ঢাকা ১২:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোংলায় অসহায় পরিবারের আহার জোগাতে ভাড়ায় চালানো প্রাইভেট কার চুরি

মাসুদ রানা, মোংলা
চট্ট-মেট্রো-গ-১১-১১৯৫ মেনুয়াল ৯৪ মডেলের সাদা রঙের প্রাইভেট কারটি ভাড়ায় চালাতেন কামাল হোসেন। ভাড়ার টাকায় বৃদ্ধ মা-বাবাসহ ৭ সদস্যের পরিবারটি চলত। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচও আসত এখান থেকেই। পরিবারের মুখে আহার জোগানো সেই প্রাইভেট কারটি ১১ মার্চ রাত ১টার দিকে মোংলা সরকার মার্কেট সংলগ্ন এলাকা থেকে চুরি হয়ে যায় সংসারের এক মাত্র উপার্জনের সম্বলটি। এব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিলে এখনও কোন হদিস মিলেনি। এ ঘটনার পর থেকেই দিশাহারা হয়ে পরেন চালক কামাল, মালিক খলিল।

থানার অভিযোগ সুত্রে পুলিশ জানায়, ১১ মার্চ মোংলা বন্দরের শিল্পঞ্চলে হোলসিম সংলগ্ন সরকার মার্কেট এলাকার চালকের বাড়ির কাছ থেকে সাদা রংয়ের গাড়িটি চুরি হয় যায়। প্রাইভেট কারটির সন্ধান পেতে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ সহ ধরনা দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়িটি উদ্ধার হয়নি। রমজান মাস চলছে, উপার্জনের একমাত্র মাধ্যমটি হারিয়ে এবারের ঈদ আনন্দও মাটি হওয়ার সম্ভাবনা পরিবারটির। গাড়িটি উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা পেতে মালিক খলিল সহ তার লোকজন প্রতিদিন দুই বার করে মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম আজিুল ইসলামের কাছে দেখা করেণ। তিনিও বার বার গাড়িটি খুঁজে বের করতে সব ধরনের আইনি সহায়তার আশ্বাস দেন, কিন্ত এখনও সন্ধান না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিড়তে হচ্ছে তাদের।

গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে খুলনা ব্যাবসায়ী ফারুক হোসেন নামের এক মালিকের কাছ থেকে চরা দাম দিয়ে ক্রয় করে মোংলা এলাকার মোঃ খলিলুর রহমান নামের ব্যাবসায়ী। সাথে অনসাঙ্গী কাগজ পত্রও বুঝে দেয় পুর্বের মালিক ফারুক হোসেন। পরে অসহায় ভেবে চালক কামালকে ভাড়ার চুক্তিতে চালানোর জন্য তাকে সকল কাগজপত্র সহ বুঝে দেয়া হয় গাড়টি।

কামাল (কার চালক) বলেন, তাঁর সংসার চালানোর জন্য গাড়িটি ভাড়ায় চালাতেন তিনি। কিন্ত রাতে সরকার মার্কেট এলাকায় রেখে বাড়িতে ঘুমাতে গেলে গভীর রাতে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। এখন এক দিকে মালিক চাপ দিচ্ছে গাড়ি উদ্ধারের জন্য আর অন্য দিকে সংসার চালাতে না পেরে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। তার স্ত্রী ছাড়াও দুটি সন্তান আছে। উপার্জনে পরিবারের ৭ সদস্যের মুখে দুই বেলা আহার জোটে এই দিয়ে। এ গাড়ী চালানো টাকা দিয়ে চলে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখাও।

মালিক খলিলুর রহমান বলেন, একার উপার্জনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তার। সংসার ও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক ধান-দেনা করে এবং অন্য একজকে সেয়ার নিয়ে একটি ভাল মডেলের প্রাইভেট কার কেনেন দুজনে। চালক কামালকে অসহায় দেখে ভাড়ায় চালাতে দেন গাড়িটি। চালক কামাল ১১ মার্চ রাতে গাড়িটি বাড়ির অদূরে একটি নির্জন স্থানে রেখে বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতে কে বা কারা প্রাইভেট কারটি চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মোংলা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এখনো গাড়ির কোনো হদিস মেলেনি।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, এর আগে মোংলা বন্দর এলাকা থেকে মটরসাইকেল চুরি ঘটনা ঘটেছে কিন্ত প্রাইভেটকার চুরির ঘটনা ঘটেনী। এ গাড়িটি চুরির বিষয়টি জানার পর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পুলিশ সহ পার্শবর্তী বিভিন্ন থানায় সংবাদ দেয়া হয়েছে। গাড়িটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন :  মোংলায় ২ যুবকের ৩ মাসের কারাদণ্ড

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

মোংলায় অসহায় পরিবারের আহার জোগাতে ভাড়ায় চালানো প্রাইভেট কার চুরি

আপডেট সময় ০৫:০২:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

মাসুদ রানা, মোংলা
চট্ট-মেট্রো-গ-১১-১১৯৫ মেনুয়াল ৯৪ মডেলের সাদা রঙের প্রাইভেট কারটি ভাড়ায় চালাতেন কামাল হোসেন। ভাড়ার টাকায় বৃদ্ধ মা-বাবাসহ ৭ সদস্যের পরিবারটি চলত। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচও আসত এখান থেকেই। পরিবারের মুখে আহার জোগানো সেই প্রাইভেট কারটি ১১ মার্চ রাত ১টার দিকে মোংলা সরকার মার্কেট সংলগ্ন এলাকা থেকে চুরি হয়ে যায় সংসারের এক মাত্র উপার্জনের সম্বলটি। এব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিলে এখনও কোন হদিস মিলেনি। এ ঘটনার পর থেকেই দিশাহারা হয়ে পরেন চালক কামাল, মালিক খলিল।

থানার অভিযোগ সুত্রে পুলিশ জানায়, ১১ মার্চ মোংলা বন্দরের শিল্পঞ্চলে হোলসিম সংলগ্ন সরকার মার্কেট এলাকার চালকের বাড়ির কাছ থেকে সাদা রংয়ের গাড়িটি চুরি হয় যায়। প্রাইভেট কারটির সন্ধান পেতে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ সহ ধরনা দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়িটি উদ্ধার হয়নি। রমজান মাস চলছে, উপার্জনের একমাত্র মাধ্যমটি হারিয়ে এবারের ঈদ আনন্দও মাটি হওয়ার সম্ভাবনা পরিবারটির। গাড়িটি উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা পেতে মালিক খলিল সহ তার লোকজন প্রতিদিন দুই বার করে মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম আজিুল ইসলামের কাছে দেখা করেণ। তিনিও বার বার গাড়িটি খুঁজে বের করতে সব ধরনের আইনি সহায়তার আশ্বাস দেন, কিন্ত এখনও সন্ধান না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিড়তে হচ্ছে তাদের।

গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে খুলনা ব্যাবসায়ী ফারুক হোসেন নামের এক মালিকের কাছ থেকে চরা দাম দিয়ে ক্রয় করে মোংলা এলাকার মোঃ খলিলুর রহমান নামের ব্যাবসায়ী। সাথে অনসাঙ্গী কাগজ পত্রও বুঝে দেয় পুর্বের মালিক ফারুক হোসেন। পরে অসহায় ভেবে চালক কামালকে ভাড়ার চুক্তিতে চালানোর জন্য তাকে সকল কাগজপত্র সহ বুঝে দেয়া হয় গাড়টি।

কামাল (কার চালক) বলেন, তাঁর সংসার চালানোর জন্য গাড়িটি ভাড়ায় চালাতেন তিনি। কিন্ত রাতে সরকার মার্কেট এলাকায় রেখে বাড়িতে ঘুমাতে গেলে গভীর রাতে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। এখন এক দিকে মালিক চাপ দিচ্ছে গাড়ি উদ্ধারের জন্য আর অন্য দিকে সংসার চালাতে না পেরে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। তার স্ত্রী ছাড়াও দুটি সন্তান আছে। উপার্জনে পরিবারের ৭ সদস্যের মুখে দুই বেলা আহার জোটে এই দিয়ে। এ গাড়ী চালানো টাকা দিয়ে চলে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখাও।

মালিক খলিলুর রহমান বলেন, একার উপার্জনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তার। সংসার ও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক ধান-দেনা করে এবং অন্য একজকে সেয়ার নিয়ে একটি ভাল মডেলের প্রাইভেট কার কেনেন দুজনে। চালক কামালকে অসহায় দেখে ভাড়ায় চালাতে দেন গাড়িটি। চালক কামাল ১১ মার্চ রাতে গাড়িটি বাড়ির অদূরে একটি নির্জন স্থানে রেখে বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতে কে বা কারা প্রাইভেট কারটি চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মোংলা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এখনো গাড়ির কোনো হদিস মেলেনি।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, এর আগে মোংলা বন্দর এলাকা থেকে মটরসাইকেল চুরি ঘটনা ঘটেছে কিন্ত প্রাইভেটকার চুরির ঘটনা ঘটেনী। এ গাড়িটি চুরির বিষয়টি জানার পর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পুলিশ সহ পার্শবর্তী বিভিন্ন থানায় সংবাদ দেয়া হয়েছে। গাড়িটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন :  মোংলায় ২ যুবকের ৩ মাসের কারাদণ্ড