ঢাকা ১১:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আরাফাত ময়দানে হজের খুতবায় যা বললেন শায়েখ সালেহ বিন আবদুল্লাহ

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতায় মক্কার আরাফাত ময়দানের মসজিদ আল-নামিরাহতে আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) হজের খুতবা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে হজের খুতবা পাঠ শুরু করেন শায়েখ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ, যা শেষ হয় ৩টা ৪০ মিনিটে।

হজের খুতবা এবার বাংলাসহ ৩৪টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এটি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

শায়েখ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ প্রদত্ত হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো—

‘আল্লাহর ইবাদত এমন নিষ্ঠার সঙ্গে করবে, যেন তুমি তাকে দেখছো, আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও তবে জানবে আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা বলেন, যারা সৎ কাজ করে তাদের জন্য আছে দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখেরাতের আবাস আরও উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকীদের আবাস কতই না উত্তম।

দ্বীনের দ্বিতীয় স্তর হলো ঈমান। আর তা হলো মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা আমল করা, যা নেক আমল দ্বারা বৃদ্ধি পায় এবং পাপ কাজের দ্বারা সঙ্কুচিত হয়। এর ৭০ এরও বেশি শাখা প্রশাখা রয়েছে। যার সর্বোচ্চ হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা হলো ঈমানের একটি বিশেষ শাখা।

ঈমানের বিষয়গুলোর মধ্যে আরও রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা, সত্য কথা বলা, উত্তম ভাষা ব্যবহার করা, অঙ্গীকার ও চুক্তি পূরণ করা এবং উত্তম চরিত্র অবলম্বন করা।

আল্লাহ সুবহানাহুতালা বলেন, তোমরা আল্লাহর এবাদত করো এবং কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক করো না। আর পিতা-মাতা আত্মীয়স্বজন ইয়াতিম অভাবগ্রস্ত নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই দাম্ভিক ও অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।

আল্লাহ আরও বলেছেন, হে মুমিনগণ তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো। তিনি আরও বলেছেন, আর আমার বান্দাদেরকে বলুন তারা যেন এমন কথা বলে, যা উত্তম নিশ্চয়ই। শয়তান তাদের মধ্যে বিভেধ সৃষ্টির উসকানি দেয়, শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।

আল্লাহ আরও বলেন, ভালো মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা। ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। আর এটি শুধু তারাই প্রাপ্য হবে, যারা ধৈর্যশীল ও এর অধিকারী এবং কেবল তারাই প্রাপ্য হবে যারা পরম সৌভাগ্যের অধিকারী। এ ছাড়া ঈমানের অন্তর্গত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, বিপদ আপদে ধৈর্য ধারণ নেয়ামত লাভের সময় শুকরিয়া আদায় এবং গুনাহ ও অবাধ্যতার পর তওবা ও অনুশোচনা করা। আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা বলেন, ধৈর্যশীলদেরকে কোনো হিসাব ছাড়াই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে।

আল্লাহ আরও বলেন, আর স্মরণ করো যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো তবে আমি অবশ্যই তোমাদের প্রতিদান বাড়িয়ে দেবো। তিনি আরও এরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা চাও এবং অনুশোচনা পরে তার দিকে ফিরে এসো। তাহলে তিনি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে উত্তম জীবন সামগ্রী ভোগ করতে দেবেন আর অনুগ্রহ লাভের যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনি তার অনুগ্রহ দিয়ে ধন্য করবেন।

ঈমানের স্তম্ভ হলো ছয়টি আর সেগুলো হলো আল্লাহর ওপর, তার ফেরেশতাদের ওপর, তার কিতাবের ওপর, তার রাসূলদের ওপর আখেরাত দিবসের ওপর এবং তাকদিরের ভালোমন্দের ওপর ইমান আনা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, বরং সৎকর্ম হলো ওই ব্যক্তির আমল যিনি আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীদের প্রতি ঈমান আনে। আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা আরও এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। আর ঈমানের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করে মুক্তি ও সাফল্য অর্জিত হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আরও ওয়াদা দিয়েছেন স্থায়ী জান্নাত সমূহের উত্তম বাসস্থানের আর আল্লাহর সন্তুষ্টি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহাসাফল্য।

আল্লাহ আরও এরশাদ করেন, যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুম, তথা শিরিক দ্বারা কলুষিত করেনি নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত। আল্লাহ আরও বলেন, নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সাহায্য করব দুনিয়ার জীবনে এবং সেদিন যেদিন সাক্ষীগণ দাঁড়াবে। কাজেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় প্রতিপালক হিসেবে, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে জগতের পরিকল্পনাকারী হিসেবে এবং উত্তম গুণাবলি ও সুন্দর নামের অধিক হিসেবে তার প্রতি ঈমান আনা।

তোমাদের রব সেই আল্লাহ যিনি, আসমান ও জমিন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে উঠেছেন তিনি দিবসকে রাত্রি দিয়ে ঢেকে দেন এবং সেটি দ্রুত বেগে রাতকে অনুসরণ করে আর তিনি সূর্য চন্দ্র ও তারকারাজিকে তাঁর আদেশের অনুগামী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। জেনে রেখো সৃষ্টি ও কর্তৃত্ব সৃষ্টি এবং হুকুম শুধু তারই সৃষ্টি, যার হুকুমও তার জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ চিরমহীয়ান। তোমরা তাঁকে মিনতি ভরে সঙ্গোপনে ডাকো, নিশ্চয়ই তিনি নিশ্চয়ই সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। আর তোমরা সংশোধনের পর পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না এবং ভয় ও প্রত্যাশা নিয়ে তাকে রাখো—নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত নিকটবর্তী। আমরা সম্মানিত ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনি।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর ফেরেশতাগণ তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবিহ পাঠ করে এবং পৃথিবীতে বসবাসকারীদের জন্য ইস্তেগফার করে। আমরা ঈমান আনি, আল্লাহর কিতাবসমূহের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে তাওরাত ও ইঞ্জিল আর আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারীমকে পূর্ববর্তী সকল কিতাবের ওপর ফায়সালাকারী বানিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব সদা বিজমান। তিনি আপনার প্রতি সত্য সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহকে সত্যায়নকারী। আর তিনি ইতোপূর্বে মানুষের হেদায়েতের জন্য তাওরাত ও ইনজিল নাযিল করেছেন এবং তিনি ফুরকান, তথা সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিল করেছেন।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন, আর আমি আপনার নিকট সত্য সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছি, যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী ও তার রক্ষক। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আপনার পূর্বে রাসূলগণকে তাদের কাওমের নিকট প্রেরণ করেছি। তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিলেন। অতঃপর যারা অপরাধ করেছিল, আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি আর মুমিনদেরকে সাহায্য করার দায়িত্ব আমার নিজের ওপর রেখেছি। আমরা শেষ দিবস, অর্থাৎ কেয়ামত দিবস প্রতিদান ও হিসাব নিকাশ দিবসের প্রতি এবং এতে থাকা আল্লাহর বন্ধুদের জন্য জান্নাত ও তার শত্রুদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণের বিষয়ে বিশ্বাস রাখি।

আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য পরকালীন ঘরেই উত্তম, তোমরা কি অনুধাবন করো না? আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ সকল ঘটনা ও দুর্ঘটনার ফায়সালা করেন। সবকিছু তিনি লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং সেগুলোর ইচ্ছা করেন ও তা সৃষ্টি করেন।

আল্লাহ আরও বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তার আদেশ বাস্তবায়ন করবেন, অবশ্যই তিনি প্রতিটি জিনিসের জন্য একটি মাত্রা নির্ধারণ করে রেখেছেন।

