আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে গিয়ে বল প্রয়োগে এত ছাত্রজনতা নিহত ও আহত হয়েছে। এ ঘটনার জন্য আমি অনুতপ্ত ও লজ্জিত।
তিনি বলেন, এত বড় গণহত্যা আমার দায়িত্ব পালনের সময় সংঘটিত হয়েছে, যার জন্য আমি দোষ ও দায় স্বীকার করছি। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জবানবন্দিতে এ কথা বলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে মামলার একমাত্র রাজসাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। সকালে তাকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর দুপুরের বিরতিতে যান আদালত। এরপর বিকেলে আবারও জবানবন্দি পেশ করবেন তিনি। আজকে পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমীর হোসেন তাকে জেরা শুরু করেন। জেরা শেষ না করে মামলার কার্যক্রম বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে। এ সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ও সুলতান মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আসামি থেকে রাজসাক্ষী মামুন সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাসিনা ও তার সরকারের জুলাই ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্য দেন। জবানবন্দি প্রদানকালে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত, নিহতদের পরিবার ও দেশবাসী এবং আদালতের কাছে ক্ষমা চান।
তিনি তার নিজের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের ১১তম দিনে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। দেশবাসী, নিহত, আহত পরিবার ও ব্যক্তির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। নিজের দোষ স্বীকার করে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবার এবং দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারের আদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে তাদের অনেককে আহত, নিহত করায় পুলিশপ্রধান হিসেবে আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। জুলাই আন্দোলনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার জন্য অপরাধবোধ ও বিবেকের তাড়নায় আমি রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে স্বজনহারাদের কান্না, আহজারি শুনেছি। ভিডিওতে নৃশংসতা দেখেছি, তাতে আমার রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে হয়েছে। বিশেষ করে হত্যার পরে লাশ একত্রিত করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার বীভৎসতা আমাকে মর্মাহত করেছে।
এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান। আজ মামলার ১১তম দিনের সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এর আগে এ মামলায় ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক আসামি।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনালে নিজের দায় স্বীকার করে শেখ হাসিনার এ মামলায় স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজসাক্ষী হতে চান চৌধুরী মামুন। একই সঙ্গে নিজের সব দায় স্বীকার করেন।
এ মামলায় গত ৩ আগস্ট থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা।