ঢাকা ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি, আমি পুরোপুরি ব্যর্থ’:মাশরাফি

স্পোর্টস ডেস্ক : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে চলে যান। এমনকি এমপি-মন্ত্রীসহ দলটির অনেক শীর্ষ নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেউ বা আবার আত্মগোপনে রয়েছেন।

তবে দলটির সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা দেশেই রয়েছেন। বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরব ভূমিকা ছিল জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন দ্য ক্যাপ্টিন হিসেবে। তাই মাশরাফির নিরব থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝেড়েছেন তার ভক্তরা।

নিজের নিরব থাকার প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন মাশরাফি। বুধবার (১৪ আগস্ট) দেশের একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এখন আসলে এসব কথার উত্তর বা ব্যাখ্যা দেওয়ার অর্থ নেই। যদি সরাসরি বলি, তাহলে অবশ্যই আমি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি অনেক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে।’

মাশরাফি বলেন, ‘কথা যদি বলতেই হতো তখন… কোটা সংস্করারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দেই (ফেইসবুকে)… ততক্ষণে আসলে সবকিছু এত দ্রুত হচ্ছিল… ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে… অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী… সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।’

জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক আরও বলেন, ‘আমি কিছু করার চেষ্টা করিনি, তা নয়। আমি শুধু কিছু লেখার ভাবনায় থাকতে চাইনি। চেয়েছিলাম ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে, আলোচনার মাধ্যমে কিছু করা যায় কি না। সেই শুরুর দিকেই চেষ্টা করেছি। কারণ তাদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।’

সে সময় কথা বলতে বা স্ট্যাটাস দিতে কোনো বাধা ছিল কিনা, এমন প্রশ্নে মাশরাফী বলেন, ‘কাউকে দোষ দেব না। দায় আমারই। বিশেষ করে, মানুষের যে আবেগ-ভালোবাসার জায়গা ছিল, ক্রিকেটার মাশরাফীর প্রতি যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ করতে পারিনি এবং সেই দায় মাথাপেতেই নিচ্ছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি এবং সেটা আমাকে সেই শুরু থেকেই পোড়াচ্ছে।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘কটা-দুটি স্ট্যাটাস (ফেইসবুকে) দিলে হয়তো গা বাঁচাতে পারতাম। তার পরও অনেকে সমালোচনা করতেন, অনেকে খুশি হতেন। কিন্তু আমার জায়গা থেকে আরও বড় পরিসরে কিছু করার চেষ্টা করেছি। সেটিও পারিনি। কাজেই ব্যর্থ হয়েছি অবশ্যই।’

মাশরাফি বলেন, শুধু আমি নই, আমার মনে হয়, এই আন্দোলন নিয়ে যা কিছু লিখতে বা করতে পারেনি, তাদের সবাইকেই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা ঘনিষ্ঠজনদের কাছে।’

‘আমার মেয়ে হুমায়রা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। আমার সেখানে অ্যাকাউন্ট থাকলেও সেভাবে দেখতাম না, ওকেও ফলো করতাম না। আমাকে আমার এক ছোট ভাই জানাল যে, হুমায়রা ইনস্টাগ্রামে অনেক কিছু দিচ্ছে বা শেয়ার করছে। ১৭ জুলাই থেকেই দিচ্ছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল, ‘হ্যাঁ, আমি এসব দিচ্ছি। তোমার কি আপত্তি আছে?’ আমি বললাম, ‘না, আমার সমস্যা নেই।’ আমি বরং ওকে এটাও বলেছি, ‘তোমার স্কুল থেকে বা বন্ধুরা আন্দোলনে গেলে তুমিও সঙ্গে থেকো।’ আমার পদের জন্য বা চেয়ারের জন্য তাকে বাধা পেতে হবে, এটা কখনও চাইনি’- যোগ করেন মাশরাফি।