নবী (সা.) ইসলামকে ব্যাখ্যা করে বলেন, ইসলাম হলো তুমি সাক্ষ্য দিবে যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। আর তুমি সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমাদানের সিয়াম পালন করবে এবং সক্ষমতা থাকলে বাইতুল্লাহে হজ করবে। আল্লাহ যখন তোমাকে সক্ষম বানাবে তখন তুমি বাইতুল্লাহে হজ করবে। সুতরাং, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। এ বাক্যটি অন্তর্ভুক্ত করে এ কথা বুঝানো হয়েছে, ইবাদত শুধু আল্লাহর হক। এর সামান্য কোনো অংশ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য সম্পাদন করা যাবে না। ব্যয় করা যাবে না, যদিও তিনি হন কোনো ফেরেশতা-নবী-রাসূল-নেককার বান্দা কিংবা অলি-আউলিয়া কারও জন্যই ইবাদত ব্যয় করা যাবে না। একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মানুষেরা তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো, যিনি তোমাদেরকেও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়াবান হবে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, আপনি আল্লাহর সাথে আর কাউকে ডাকবে না, অন্যথায় আপনি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, বলুন হে কিতাবীগণ—তোমরা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একটি অভিন্ন কথায় এসো একটি অভিন্ন কথায় একমত হও যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও এবাদত করব না। তার সাথে কাউকে শরিক করব না এবং আল্লাহর পরিবর্তে কেউ কাউকে প্রভু বানাব না, যদি তারা অসম্মত হয় তাহলে বলুন তোমরা সাক্ষী থাকো আমরা মুসলিম। এর মাঝেই রয়েছে আত্মসম্মান, কেননা বশ্যতা স্বীকার আল্লাহ ছাড়া আর কারও জন্য হবে না।

আল্লাহ আরও বলেন, যদি আল্লাহ আপনাকে কোনো ক্ষতির ছোঁয়া লাগান, তাহলে তিনি ছাড়া তো আর তা দূর করার কেউ নেই। আর যদি তিনি আপনার কল্যাণ চান, তাহলে তার সেই অনুগ্রহ ফিরিয়ে দেয়ার মতো কেউ নেই। তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন, তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। আর মুহাম্মদ (সা.) হলেন আল্লাহর রাসূল, এ সাক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করে তার আদেশ পালনে আনুগত্য করা, তার আনিত সংবাদে তাকে সত্যায়ন করা এবং তার রবের ইবাদতের ক্ষেত্রে তার দেখানো পদ্ধতিতে চলা এসবেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাজেই আল্লাহর ইবাদত করা হবে শুধু সেই পদ্ধতিতে, আল্লাহর ইবাদত শুধু সেই পদ্ধতিই করতে হবে, যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা অনুযায়ী এবাদত করতে হবে।

আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা বলেন, তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতে একজন রাসুল এসেছেন। তোমাদের কষ্টকর বিষয়ে তার জন্য দুঃসহ। তিনি তোমাদের ব্যাপারে আগ্রহী, মুমিনদের প্রতি তিনি স্নেহপরায়ণ রহম দিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত করো আল্লাহ ও রাসুলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান এনে থাকো এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামের শ্রেষ্ঠতম। মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর প্রেরিত রিসালাতের শিক্ষায় রয়েছে—এটি উম্মার মধ্যে বিরোধ দূর করে এবং শরীয় জ্ঞানের উৎসকে একভূত করে। এর মাধ্যমে ইবাদতগুলো একত্রিত হয় এবং সেগুলো পালন পদ্ধতিতে ভিন্নতা দূর হয়। ফলে কিতাব ও সুন্নাতে যা উল্লেখ নেই, এমন পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত করার মতো বিদআত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এভাবে সৃষ্টি জগৎ ঐক্যবদ্ধ হয় এবং হৃদয়সমূহ সম্প্রীতিতে ভরে ওঠে। ইসলামের দ্বিতীয় স্তর হলো সালাত কায়েম করা, যা বান্দা ও তার রবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তার মুক্তির কারণ হয়। তার সময়কে সুশৃঙ্খল করে এবং বান্দাকে তার রবের তত্ত্বাবধান অনুভব করার পথ করে দেয়। এভাবে সে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে প্রশিক্ষিত হয়। সালাতের মধ্যে রয়েছে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা এবং আধ্যাত্মিক ও শারীরিক পরিচ্ছন্নতা আর জামাতে সালাত সমাজের বন্ধন দৃঢ় করে এবং পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা সালাতের হেফাজত করো আর আল্লাহর সামনে বিনয়ের সাথে দাঁড়াও। তিনি আরও বলেন, নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে। আল্লাহ আরও বলেন, অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে ভীত অবনত। তিনি আরও এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াও, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল, হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করো, পায়ের টাকনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করো। আল্লাহ আরও বলেন, আর আপনি সালাত কায়েম করুন, দিনের দুই প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংশে। নিশ্চয় সৎকাজ অসৎ কাজকে মিটিয়ে দেয়, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটি একটি উপদেশ।

