২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ জোট। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতার প্রয়োগ শুরু করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচন, ‘দিনের ভোট রাতে’, মরা ব্যক্তির ভোট’, ‘ভোট জালিয়াতি’ ও প্রশাসনের সব স্তরকে ব্যবহার করে ‘ভোট ডাকাতি করে’ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ক্রমেই হয়ে ওঠেন নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক। তবে ক্ষমতার অপব্যবহারে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ক্ষমতাচ্যুত কোনো সরকার প্রধান দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হোন।
পনের বছরের অপশাসনের পর ৫ আগস্ট ২০২৪ নতুন সূর্য উদিত হয়। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করতে পারছিল না যে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকে ‘লং মার্চ টু’ ঢাকা কর্মসূচির পর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই ঘটনা ঘটার আগে ৪ আগস্ট রোববার রাত এবং সোমবার সকাল থেকে নানা নাটকীয়তা হয়েছে। রোববার সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতে প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হয়। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও নিহত হন।
সেদিন বিকেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও উপদেষ্টা শেখ হাসিনাকে জানান যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিক্ষোভকারীদের প্রতিরোধের মুখে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতারা পিছু হটছে। কিন্তু শেখ হাসিনা পরিস্থিতি মানতে নারাজ ছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে শক্তি প্রয়োগ করে। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে ধারণা দিয়েছেন যে এটি আর সামাল দেওয়া যাবে না।
গণভবনে কী ঘটেছিল
গণভবনে ৪ আগস্টের রাতটি ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ংকর। ওই রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কয়েক দফা বৈঠক হয়। তিনি বৈঠক করেন মন্ত্রী, দলের শীর্ষ নেতা ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে। বৈঠকে রাগারাগি ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
রাত ১২টা থেকে সোয়া ১২টার দিকে তিন বাহিনীপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী। সে বৈঠকে পদত্যাগের বিষয়টি ওঠানো হলে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে থাকেন, যা হওয়ার হবে, তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। শেখ হাসিনা সেনাপ্রধানকে মেরুদণ্ড শক্ত করে কঠোর হয়ে বিক্ষোভ দমনের জন্য বারবার বলতে থাকেন। জেনারেল তারেক সিদ্দিকী শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানিয়ে বলতে থাকেন, সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে কিছু লোককে মেরে ফেললে বিক্ষোভ এমনিতেই দমন হয়ে যাবে। বিমানবাহিনীকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর কথাও তিনি বলেন। এমন পরিস্থিতিতে বৈঠকে উপস্থিত বিমানবাহিনী প্রধান তারেক সিদ্দিকীর ওপর ভীষণ রেগে যান এবং প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, এই লোকটিই আপনাকে ডুবিয়েছে এবং আরও ডোবাবে। ঠিক এ সময় একজন অপরিচিত ব্যক্তি (যাকে ডিউটিরত এসএসএফ সদস্যরা চেনেন না) গণভবনে প্রবেশ করলে শেখ হাসিনা সভা শেষ করে দেন। রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তিন বাহিনীপ্রধান গণভবন ত্যাগ করেন। রাতে গণভবনে পুলিশের আইজি আবদুল্লাহ আল মামুন এবং এয়ার ভাইস মার্শাল জামালউদ্দিনও ছিলেন।
৫ আগস্ট সকাল ৯টায় তিন বাহিনীপ্রধান আবার গণভবনে আসেন। এ সময় পুলিশের আইজি এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুবুর রহমানও গণভবনে ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পুলিশের আইজি আবদুল্লাহ আল মামুনকে দেখিয়ে বলেন, ওরা (পুলিশ) ভালো কাজ করছে। সেনাবাহিনী পারবে না কেন?
