ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার ভাঙাচোরা বাস ঠিক করার দায়িত্ব কার?

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সড়কে প্রায়ই চোখে পড়ে লক্করঝক্কর বাস। মাঝেমধ্যেই নানা দুর্ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসা এই বাসগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব আসলে কার, সে প্রশ্নই এখন উঠছে জোরেশোরে।

এই লক্করঝক্কর বাসের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি র‍্যাম্প খুলে দেয়া উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘বারবারই বলা হলেও বাসের চেহারা বদলাচ্ছে না। সরকারের গাফিলতির কী আছে? আমি মন্ত্রী কি নিজে গিয়ে বাস রং করব?’

এর আগে গত কয়েক দিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে এমন কিছু ভাঙ্গাচোরা গাড়ির ছবি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছিল। সে প্রেক্ষাপটেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন।

‘আমি মন্ত্রী কি নিজে গিয়ে বাস রং করব‘, তার এ মন্তব্য নিয়েও নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। পরে বৃহস্পতিবারও এক সভায় লক্করঝক্কর বাসের প্রসঙ্গ তুলে ফিটনেসবিহীন বাস সড়কে না চালানোর জন্য বাস মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

কাদের বলেন, ‘ঢাকায় চলাচল করা লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যখন বিদেশীরা বাংলাদেশে আসে এবং আমাদের লক্করঝক্কর গাড়ি দেখে, তখন আমাদের খুব লজ্জা হয়। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। পরিবহন মালিকদের এদিকে নজর দিতে হবে।’

কাদের আরো বলেছেন যে তাকে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ঢাকার বাইরে থেকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ঢাকায় ঢোকে।

তিনি বলেন, ‘আমি তো বলব বাইরে থেকে সিটিতে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি কম আসে। বরং সিটিতেই অনেক লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির কারখানা আছে। আমি সেগুলো নিজের চোখে গিয়ে দেখেছি। ঈদের আগে সেগুলোতে রং লাগাতে দেখেছি, যে রং আবার ১০ দিনও থাকে না।’

তবে মন্ত্রী তার বক্তৃতায় নিজেই বিআরটিএ-র সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও বিআরটিএ বলছে তারা লক্করঝক্কর বাসের বিরুদ্ধ প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু এসব বাস কিভাবে ফিটনেস সনদ পায় সে প্রশ্নের উত্তর নেই তাদের কাছেও।

তাহলে দায়িত্ব আসলে কার
বিশেষজ্ঞরা এবং বাস মালিক সমিতির নেতারাও বলছেন বাসের রং করার দায়িত্ব মন্ত্রীর না হলেও, রাস্তায় আনফিট বাস চলাচল বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারেরই।

সড়ক দুর্ঘটনা ও গণপরিবহন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান বলছেন, লক্করঝক্কর বাসকে ফিটনেস সনদ দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ আর সেই ফিটনেস সনদ নিয়ে এরা রাস্তায় নামছে সংশ্লিষ্ট অন্যদের ‘নানাভাবে ম্যানেজ’ করে।

তিনি বলেন, ‘সড়কে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা আর বায়ুদূষণের জন্য এ ভাঙ্গাচোরা বাসগুলোই দায়ী। অনেক বাস এতোই ভাঙ্গাচোরা যে দেখতেই খারাপ লাগে। অথচ এদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এর দায়িত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরই, যার মধ্যে বিআরটিএ গুরুত্বপূর্ণ। এটি তো মন্ত্রীরই অধীনে।’

হাদীউজ্জামান বলছেন মেট্রো রেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় অবকাঠামোতে সরকার যতটা যত্নশীল ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাপনায় তা দেখা যায় না বলেই কেউ আইন মানে না।

তিনি বলেন, ‘এখানে বাস মালিকদের অনুনয় বিনয়ের সুযোগ নেই। সরকার নিয়ম বা আইন করবে এবং সংশ্লিষ্টদের সেটি মেনেই বাস চালাতে হবে। এই বাস দেখার দায়িত্ব সরকারের।’

মূলত সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার সড়কে যানবাহন চলাচলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। একটি হলো বিআরটিএ আর অন্যটি হল পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