ইসলামের আরও একটি স্তম্ভ হলো যাকাত প্রদান করা। মানুষের অর্জিত সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত সময় নির্ধারিত খাতে ব্যয় করা। এতে সমাজের কল্যাণ হয়, অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পায়। এতে রয়েছে মনকে কৃপণতা, লোভ ও স্বার্থপরতা থেকে পবিত্র করার শিক্ষা এবং নিজেকে দানদক্ষিণার প্রশিক্ষণ দেওয়া। এ ছাড়া এটি অভাবিদের প্রয়োজন মেটায়। সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করা এবং সমাজের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সামাজিক সংহতি অর্জনের কার্যকরী উপায় হিসেবে কাজ করে যাকাত।

আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা বলেন, আর তোমরা যাকাত দাও এবং তোমরা উত্তম কাজের যা কিছু নিজেদের জন্য পেশ করবে আল্লাহর কাছে তা পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা দেখছেন। তিনি আরও বলেন, আমার রহমত সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে, অতএব যারা তাক অবলম্বন করে যাকাত প্রদান করে এবং আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে, আমি তাদের জন্য তা লিপিবদ্ধ করে রাখব। তিনি আরও বলেন, আপনি তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।

আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা আরও বলেন, শুধু ফকির-মিসকিন কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য তাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয়, যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয়, তাদের জন্য দাস মুক্তিতে ঋণে ভারাক্রান্তদের জন্য আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

চতুর্থ স্তম্ভ রমাদানের মাসে সিয়াম, তথা রোজা পালন করা। এতে রয়েছে ধৈর্য ও কুপ্রবৃত্তির প্রতিরোধে আত্মার প্রশিক্ষণ। অভাবগ্রস্তদের চাহিদা অনুভব করা ও আত্মাকে খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্ত করার শিক্ষা। এতে হৃদয়ের ওপর পার্থিব লোভ-লালসার প্রাধান্য কমে, বিনয় বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ঈমানদারগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। এ রোজা সংখ্যায় কয়েকদিন, তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্যদিন সে তা পূরণ করবে।

আল্লাহতালা আরও বলেন, রমাজান মাসেই কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং হেদায়েতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যা-সত্যের পার্থক্যকারী রূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কষ্ট চান না আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো। তিনি তোমাদেরকে যে হেদায়েত দান করেছেন, সেজন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো।

পঞ্চম স্তম্ভ হলো হজ পালন করা। যা আল্লাহ তায়ালা তার বাইতুল্লাহর হাজিদের হজের রীতিনীতি সম্পাদনের তৌফিক দেওয়ার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এতে রয়েছে আখেরাতের স্মরণ। আল্লাহ ও তার আদেশের প্রতি হৃদয়ের মহব্বত সৃষ্টি এবং বিনয় ও সন্তুষ্টির সাথে তা মেনে নেওয়া। হজে রয়েছে জামাতের সাথে একত্রিত হওয়া। কোরবানির পশু মানত ও ফিদিয়ার গোস্ত বিতরণ, সময়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং কল্যাণকর কাজে সঠিকভাবে সে সময়কে কাজে লাগানো ইত্যাদির পাঠ ও শিক্ষা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা আল্লাহর জন্য হজ-উমরা পূর্ণ করো। যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজলভ্য কোরবানি করো। তিনি আরও বলেন, হজের সময় নির্দিষ্ট, সুতরাং যে ব্যক্তি মাসগুলোতে হজের ইচ্ছা করে তার জন্য হজের সময় কোনো অশ্লীল কথা, পাপাচার ও ঝগড়া করা জায়েজ নয়। তোমরা যেকোনো ভালো কাজ করবে, আল্লাহ তা জানেন। এরপর তিনি বলেন, যখন তোমরা আরাফাত থেকে ফিরে আসবে, তখন মাশারুল হারামের কাছে আল্লাহকে স্মরণ করো। আর তাকে স্মরণ করো তেমনিভাবে, তিনি তোমাদেরকে যেরকম নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র বায়তুল্লাহর হাজিগণ হারামাইন শরীফ আইন এবং পবিত্র স্থানসমূহের সার্বিক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে সৌদি আরবের নেতৃত্ব চূড়ান্ত গুরুত্ব ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং নিরাপত্তা সংস্থা ও সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হজ যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত মনোযোগ ও যত্নের সাথে সেবা পেশ করে করছে বলেই হাজিগণ শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বস্তির সাথে তাদের দ্বীনি আচার অনুষ্ঠান পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