এ সময় পুলিশের আইজি বলেন, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এ রকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের আর কিছু করার সামর্থ্য নেই। গোলাবারুদ আর অবশিষ্ট নেই। ফোর্সও টায়ার্ড হয়ে পড়েছে।
সামরিক কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে আবারও ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে বলেন, তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেল এবং গণভবনে কবর দিয়ে দাও। সামরিক কর্মকর্তারা শেখ রেহানাকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে রাজি করাতে অনুরোধ করেন। তারা এ কথাও বলেন যে, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির কারণে গণভবন অভিমুখে ঢাকার চারপাশ থেকে মিছিল আসছে। শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে বড় বোন শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন রেহানা। কিন্তু শেখ হাসিনা রাজি হচ্ছিলেন না। পরে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। জয়কে বলা হয়, প্রাণে বাঁচাতে হলে তার মাকে পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। টাইম একটা ফ্যাক্টর। এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জয় পরিস্থিতি জানার পর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। অবশেষে জয়ের কথায় ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা। তিনি টেলিভিশনে প্রচারের জন্য একটি ভাষণ রেকর্ড করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে সামরিক কর্মকর্তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাগ গোছাতে ৪৫ মিনিটের সময় দেন। কারণ গণভবন অভিমুখে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার যে মিছিল আসছে, সে সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে। ছাত্র- জনতার এই স্রোত ছিল ৩৬ দিনের অভাবনীয় আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ- চব্বিশের বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান।
শেখ হাসিনা কখন পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এবং কখন হেলিকপ্টারে উঠেছেন সেটি কেবলমাত্র জানতেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট এবং সেনা সদরের কিছু ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা। পুরো বিষয়টি করা হয়েছিল বেশ গোপনে। সোমবার বেলা ১১টার মধ্যেই শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে যান।
বিভিন্ন সুত্র ও আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত তথ্য মতে, শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খুব গোপনীয়তার সঙ্গে করা হয়। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সমন্বয় করে ৪ আগস্টের মধ্যেই পরিকল্পনাটি তৈরি করেন। পরিকল্পনার সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন এসএসএফের ডিজি মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান এবং সেনাবাহিনীর কিউএমজি লে. জেনারেল মুজিব।
শেখ হাসিনা ৪ আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে ফোন করে জরুরি অবস্থা জারির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। সেনাপ্রধানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন গুলিবর্ষণ করে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমনের। তেমনি বিমানবাহিনী প্রধানকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালাতেও বলেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার কোনো অভিপ্রায় বা হুকুম বাস্তবায়ন হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে প্রাণরক্ষার জন্য স্যুটকেস গুছিয়ে নিরাপদ অবস্থানে যেতে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। গণভবনে দুপুরের খাবার রান্না করা ছিল। কিন্তু খাওয়ার সময়ও ছিল না। বিমানবাহিনীর ‘সি-১৩০ জে’ বিমানে করে ভারতে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এ সময় তিনি ১৪টি স্যুটকেস সঙ্গে করে নিয়ে যান এবং স্যুটকেসগুলো ঠিকঠাকভাবে বিমানে উঠেছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বিমানে করে আরও পালিয়েছেন তার বোন শেখ রেহানা, জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী এবং একটি শিশু মেয়ে।
পালিয়ে যাওয়পার আগে গণভবন থেকে গাড়িতে করে কুর্মিটোলা যাওয়ার জন্য প্রথমে জেদ ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে নিষেধ করা হলেও গাড়িতে ওঠেন এবং গাড়িবহর গণভবন থেকে কুর্মিটোলার উদ্দেশে যেতে থাকে। গাড়িবহরের অগ্রগামী ক্লিয়ারিং অফিসার (কর্নেল পদমর্যাদার) জানান, সামনে বড় মিছিল আছে, গাড়িবহর নিয়ে যাওয়া যাবে না। তখন গাড়িবহরে থাকা এসএসএফের একজন অপারেশন অফিসার বলেন, ‘আমরা গুলি করে করে এগিয়ে যাব।’ কিন্তু গাড়িবহরে থাকা জুনিয়র অফিসাররা বলেন, ‘ঝুঁকি নেওয়া আমাদের ঠিক হবে না। মবের সামনে পড়লে সবাই মারা যেতে পারি।’ ফলে গাড়িবহর ঘুরিয়ে গণভবনের পেছনে বাণিজ্যমেলার মাঠে (আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশে) নেওয়া হয়।
এরই মধ্যে রাশিয়ার তৈরি হেলিকপ্টার (এমআই-১৭) কল করে এনে প্রস্তুতও রাখা হয়। হেলিকপ্টারে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী এবং একটি মেয়েশিশু (সম্ভবত তারেক সিদ্দিকীর পরিবারের হতে পারে)। হেলিকপ্টারটি সেখান থেকে কুর্মিটোলায় যায়। পাইলট ছিলেন এয়ার কমোডর আব্বাস ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন রায়হান কবির। হেলিকপ্টারটি ১২টা ৩০ মিনিটে কুর্মিটোলায় পৌঁছালে বেস কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে থাকা এয়ার ভাইস মার্শাল এবিএম আউয়াল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রিসিভ করেন। এ সময় উইং কমান্ডার জাকি আনোয়ার গণভবন থেকে সঙ্গে আনা শেখ হাসিনার ১৪টি স্যুটকেস বিমানে উঠিয়ে দেন। এ সময় শেখ হাসিনা কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। শুধু স্যুটকেসগুলোর খোঁজ নেন, সবগুলো বিমানে উঠেছে কি না। সঙ্গে বিমানে আরও ওঠেন ডিজি এসএসএফ, এসএসএফের তিন থেকে