এর মধ্যে বিআরটিএ ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে।

একটি বাসের বত্রিশটি বিষয় পর্যবেক্ষণের পর তাদের ফিটনেস সনদ দেয়ার কথা থাকলেও ভাঙ্গাচোরা বাসগুলো কিভাবে এই সার্টিফিকেট পায়, তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বহু বছর ধরেই।

আবার রাস্তায় নামার পর ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ভাঙ্গাচোরা বা ফিটনেসহীন বাস জব্দ করার কথা থাকলেও সেটি খুব একটা দেখা যায় না। বরং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই লক্কড়ঝক্কর বাসগুলো রাস্তা আটকে যাত্রী তুলছে, এমন চিত্রও প্রতিনিয়ত দেখা যায়।

ট্রাফিক বিভাগ বলছে, অনুপযোগী বা আনফিট যানবাহন রাস্তায় দেখলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। কিন্তু তারপরও এগুলো রাস্তায় কিভাবে, সেটি তাদেরও জানা নেই।

যদিও অভিযোগ আছে মোটর সাইকেল বা প্রাইভেট কার ধরার বিষয়ে পুলিশের মধ্যে যতটা উৎসাহ কাজ করে, ভাঙাচোরা বাসের বিষয়ে তা দেখা যায় না।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আবুল কালাম বলছেন, ঢাকায় যত বাস চলাচল করে তার মধ্যে মাত্র ১৫-২০ শতাংশের অবস্থা খারাপ।

‘মাননীয় মন্ত্রী যে কথা বলেছেন সেটা ঠিক। এটা তার একার কাজ না। মালিক, শ্রমিক, সমিতি, যাত্রী, বিআরটিএ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবাই মিলে কাজ না করলে লক্করঝক্কর বাস ও বাসের নৈরাজ্যের অবসান হবে না,’ বলেন তিনি।

কিন্তু মালিকরা কেন ভাঙ্গাচোরা বাস রাস্তায় নামাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনও গাড়ি এক দিনে লক্করঝক্কর হয় না। এগুলো যাদের ধরার কথা ধরে না কেন? এ সময় যারা ফিটনেস দিলো, দায় তো তাদের।’

অর্থাৎ বাস মালিকরাও অনেকে মনে করেন কিছু মালিক যে লক্করঝক্কর বাস চালানোর সুযোগ পাচ্ছে সেটি পাচ্ছে বিআরটিএ-র কারণেই।

‘কোনো গাড়ি দশ বছরে ফিটনেস সনদ নেয় না। সরকারকে ট্যাক্স দেয় না। রুট পারমিট নাই। কিন্তু তারাও তো রাস্তায় চলছে। কিভাবে চলছে? কারা তাদের চলতে দিচ্ছে?‘

‘এখানে বৈধভাবে চলতে গেলে রাস্তায় প্রতিদিন মামলা খেতে হয়,’ একজন বাস মালিক বলছিলেন। তবে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

আবুল কালাম বলছেন, ‘আইন প্রয়োগের দায়িত্ব যাদের তারা ভাঙা বাস জব্দ করে না কেন? তারা তো জব্দ করে বিআরটিএ-কে জানানোর কথা। বিআরটিএ এগুলো চলতে না দিলে তারা চলে কিভাবে?’

বিআরটিএ যা বলছে
বিআরটিএ’র মুখপাত্র মাহবুব ই রাব্বানী বলছেন বিআরটিএ মোবাইল কোর্টসহ নানা ধরনের অভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রতিদিনই আনফিট যানবাহনকে জরিমানা করা হচ্ছে।

‘কিন্তু সবাই মিলে আইনকে শ্রদ্ধা না করলে এ সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে?’ বলছিলেন তিনি।

কিন্তু আনফিট বা লক্করঝক্কর যানবাহন ফিটনেস সনদ পায় কিভাবে, সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তার কাছে পাওয়া যায়নি।

সূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন : সার্বজনীন পেনশন স্কিমের পরিবর্তন; যুক্ত হচ্ছে চারশোর বেশি প্রতিষ্ঠান

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ঢাকার ভাঙাচোরা বাস ঠিক করার দায়িত্ব কার?