একজন মুসলমানের উচিত হজ সম্পর্কিত নিয়মাবলি নির্দেশনা এবং আইনকানুন যথাযথভাবে মেনে চলা। আর এটি হচ্ছে শরীয়তের উদ্দেশ্যসমূহের বাস্তবায়নের অংশ। ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব এবং সভ্য আচরণও বটে। যা সহযোগিতা ও শৃঙ্খলার চেতনাকে প্রতিফলিত করে। হজিদের চলাচল ও স্থানান্তরে স্বাভাবিকতা আনে এবং কষ্ট ও দুর্ভোগ ছাড়াই যাতে তারা হজের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারেন, সে নিশ্চয়তা প্রদান করে।

আল্লাহর পবিত্র ঘরের হাজিগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দেওয়ার পর আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন। অতঃপর জোহর ও আসর একসাথে ও সংক্ষিপ্ত করে আদায় করেন। সূর্যাস্তের পর তিনি মুজদালিফায় রওনা হন সেখানে মাগরিবের তিন রাকাত ও এশার দুই রাকাত একসাথে আদায় করেন, ফজরের সালাতের আগ পর্যন্ত সেখানে তিনি রাত্রি যাপন করেন এবং ভোর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে মাশগুল থাকেন। এরপর মিনায় এসে জামরাতুল আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। অতঃপর তিনি নিজের কোরবানির পশু জবাই করেন এবং মাথা মুণ্ডন করেন। পরে তিনি মহিমান্বিত কাবায় এসে তাওয়াফে ইফাদা অর্থাৎ ফরজ তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। এরপর মিনায় ফিরে এসে তাসরিকের তিন দিন সেখানে অবস্থান করেন এবং প্রতিদিন ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। এই দিনগুলোতে প্রতিদিন ছোট জামরায়, তারপর মধ্যম জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন এবং উভয়ের পর দোয়া করেন। এরপর জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। তিনি ১২ জিলহজ পর্যন্ত হজ শেষ করার অনুমতি দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা যখন তোমাদের হজের পালনীয় কর্তব্যসমূহ সম্পন্ন করবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে, যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে অথবা তার চেয়েও বেশি। কিছু মানুষ আছে যারা বলে—হে আমাদের প্রভু আমাদেরকে যা দেবার দুনিয়াতেই দিয়ে দাও, এরা পরকালে কিছুই পাবে না। মানুষের মধ্যে কেউ কেউ বলে—হে আমাদের রব আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দাও এবং পরকালেও কল্যাণ দান করো এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।

আল্লাহর ঘরের হাজি সাহেবগণ, সম্মানিত বায়তুল্লাহর হাজি সাহেবগণ, আপনাদের এই দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। এদিনে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে অসংখ্য বান্দাকে মুক্তি দেন, তিনি বান্দার নিকটবর্তী হন, ফেরেশতাদের কাছে আরাফার ময়দানে অবস্থানরত পূণ্যার্থীদের নিয়ে গর্ব করেন। কাজেই আপনারা এদিন অধিক পরিমাণে আল্লাহর প্রশংসা স্মরণ করুন এবং তার কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন, কারণ এটি এমন স্থান যেখানে দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমাদের রব বলেছেন—তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। হে আল্লাহ আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের কাজগুলো সহজ করে দিন, আমাদের সন্তানসন্ততিকে সংশোধন করুন, আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করান এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। হে আল্লাহ আমাদের হজ ও এবাদতসমূহ কবুল করুন। আমাদেরকে তৌফিক দিন, যাতে আপনার শুকুর আদায়, আপনাকে স্মরণ এবং উত্তমভাবে আপনার ইবাদত করতে পারি।

হে আল্লাহ পূর্ব-পশ্চিমের সকল মুসলিমের অবস্থা সংশোধন করুন। তাদের অন্তরসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করুন এবং তাদের সকল কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করুন এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি করুন।