নড়াইলের বাড়ি পোড়ানো বিষয়ে মাশরাফী বলেন, ‘হয়তো একটা ‘মব’-এর মতো হয়েছে এবং হুট করেই উত্তেজিত কিছু লোক এটা করেছে। কারণ, নড়াইলের মানুষের ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো কিছু আমি করিনি বলেই মনে করি। কেন তারা বাড়িতে হামলা করল, এই কারণ আমিও খুঁজেছি এবং খুঁজছি। নিজেও জানি না, কেন আমার বাড়ি পোড়ানো হলো।’

তিনি আরো বলেন, আমার সম্পদ যা কিছু আছে, সব খেলোয়াড়ি জীবনেই গড়া। যে কোনোভাবেই খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। পূর্বাচলে একটি জমি আছে, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর সরকার থেকে সবাই পেয়েছিলাম ৫ কাঠা করে। মিরপুরে একটা বাড়ি আছে, ২০০৮ সালে আইপিএল খেলে আসার পর করা। মিরপুরে আরেকটি বাড়ি করছি, যেখানে পরিবার নিয়ে উঠব, এটাও ২০১৫ সালে কাজ শুরু করেছি। এখনও উঠতে পারিনি, কাজ চলছে। ২০১৮ সালের পরের আয় দিয়ে তেমন কোনো সম্পদ গড়তে পারিনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামা ও ২০২৪ সালের হলফনামা দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমি দাবি করলে তো লাভ নেই। যে কেউ খতিয়ে দেখলেই জানতে পারবে। রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত আমার এন্ডোর্সমেন্ট ছিল অনেক। ২০টির ওপরে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম। খেলাধুলা করে ও স্পন্সরশিপের আয় থেকেই এসব করেছি।

নড়াইলের বাড়িটা করেছিলাম মায়ের জন্য। এখন শেষ। অনেকেই বলেছেন মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। ছবি-ভিডিও সবই আছে অনেকের কাছে। তবে আমি বলেছি, এসব করব না। আমার বাবাকেও বলে দিয়েছি। এখনকার সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচন করেও যে সরকার আসুক, কারও কাছেই বিচাই চাইব না। কোনো অভিযোগ নেই। খুলনা-যশোর থেকে বা ঢাকা থেকে গিয়ে কেউ এই বাড়ি ভাঙেনি। নড়াইলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষই পুড়িয়েছে। নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার আমি চাইব না। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছি। হয়তো কোনো ভুল করেছি, সেটার ফল পেয়েছি। কষ্ট আছে অবশ্যই, তবে রাগ-ক্ষোভ নেই কারও প্রতি। আমার প্রতি এখনও কারও ক্ষোভ থাকলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল কি না এ প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফী বলেন, ‘রাজনীতিতে এসে ভুল করেছি, এটা তাই বলব না। ভুল করে থাকলে হয়তো নিজেরই ক্ষতি করেছি। তবে আমার ভেতরে কোনো খেদ কখনও কাজ করবে না। কারণ, নিজের চিন্তাটা আমার কাছে পরিষ্কার ছিল।’

ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আমি তো আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলি না। বিপিএল খেলি আর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলি। ভেবেছিলাম, আর এক মৌসুম খেলে হয়তো বাদ দেব। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে আদৌ বিপিএল হয় কি না, বা ঢাকা লিগ হয় কি না, কে জানে। সময় হলে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।’

ক্রিকেট বোর্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নে মাশরাফী বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি, আমার কাছে মনে হয়, ক্রিকেট বোর্ডে থাকা বা এরকম কোনো দায়িত্ব আমার প্রাপ্য নয়। আমি দাবিও করতে পারি না। হ্যাঁ, ক্রিকেট আমার রক্তে আছে। কেউ কখনও সহায়তা চাইলে অবশ্যই পাশে থাকব। কিন্তু বোর্ডে থাকার বাস্তবতা এই মুহূর্তে আমার নেই। ডিজার্ভও করি না।’

মাশরাফির বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে ঠিক আছি। মানসিকভাবে অবশ্যই ভালো অবস্থায় নেই। আছি আর কী। ঢাকাতেই আছি, পরিবারের সঙ্গে।’ সূত্র-বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

 

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

‘মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি, আমি পুরোপুরি ব্যর্থ’:মাশরাফি

আপডেট সময় ১১:২৫:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৪

স্পোর্টস ডেস্ক : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে চলে যান। এমনকি এমপি-মন্ত্রীসহ দলটির অনেক শীর্ষ নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেউ বা আবার আত্মগোপনে রয়েছেন।

তবে দলটির সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা দেশেই রয়েছেন। বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরব ভূমিকা ছিল জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন দ্য ক্যাপ্টিন হিসেবে। তাই মাশরাফির নিরব থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝেড়েছেন তার ভক্তরা।

নিজের নিরব থাকার প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন মাশরাফি। বুধবার (১৪ আগস্ট) দেশের একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এখন আসলে এসব কথার উত্তর বা ব্যাখ্যা দেওয়ার অর্থ নেই। যদি সরাসরি বলি, তাহলে অবশ্যই আমি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি অনেক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে।’

মাশরাফি বলেন, ‘কথা যদি বলতেই হতো তখন… কোটা সংস্করারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দেই (ফেইসবুকে)… ততক্ষণে আসলে সবকিছু এত দ্রুত হচ্ছিল… ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে… অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী… সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।’

জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক আরও বলেন, ‘আমি কিছু করার চেষ্টা করিনি, তা নয়। আমি শুধু কিছু লেখার ভাবনায় থাকতে চাইনি। চেয়েছিলাম ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে, আলোচনার মাধ্যমে কিছু করা যায় কি না। সেই শুরুর দিকেই চেষ্টা করেছি। কারণ তাদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।’

সে সময় কথা বলতে বা স্ট্যাটাস দিতে কোনো বাধা ছিল কিনা, এমন প্রশ্নে মাশরাফী বলেন, ‘কাউকে দোষ দেব না। দায় আমারই। বিশেষ করে, মানুষের যে আবেগ-ভালোবাসার জায়গা ছিল, ক্রিকেটার মাশরাফীর প্রতি যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ করতে পারিনি এবং সেই দায় মাথাপেতেই নিচ্ছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি এবং সেটা আমাকে সেই শুরু থেকেই পোড়াচ্ছে।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘কটা-দুটি স্ট্যাটাস (ফেইসবুকে) দিলে হয়তো গা বাঁচাতে পারতাম। তার পরও অনেকে সমালোচনা করতেন, অনেকে খুশি হতেন। কিন্তু আমার জায়গা থেকে আরও বড় পরিসরে কিছু করার চেষ্টা করেছি। সেটিও পারিনি। কাজেই ব্যর্থ হয়েছি অবশ্যই।’

মাশরাফি বলেন, শুধু আমি নই, আমার মনে হয়, এই আন্দোলন নিয়ে যা কিছু লিখতে বা করতে পারেনি, তাদের সবাইকেই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা ঘনিষ্ঠজনদের কাছে।’

‘আমার মেয়ে হুমায়রা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। আমার সেখানে অ্যাকাউন্ট থাকলেও সেভাবে দেখতাম না, ওকেও ফলো করতাম না। আমাকে আমার এক ছোট ভাই জানাল যে, হুমায়রা ইনস্টাগ্রামে অনেক কিছু দিচ্ছে বা শেয়ার করছে। ১৭ জুলাই থেকেই দিচ্ছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল, ‘হ্যাঁ, আমি এসব দিচ্ছি। তোমার কি আপত্তি আছে?’ আমি বললাম, ‘না, আমার সমস্যা নেই।’ আমি বরং ওকে এটাও বলেছি, ‘তোমার স্কুল থেকে বা বন্ধুরা আন্দোলনে গেলে তুমিও সঙ্গে থেকো।’ আমার পদের জন্য বা চেয়ারের জন্য তাকে বাধা পেতে হবে, এটা কখনও চাইনি’- যোগ করেন মাশরাফি।