আপডেট সময় ১১:০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সড়কে প্রায়ই চোখে পড়ে লক্করঝক্কর বাস। মাঝেমধ্যেই নানা দুর্ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসা এই বাসগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব আসলে কার, সে প্রশ্নই এখন উঠছে জোরেশোরে।

এই লক্করঝক্কর বাসের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি র‍্যাম্প খুলে দেয়া উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘বারবারই বলা হলেও বাসের চেহারা বদলাচ্ছে না। সরকারের গাফিলতির কী আছে? আমি মন্ত্রী কি নিজে গিয়ে বাস রং করব?’

এর আগে গত কয়েক দিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে এমন কিছু ভাঙ্গাচোরা গাড়ির ছবি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছিল। সে প্রেক্ষাপটেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন।

‘আমি মন্ত্রী কি নিজে গিয়ে বাস রং করব‘, তার এ মন্তব্য নিয়েও নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। পরে বৃহস্পতিবারও এক সভায় লক্করঝক্কর বাসের প্রসঙ্গ তুলে ফিটনেসবিহীন বাস সড়কে না চালানোর জন্য বাস মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

কাদের বলেন, ‘ঢাকায় চলাচল করা লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যখন বিদেশীরা বাংলাদেশে আসে এবং আমাদের লক্করঝক্কর গাড়ি দেখে, তখন আমাদের খুব লজ্জা হয়। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। পরিবহন মালিকদের এদিকে নজর দিতে হবে।’

কাদের আরো বলেছেন যে তাকে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ঢাকার বাইরে থেকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ঢাকায় ঢোকে।

তিনি বলেন, ‘আমি তো বলব বাইরে থেকে সিটিতে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি কম আসে। বরং সিটিতেই অনেক লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির কারখানা আছে। আমি সেগুলো নিজের চোখে গিয়ে দেখেছি। ঈদের আগে সেগুলোতে রং লাগাতে দেখেছি, যে রং আবার ১০ দিনও থাকে না।’

তবে মন্ত্রী তার বক্তৃতায় নিজেই বিআরটিএ-র সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও বিআরটিএ বলছে তারা লক্করঝক্কর বাসের বিরুদ্ধ প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু এসব বাস কিভাবে ফিটনেস সনদ পায় সে প্রশ্নের উত্তর নেই তাদের কাছেও।

তাহলে দায়িত্ব আসলে কার
বিশেষজ্ঞরা এবং বাস মালিক সমিতির নেতারাও বলছেন বাসের রং করার দায়িত্ব মন্ত্রীর না হলেও, রাস্তায় আনফিট বাস চলাচল বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারেরই।

সড়ক দুর্ঘটনা ও গণপরিবহন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান বলছেন, লক্করঝক্কর বাসকে ফিটনেস সনদ দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ আর সেই ফিটনেস সনদ নিয়ে এরা রাস্তায় নামছে সংশ্লিষ্ট অন্যদের ‘নানাভাবে ম্যানেজ’ করে।

তিনি বলেন, ‘সড়কে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা আর বায়ুদূষণের জন্য এ ভাঙ্গাচোরা বাসগুলোই দায়ী। অনেক বাস এতোই ভাঙ্গাচোরা যে দেখতেই খারাপ লাগে। অথচ এদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এর দায়িত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরই, যার মধ্যে বিআরটিএ গুরুত্বপূর্ণ। এটি তো মন্ত্রীরই অধীনে।’

হাদীউজ্জামান বলছেন মেট্রো রেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় অবকাঠামোতে সরকার যতটা যত্নশীল ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাপনায় তা দেখা যায় না বলেই কেউ আইন মানে না।

তিনি বলেন, ‘এখানে বাস মালিকদের অনুনয় বিনয়ের সুযোগ নেই। সরকার নিয়ম বা আইন করবে এবং সংশ্লিষ্টদের সেটি মেনেই বাস চালাতে হবে। এই বাস দেখার দায়িত্ব সরকারের।’