হে আল্লাহ আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের সার্বিক বিষয়ের তত্ত্বাবধান করুন। তাদের আহার দান করুন। বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিন। ভীতদের নিরাপত্তা দিন এবং শত্রুদের অনিষ্ট থেকে তাদেরকে রক্ষা করুন।

হে আল্লাহ মুসলিম শাসকদেরকে সকল কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন। তাদেরকে হেদায়েত ও তাকওয়ার মাধ্যম বানিয়ে দিন।

হে আল্লাহ দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ও তার উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তৌফিক দিন। ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য তারা যে খেদমত দিয়ে আসছেন, তার জন্য তাদেরকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। সুবহানা রাব্বিকাল সালাম আলাল মুরসালিন আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

আরাফাত ময়দানে হজের খুতবায় যা বললেন শায়েখ সালেহ বিন আবদুল্লাহ

আপডেট সময় ০৫:৫০:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতায় মক্কার আরাফাত ময়দানের মসজিদ আল-নামিরাহতে আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) হজের খুতবা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে হজের খুতবা পাঠ শুরু করেন শায়েখ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ, যা শেষ হয় ৩টা ৪০ মিনিটে।

হজের খুতবা এবার বাংলাসহ ৩৪টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এটি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

শায়েখ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ প্রদত্ত হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো—

‘আল্লাহর ইবাদত এমন নিষ্ঠার সঙ্গে করবে, যেন তুমি তাকে দেখছো, আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও তবে জানবে আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা বলেন, যারা সৎ কাজ করে তাদের জন্য আছে দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখেরাতের আবাস আরও উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকীদের আবাস কতই না উত্তম।

দ্বীনের দ্বিতীয় স্তর হলো ঈমান। আর তা হলো মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা আমল করা, যা নেক আমল দ্বারা বৃদ্ধি পায় এবং পাপ কাজের দ্বারা সঙ্কুচিত হয়। এর ৭০ এরও বেশি শাখা প্রশাখা রয়েছে। যার সর্বোচ্চ হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা হলো ঈমানের একটি বিশেষ শাখা।

ঈমানের বিষয়গুলোর মধ্যে আরও রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা, সত্য কথা বলা, উত্তম ভাষা ব্যবহার করা, অঙ্গীকার ও চুক্তি পূরণ করা এবং উত্তম চরিত্র অবলম্বন করা।

আল্লাহ সুবহানাহুতালা বলেন, তোমরা আল্লাহর এবাদত করো এবং কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক করো না। আর পিতা-মাতা আত্মীয়স্বজন ইয়াতিম অভাবগ্রস্ত নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই দাম্ভিক ও অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।

আল্লাহ আরও বলেছেন, হে মুমিনগণ তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো। তিনি আরও বলেছেন, আর আমার বান্দাদেরকে বলুন তারা যেন এমন কথা বলে, যা উত্তম নিশ্চয়ই। শয়তান তাদের মধ্যে বিভেধ সৃষ্টির উসকানি দেয়, শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।

আল্লাহ আরও বলেন, ভালো মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা। ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। আর এটি শুধু তারাই প্রাপ্য হবে, যারা ধৈর্যশীল ও এর অধিকারী এবং কেবল তারাই প্রাপ্য হবে যারা পরম সৌভাগ্যের অধিকারী। এ ছাড়া ঈমানের অন্তর্গত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, বিপদ আপদে ধৈর্য ধারণ নেয়ামত লাভের সময় শুকরিয়া আদায় এবং গুনাহ ও অবাধ্যতার পর তওবা ও অনুশোচনা করা। আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা বলেন, ধৈর্যশীলদেরকে কোনো হিসাব ছাড়াই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে।

আল্লাহ আরও বলেন, আর স্মরণ করো যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো তবে আমি অবশ্যই তোমাদের প্রতিদান বাড়িয়ে দেবো। তিনি আরও এরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা চাও এবং অনুশোচনা পরে তার দিকে ফিরে এসো। তাহলে তিনি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে উত্তম জীবন সামগ্রী ভোগ করতে দেবেন আর অনুগ্রহ লাভের যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনি তার অনুগ্রহ দিয়ে ধন্য করবেন।

ঈমানের স্তম্ভ হলো ছয়টি আর সেগুলো হলো আল্লাহর ওপর, তার ফেরেশতাদের ওপর, তার কিতাবের ওপর, তার রাসূলদের ওপর আখেরাত দিবসের ওপর এবং তাকদিরের ভালোমন্দের ওপর ইমান আনা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, বরং সৎকর্ম হলো ওই ব্যক্তির আমল যিনি আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীদের প্রতি ঈমান আনে। আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা আরও এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। আর ঈমানের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করে মুক্তি ও সাফল্য অর্জিত হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আরও ওয়াদা দিয়েছেন স্থায়ী জান্নাত সমূহের উত্তম বাসস্থানের আর আল্লাহর সন্তুষ্টি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহাসাফল্য।

আল্লাহ আরও এরশাদ করেন, যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুম, তথা শিরিক দ্বারা কলুষিত করেনি নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত। আল্লাহ আরও বলেন, নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সাহায্য করব দুনিয়ার জীবনে এবং সেদিন যেদিন সাক্ষীগণ দাঁড়াবে। কাজেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় প্রতিপালক হিসেবে, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে জগতের পরিকল্পনাকারী হিসেবে এবং উত্তম গুণাবলি ও সুন্দর নামের অধিক হিসেবে তার প্রতি ঈমান আনা।

তোমাদের রব সেই আল্লাহ যিনি, আসমান ও জমিন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে উঠেছেন তিনি দিবসকে রাত্রি দিয়ে ঢেকে দেন এবং সেটি দ্রুত বেগে রাতকে অনুসরণ করে আর তিনি সূর্য চন্দ্র ও তারকারাজিকে তাঁর আদেশের অনুগামী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। জেনে রেখো সৃষ্টি ও কর্তৃত্ব সৃষ্টি এবং হুকুম শুধু তারই সৃষ্টি, যার হুকুমও তার জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ চিরমহীয়ান। তোমরা তাঁকে মিনতি ভরে সঙ্গোপনে ডাকো, নিশ্চয়ই তিনি নিশ্চয়ই সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। আর তোমরা সংশোধনের পর পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না এবং ভয় ও প্রত্যাশা নিয়ে তাকে রাখো—নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত নিকটবর্তী। আমরা সম্মানিত ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনি।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর ফেরেশতাগণ তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবিহ পাঠ করে এবং পৃথিবীতে বসবাসকারীদের জন্য ইস্তেগফার করে। আমরা ঈমান আনি, আল্লাহর কিতাবসমূহের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে তাওরাত ও ইঞ্জিল আর আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারীমকে পূর্ববর্তী সকল কিতাবের ওপর ফায়সালাকারী বানিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব সদা বিজমান। তিনি আপনার প্রতি সত্য সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহকে সত্যায়নকারী। আর তিনি ইতোপূর্বে মানুষের হেদায়েতের জন্য তাওরাত ও ইনজিল নাযিল করেছেন এবং তিনি ফুরকান, তথা সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিল করেছেন।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন, আর আমি আপনার নিকট সত্য সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছি, যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী ও তার রক্ষক। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আপনার পূর্বে রাসূলগণকে তাদের কাওমের নিকট প্রেরণ করেছি। তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিলেন। অতঃপর যারা অপরাধ করেছিল, আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি আর মুমিনদেরকে সাহায্য করার দায়িত্ব আমার নিজের ওপর রেখেছি। আমরা শেষ দিবস, অর্থাৎ কেয়ামত দিবস প্রতিদান ও হিসাব নিকাশ দিবসের প্রতি এবং এতে থাকা আল্লাহর বন্ধুদের জন্য জান্নাত ও তার শত্রুদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণের বিষয়ে বিশ্বাস রাখি।

আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য পরকালীন ঘরেই উত্তম, তোমরা কি অনুধাবন করো না? আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ সকল ঘটনা ও দুর্ঘটনার ফায়সালা করেন। সবকিছু তিনি লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং সেগুলোর ইচ্ছা করেন ও তা সৃষ্টি করেন।

আল্লাহ আরও বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তার আদেশ বাস্তবায়ন করবেন, অবশ্যই তিনি প্রতিটি জিনিসের জন্য একটি মাত্রা নির্ধারণ করে রেখেছেন।

