মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি:
প্রজনন মৌসুম তাই মাছের পোনা সংরক্ষনের জন্য সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খালে ৩ মাস সব ধরণের মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। সরকারের এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে প্রশাসনের চোঁখের সামনেই প্রকাশ্যে বনের নদী-খালে অবৈধ নেট জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। এতে চিংড়ির সঙ্গে নানা প্রজাতির মাছের পোনা ও সমুদ্রিক প্রাণীর লার্ভাও মারা পড়ছে। জড়িত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী দাদন ব্যাবসায়ীরাও। ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে বনের মৎস্য সম্পদ, হুমকির মুখে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় অভিযান চলছে।
স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের অভ্যান্তরের নদী-খালে গলদা, বাগদার ও ফাইসা পোনা আহরণ বার মাসই নিষিদ্ধ। এর মধ্যে প্রজনন ও মাছের পোনা ছাড়ার মৌসুম শুরু হওয়ায় মাছ ধারর উপর ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। কিন্ত সংসারের অভাব আর দাদন ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া দায়-দেনা শোধ করতে সরকারের এমন নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে মোংলার পশুর নদী ও বনের গহীনে অবৈধ নেটজাল দিয়ে অহরণ করছে গলদা রেনু, বাগদার ও ফাইসা পোনা। যা কিনারে এনে শুধু মাত্র তিন প্রকারের পোনা আলাদা করে বাকিটা ফেলে দেয়া হয় অন্যাত্র। ফলে অন্যন্য প্রজাতির লক্ষ লক্ষ পোনা ও ডিম নদীর কুলে ফেলে বিনষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নদ-নদীতে অবাধে কিটনাশক (বিষ) দিয়ে মাছ ধরায় মারা পড়ছে কয়েকশ প্রজাতির মাছের ডিম ও পোনা মাছ। প্রশাসনের চোখের সামনেই নদী থেকে অবৈধ ভাবে আহরণ করা বাগদা, গলদা ও ফাইসা পোনা মোংলা জয়মনির ফরেষ্ট ঘাট, বিউটি মার্কেট, সুন্দরতলা, চিলা বাজার সহ প্রায় ১৫টি ষ্পটে প্রকাশ্যে এগুলো বিক্রি হচ্ছে। এসব এলাকায় প্রতি দিন ৮/১০ কোটি টাকার অবৈধ এ বাগদা ও গলদা রেনু পোনা বেচা-কেনা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
অবৈধ এ কাজের সাথে সরাসরী জড়িত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী কিছু দাদন ব্যাসায়ীরা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এরা হচ্ছে, ফরেস্ট গার্ড এলাকার নাজমুল মেম্বার ও ফজলু মেম্বার, বিউটি মার্কেটের ইলিয়াস মেম্বার, আ’ লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, নান্না মিয়া, রনি গাজী সহ প্রায় অর্ধশত প্রভাবশালী নেতারা সরাসরী জড়িত রয়েছে অবৈধ এ পোনা নিধন ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংশের সাথে।
যে এলাকা থেকে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা সংগ্রহ করা হয়, সেই এলাকার নিকটেই রয়েছে কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ ও বন বিভাগের রেঞ্জ অফিস। পোনা আহরণকারী জেলেরা এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্তানদের মুখের খাবার জোগাতে এবং অভাবের তারণায় এমন অবৈধ ভাবে শিকার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের মাছের পোনা। তবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এবং দাদন ব্যাবসায়ীদের চাপের মুখে বাধ্য হয়ে ধরতে হচ্ছে এসকল পোনা মাছ।
চিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী আকবার হোসেন বলেন, অবৈধ ভাবে নেট জাল দিয়ে মাছের পোনা আহরণ করায় দিনকে দিন বিলুপ্ত হচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র। আর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এখানকার প্রভাবশালী দাদন ব্যাবসাীয়রা। প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানোর দাবী এ জনপ্রতিনিধির।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, বাগদা গলদা চিংড়ি ও ফাইসা মাছে পোনা ধরা সরকারী ভাবে সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। তাই অসাধু ব্যাবসায়ী ও আহরণকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান।
মোংলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার বলেন, অবৈধ এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দাদন ব্যাবসায়ী ও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলে এমন অভিযোগ পেয়েছি। যারা একাজের সাথে জড়িত প্রায়ই তাদের জাল নৌকা সহ জেলেদেরও আটকও করা হচ্ছে। দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় অভিযান চলছে, এদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহীনি তৎপর রয়েছে।
প্রজনন মৌসুম তাই মৎস্য সম্পদের বংশ বৃদ্ধি ও সংরক্ষনে প্রতি বছর ২০ মে-২৩ জুলাই ৬৫ দিন ইলিশ এবং সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট এই ৩ মাস সকল প্রকারের মাছ ধরার উপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকে।
আরো পড়ুন : মোংলায় বাবা ছেলেকে কুপিয়ে জখম