ঢাকা ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি

মোঃ মুনছুর হেলাল, রায়গঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
কালের বিবর্তনে দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এক কালের কৃষক-কৃষানির ধাঁন ভাঙ্গার প্রধান যন্ত্র ঢেঁকি । অতীতে গ্রাম বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে চাল তৈরির জন্য কিংবা চালের আঁটা তৈরির জন্য একমাত্র ঢেঁকিই ছিলো ভরসা । বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে বিলিন হয়ে গেছে আগের দিনের সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির ব্যবহার ।

৮০-৯০ দশকে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রাম এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের সারা বছরের ভাতের চাল ঢেঁকিতে ছেঁটে প্রস্তুত করতো । ভাদ্র মাসে আউস ও অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে রোপা আমন ধাঁন ঘরে উঠলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নানা রকম পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যেতো । আর এজন্য বাড়িতে বাড়িতে আটা কোটার ধুম পড়ে যেত । আমন ধাঁন কাটা শেষে পৌঁষ মাসে ঢেঁকিতে ধাঁন ভাঙ্গার শব্দে অনেকের রাতের ঘুম নষ্ট হতো । আবার ভোর বেলা ঢেঁকির শব্দে অনেকের ঘুম ভাঙতো।

ধাঁন ভেঙ্গে চাল ছাঁটার জন্য মহিলারা আবার কখনও মহিলার পাশাপাশি পুরুষরাও ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধাঁন ভাংতো । দু’জন মহিলা সারাক্ষণ ঢেঁকিতে পাড় দিতো আর একজন ধাঁনগুলোকে উনুতে (ভাঙ্গার গর্তে) এগিয়ে দিতো । এভাবেই সারা রাত ধরে গ্রামের গৃহবধূরা তাদের সারা বছরের চাল ঢেঁকিতে ছেঁটে মাটির কুঠি কিংবা বাঁশের তৈরি ডোলে ভরে সংরক্ষণ করে রাখতো । সে সময় ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত খেয়ে অধিকাংশ মানুষই যেমন তৃপ্তি পেত, তেমনি সুস্থ জীবনযাপন করতো ।

বর্তমানে আধুনিক যুগে চাকচিক্যের আধিক্যে হারিয়ে গেছে সেই ঢেঁকি ছাঁটা চাল । এখন পাড়ায় পাড়ায় ধাঁন ভাঁঙ্গা হাসকিং মিল এমনকি ভ্রাম্যমাণ মিল প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধাঁন ভেঙে দেয়, ঝকঝকে চাল, খাটুনি কম ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় সেকেলের ঢেঁকি আর কোথাও চোখে পড়ে না।

রায়গঞ্জ  উপজেলার পাঙ্গাঁসী ইউনিয়নের ০৩ নং ওয়ার্ড চক–আনারডুমুর গ্রামের বাসিন্দা  মোঃ শেখ আব্দুল্লাহ (সুমন) এর উঠানে একটি ঢেঁকি পাতানো দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ঢেঁকির মালিক শেখ আব্দুল্লাহ সুমন এর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মেশিনের তৈরি আটা দিয়ে সকল প্রকার খাবার বিশেষ করে পিঠা তৈরি হয় না। তাই অনেক সময় অনেক কিছু খাবার জিনিস তৈরি করতে হলে এখনও ঢেঁকির তৈরি আটা লাগে । তাই কালের সাক্ষী হিসেবে সে তাদের উঠানে ঢেঁকিটি এখনও পেতে রেখেছেন। বছরে অন্তত দু’এক বার তারা ও পাড়ার অনেকেই এই ঢেঁকিতে এসে আটা তৈরি করে থাকে । তবে আগেকার দিনের মতো ঢেঁকির আর কদর নেই । কোন দিন হয়তো সেও ঢেঁকিটি তুলে ফেলবেন ।

বর্তমান যুগে কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির হয়তো আর দেখাই মিলবে না । আর কিছুদিন পরে নতুন প্রজন্ম হয়তো ঢেঁকির কথা শুনলে সেটি কি জিনিস, তা বুঝানো মুশকিল হয়ে পড়বে ।

আরো পড়ুন : সিরাজগঞ্জে মাসব্যাপী  বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি

আপডেট সময় ০৯:৩৯:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মোঃ মুনছুর হেলাল, রায়গঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
কালের বিবর্তনে দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এক কালের কৃষক-কৃষানির ধাঁন ভাঙ্গার প্রধান যন্ত্র ঢেঁকি । অতীতে গ্রাম বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে চাল তৈরির জন্য কিংবা চালের আঁটা তৈরির জন্য একমাত্র ঢেঁকিই ছিলো ভরসা । বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে বিলিন হয়ে গেছে আগের দিনের সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির ব্যবহার ।

৮০-৯০ দশকে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রাম এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের সারা বছরের ভাতের চাল ঢেঁকিতে ছেঁটে প্রস্তুত করতো । ভাদ্র মাসে আউস ও অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে রোপা আমন ধাঁন ঘরে উঠলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নানা রকম পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যেতো । আর এজন্য বাড়িতে বাড়িতে আটা কোটার ধুম পড়ে যেত । আমন ধাঁন কাটা শেষে পৌঁষ মাসে ঢেঁকিতে ধাঁন ভাঙ্গার শব্দে অনেকের রাতের ঘুম নষ্ট হতো । আবার ভোর বেলা ঢেঁকির শব্দে অনেকের ঘুম ভাঙতো।

ধাঁন ভেঙ্গে চাল ছাঁটার জন্য মহিলারা আবার কখনও মহিলার পাশাপাশি পুরুষরাও ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধাঁন ভাংতো । দু’জন মহিলা সারাক্ষণ ঢেঁকিতে পাড় দিতো আর একজন ধাঁনগুলোকে উনুতে (ভাঙ্গার গর্তে) এগিয়ে দিতো । এভাবেই সারা রাত ধরে গ্রামের গৃহবধূরা তাদের সারা বছরের চাল ঢেঁকিতে ছেঁটে মাটির কুঠি কিংবা বাঁশের তৈরি ডোলে ভরে সংরক্ষণ করে রাখতো । সে সময় ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত খেয়ে অধিকাংশ মানুষই যেমন তৃপ্তি পেত, তেমনি সুস্থ জীবনযাপন করতো ।

বর্তমানে আধুনিক যুগে চাকচিক্যের আধিক্যে হারিয়ে গেছে সেই ঢেঁকি ছাঁটা চাল । এখন পাড়ায় পাড়ায় ধাঁন ভাঁঙ্গা হাসকিং মিল এমনকি ভ্রাম্যমাণ মিল প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধাঁন ভেঙে দেয়, ঝকঝকে চাল, খাটুনি কম ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় সেকেলের ঢেঁকি আর কোথাও চোখে পড়ে না।

রায়গঞ্জ  উপজেলার পাঙ্গাঁসী ইউনিয়নের ০৩ নং ওয়ার্ড চক–আনারডুমুর গ্রামের বাসিন্দা  মোঃ শেখ আব্দুল্লাহ (সুমন) এর উঠানে একটি ঢেঁকি পাতানো দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ঢেঁকির মালিক শেখ আব্দুল্লাহ সুমন এর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মেশিনের তৈরি আটা দিয়ে সকল প্রকার খাবার বিশেষ করে পিঠা তৈরি হয় না। তাই অনেক সময় অনেক কিছু খাবার জিনিস তৈরি করতে হলে এখনও ঢেঁকির তৈরি আটা লাগে । তাই কালের সাক্ষী হিসেবে সে তাদের উঠানে ঢেঁকিটি এখনও পেতে রেখেছেন। বছরে অন্তত দু’এক বার তারা ও পাড়ার অনেকেই এই ঢেঁকিতে এসে আটা তৈরি করে থাকে । তবে আগেকার দিনের মতো ঢেঁকির আর কদর নেই । কোন দিন হয়তো সেও ঢেঁকিটি তুলে ফেলবেন ।

বর্তমান যুগে কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির হয়তো আর দেখাই মিলবে না । আর কিছুদিন পরে নতুন প্রজন্ম হয়তো ঢেঁকির কথা শুনলে সেটি কি জিনিস, তা বুঝানো মুশকিল হয়ে পড়বে ।

আরো পড়ুন : সিরাজগঞ্জে মাসব্যাপী  বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু