ঢাকা ০৬:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সৎ-নীতিবান অফিসাররাই উচ্চতর পদোন্নতির দাবিদার : প্রধান উপদেষ্টা পূজামণ্ডপে ব্যাগ-থলে-পোটলা প্রবেশে বিরত থাকতে বলেছে পুলিশ শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার তারেক রহমানের মামলার ভবিষ্যত :বিএনপির আইন সম্পাদক ইরানে পাল্টা হামলা চালাবে ইসরায়েল : নেতানিয়াহু ঝুলে আছে বেসরকারি খাতে ১০ গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দরপত্র আহ্বান দাম্পত্য ভাঙনের পথে,ঐশ্বরিয়ার ডায়েরির পাতায় কী লেখা সেখানে? সংসদের মেয়াদ চার বছর ও দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট করার প্রস্তাব গণঅধিকার পরিষদের  গ্রেপ্তার আতঙ্ক আ.লীগ নেতা-কর্মীদের পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ, নিহত ১২

‘বৈষম্য মুক্তির জন্য কবিতা’ স্লোগানে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় কবিতা উৎসব : কবি মোহন রায়হান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি। একই সঙ্গে তারা জাতীয় কবিতা পরিষদের দখলদার ও স্বৈরাচারী কতিপয় নেতৃত্বের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ ও তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান ও সদস্য সচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। সংবাদ সম্মলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মতিন বৈরাগী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মলেনে লিখিত বক্তব্যে কবি মোহন রায়হান বলেন, আগামী কবিতা উৎসব সফল করার লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী-প্রগতিশীল কবিদের ঐকবদ্ধভাবে জাতীয় কবিতা পরিষদের স্বৈরাচারমুক্ত জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে সারাদেশে নিয়মিত কবিতা পাঠের আসর, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও পত্রিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান ‘বৈষম্য মুক্তির জন্য কবিতা’ এই স্লোগান ধারণ করে আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক মোহনায় জাতীয় কবিতা উৎসব আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় কবিতা পরিষদের দখলদার নেতাদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং তাদের দুর্নীতির তদন্ত ও আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

কবি মোহন রায়হান বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম যে, নব্বইয়ের স্বৈরাচার ও অগণতান্ত্রিক সরকারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিকায় জন্ম নেওয়া জাতীয় কবিতা পরিষদ ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট মাসের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্রজনতার নৃশংস ও নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ্যে মদদ দিয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় কবিতা পরিষদ তার প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষিত অঙ্গীকার ও দায়িত্ব পালনে ন্যাক্কারজনকভাবে শুধু ব্যর্থই হয়নি স্বৈরাচারের সকল অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে।  বিগত বছরগুলিতে সংগঠনটি অবৈধ স্বৈরশাসনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্থ দেয়ার ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে। সৃষ্টিশীল লেখক-কবিদের লেখার স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ ও সৃষ্টিশীল লেখক-কবিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে প্রতিষ্ঠানটিকে বাক-ব্যক্তি-লেখনীর স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া একটি ফ্যাসিবাদী সংগঠনে পরিণত করেছে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এই সংগঠনটি তার সংগ্রামী চরিত্র বদল করে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের লেজুড়বৃত্তি শুরু করে। প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাকর্মীরা এর বিরোধিতা করলে, কয়েকজন দলদাস আওয়ামী কবি ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী এনে রাজনৈতিক দলের মতন কবিতা পরিষদও দখল করে নেয়। যারা কবিতা পরিষদ গঠনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে, কবিতা পরিষদের জন্য জেল-জুলুম খেটেছে, অসাংবিধানিকভাবে তাদেরই বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করে জাতীয় কবিতা পরিষদকে। কবিতা পরিষদ হয়ে ওঠে সেইসব সুবিধাবাদী, ধান্দাবাজ, অর্থলোভী, দলবাজদের অর্থ-বিত্ত-সম্পদ এবং বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবী ও জাতীয় পুরস্কার বাগিয়ে নেয়ার হাতিয়ার।

গত ১৬ বছর এই ফ্যাসিবাদীরা আওয়ামী স্বৈরশাসনের নির্লজ্জ দালালি আর পদলেহন করে জাতীয় কবিতা পরিষদের নাম ভাঙিয়ে কোটি কোটি টাকা, বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবী আর পুরস্কার হাতিয়ে নেয়। কবি নামধারী এইসব দুর্বৃত্তরা আওয়ামী দুঃশাসনে নিপীড়িত, নির্যাতিত, আহত-নিহতদের নিয়ে কিংবা হাসিনা সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুপপাটের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও কখনও করেনি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের হত্যা, নির্যাতনের প্রকাশ্য সহযোগী ছিল তারা।

এদের মধ্য কেউ জাতীয় কবিতা পরিষদের পদ-পদবী ব্যবহার করে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে আসীন হয়েছে, কেউ  বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে, কেউ বাংলা একাডেমির শীর্ষ পদাসীন হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, কেউ সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যবসা বাগিয়ে নিয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া জীবনঘাতী করোনা মহামারীর দুঃসময়ে আক্রান্ত লেখক কবিদের সহযোগিতার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাংলা একাডেমিকে এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে, তৎকালীন ডিজির মাধ্যমে সেই টাকার বড় অংশ আত্মসাৎ করে নেয় কবিতা পরিষদের কয়েকজন নেতা। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে সেইসব দুরাত্মাদের অনেকেই জনরোষ থেকে রক্ষার জন্য গা ঢাকা দিয়েছে। কেউ কেউ দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। অনেকেই এই বিজয়কে নস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এভাবেই গণধিকৃত এইসব কবি নামধারী দুরাত্মারা  স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একটি আপসহীন সংগ্রামী প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে।

এমতাবস্থায় জাতীয় কবিতা পরিষদ তার প্রতিষ্ঠাকালীন মৌলিক অঙ্গীকার রক্ষা ও এই কলঙ্কিত অধ্যায়ের দায় মোচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতীয় কবিতা পরিষদের নাম কলঙ্কিতকারীরা কবিতা পরিষদের নাম-পরিচয় ব্যবহারের সমস্ত যোগ্যতা হারিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠকদের নেতৃত্বে কবি ও কবিতা প্রেমিদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও পরবর্তী সময়ে জবরদখল, অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কার্যকলাপের পর্যালোচনা করে, স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠনটিকে আর কোনো স্বৈরাচারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত না করার দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যে বর্তমান নেতৃত্বকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে, প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ ও লক্ষ্যে সংগঠনটিকে এগিয়ে নিতে কবি মোহন রায়হানকে আহ্বায়ক ও কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তিতে ১৭ আগস্ট আহ্বায়ক কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আরো ২০ জন সদস্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সৎ-নীতিবান অফিসাররাই উচ্চতর পদোন্নতির দাবিদার : প্রধান উপদেষ্টা

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

‘বৈষম্য মুক্তির জন্য কবিতা’ স্লোগানে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় কবিতা উৎসব : কবি মোহন রায়হান

আপডেট সময় ১০:৫১:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি। একই সঙ্গে তারা জাতীয় কবিতা পরিষদের দখলদার ও স্বৈরাচারী কতিপয় নেতৃত্বের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ ও তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান ও সদস্য সচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। সংবাদ সম্মলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মতিন বৈরাগী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মলেনে লিখিত বক্তব্যে কবি মোহন রায়হান বলেন, আগামী কবিতা উৎসব সফল করার লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী-প্রগতিশীল কবিদের ঐকবদ্ধভাবে জাতীয় কবিতা পরিষদের স্বৈরাচারমুক্ত জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে সারাদেশে নিয়মিত কবিতা পাঠের আসর, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও পত্রিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান ‘বৈষম্য মুক্তির জন্য কবিতা’ এই স্লোগান ধারণ করে আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক মোহনায় জাতীয় কবিতা উৎসব আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় কবিতা পরিষদের দখলদার নেতাদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং তাদের দুর্নীতির তদন্ত ও আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

