ঢাকা ১০:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোলার স্কুলে ‘অজানা রোগে’ আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা

পশ্চিম চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়

দেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলার একটি স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। তারা মাথা ব্যথা হচ্ছে বলে জানান ও কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে পড়েন, যার পর ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অভিভাবকরা।

চিকিৎসক ও মনস্তাত্ত্বিকরা বলছেন, আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষার্থীরা ‘মাস সাইকোলজিকেল ইলনেস’ বা ‘গণ-মনস্তাত্ত্বিক রোগে’ আক্রান্ত হয়েছে। একজনের দেখাদেখি আরেকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এ ধরনের অসুস্থতার ঘটনা ঘটে। এটি এক ধরণের লঘু মানসিক রোগ।

কী ঘটেছিল ভোলার স্কুলটিতে
সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পশ্চিম চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে ক্লাশ চলাকালীন সময়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সূত্রপাত যখন জিহাদ নামে অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী হাতে কলমের পিন ঢুকে রক্ত বের হওয়ার পর মাথা ব্যথা করছে বলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

এ সময় একই ক্লাসের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী মাথা ঘুরছে বলে আতঙ্কিত বোধ করতে থাকে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শ্রেণি শিক্ষক আবু সাইদ বিষয়টি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে অবহিত করেন।

শ্রেণি শিক্ষক আবু সাঈদ জানান, “শিক্ষার্থী জিহাদ কলমের নিব থেকে আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে রক্ত যাতে না পড়ে সেজন্য আঙ্গুল চেপে ধরে। পরে দেখি সে মাথা ঝাঁকিয়ে টেবিল থেকে নিচে পড়ে যায়। এরপরই আরো কয়েকজনের একই রকম অবস্থা হয়”

পশ্চিম চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, “সকাল এগারটায় অষ্টম শ্রেণীর দ্বিতীয় পিরিয়ডে অঙ্কের ক্লাস চলাকালীন সময়ে জিহাদ নামে এক শিক্ষার্থীর অসুস্থতার খবর পেয়ে ক্লাসে যাই।”

“ওই শিক্ষার্থী অজ্ঞান হওয়ায় শ্রেণী শিক্ষক তাৎক্ষণিক-ভাবে তার মাথায় পানি দেয়। পরে সেখানে আরো ছয়জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করছে বলে জানায়।”

“জিহাদ অসুস্থ হওয়ার পর তার দেখাদেখি এই ক্লাসেরই আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে সাথে সাথে ওই ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেই। ক্লাসে কোনও সমস্যা হলো কি না তা দেখার জন্য। এ সময় আমি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করি। ওই সময় পুরো স্কুল ছুটি দিয়ে দেই”, জানান নজরুল ইসলাম।

নজরুল ইসলাম বলেন “অ্যাম্বুলেন্স আনার জন্য ৯৯৯-এ ফোন করি। অ্যাম্বুলেন্স আসার পর মোট ১৬ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় অন্য শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি দেখেছিল।”

“ফলে আতঙ্কিত হয়ে বাড়িতে গিয়ে অন্যান্য ক্লাসের আরো প্রায় ২০ জন অসুস্থ হলে রাত দশটা নাগাদ তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মোট ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”

সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফসানা বেগম বলেন, “আমার মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে এসে মাথা চেপে ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে বলছিল আম্মা মাথা ফেটে যাচ্ছে। তার চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছিল এ সময়।”

“পরে দুপুরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওই হাসপাতালে স্কুলের আরো অনেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছিল”, জানান তিনি।

আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনির হোসেন বলেন, “স্যারের ফোন পেয়ে স্কুলে যাই। গিয়ে দেখি বেশ কয়েকজন বাচ্চা মাথায় থাপ্পড় দিয়ে কাঁদতেছে। আমার ছেলে বলে খুব মাথা ব্যথা করছে। পরে তাকে সহ অন্যান্যদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”

ভোলা সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৩৬ জন শিক্ষার্থী এমন অসুস্থ হয়ে ভর্তি রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, “বুধবার স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে একেবারে আসেনি বললেই চলে।”