চারজন কর্মকর্তা এবং ফ্লাইট লে. পদবির একজন লেডি কর্মকর্তা। কুর্মিটোলা পৌঁছার ১০ মিনিটের মধ্যেই শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তারেক সিদ্দিকীকে নিয়ে বিমানটি উড্ডয়ন করে। এ সময় সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমানের ওঠানামা বন্ধ করে দেয়। ‘সি-১৩০ জে’ বিমানটি ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে উড্ডয়ন করে, যাতে রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ সংযোগ না হয়। সাধারণত বিমান উড্ডয়ন করে নর্থবেঙ্গল হয়ে ঘুরে যায়। কিন্তু এ বিমানটি আকাশে উঠেই নর্থবেঙ্গলে না গিয়ে ত্রিপুরার (আগরতলা) দিকে চলে যায়, যাতে খুব অল্প সময়ে সীমান্ত পার হতে পারে। এরই মধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ক্লিয়ারেন্স পেয়ে বিমানটি সরাসরি দিল্লি চলে যায় এবং নামে দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে। সেখানে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। জানা গেছে, হাসিনা সেখানেও অজিত দোভালকে ঢাকায় আক্রমণ করতে বলেন। শেখ হাসিনাকে হিন্দন ঘাঁটিতে নামানোর পর রিফুয়েলিং করে বিমানটি কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসে।
৩ আগস্ট পালানোর দামাম বেজে উঠে
সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করবে না— ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান এ কথা জানিয়ে দেওয়ার পরই মূলত শেখ হাসিনার রাজত্বের বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়।
গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্পিকারের পরামর্শ
৪ আগস্ট দুপুরে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার বার্তা পৌঁছে দেন শেখ হাসিনাকে। তাকে অনুরোধ করেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগ করার। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাকে শিরীন শারমিন চৌধুরী এ কথা জানান। তিনি এও জানান, তার পরামর্শ ও প্রবীণ নেতাদের বার্তায় শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু গণভবনে তখন উপস্থিত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত এর তীব্র বিরোধিতা করেন। রাতে ‘গ্যাং অব ফোর’ নামে পরিচিত ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও আসাদুজ্জামান কামাল শেখ হাসিনাকে কঠোর অবস্থানে নিয়ে যান। তারা হাসিনাকে বলেন, এখন কোনোভাবেই নরম হওয়া যাবে না, নতি স্বীকার করা যাবে না।
১৫ বছরে স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন হাসিনা, ভোটহীন চারটি নির্বাচন
২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে নজিরবিহীন একতরফা কূটকৌশলে ভোটহীন চারটি নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করে ক্রমে স্বৈরাচার হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দানবরূপে জাতির সামনে আবির্ভূত হন।
সেনাবাহিনীকে ধ্বংসে পিলখানা হত্যাকাণ্ড
২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার বিদেশি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে একীভূত হয়ে সারা বিশ্বে সমাদৃত দেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের জন্য পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা নিজে নেতৃত্ব দিয়ে দলের নেতাদের ব্যবহার করেছেন।
শাপলা চত্বরে ছাত্র-জনতার ওপর ব্রাশফায়ার
২০১৩ সালে ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে রাতের আঁধারে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর ব্রাশফায়ার ও পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে। রাষ্ট্রীয় মদতে তাদের হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। এমনকি হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুম করা হয়।
খুন করে লাশ গুম
গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা ভিন্ন মত সহ্য করতে পারতেন না। ভিন্ন মতের কেউ হলে খুন করে লাশ গুম করা হতো। আয়নাঘর তৈরি করে সেখানে বছরের পর বছর মানুষকে আটক রাখা হতো। পরিবার লাশের অপেক্ষা করেও কোনো হদিস পেত না। এছাড়া অনেক পরিবার বছরের পর অপেক্ষা শেষে সংসার পেতেছিল।
বাকস্বাধীনতা হরণে কালো আইন
গত ১৫ বছরে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ভিন্নমতের সাংবাদিকদের দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে কালো আইন তৈরি করে। এ আইনের কয়েকটি ধারা ব্যবহার করে মানুষের বাকস্বাধীনতাকে হরণ করেন শেখ হাসিনা। বহু বছরে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিকদের কারাগারে নিক্ষেপ, হত্যা, গুম করা হয়।
রাজাকার ট্যাগ
শেখ হাসিনা ও আসামিদের অপরাধের ধরন তুলে ধরে ষষ্ঠ অভিযোগে আদালতকে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞ আদালত, প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করতে ‘রাজাকার’ ট্যাগ দিয়ে এটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যা
আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালানো হয়। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়। যে ভিডিও দেখে সারাবিশ্বের মানুষ কেঁদেছে। যা দেখে সারাবিশ্বের মানুষের বুক কেঁপে ওঠে। হত্যাকাণ্ডের পরিণতি এত ভয়াবহ ছিল মানুষ এখনো আঁতকে ওঠে। এ হত্যাযজ্ঞ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা এতটা নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে যে, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে।
সামনে দাঁড় করিয়ে বুকে মাথায় গুলি
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নিষ্ঠুরতার কথা তুলে ধরে আদালতে বলেন, ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর এপিসোড গাড়ি থেকে যেভাবে ফেলে দেয় তা বর্ণনা করার মতো নয়। লাশ দুজনে দুই হাত ধরে ছুঁড়ে মারে। এ ছাড়া সামনে দাঁড় করিয়ে বুকে মাথায় গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। জুলাই-আগস্টে দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। সূত্র: এনটিভি।
আগামী নির্বাচন প্রতিটি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ : তারেক রহমান