ঢাকা ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে খরচ কমলো

চলমান বার্তা অনলাইন:
মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে ‘সিন্ডিকেট’ করা বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোর ‘ভিসা হ্যান্ডলিং’ কার্যক্রম বন্ধ করায় সেখানে যেতে আগ্রহী কর্মীদের খরচ কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও সাধারণ এজেন্টরা। তবে, এতে অন্যতম বড় এই শ্রমবাজারে অবস্থান হারানো নিয়ে শংকাও তৈরি হয়েছে কারো কারো মধ্যে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বিন ইসমাইল গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন। যার বিষয়বস্তু ছিল মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও সরকারের নতুন কিছু সিদ্ধান্ত জানানো।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশটির সরকার অনুমোদিত যেসব বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এতোদিন ধরে সেদেশে কর্মী পাঠাতে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করতো তাদের বদলে এখন থেকে নিয়োগকর্তাই সরাসরি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

“ইমিগ্রেশন বিভাগের মাইভিসা পোর্টালে ই-ভিসার জন্য এখন থেকে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন নিয়োগকর্তারা,” বলেন নাসুশন।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত কিন্তু সিন্ডিকেটভুক্ত নয় এমন একটি এজেন্সির প্রধান (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, এতোদিন যেহেতু ওই তালিকাভুক্ত এজেন্সিগুলোর নামেই শুধু ভিসা মঞ্জুর হতো, প্রতি ভিসার বিপরীতে তাদের এক লাখ সাত হাজার টাকা করে দিতে হতো। এখন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না থাকলে শ্রমিকদের লাখ টাকার বেশি খরচ বেঁচে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

“বাংলাদেশ সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত দুই হাজার সাতশো এজেন্সি আছে। আমরা তো বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি। তাহলে শুধু একশো জন কেন ভিসার অনুমোদন পাবে।”

সাধারণ জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যেহেতু প্রায় পৌনে তিন হাজার এজেন্সির সঙ্গে কাজ করা মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের বাইরের একটা এজেন্সিকে শ্রমিকের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি হতে হয়। আর ‘ভিসা হ্যান্ডলিং’ করে সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সি।

তবে, মালয়েশিয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত কিছু সংশয়ের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী।

“এক বছর ধরে তো নতুন কোনো অ্যাপ্রুভাল দেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে যেসব অ্যাপ্রুভাল প্রস্তুত আছে কিন্তু শ্রমিকরা ভিসার আওতায় আসেননি বা যেতে পারেননি তাদের জন্যই মূলত এই নির্দেশনা।”

এখনো এজেন্সিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকে যাচ্ছে, কারণ ‘প্রসেসিং’ তাদের মাধ্যমেই করতে হবে, এমনটাই ধারণা দিলেন তিনি। তার মতে, যে কোনো পদ্ধতিতে ‘মাইগ্রেশন কস্ট’ কমা উচিত।

অভিবাসন সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট বা ‘রামরু’-র চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, এটা একটা ভালো খবর। মালয়েশিয়া সরকারকে সাধুবাদ জানানো উচিত। “সরকার যেখানে সবাইকে লাইসেন্স দিয়েছে। সেখানে, কয়েকজনকে সিন্ডিকেট করে দেয়াটা অন্যায়।”

বছর দুয়েক আগে দেশটিতে শ্রম রপ্তানির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের সাধারণ রপ্তানিকারকদের মধ্যে। পরবর্তীতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া এজেন্সিগুলোর একটা অংশকে সিন্ডিকেটভুক্ত করা হয়েছিল।

সেই প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, আন্দোলন করার পরে দেখা গেল যারা আন্দোলন করেছে তাদের সিন্ডিকেটে নিয়ে নেয়া হলো। ফলে ওই রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিগুলোর কোনো নৈতিক অবস্থান ছিল না। ভবিষ্যতে যেন সবাই সমান সুযোগ পায় এমন তাগিদ দিলেন এই অভিবাসন বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “মালয়েশিয়া সরকার মূলত তাদের উদ্যোক্তা ও অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগকারীদের জন্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনছে। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো এর মূল টার্গেট নয়।”

আরো পড়ুন : মিয়ানমারের ১৭৭ বিজিপি সদস্যে আশ্রয় নিলো বাংলাদেশে

 

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে খরচ কমলো

আপডেট সময় ০৯:৫৩:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

চলমান বার্তা অনলাইন:
মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে ‘সিন্ডিকেট’ করা বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোর ‘ভিসা হ্যান্ডলিং’ কার্যক্রম বন্ধ করায় সেখানে যেতে আগ্রহী কর্মীদের খরচ কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও সাধারণ এজেন্টরা। তবে, এতে অন্যতম বড় এই শ্রমবাজারে অবস্থান হারানো নিয়ে শংকাও তৈরি হয়েছে কারো কারো মধ্যে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বিন ইসমাইল গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন। যার বিষয়বস্তু ছিল মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও সরকারের নতুন কিছু সিদ্ধান্ত জানানো।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশটির সরকার অনুমোদিত যেসব বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এতোদিন ধরে সেদেশে কর্মী পাঠাতে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করতো তাদের বদলে এখন থেকে নিয়োগকর্তাই সরাসরি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

“ইমিগ্রেশন বিভাগের মাইভিসা পোর্টালে ই-ভিসার জন্য এখন থেকে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন নিয়োগকর্তারা,” বলেন নাসুশন।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত কিন্তু সিন্ডিকেটভুক্ত নয় এমন একটি এজেন্সির প্রধান (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, এতোদিন যেহেতু ওই তালিকাভুক্ত এজেন্সিগুলোর নামেই শুধু ভিসা মঞ্জুর হতো, প্রতি ভিসার বিপরীতে তাদের এক লাখ সাত হাজার টাকা করে দিতে হতো। এখন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না থাকলে শ্রমিকদের লাখ টাকার বেশি খরচ বেঁচে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

“বাংলাদেশ সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত দুই হাজার সাতশো এজেন্সি আছে। আমরা তো বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি। তাহলে শুধু একশো জন কেন ভিসার অনুমোদন পাবে।”

সাধারণ জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যেহেতু প্রায় পৌনে তিন হাজার এজেন্সির সঙ্গে কাজ করা মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের বাইরের একটা এজেন্সিকে শ্রমিকের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি হতে হয়। আর ‘ভিসা হ্যান্ডলিং’ করে সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সি।

তবে, মালয়েশিয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত কিছু সংশয়ের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী।

“এক বছর ধরে তো নতুন কোনো অ্যাপ্রুভাল দেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে যেসব অ্যাপ্রুভাল প্রস্তুত আছে কিন্তু শ্রমিকরা ভিসার আওতায় আসেননি বা যেতে পারেননি তাদের জন্যই মূলত এই নির্দেশনা।”

এখনো এজেন্সিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকে যাচ্ছে, কারণ ‘প্রসেসিং’ তাদের মাধ্যমেই করতে হবে, এমনটাই ধারণা দিলেন তিনি। তার মতে, যে কোনো পদ্ধতিতে ‘মাইগ্রেশন কস্ট’ কমা উচিত।

অভিবাসন সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট বা ‘রামরু’-র চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, এটা একটা ভালো খবর। মালয়েশিয়া সরকারকে সাধুবাদ জানানো উচিত। “সরকার যেখানে সবাইকে লাইসেন্স দিয়েছে। সেখানে, কয়েকজনকে সিন্ডিকেট করে দেয়াটা অন্যায়।”

বছর দুয়েক আগে দেশটিতে শ্রম রপ্তানির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের সাধারণ রপ্তানিকারকদের মধ্যে। পরবর্তীতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া এজেন্সিগুলোর একটা অংশকে সিন্ডিকেটভুক্ত করা হয়েছিল।

সেই প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, আন্দোলন করার পরে দেখা গেল যারা আন্দোলন করেছে তাদের সিন্ডিকেটে নিয়ে নেয়া হলো। ফলে ওই রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিগুলোর কোনো নৈতিক অবস্থান ছিল না। ভবিষ্যতে যেন সবাই সমান সুযোগ পায় এমন তাগিদ দিলেন এই অভিবাসন বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “মালয়েশিয়া সরকার মূলত তাদের উদ্যোক্তা ও অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগকারীদের জন্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনছে। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো এর মূল টার্গেট নয়।”

আরো পড়ুন : মিয়ানমারের ১৭৭ বিজিপি সদস্যে আশ্রয় নিলো বাংলাদেশে