আরও পড়ুন : বরিশালে দুর্নীতির মামলায় ভূমি কর্মকর্তা কারাগারে

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ভোলার স্কুলে ‘অজানা রোগে’ আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

দেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলার একটি স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। তারা মাথা ব্যথা হচ্ছে বলে জানান ও কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে পড়েন, যার পর ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অভিভাবকরা।

চিকিৎসক ও মনস্তাত্ত্বিকরা বলছেন, আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষার্থীরা ‘মাস সাইকোলজিকেল ইলনেস’ বা ‘গণ-মনস্তাত্ত্বিক রোগে’ আক্রান্ত হয়েছে। একজনের দেখাদেখি আরেকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এ ধরনের অসুস্থতার ঘটনা ঘটে। এটি এক ধরণের লঘু মানসিক রোগ।

কী ঘটেছিল ভোলার স্কুলটিতে
সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পশ্চিম চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে ক্লাশ চলাকালীন সময়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সূত্রপাত যখন জিহাদ নামে অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী হাতে কলমের পিন ঢুকে রক্ত বের হওয়ার পর মাথা ব্যথা করছে বলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

এ সময় একই ক্লাসের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী মাথা ঘুরছে বলে আতঙ্কিত বোধ করতে থাকে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শ্রেণি শিক্ষক আবু সাইদ বিষয়টি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে অবহিত করেন।

শ্রেণি শিক্ষক আবু সাঈদ জানান, “শিক্ষার্থী জিহাদ কলমের নিব থেকে আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে রক্ত যাতে না পড়ে সেজন্য আঙ্গুল চেপে ধরে। পরে দেখি সে মাথা ঝাঁকিয়ে টেবিল থেকে নিচে পড়ে যায়। এরপরই আরো কয়েকজনের একই রকম অবস্থা হয়”

পশ্চিম চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, “সকাল এগারটায় অষ্টম শ্রেণীর দ্বিতীয় পিরিয়ডে অঙ্কের ক্লাস চলাকালীন সময়ে জিহাদ নামে এক শিক্ষার্থীর অসুস্থতার খবর পেয়ে ক্লাসে যাই।”

“ওই শিক্ষার্থী অজ্ঞান হওয়ায় শ্রেণী শিক্ষক তাৎক্ষণিক-ভাবে তার মাথায় পানি দেয়। পরে সেখানে আরো ছয়জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করছে বলে জানায়।”

“জিহাদ অসুস্থ হওয়ার পর তার দেখাদেখি এই ক্লাসেরই আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে সাথে সাথে ওই ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেই। ক্লাসে কোনও সমস্যা হলো কি না তা দেখার জন্য। এ সময় আমি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করি। ওই সময় পুরো স্কুল ছুটি দিয়ে দেই”, জানান নজরুল ইসলাম।

নজরুল ইসলাম বলেন “অ্যাম্বুলেন্স আনার জন্য ৯৯৯-এ ফোন করি। অ্যাম্বুলেন্স আসার পর মোট ১৬ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় অন্য শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি দেখেছিল।”

“ফলে আতঙ্কিত হয়ে বাড়িতে গিয়ে অন্যান্য ক্লাসের আরো প্রায় ২০ জন অসুস্থ হলে রাত দশটা নাগাদ তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মোট ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”

সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফসানা বেগম বলেন, “আমার মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে এসে মাথা চেপে ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে বলছিল আম্মা মাথা ফেটে যাচ্ছে। তার চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছিল এ সময়।”

“পরে দুপুরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওই হাসপাতালে স্কুলের আরো অনেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছিল”, জানান তিনি।

আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনির হোসেন বলেন, “স্যারের ফোন পেয়ে স্কুলে যাই। গিয়ে দেখি বেশ কয়েকজন বাচ্চা মাথায় থাপ্পড় দিয়ে কাঁদতেছে। আমার ছেলে বলে খুব মাথা ব্যথা করছে। পরে তাকে সহ অন্যান্যদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”

ভোলা সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৩৬ জন শিক্ষার্থী এমন অসুস্থ হয়ে ভর্তি রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, “বুধবার স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে একেবারে আসেনি বললেই চলে।”

আরও পড়ুন : বরিশালে দুর্নীতির মামলায় ভূমি কর্মকর্তা কারাগারে