বুঝতে পারি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে শুরু করি। যার কারণে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমিয়ে দিতে শুরু করি। কিন্তু আজকের এই ঘটনার পর আমার মনে হয় না এরকম কেনোকিছুর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। এমনিতেই অনেকদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। তারপরও বলতেছি আমাকে কেউ কখনো এসবের জন্য ডাক দিবেন না। ন্যায় এবং সত্যকে তুলে ধরতে না পারলে আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখি না। এই পদটি আমি আর হোল্ড করি না।’

আইন অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাসেল মিঞা লিখেছেন, ‘না বুঝার বয়সেই রাজনীতির প্রতি একটা প্যাশন সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এই বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতির চর্চা দেখে ধীরে ধীরে আমার মনে রাজনীতির প্রতি আবেগ, ভালোবাসা মরে যেতে লাগলো। কেনো জানি- আজকে তার চিরতরে সমাধি ঘটলো। সামর্থ্য হলে নিজের থেকে দেশ ও সমাজের জন্য ভূমিকা রাখবো ইনশাআল্লাহ। আর একটি ঘোষণা আমি দুটো পদ হোল্ড করতাম। আজকে সে দুটো পদ থেকে আমি সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম।’

আরো পড়ুন : কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, বাড়ছে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা