ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় ব্যবসায়ীদের সুদ মওকুফ; চাপ পড়বে গ্রাহকদের ওপর

দেশের ব্যাংক খাতে গত কয়েক বছরে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি ব্যাংক চারটি ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের খবরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের ব্যাংক খাত।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে কয়েকজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছেন যে নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করেই এসব প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে ওই দুটি ব্যাংক। তারা এটিকে ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সাবেক ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই ব্যাংকগুলো কিছু প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করলেও শেষ পর্যন্ত এর চাপ পড়বে ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহক কিংবা আমানতকারীদের ওপরেই।
জানা গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক তিনটি ব্যবসায়ী গ্রুপকে ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে। আর বেসরকারি

ন্যাশনাল ব্যাংক শুধু এস আলম গ্রুপেরই ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে এবং এটি করা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী দশ বছরে।

এ দুটি ব্যাংকই একসময় ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। বরং বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি সাম্প্রতিককালে নানা অনিয়মের কারণে আলোচনায় এসেছে এবং ব্যাংকটি পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। দুটি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ত্রিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ঋণগ্রহীতার মৃত্যু কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কিছু কারণে ঋণের সুদ মওকুফ করা যেতে পারে। ২০২২ সালে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে বলা হয়েছিলো ব্যাংকগুলো বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে ঋণের সুদ মওকুফ করতে পারে যেমন, ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, নদীভাঙন, দুর্দশাজনিত কারণ বা বন্ধ প্রকল্পের ব্যাংক ঋণের সুদের সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ মওকুফ করে দিতে পারে।

সার্কুলারটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে আরও বলেছিলো, তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এসব বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন গ্রাহকের সুদ প্রায়ই মওকুফ করে দিচ্ছে। এতে সুদ মওকুফ সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্রাহকদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে, যা ব্যাংক খাতে সার্বিক ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

তবে দেখা যাচ্ছে যে যেসব ব্যবসায়িক গ্রুপের সুদ মওকুফ করা হয়েছে তাদের সাথে সার্কুলারে থাকা কারণ বা শর্তের কোনো মিল নেই। এভাবে ঋণ মওকুফের ফলে গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হয়। তারা নিজেদের বঞ্চিত অনুভব করেন। এভাবে সুদ মওকুফ করে দেয়ায় নৈতিকতার খেলাপ হয় এবং এটি সুশাসনের পরিপন্থী।

আরো পড়ুন : রেল ট্রানজিট ইস্যু; কী হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে?

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

বড় ব্যবসায়ীদের সুদ মওকুফ; চাপ পড়বে গ্রাহকদের ওপর

আপডেট সময় ১১:৩৯:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

দেশের ব্যাংক খাতে গত কয়েক বছরে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি ব্যাংক চারটি ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের খবরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের ব্যাংক খাত।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে কয়েকজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছেন যে নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করেই এসব প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে ওই দুটি ব্যাংক। তারা এটিকে ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সাবেক ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই ব্যাংকগুলো কিছু প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করলেও শেষ পর্যন্ত এর চাপ পড়বে ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহক কিংবা আমানতকারীদের ওপরেই।
জানা গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক তিনটি ব্যবসায়ী গ্রুপকে ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে। আর বেসরকারি

ন্যাশনাল ব্যাংক শুধু এস আলম গ্রুপেরই ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে এবং এটি করা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী দশ বছরে।

এ দুটি ব্যাংকই একসময় ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। বরং বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি সাম্প্রতিককালে নানা অনিয়মের কারণে আলোচনায় এসেছে এবং ব্যাংকটি পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। দুটি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ত্রিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ঋণগ্রহীতার মৃত্যু কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কিছু কারণে ঋণের সুদ মওকুফ করা যেতে পারে। ২০২২ সালে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে বলা হয়েছিলো ব্যাংকগুলো বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে ঋণের সুদ মওকুফ করতে পারে যেমন, ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, নদীভাঙন, দুর্দশাজনিত কারণ বা বন্ধ প্রকল্পের ব্যাংক ঋণের সুদের সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ মওকুফ করে দিতে পারে।

সার্কুলারটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে আরও বলেছিলো, তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এসব বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন গ্রাহকের সুদ প্রায়ই মওকুফ করে দিচ্ছে। এতে সুদ মওকুফ সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্রাহকদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে, যা ব্যাংক খাতে সার্বিক ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

তবে দেখা যাচ্ছে যে যেসব ব্যবসায়িক গ্রুপের সুদ মওকুফ করা হয়েছে তাদের সাথে সার্কুলারে থাকা কারণ বা শর্তের কোনো মিল নেই। এভাবে ঋণ মওকুফের ফলে গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হয়। তারা নিজেদের বঞ্চিত অনুভব করেন। এভাবে সুদ মওকুফ করে দেয়ায় নৈতিকতার খেলাপ হয় এবং এটি সুশাসনের পরিপন্থী।

আরো পড়ুন : রেল ট্রানজিট ইস্যু; কী হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে?