ঢাকা ০২:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেড ইন চায়নার আবিষ্কার হটপটের কথা

হাজার বছর আগের কাগজ, চা এবং নুডলস থেকে শুরু করে আজকের প্যাসেঞ্জার ড্রোন, কিংবা নতুন জ্বালানির গাড়ি। সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বসভ্যতা এগিয়ে চলেছে চীনের শক্তিশালী আবিষ্কারের হাত ধরে। নানা সময়ে দারুণ সব আবিষ্কার করে আধুনিক সভ্যতার ভিত গড়ে দিয়েছে চীন। আর সেই সব আবিষ্কার নিয়ে আমাদের আয়োজন মেড ইন চায়না।                     সিআরআই অনলাইন প্রতিবেদন

হিম হিম পরিবেশে ধোঁয়া ওঠা আগুন গরম এক বাটি খাবার কার না পছন্দ। যদি টেবিলে বসে নিজের হাতে ইচ্ছেমতো স্বাস্থ্যকর সব উপকরণ মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়, তবে তো কথাই নেই। হাতের কাছে থাকা চুলা থেকে নিয়ে গরম গরম খাবার খাওয়ার এ চল শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। বলছিলাম চীনের জনপ্রিয় খাবার হটপট বা হুয়োকুয়োর কথা। ষোলোআনা তৃপ্তির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবারকে জনপ্রিয় করার এ পদ্ধতি কিন্তু পুরোপুরি মেড ইন চায়না।

চীনা ভাষায় হুয়ো মানে আগুন আর কুয়ো মানে পাত্র। সারাক্ষণ আগুনের ওপর খাবারের পাত্রটা থাকে বলেই নাম হয়েছে হুয়োকুয়ো ওরফে আগুনে পাত্র আর ইংরেজিতে হটপট।

চীনের প্রাচীনতম এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি হলো হটপট বা হুয়োকুয়ো। এটি শুধু একটি খাবার বা রন্ধনপ্রণালীই নয়; এটি চীনা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী খাবারটি চীনের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন স্বাদ ও উপকরণে পরিবেশিত হয়। চুলার ওপর রাখা খাবারের পাত্রে মাংস, মাছ, শাকসবজি এবং নানা রকম সস ডুবিয়ে খাওয়ার এই প্রক্রিয়া কেবল রুচি মেটায় না, খাওয়ার ভেতর এক ধরনের বিনোদনের উৎসও এটি।

এবার কান পাতা যাক হটপটের ইতিহাসে।

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে চীনের দীর্ঘতম চৌ রাজবংশের সময়ে রান্নার কাজে এক ধরনের ট্রাইপড ব্যবহার করা হতো। ওটাই ছিল হটপটের প্রথম পরীক্ষামূলক সংস্করণ। ওই সময়ের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত ব্রোঞ্জের পাত্র ব্যবহার করতেন, যাকে বলা হতো রান লু। রান লুর প্রধান অংশটি ছিল একটি ছোট চুল্লি, যার উপর কাঠকয়লার আগুনে একটি ছোট খাবারের পাত্র বসানো থাকত।

পরে খ্রিস্টাব্দ ২০০ থেকে ২৮০ সালে তিন রাজবংশের সময়কালে যখন তামার পাত্রের প্রচলন শুরু হয় তখন থেকেই জনপ্রিয় হয় হটপট।

এরও অনেক পরে ষোলশো সালের দিকে ছিং রাজবংশের সময়, সম্রাটদের মধ্যে হটপট বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ছিয়ানলং সম্রাট প্রায় প্রতিটি খাবারের জন্য হটপটকেই বেছে নিতেন। চিয়াছিং সম্রাট তার সিংহাসন আরোহনের সময় দেড় হাজার হটপট নিয়ে একটি ভোজের আয়োজনও করেছিলেন।

হটপটের ভেতরে কী আছে, সেদিকে নজর দেওয়া যাক এবার

হটপটকে অনেকটা স্যুপের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে এমন কোনো খাবার নেই যা হটপটে মিশিয়ে খাওয়া যায় না। সাধারণত একটি বড় ধাতব পাত্রে হটপট পরিবেশন করা হয়।

পাত্রে ঝোল টগবগ করে ফুটতে থাকে। যিনি খাবেন, তিনি নিজেই সেই ফুটন্ত ‍সুপে মেশাতে থাকেন পছন্দের নানা কাঁচা উপকরণ। মাংস, শাকসবজি, যার যা পছন্দ তা ওই টগবগে স্যুপে ডুবিয়ে রান্না করা হয়। নির্দিষ্ট সময় রান্নার পর সেগুলো তুলে বাটিতে নিয়ে ডিপিং সসে চুবিয়ে খেতে হয় হটপট।

হটপটের সাধারণ উপকরণের মধ্যে রয়েছে খুব পাতলা করে কাটা মাংস, পাতা জাতীয় শাকসবজি, মাশরুম, সেমাই, আলু, সয়াবিন, ডিমের ডাম্পলিং, বক চয়, লেটুস, তোফু কিংবা সামুদ্রিক খাবার। কাঁচা উপকরণগুলো এত পাতলা করে কাটা হয় যে সেগুলো ফুটন্ত স্যুপে খুব তাড়াতাড়ি খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।

হটপট একটি মূল খাবার। তবে এর সঙ্গে অনেকে ভাত বা নুডলস খেয়ে থাকেন। সাধারণত রেস্তোরাঁয় বেশি দেখা গেলেও অনেকেই বাড়িতে হটপটে খেয়ে থাকেন।

চীনে হটপট খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শিষ্টাচার মেনে চলা বেশ জরুরি। হটপটেও এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। আবার হটপট খাওয়ার ক্ষেত্রে রঙিন চপস্টিক্স এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

এবার হুয়োকুয়ো বা হটপট নিয়ে আরো কিছু তথ্য জানাচ্ছেন আফরিন মিম

• চীনের একেক প্রদেশের হটপট খাবারের ধরন একেক রকম। বেশ ঝাল হটপটের জন্য বিখ্যাত হলো ছোংছিংয়ের হটপট। তবে ঝালের বিচারে সিছুয়ান হটপটও কম যায় না।

• বেইজিং হটপটে ব্যবহার করা হয় ভেড়া বা খাসির মাংস। আবার ইউননানের হটপটে বেশি ব্যবহৃত হয় মাশরুম।

• কুয়াংতোংয়ে হটপটে দেখা যায় সামুদ্রিক নানা খাবার। ডিপিং সস হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হয় সয়া ও গাজানো তোফু। ইনার মঙ্গোলিয়া ও সিনচিয়াংসহ আরও কিছু প্রদেশের হটপটে ফুটন্ত স্যুপে ভেড়ার মাংস বেশি জনপ্রিয়।

• হটপটের ঝোল বেশ পাতলা হয়, আবার ঘনও হয়। এটি তৈরিতে আদা, রসুন, মাশরুম, টমেটো ছাড়াও আরও অনেক ধরনের চীনা ভেষজ মশলা ব্যবহার করা হয়। তাই হটপট যেমন সুস্বাদু তেমন পুষ্টিকর একটি খাবার। আবার মাংস বাদ দিয়ে সবজিভোজীরাও চাইলে নিজেদের মতো করে হটপট রেসিপি সাজিয়ে নিতে পারবেন।

হটপটের একটা মজার বিষয় হলো এখানে কোন উপকরণ কতক্ষণ রান্না করতে হবে সেটা আপনাকেই জেনে নিতে হবে আগে। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁয় হটপট খাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ আপনার রান্নায় সহসা নাক গলাতে আসবে না। আর সাধারণ নিয়মটা হলো, প্রথমে ফুটন্ত ঝোলে দিতে হবে মাংস এরপর সবজি। আর মাংসের স্লাইসগুলো যত পাতলা করে কাটা হবে ততই কম সময় লাগবে সেগুলো রান্না হতে। হটপটে সবজি দেওয়ার ক্ষেত্রে পাতাযুক্ত সবজি দিতে হয় সবার পরে। আর এতে এমন সবজি ব্যবহার করা হয়, যেগুলো সামান্য সেদ্ধ করেই খাওয়া যায়।

হটপটের অর্থনীতি নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়

দিন যত যাচ্ছে, চীনারা তত বেছে নিচ্ছে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল। এতে করে বাড়ছে হটপটের ভক্তের সংখ্যাও। চীনের ক্যাটারিং বাজারের ২০ ভাগেরও বেশি এখন হটপটের দখলে। ২০২৩ সালের এক বাজার গবেষণা জরিপে দেখা গিয়েছিল, ব্যাপক চাহিদার কারণে ওই এক বছরেই চীনজুড়ে নতুন ৭৫ হাজার হটপট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছিল।

ঘটা করে হটপটের উৎসবও হয় চীনে। হটপটের রাজধানী খ্যাত ছোংছিংয়ে আয়োজন করা হয় হটপট কার্নিভালের। ৩৭ হাজারেরও বেশি হটপট রেস্তোরাঁ আছে এ প্রদেশে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষের। এমনকি এখানকার কিছু জনপ্রিয় হটপট ব্র্যান্ড তাদের ব্যবসার পরিসর বাড়িয়েছে ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে, যা থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি।

এর মাঝে আবার চীনের জেন-জি অর্থাৎ টিনএজারদের মাঝেও হটপট বা হুয়োকুয়োর প্রতি টান বাড়তে দেখা যাচ্ছে। চীনা ঐতিহ্যকে ধারণ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতাও এর একটি বড় কারণ। সেইসঙ্গে শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা তরুণদের অনেকে চালু করছেন ছোট পরিসরে নিজের মতো করে সাজানো হটপট রেস্তোরাঁ।

ঝাল-মশলার তীব্রতা থেকে শুরু করে সাদামাটা সুপের সরলতা—প্রত্যেক হটপট বাটিতেই লুকিয়ে আছে একেকটি গল্প। সুতরাং হটপট শুধু উদরপূর্তি নয়, বরং সম্পর্কের উষ্ণতায় মোড়া এক আনন্দ উৎসবের নাম।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

আন্দোলনকারীর বাবার নামে মামলা; অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

মেড ইন চায়নার আবিষ্কার হটপটের কথা

আপডেট সময় ০২:৪০:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

হাজার বছর আগের কাগজ, চা এবং নুডলস থেকে শুরু করে আজকের প্যাসেঞ্জার ড্রোন, কিংবা নতুন জ্বালানির গাড়ি। সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বসভ্যতা এগিয়ে চলেছে চীনের শক্তিশালী আবিষ্কারের হাত ধরে। নানা সময়ে দারুণ সব আবিষ্কার করে আধুনিক সভ্যতার ভিত গড়ে দিয়েছে চীন। আর সেই সব আবিষ্কার নিয়ে আমাদের আয়োজন মেড ইন চায়না।                     সিআরআই অনলাইন প্রতিবেদন

হিম হিম পরিবেশে ধোঁয়া ওঠা আগুন গরম এক বাটি খাবার কার না পছন্দ। যদি টেবিলে বসে নিজের হাতে ইচ্ছেমতো স্বাস্থ্যকর সব উপকরণ মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়, তবে তো কথাই নেই। হাতের কাছে থাকা চুলা থেকে নিয়ে গরম গরম খাবার খাওয়ার এ চল শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। বলছিলাম চীনের জনপ্রিয় খাবার হটপট বা হুয়োকুয়োর কথা। ষোলোআনা তৃপ্তির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবারকে জনপ্রিয় করার এ পদ্ধতি কিন্তু পুরোপুরি মেড ইন চায়না।

চীনা ভাষায় হুয়ো মানে আগুন আর কুয়ো মানে পাত্র। সারাক্ষণ আগুনের ওপর খাবারের পাত্রটা থাকে বলেই নাম হয়েছে হুয়োকুয়ো ওরফে আগুনে পাত্র আর ইংরেজিতে হটপট।

চীনের প্রাচীনতম এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি হলো হটপট বা হুয়োকুয়ো। এটি শুধু একটি খাবার বা রন্ধনপ্রণালীই নয়; এটি চীনা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী খাবারটি চীনের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন স্বাদ ও উপকরণে পরিবেশিত হয়। চুলার ওপর রাখা খাবারের পাত্রে মাংস, মাছ, শাকসবজি এবং নানা রকম সস ডুবিয়ে খাওয়ার এই প্রক্রিয়া কেবল রুচি মেটায় না, খাওয়ার ভেতর এক ধরনের বিনোদনের উৎসও এটি।

এবার কান পাতা যাক হটপটের ইতিহাসে।

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে চীনের দীর্ঘতম চৌ রাজবংশের সময়ে রান্নার কাজে এক ধরনের ট্রাইপড ব্যবহার করা হতো। ওটাই ছিল হটপটের প্রথম পরীক্ষামূলক সংস্করণ। ওই সময়ের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত ব্রোঞ্জের পাত্র ব্যবহার করতেন, যাকে বলা হতো রান লু। রান লুর প্রধান অংশটি ছিল একটি ছোট চুল্লি, যার উপর কাঠকয়লার আগুনে একটি ছোট খাবারের পাত্র বসানো থাকত।

পরে খ্রিস্টাব্দ ২০০ থেকে ২৮০ সালে তিন রাজবংশের সময়কালে যখন তামার পাত্রের প্রচলন শুরু হয় তখন থেকেই জনপ্রিয় হয় হটপট।

এরও অনেক পরে ষোলশো সালের দিকে ছিং রাজবংশের সময়, সম্রাটদের মধ্যে হটপট বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ছিয়ানলং সম্রাট প্রায় প্রতিটি খাবারের জন্য হটপটকেই বেছে নিতেন। চিয়াছিং সম্রাট তার সিংহাসন আরোহনের সময় দেড় হাজার হটপট নিয়ে একটি ভোজের আয়োজনও করেছিলেন।

হটপটের ভেতরে কী আছে, সেদিকে নজর দেওয়া যাক এবার

হটপটকে অনেকটা স্যুপের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে এমন কোনো খাবার নেই যা হটপটে মিশিয়ে খাওয়া যায় না। সাধারণত একটি বড় ধাতব পাত্রে হটপট পরিবেশন করা হয়।

পাত্রে ঝোল টগবগ করে ফুটতে থাকে। যিনি খাবেন, তিনি নিজেই সেই ফুটন্ত ‍সুপে মেশাতে থাকেন পছন্দের নানা কাঁচা উপকরণ। মাংস, শাকসবজি, যার যা পছন্দ তা ওই টগবগে স্যুপে ডুবিয়ে রান্না করা হয়। নির্দিষ্ট সময় রান্নার পর সেগুলো তুলে বাটিতে নিয়ে ডিপিং সসে চুবিয়ে খেতে হয় হটপট।

হটপটের সাধারণ উপকরণের মধ্যে রয়েছে খুব পাতলা করে কাটা মাংস, পাতা জাতীয় শাকসবজি, মাশরুম, সেমাই, আলু, সয়াবিন, ডিমের ডাম্পলিং, বক চয়, লেটুস, তোফু কিংবা সামুদ্রিক খাবার। কাঁচা উপকরণগুলো এত পাতলা করে কাটা হয় যে সেগুলো ফুটন্ত স্যুপে খুব তাড়াতাড়ি খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।

হটপট একটি মূল খাবার। তবে এর সঙ্গে অনেকে ভাত বা নুডলস খেয়ে থাকেন। সাধারণত রেস্তোরাঁয় বেশি দেখা গেলেও অনেকেই বাড়িতে হটপটে খেয়ে থাকেন।

চীনে হটপট খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শিষ্টাচার মেনে চলা বেশ জরুরি। হটপটেও এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। আবার হটপট খাওয়ার ক্ষেত্রে রঙিন চপস্টিক্স এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

এবার হুয়োকুয়ো বা হটপট নিয়ে আরো কিছু তথ্য জানাচ্ছেন আফরিন মিম

• চীনের একেক প্রদেশের হটপট খাবারের ধরন একেক রকম। বেশ ঝাল হটপটের জন্য বিখ্যাত হলো ছোংছিংয়ের হটপট। তবে ঝালের বিচারে সিছুয়ান হটপটও কম যায় না।

• বেইজিং হটপটে ব্যবহার করা হয় ভেড়া বা খাসির মাংস। আবার ইউননানের হটপটে বেশি ব্যবহৃত হয় মাশরুম।

• কুয়াংতোংয়ে হটপটে দেখা যায় সামুদ্রিক নানা খাবার। ডিপিং সস হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হয় সয়া ও গাজানো তোফু। ইনার মঙ্গোলিয়া ও সিনচিয়াংসহ আরও কিছু প্রদেশের হটপটে ফুটন্ত স্যুপে ভেড়ার মাংস বেশি জনপ্রিয়।

• হটপটের ঝোল বেশ পাতলা হয়, আবার ঘনও হয়। এটি তৈরিতে আদা, রসুন, মাশরুম, টমেটো ছাড়াও আরও অনেক ধরনের চীনা ভেষজ মশলা ব্যবহার করা হয়। তাই হটপট যেমন সুস্বাদু তেমন পুষ্টিকর একটি খাবার। আবার মাংস বাদ দিয়ে সবজিভোজীরাও চাইলে নিজেদের মতো করে হটপট রেসিপি সাজিয়ে নিতে পারবেন।

হটপটের একটা মজার বিষয় হলো এখানে কোন উপকরণ কতক্ষণ রান্না করতে হবে সেটা আপনাকেই জেনে নিতে হবে আগে। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁয় হটপট খাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ আপনার রান্নায় সহসা নাক গলাতে আসবে না। আর সাধারণ নিয়মটা হলো, প্রথমে ফুটন্ত ঝোলে দিতে হবে মাংস এরপর সবজি। আর মাংসের স্লাইসগুলো যত পাতলা করে কাটা হবে ততই কম সময় লাগবে সেগুলো রান্না হতে। হটপটে সবজি দেওয়ার ক্ষেত্রে পাতাযুক্ত সবজি দিতে হয় সবার পরে। আর এতে এমন সবজি ব্যবহার করা হয়, যেগুলো সামান্য সেদ্ধ করেই খাওয়া যায়।

হটপটের অর্থনীতি নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়

দিন যত যাচ্ছে, চীনারা তত বেছে নিচ্ছে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল। এতে করে বাড়ছে হটপটের ভক্তের সংখ্যাও। চীনের ক্যাটারিং বাজারের ২০ ভাগেরও বেশি এখন হটপটের দখলে। ২০২৩ সালের এক বাজার গবেষণা জরিপে দেখা গিয়েছিল, ব্যাপক চাহিদার কারণে ওই এক বছরেই চীনজুড়ে নতুন ৭৫ হাজার হটপট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছিল।

ঘটা করে হটপটের উৎসবও হয় চীনে। হটপটের রাজধানী খ্যাত ছোংছিংয়ে আয়োজন করা হয় হটপট কার্নিভালের। ৩৭ হাজারেরও বেশি হটপট রেস্তোরাঁ আছে এ প্রদেশে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষের। এমনকি এখানকার কিছু জনপ্রিয় হটপট ব্র্যান্ড তাদের ব্যবসার পরিসর বাড়িয়েছে ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে, যা থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি।

এর মাঝে আবার চীনের জেন-জি অর্থাৎ টিনএজারদের মাঝেও হটপট বা হুয়োকুয়োর প্রতি টান বাড়তে দেখা যাচ্ছে। চীনা ঐতিহ্যকে ধারণ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতাও এর একটি বড় কারণ। সেইসঙ্গে শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা তরুণদের অনেকে চালু করছেন ছোট পরিসরে নিজের মতো করে সাজানো হটপট রেস্তোরাঁ।

ঝাল-মশলার তীব্রতা থেকে শুরু করে সাদামাটা সুপের সরলতা—প্রত্যেক হটপট বাটিতেই লুকিয়ে আছে একেকটি গল্প। সুতরাং হটপট শুধু উদরপূর্তি নয়, বরং সম্পর্কের উষ্ণতায় মোড়া এক আনন্দ উৎসবের নাম।