যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গতকাল শুক্রবার (১ আগস্ট) গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন বেসরকারি সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর অধীনে পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবির এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা একাধিক ছবিতে উইটকফকে গাজায় দেখা যায়; সেখানে তারা দুজনে মিলে জিএইচএফ-এর একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। হাকাবি লিখেছেন, ‘আজ সকালে আমি স্টিভ উইটকফের সঙ্গে গাজা সফরে অংশ নিই, (জিএইচএফ-এর) ত্রাণকেন্দ্র সম্পর্কে সত্য জানার উদ্দেশ্যে।’
এক মার্কিন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, উইটকফ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে পৌঁছেন, যা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা পুনরায় শুরু করার একটি নতুন মার্কিন প্রচেষ্টার অংশ। গত সপ্তাহে আলোচনা ভেঙে পড়ার পর এই সফরের লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিরতি ও গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা।
জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে চলমান যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের আলোচনায় যুক্ত থাকা স্টিভ উইটকফ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ভয়াবহ খাদ্য সংকটে জর্জরিত গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার মধ্যে তিনি এই সফর করছেন।
এর আগে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের জানান, ‘উইটকফ গাজায় সহায়তা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন এবং আরও খাদ্য সরবরাহের পরিকল্পনা নিশ্চিত করবেন। তিনি স্থানীয় গাজাবাসীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন এবং সরেজমিন বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে দেখবেন।’
এদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বলেন, ‘গাজায় মানবিক বিপর্যয় কল্পনার বাইরে। ইসরায়েল সরকারকে এখনই নিরাপদ ও কার্যকরভাবে মানবিক এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান শুরু করতে হবে, যাতে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করা যায়।’
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, সহায়তা বিতরণের মুখোমুখি মৃত্যুঝুঁকির বাস্তব উদাহরণ হিসেবে বুধবার গভীর রাতে অন্তত ৫৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, তারা একটি ত্রাণ বহর থামাতে চেষ্টা করছিলেন, এমন সময় ইসরায়েলিবাহিনী গুলি চালায়।
এদিকে ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে জার্মান-ইসরায়েলি জিম্মি রম ব্রাসলাভস্কিকে দেখা যায়। তিনি হিব্রু ভাষায় কথা বলেন, নিজের পরিচয় দেন এবং ইসরাইল সরকারকে তার মুক্তির আহ্বান জানান।
রম ছিলেন ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলার শিকার হওয়া নোভা মিউজিক ফেস্টিভালের একজন নিরাপত্তারক্ষী।
তার পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তারা রমকে ভেঙে ফেলেছে। সবচেয়ে শক্ত মানুষকেও একসময় ভেঙে ফেলা যায়। রম আসলে সব জিম্মির প্রতীক। তাদের সবাইকে এখনই বাড়ি ফিরিয়ে আনা উচিত।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ‘ত্রাণ ট্রাকগুলোর চারপাশে জড়ো হওয়া গাজাবাসীদের লক্ষ্য করে তারা ‘সতর্কতামূলক গুলি’ চালিয়েছে।’ এএফপি’র একজন সাংবাদিক গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ মরদেহের স্তূপ দেখেছেন।
একজন স্বজন হারানো ব্যক্তি জামিল আশুর বলেন, ‘মানুষজন কিছু চোরকে খাবার ফেলে পালাতে দেখে তাড়া দেয়। তখনই ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়।’
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার পরোক্ষ আলোচনায় শীর্ষ মার্কিন প্রতিনিধি উইটকফ দোহায় ভেস্তে যাওয়া আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। এরপর ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই এ আলোচনা থেকে তাদের প্রতিনিধিদল ফিরিয়ে নেয়।
এদিকে কানাডা ও পর্তুগাল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা গাজায় যুদ্ধবিরতি দাবিতে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়িয়েছে।
ট্রাম্প কানাডার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন এবং ট্রুথ সোশ্যালে-এ একটি পোস্টে বলেন, ‘গাজায় মানবিক সংকটের দ্রুত সমাধান হচ্ছে, হামাস আত্মসমর্পণ করুক এবং জিম্মিদের ছেড়ে দিক!’
তবে, কয়েক দিন আগেই তিনি নেতানিয়াহুর বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, গাজায় ‘বাস্তব অনাহার’ দেখা দিচ্ছে।
জাতিসংঘ সমর্থিত বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘গাজায় বর্তমানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে’, এবং কঙ্কালসার শিশুদের ছবি বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করেছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের মার্কিন ভিসা দেওয়া হবে না। এই কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরে সীমিত স্বায়ত্তশাসন পরিচালনা করে।
২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে এখনো ৪৯ জন গাজায় বন্দি, যাদের মধ্যে ২৭ জনকে ইসরায়েল মৃত ঘোষণা করেছে।
প্রায় ২৩ মাসে ইসরায়েলি হামলায় হামাস-চালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুযায়ী অন্তত ৬০ হাজার ২৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এই সপ্তাহে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় ক্ষুধায় মৃত্যুর ঘটনা শুরু হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে, জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স।
কেন্দ্রীয় গাজায় বাস্তুচ্যুতদের একটি শিবিরে স্বজন হারানো নাজাহ আইশ উম ফাদি চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘আর নয়! আমরা ক্ষুধা সহ্য করেছিলাম, কিন্তু সদ্যোজাত শিশুদের মৃত্যু? এখন আর না।’
উত্তরে আমির জাকোয়াত বিমান থেকে নামানো ত্রাণ পেয়ে বলেন, ‘এটাই! মৃত্যু দেখতে যেমন হয়। মানুষ একে অপরের সঙ্গে ছুরি নিয়ে লড়াই করছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি সীমান্তগুলো খোলা থাকতো, আমাদের কাছে খাবার পৌঁছাতো। কিন্তু এই বিমান থেকে ফেলা খাবার হাস্যকর।’
গাজায় গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ এবং অনেক এলাকায় প্রবেশের অসুবিধার কারণে এএফপি স্বাধীনভাবে হতাহতের সংখ্যা ও বিবরণ যাচাই করতে পারছে না।
রুশ সাবেক প্রেসিডেন্টের মন্তব্যে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের