ঢাকা ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে হাসপাতাল দেখে বিস্মিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অনুপস্থিত চিকিৎসক বরখাস্ত

সিলেট জেলা প্রতিনিধি:
সিলেটের জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার চার ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর পর যে হাসপাতালে তুলকালাম হয়েছিল, সেখানে এবার কর্মঘণ্টায় পরিদর্শনে গিয়ে চিকিৎসকের দেখা পেলেন না খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
হাসপাতালের আরো চিত্র দেখে বিস্মিত হয়েছেন মন্ত্রী। তিনি দেখতে পান, সেখানে ঝুলছে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারের বিজ্ঞাপন।
এরপর মন্ত্রীর নির্দেশে সাময়িক বরখাস্ত হন অনুপস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রেন্টু পুরকায়স্ত, যিনি পরে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি দাপ্তরিক কাজেই বাইরে ছিলেন।
গত বুধবার সকাল দশটার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যান মন্ত্রী। সে সময় সেখানে ছিলেন না উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেন্টু।
মন্ত্রীর নির্দেশে তাকে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্তের আদেশের পর কর্মস্থলে হাজির হন রেন্টু। অনুপস্থিতির ব্যাখ্যায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি অফিসিয়াল কাজেই বাইরে ছিলাম। স্যার (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) আসার খবরে আমি তড়িঘড়ি করে অফিসে ছুটে আসি। কিন্তু আমি আসার আগেই স্যার এসে পড়েছিলেন। তাই আমাকে অফিসে না পেয়ে এমন নির্দেশ দিয়েছেন। তবে স্যারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।’’
জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেছেন, এই হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার বিষয়টি এক স্বাভাবিক ঘটনা।
তিনি বলেন, “এখানে নানা অনিয়ম হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ডাক্তাররা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেন না। বেলা ১২টার পর গেলে চিকিৎসকদের পাওয়াই যায় না। রাতের বেলা কোনো দুর্ঘটনা হলেও ডাক্তারদের দেখাই মেলে না: এ নিয়ে কিছুদিন আগে ঝামেলা হয়েছিল। তারপর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতাল ভাঙচুর করেন।”
গত ১৯ জানুয়ারি রাতের একটি ঘটনায় এই হাসপাতালটি জাতীয় পর্যায়েও আলোচনায় আসে।
জৈন্তাপুরে গাড়ি খাদে পড়ে চার ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালায় তাদের অনুসারীরা।
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি, ভাঙচুর করা হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স। চিকিৎসকদের বাসভবনের জানালার কাঁচও ভাঙা হয়েছে।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাদের মৃত হিসেবে পান। তবে তাদের ‘ডেথ ডিক্লেয়ার’ করার জন্য একটি ইসিজি করা হয়। ওই হাসপাতালের ইসিজি যন্ত্রটি তখন বিকল ছিল।
“তাদের অনুসারী-বন্ধুরা অ্যাম্বুলেন্স চাইলে হাসপাতাল থেকে তা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এসব নিয়ে ‘চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ’ তুলে হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালান তারা।”
এই ঘটনায় তিনশ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকায় এক প্রতিক্রিয়ায় চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় জোর দিয়েছিলেন।
এবার তিনি নিজেই সেই হাসপাতালে গিয়ে নিজের চোখে দেখলেন অগ্রহণযোগ্য চিত্র। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চত্বরে সরকারি চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারের স্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি বাংলাদেশে একটি মামুলি ঘটনা। উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চাকরি নিয়েও নিয়মিত কাজে যোগ না দেওয়ায় চিকিৎসা প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাদেরকে বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে বা প্রাইভেট চেম্বারে ছুটতে হয়।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

সিলেটে হাসপাতাল দেখে বিস্মিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অনুপস্থিত চিকিৎসক বরখাস্ত

আপডেট সময় ০৫:৫৮:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০২৪

সিলেট জেলা প্রতিনিধি:
সিলেটের জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার চার ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর পর যে হাসপাতালে তুলকালাম হয়েছিল, সেখানে এবার কর্মঘণ্টায় পরিদর্শনে গিয়ে চিকিৎসকের দেখা পেলেন না খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
হাসপাতালের আরো চিত্র দেখে বিস্মিত হয়েছেন মন্ত্রী। তিনি দেখতে পান, সেখানে ঝুলছে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারের বিজ্ঞাপন।
এরপর মন্ত্রীর নির্দেশে সাময়িক বরখাস্ত হন অনুপস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রেন্টু পুরকায়স্ত, যিনি পরে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি দাপ্তরিক কাজেই বাইরে ছিলেন।
গত বুধবার সকাল দশটার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যান মন্ত্রী। সে সময় সেখানে ছিলেন না উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেন্টু।
মন্ত্রীর নির্দেশে তাকে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্তের আদেশের পর কর্মস্থলে হাজির হন রেন্টু। অনুপস্থিতির ব্যাখ্যায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি অফিসিয়াল কাজেই বাইরে ছিলাম। স্যার (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) আসার খবরে আমি তড়িঘড়ি করে অফিসে ছুটে আসি। কিন্তু আমি আসার আগেই স্যার এসে পড়েছিলেন। তাই আমাকে অফিসে না পেয়ে এমন নির্দেশ দিয়েছেন। তবে স্যারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।’’
জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেছেন, এই হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার বিষয়টি এক স্বাভাবিক ঘটনা।
তিনি বলেন, “এখানে নানা অনিয়ম হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ডাক্তাররা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেন না। বেলা ১২টার পর গেলে চিকিৎসকদের পাওয়াই যায় না। রাতের বেলা কোনো দুর্ঘটনা হলেও ডাক্তারদের দেখাই মেলে না: এ নিয়ে কিছুদিন আগে ঝামেলা হয়েছিল। তারপর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতাল ভাঙচুর করেন।”
গত ১৯ জানুয়ারি রাতের একটি ঘটনায় এই হাসপাতালটি জাতীয় পর্যায়েও আলোচনায় আসে।
জৈন্তাপুরে গাড়ি খাদে পড়ে চার ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালায় তাদের অনুসারীরা।
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি, ভাঙচুর করা হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স। চিকিৎসকদের বাসভবনের জানালার কাঁচও ভাঙা হয়েছে।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাদের মৃত হিসেবে পান। তবে তাদের ‘ডেথ ডিক্লেয়ার’ করার জন্য একটি ইসিজি করা হয়। ওই হাসপাতালের ইসিজি যন্ত্রটি তখন বিকল ছিল।
“তাদের অনুসারী-বন্ধুরা অ্যাম্বুলেন্স চাইলে হাসপাতাল থেকে তা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এসব নিয়ে ‘চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ’ তুলে হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালান তারা।”
এই ঘটনায় তিনশ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকায় এক প্রতিক্রিয়ায় চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় জোর দিয়েছিলেন।
এবার তিনি নিজেই সেই হাসপাতালে গিয়ে নিজের চোখে দেখলেন অগ্রহণযোগ্য চিত্র। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চত্বরে সরকারি চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারের স্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি বাংলাদেশে একটি মামুলি ঘটনা। উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চাকরি নিয়েও নিয়মিত কাজে যোগ না দেওয়ায় চিকিৎসা প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাদেরকে বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে বা প্রাইভেট চেম্বারে ছুটতে হয়।