মূলত সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার সড়কে যানবাহন চলাচলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। একটি হলো বিআরটিএ আর অন্যটি হল পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

এর মধ্যে বিআরটিএ ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে।

একটি বাসের বত্রিশটি বিষয় পর্যবেক্ষণের পর তাদের ফিটনেস সনদ দেয়ার কথা থাকলেও ভাঙ্গাচোরা বাসগুলো কিভাবে এই সার্টিফিকেট পায়, তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বহু বছর ধরেই।

আবার রাস্তায় নামার পর ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ভাঙ্গাচোরা বা ফিটনেসহীন বাস জব্দ করার কথা থাকলেও সেটি খুব একটা দেখা যায় না। বরং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই লক্কড়ঝক্কর বাসগুলো রাস্তা আটকে যাত্রী তুলছে, এমন চিত্রও প্রতিনিয়ত দেখা যায়।

ট্রাফিক বিভাগ বলছে, অনুপযোগী বা আনফিট যানবাহন রাস্তায় দেখলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। কিন্তু তারপরও এগুলো রাস্তায় কিভাবে, সেটি তাদেরও জানা নেই।

যদিও অভিযোগ আছে মোটর সাইকেল বা প্রাইভেট কার ধরার বিষয়ে পুলিশের মধ্যে যতটা উৎসাহ কাজ করে, ভাঙাচোরা বাসের বিষয়ে তা দেখা যায় না।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আবুল কালাম বলছেন, ঢাকায় যত বাস চলাচল করে তার মধ্যে মাত্র ১৫-২০ শতাংশের অবস্থা খারাপ।

‘মাননীয় মন্ত্রী যে কথা বলেছেন সেটা ঠিক। এটা তার একার কাজ না। মালিক, শ্রমিক, সমিতি, যাত্রী, বিআরটিএ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবাই মিলে কাজ না করলে লক্করঝক্কর বাস ও বাসের নৈরাজ্যের অবসান হবে না,’ বলেন তিনি।

কিন্তু মালিকরা কেন ভাঙ্গাচোরা বাস রাস্তায় নামাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনও গাড়ি এক দিনে লক্করঝক্কর হয় না। এগুলো যাদের ধরার কথা ধরে না কেন? এ সময় যারা ফিটনেস দিলো, দায় তো তাদের।’

অর্থাৎ বাস মালিকরাও অনেকে মনে করেন কিছু মালিক যে লক্করঝক্কর বাস চালানোর সুযোগ পাচ্ছে সেটি পাচ্ছে বিআরটিএ-র কারণেই।

‘কোনো গাড়ি দশ বছরে ফিটনেস সনদ নেয় না। সরকারকে ট্যাক্স দেয় না। রুট পারমিট নাই। কিন্তু তারাও তো রাস্তায় চলছে। কিভাবে চলছে? কারা তাদের চলতে দিচ্ছে?‘

‘এখানে বৈধভাবে চলতে গেলে রাস্তায় প্রতিদিন মামলা খেতে হয়,’ একজন বাস মালিক বলছিলেন। তবে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

আবুল কালাম বলছেন, ‘আইন প্রয়োগের দায়িত্ব যাদের তারা ভাঙা বাস জব্দ করে না কেন? তারা তো জব্দ করে বিআরটিএ-কে জানানোর কথা। বিআরটিএ এগুলো চলতে না দিলে তারা চলে কিভাবে?’

বিআরটিএ যা বলছে
বিআরটিএ’র মুখপাত্র মাহবুব ই রাব্বানী বলছেন বিআরটিএ মোবাইল কোর্টসহ নানা ধরনের অভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রতিদিনই আনফিট যানবাহনকে জরিমানা করা হচ্ছে।

‘কিন্তু সবাই মিলে আইনকে শ্রদ্ধা না করলে এ সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে?’ বলছিলেন তিনি।

কিন্তু আনফিট বা লক্করঝক্কর যানবাহন ফিটনেস সনদ পায় কিভাবে, সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তার কাছে পাওয়া যায়নি।

সূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন : সার্বজনীন পেনশন স্কিমের পরিবর্তন; যুক্ত হচ্ছে চারশোর বেশি প্রতিষ্ঠান