নড়াইলের বাড়ি পোড়ানো বিষয়ে মাশরাফী বলেন, ‘হয়তো একটা ‘মব’-এর মতো হয়েছে এবং হুট করেই উত্তেজিত কিছু লোক এটা করেছে। কারণ, নড়াইলের মানুষের ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো কিছু আমি করিনি বলেই মনে করি। কেন তারা বাড়িতে হামলা করল, এই কারণ আমিও খুঁজেছি এবং খুঁজছি। নিজেও জানি না, কেন আমার বাড়ি পোড়ানো হলো।’

তিনি আরো বলেন, আমার সম্পদ যা কিছু আছে, সব খেলোয়াড়ি জীবনেই গড়া। যে কোনোভাবেই খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। পূর্বাচলে একটি জমি আছে, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর সরকার থেকে সবাই পেয়েছিলাম ৫ কাঠা করে। মিরপুরে একটা বাড়ি আছে, ২০০৮ সালে আইপিএল খেলে আসার পর করা। মিরপুরে আরেকটি বাড়ি করছি, যেখানে পরিবার নিয়ে উঠব, এটাও ২০১৫ সালে কাজ শুরু করেছি। এখনও উঠতে পারিনি, কাজ চলছে। ২০১৮ সালের পরের আয় দিয়ে তেমন কোনো সম্পদ গড়তে পারিনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামা ও ২০২৪ সালের হলফনামা দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমি দাবি করলে তো লাভ নেই। যে কেউ খতিয়ে দেখলেই জানতে পারবে। রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত আমার এন্ডোর্সমেন্ট ছিল অনেক। ২০টির ওপরে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম। খেলাধুলা করে ও স্পন্সরশিপের আয় থেকেই এসব করেছি।

নড়াইলের বাড়িটা করেছিলাম মায়ের জন্য। এখন শেষ। অনেকেই বলেছেন মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। ছবি-ভিডিও সবই আছে অনেকের কাছে। তবে আমি বলেছি, এসব করব না। আমার বাবাকেও বলে দিয়েছি। এখনকার সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচন করেও যে সরকার আসুক, কারও কাছেই বিচাই চাইব না। কোনো অভিযোগ নেই। খুলনা-যশোর থেকে বা ঢাকা থেকে গিয়ে কেউ এই বাড়ি ভাঙেনি। নড়াইলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষই পুড়িয়েছে। নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার আমি চাইব না। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছি। হয়তো কোনো ভুল করেছি, সেটার ফল পেয়েছি। কষ্ট আছে অবশ্যই, তবে রাগ-ক্ষোভ নেই কারও প্রতি। আমার প্রতি এখনও কারও ক্ষোভ থাকলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল কি না এ প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফী বলেন, ‘রাজনীতিতে এসে ভুল করেছি, এটা তাই বলব না। ভুল করে থাকলে হয়তো নিজেরই ক্ষতি করেছি। তবে আমার ভেতরে কোনো খেদ কখনও কাজ করবে না। কারণ, নিজের চিন্তাটা আমার কাছে পরিষ্কার ছিল।’

ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আমি তো আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলি না। বিপিএল খেলি আর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলি। ভেবেছিলাম, আর এক মৌসুম খেলে হয়তো বাদ দেব। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে আদৌ বিপিএল হয় কি না, বা ঢাকা লিগ হয় কি না, কে জানে। সময় হলে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।’

ক্রিকেট বোর্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নে মাশরাফী বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি, আমার কাছে মনে হয়, ক্রিকেট বোর্ডে থাকা বা এরকম কোনো দায়িত্ব আমার প্রাপ্য নয়। আমি দাবিও করতে পারি না। হ্যাঁ, ক্রিকেট আমার রক্তে আছে। কেউ কখনও সহায়তা চাইলে অবশ্যই পাশে থাকব। কিন্তু বোর্ডে থাকার বাস্তবতা এই মুহূর্তে আমার নেই। ডিজার্ভও করি না।’

মাশরাফির বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে ঠিক আছি। মানসিকভাবে অবশ্যই ভালো অবস্থায় নেই। আছি আর কী। ঢাকাতেই আছি, পরিবারের সঙ্গে।’ সূত্র-বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।