ঢাকা ০১:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানুষের অগ্রাধিকার, মানবিকতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি

হারুন-আল-রশিদ
আমার বন্ধু কবি ও লেখক শামীম আহমেদ-এর ক্যান্সারের উপর একট পোস্ট দেখে কথাগুলি নতুন করে মাথায় আসল, যদিও ব্যাপারটা আমার মাথায় সব সময় থাকে। আমরা লেখকরা পৃথিবীর ক্ষমতাশালী মানুষ থেকে আলাদাভাবে চিন্তা করতে পারি, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটা সুখের বিষয়। ক্ষমতা মানুষের চিন্তাশক্তিকে নষ্ট করে, তার চিন্তাকে নানান শর্তের অধীন করে। লেখকদের চিন্তা কোন শর্তের অধীন নয়। এই ধরুন, শামীম অনুশোচনা করে বলেছেন, মানুষ চাঁদে যায়, অথচ ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে পারে না। এই ব্যাপারটাতে অনেক ভাবনার বীজ লুকিয়ে আছে। মানুষ নিজেকে যা ভাবে, সে যদি তা হত, তা হলে, সে চাঁদে যাওয়ার জন্য টাকাপয়সা খরচ করার আগে অবশ্যই ক্যান্সারসহ মানুষ, প্রাণি ও বৃক্ষের যাবতীয় দুঃখ মোছনের গরজ বোধ করত। কিন্তু মানুষ তা করে না। মানুষ ভাবে সুখের জন্য কাউকে টাকা দিয়ে দাও, বা টাকা রোজগারের ব্যবস্থা করে দাও। সেটাও ঠিক ছিল। কিন্তু সেতো তা সংকীর্ণভাবে করে। নিজের লোকের জন্য করে। আর অন্য লোকের বাড়িতে সে ডাকাতি করে। কিন্তু মানুষ ভাবে না, প্রকৃতি তাকে কতটুকু অধিকার দিয়েছে। ধরা যাক, এটা আমার বাড়ি, আমার জমি। আমি এ বাড়ি কোথা থেকে পেলাম? হয় আমার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে, নয় টাকা দিয়ে কিনে। তারা এ জমি কোথায় পেল? একই ভাবে। তাদের তারা কোথা থেকে? একই ভাবে। সবার আগে যে পেল সে তা কীভাবে পেল? সোজা উত্তর: দখল করে। প্রকৃতি থেকে।কিংবা অন্য মানুষ, প্রাণী বা বৃক্ষ থেকে। এ কথার অর্থ হল পৃথিবীতে আমার কাছে যা আছে, তা সবই দখল করা জিনিস। এ যে দখল করা নয়, তা বোঝার জন্য যে পরিপক্বতা দরকার, তা অর্জন করা থেকে মানুষ জেনে বা না জেনে বিরত থেকেছে। রাষ্ট্রপতিরা সেই পরিপক্বতা অর্জন করতে পারেননি। নোবেল বিজয়ীরাও পারেননি। তাই দেখা যায় এক ডাকে অন্যায্য কাজে সাড়া দিতে তারাও এক জোট হয়ে যান। মানুষের পরিপক্বতা আসবে না, যতক্ষণ না সে বুঝতে পারে, যতই সে বলুক কষ্ট করে সে তার শানশওকত অর্জন করেছে, আসলে তা সে ডাকাতি করেই অর্জন করেছে। সৃষ্টির শুরু থেকে ডাকাতি চলে আসছে। প্রকৃতির প্রাণিদের মতো ডাকাতিরও বিবর্তন ঘটেছে। তাই ডাকাতিকে আমরা ডাকাতি ভাবতে পারি না। এখন কথা হল আমরা কি ডাকাতি বন্ধ করব? সেটা করা উচিত। কিন্তু তা হয়তো রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব সেটা হল ডাকাতির ধনে নিজের পূর্ণ অধিকার, এই ধারণা ত্যাগ করা। ডাকাতির ধন যে ডাকাতিতে অদক্ষ, তার সাথে ভাগ করে নেয়া দরকার, এই ভাবনা আমাদের মাথায় প্রবেশ করানোর দরকার আছে। আমাদের দরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা। যাতে শিশুরা বুঝতে পারে পৃথিবীর উন্নতি, সভ্যতার অগ্রগতি, সব কিছুর মূলে আছে ডাকাতি। ডাকাতি নামক অন্যায়ের মাধ্যমে যে উন্নতি আর অগ্রগতি আর সভ্যতা তা যে টেকসই হবে না, তাতে অনুশোচনা করার কী আছে? পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি বা রাষ্ট্র তার শৌর্যবির্যের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি। আর ডাকাতি নির্ভর সভ্যতায় তা সম্ভবও না। ডাকাতে ডাকাতে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকবে। এক ডাকাত আর এক ডাকাতকে হত্যা বা বিনাশ করে সেই ডাকাতের ধন কেড়ে নেবে। এতে অবাক হবার কিছু নাই।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