কবি মোহন রায়হান বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম যে, নব্বইয়ের স্বৈরাচার ও অগণতান্ত্রিক সরকারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিকায় জন্ম নেওয়া জাতীয় কবিতা পরিষদ ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট মাসের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্রজনতার নৃশংস ও নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ্যে মদদ দিয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় কবিতা পরিষদ তার প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষিত অঙ্গীকার ও দায়িত্ব পালনে ন্যাক্কারজনকভাবে শুধু ব্যর্থই হয়নি স্বৈরাচারের সকল অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে।  বিগত বছরগুলিতে সংগঠনটি অবৈধ স্বৈরশাসনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্থ দেয়ার ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে। সৃষ্টিশীল লেখক-কবিদের লেখার স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ ও সৃষ্টিশীল লেখক-কবিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে প্রতিষ্ঠানটিকে বাক-ব্যক্তি-লেখনীর স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া একটি ফ্যাসিবাদী সংগঠনে পরিণত করেছে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এই সংগঠনটি তার সংগ্রামী চরিত্র বদল করে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের লেজুড়বৃত্তি শুরু করে। প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাকর্মীরা এর বিরোধিতা করলে, কয়েকজন দলদাস আওয়ামী কবি ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী এনে রাজনৈতিক দলের মতন কবিতা পরিষদও দখল করে নেয়। যারা কবিতা পরিষদ গঠনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে, কবিতা পরিষদের জন্য জেল-জুলুম খেটেছে, অসাংবিধানিকভাবে তাদেরই বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করে জাতীয় কবিতা পরিষদকে। কবিতা পরিষদ হয়ে ওঠে সেইসব সুবিধাবাদী, ধান্দাবাজ, অর্থলোভী, দলবাজদের অর্থ-বিত্ত-সম্পদ এবং বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবী ও জাতীয় পুরস্কার বাগিয়ে নেয়ার হাতিয়ার।

গত ১৬ বছর এই ফ্যাসিবাদীরা আওয়ামী স্বৈরশাসনের নির্লজ্জ দালালি আর পদলেহন করে জাতীয় কবিতা পরিষদের নাম ভাঙিয়ে কোটি কোটি টাকা, বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবী আর পুরস্কার হাতিয়ে নেয়। কবি নামধারী এইসব দুর্বৃত্তরা আওয়ামী দুঃশাসনে নিপীড়িত, নির্যাতিত, আহত-নিহতদের নিয়ে কিংবা হাসিনা সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুপপাটের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও কখনও করেনি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের হত্যা, নির্যাতনের প্রকাশ্য সহযোগী ছিল তারা।

এদের মধ্য কেউ জাতীয় কবিতা পরিষদের পদ-পদবী ব্যবহার করে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে আসীন হয়েছে, কেউ  বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে, কেউ বাংলা একাডেমির শীর্ষ পদাসীন হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, কেউ সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যবসা বাগিয়ে নিয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া জীবনঘাতী করোনা মহামারীর দুঃসময়ে আক্রান্ত লেখক কবিদের সহযোগিতার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাংলা একাডেমিকে এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে, তৎকালীন ডিজির মাধ্যমে সেই টাকার বড় অংশ আত্মসাৎ করে নেয় কবিতা পরিষদের কয়েকজন নেতা। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে সেইসব দুরাত্মাদের অনেকেই জনরোষ থেকে রক্ষার জন্য গা ঢাকা দিয়েছে। কেউ কেউ দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। অনেকেই এই বিজয়কে নস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এভাবেই গণধিকৃত এইসব কবি নামধারী দুরাত্মারা  স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একটি আপসহীন সংগ্রামী প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে।

এমতাবস্থায় জাতীয় কবিতা পরিষদ তার প্রতিষ্ঠাকালীন মৌলিক অঙ্গীকার রক্ষা ও এই কলঙ্কিত অধ্যায়ের দায় মোচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতীয় কবিতা পরিষদের নাম কলঙ্কিতকারীরা কবিতা পরিষদের নাম-পরিচয় ব্যবহারের সমস্ত যোগ্যতা হারিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠকদের নেতৃত্বে কবি ও কবিতা প্রেমিদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও পরবর্তী সময়ে জবরদখল, অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কার্যকলাপের পর্যালোচনা করে, স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠনটিকে আর কোনো স্বৈরাচারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত না করার দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যে বর্তমান নেতৃত্বকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে, প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ ও লক্ষ্যে সংগঠনটিকে এগিয়ে নিতে কবি মোহন রায়হানকে আহ্বায়ক ও কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তিতে ১৭ আগস্ট আহ্বায়ক কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আরো ২০ জন সদস্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।