আপলোডকারীর তথ্য

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

মানুষের অগ্রাধিকার, মানবিকতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি

আপডেট সময় ১১:৫৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হারুন-আল-রশিদ
আমার বন্ধু কবি ও লেখক শামীম আহমেদ-এর ক্যান্সারের উপর একট পোস্ট দেখে কথাগুলি নতুন করে মাথায় আসল, যদিও ব্যাপারটা আমার মাথায় সব সময় থাকে। আমরা লেখকরা পৃথিবীর ক্ষমতাশালী মানুষ থেকে আলাদাভাবে চিন্তা করতে পারি, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটা সুখের বিষয়। ক্ষমতা মানুষের চিন্তাশক্তিকে নষ্ট করে, তার চিন্তাকে নানান শর্তের অধীন করে। লেখকদের চিন্তা কোন শর্তের অধীন নয়। এই ধরুন, শামীম অনুশোচনা করে বলেছেন, মানুষ চাঁদে যায়, অথচ ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে পারে না। এই ব্যাপারটাতে অনেক ভাবনার বীজ লুকিয়ে আছে। মানুষ নিজেকে যা ভাবে, সে যদি তা হত, তা হলে, সে চাঁদে যাওয়ার জন্য টাকাপয়সা খরচ করার আগে অবশ্যই ক্যান্সারসহ মানুষ, প্রাণি ও বৃক্ষের যাবতীয় দুঃখ মোছনের গরজ বোধ করত। কিন্তু মানুষ তা করে না। মানুষ ভাবে সুখের জন্য কাউকে টাকা দিয়ে দাও, বা টাকা রোজগারের ব্যবস্থা করে দাও। সেটাও ঠিক ছিল। কিন্তু সেতো তা সংকীর্ণভাবে করে। নিজের লোকের জন্য করে। আর অন্য লোকের বাড়িতে সে ডাকাতি করে। কিন্তু মানুষ ভাবে না, প্রকৃতি তাকে কতটুকু অধিকার দিয়েছে। ধরা যাক, এটা আমার বাড়ি, আমার জমি। আমি এ বাড়ি কোথা থেকে পেলাম? হয় আমার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে, নয় টাকা দিয়ে কিনে। তারা এ জমি কোথায় পেল? একই ভাবে। তাদের তারা কোথা থেকে? একই ভাবে। সবার আগে যে পেল সে তা কীভাবে পেল? সোজা উত্তর: দখল করে। প্রকৃতি থেকে।কিংবা অন্য মানুষ, প্রাণী বা বৃক্ষ থেকে। এ কথার অর্থ হল পৃথিবীতে আমার কাছে যা আছে, তা সবই দখল করা জিনিস। এ যে দখল করা নয়, তা বোঝার জন্য যে পরিপক্বতা দরকার, তা অর্জন করা থেকে মানুষ জেনে বা না জেনে বিরত থেকেছে। রাষ্ট্রপতিরা সেই পরিপক্বতা অর্জন করতে পারেননি। নোবেল বিজয়ীরাও পারেননি। তাই দেখা যায় এক ডাকে অন্যায্য কাজে সাড়া দিতে তারাও এক জোট হয়ে যান। মানুষের পরিপক্বতা আসবে না, যতক্ষণ না সে বুঝতে পারে, যতই সে বলুক কষ্ট করে সে তার শানশওকত অর্জন করেছে, আসলে তা সে ডাকাতি করেই অর্জন করেছে। সৃষ্টির শুরু থেকে ডাকাতি চলে আসছে। প্রকৃতির প্রাণিদের মতো ডাকাতিরও বিবর্তন ঘটেছে। তাই ডাকাতিকে আমরা ডাকাতি ভাবতে পারি না। এখন কথা হল আমরা কি ডাকাতি বন্ধ করব? সেটা করা উচিত। কিন্তু তা হয়তো রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব সেটা হল ডাকাতির ধনে নিজের পূর্ণ অধিকার, এই ধারণা ত্যাগ করা। ডাকাতির ধন যে ডাকাতিতে অদক্ষ, তার সাথে ভাগ করে নেয়া দরকার, এই ভাবনা আমাদের মাথায় প্রবেশ করানোর দরকার আছে। আমাদের দরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা। যাতে শিশুরা বুঝতে পারে পৃথিবীর উন্নতি, সভ্যতার অগ্রগতি, সব কিছুর মূলে আছে ডাকাতি। ডাকাতি নামক অন্যায়ের মাধ্যমে যে উন্নতি আর অগ্রগতি আর সভ্যতা তা যে টেকসই হবে না, তাতে অনুশোচনা করার কী আছে? পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি বা রাষ্ট্র তার শৌর্যবির্যের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি। আর ডাকাতি নির্ভর সভ্যতায় তা সম্ভবও না। ডাকাতে ডাকাতে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকবে। এক ডাকাত আর এক ডাকাতকে হত্যা বা বিনাশ করে সেই ডাকাতের ধন কেড়ে নেবে। এতে অবাক হবার কিছু নাই।