নবী (সা.) ইসলামকে ব্যাখ্যা করে বলেন, ইসলাম হলো তুমি সাক্ষ্য দিবে যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। আর তুমি সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমাদানের সিয়াম পালন করবে এবং সক্ষমতা থাকলে বাইতুল্লাহে হজ করবে। আল্লাহ যখন তোমাকে সক্ষম বানাবে তখন তুমি বাইতুল্লাহে হজ করবে। সুতরাং, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। এ বাক্যটি অন্তর্ভুক্ত করে এ কথা বুঝানো হয়েছে, ইবাদত শুধু আল্লাহর হক। এর সামান্য কোনো অংশ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য সম্পাদন করা যাবে না। ব্যয় করা যাবে না, যদিও তিনি হন কোনো ফেরেশতা-নবী-রাসূল-নেককার বান্দা কিংবা অলি-আউলিয়া কারও জন্যই ইবাদত ব্যয় করা যাবে না। একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মানুষেরা তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো, যিনি তোমাদেরকেও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়াবান হবে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, আপনি আল্লাহর সাথে আর কাউকে ডাকবে না, অন্যথায় আপনি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, বলুন হে কিতাবীগণ—তোমরা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একটি অভিন্ন কথায় এসো একটি অভিন্ন কথায় একমত হও যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও এবাদত করব না। তার সাথে কাউকে শরিক করব না এবং আল্লাহর পরিবর্তে কেউ কাউকে প্রভু বানাব না, যদি তারা অসম্মত হয় তাহলে বলুন তোমরা সাক্ষী থাকো আমরা মুসলিম। এর মাঝেই রয়েছে আত্মসম্মান, কেননা বশ্যতা স্বীকার আল্লাহ ছাড়া আর কারও জন্য হবে না।

আল্লাহ আরও বলেন, যদি আল্লাহ আপনাকে কোনো ক্ষতির ছোঁয়া লাগান, তাহলে তিনি ছাড়া তো আর তা দূর করার কেউ নেই। আর যদি তিনি আপনার কল্যাণ চান, তাহলে তার সেই অনুগ্রহ ফিরিয়ে দেয়ার মতো কেউ নেই। তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন, তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। আর মুহাম্মদ (সা.) হলেন আল্লাহর রাসূল, এ সাক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করে তার আদেশ পালনে আনুগত্য করা, তার আনিত সংবাদে তাকে সত্যায়ন করা এবং তার রবের ইবাদতের ক্ষেত্রে তার দেখানো পদ্ধতিতে চলা এসবেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাজেই আল্লাহর ইবাদত করা হবে শুধু সেই পদ্ধতিতে, আল্লাহর ইবাদত শুধু সেই পদ্ধতিই করতে হবে, যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা অনুযায়ী এবাদত করতে হবে।

আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা বলেন, তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতে একজন রাসুল এসেছেন। তোমাদের কষ্টকর বিষয়ে তার জন্য দুঃসহ। তিনি তোমাদের ব্যাপারে আগ্রহী, মুমিনদের প্রতি তিনি স্নেহপরায়ণ রহম দিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত করো আল্লাহ ও রাসুলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান এনে থাকো এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামের শ্রেষ্ঠতম। মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর প্রেরিত রিসালাতের শিক্ষায় রয়েছে—এটি উম্মার মধ্যে বিরোধ দূর করে এবং শরীয় জ্ঞানের উৎসকে একভূত করে। এর মাধ্যমে ইবাদতগুলো একত্রিত হয় এবং সেগুলো পালন পদ্ধতিতে ভিন্নতা দূর হয়। ফলে কিতাব ও সুন্নাতে যা উল্লেখ নেই, এমন পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত করার মতো বিদআত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এভাবে সৃষ্টি জগৎ ঐক্যবদ্ধ হয় এবং হৃদয়সমূহ সম্প্রীতিতে ভরে ওঠে। ইসলামের দ্বিতীয় স্তর হলো সালাত কায়েম করা, যা বান্দা ও তার রবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তার মুক্তির কারণ হয়। তার সময়কে সুশৃঙ্খল করে এবং বান্দাকে তার রবের তত্ত্বাবধান অনুভব করার পথ করে দেয়। এভাবে সে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে প্রশিক্ষিত হয়। সালাতের মধ্যে রয়েছে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা এবং আধ্যাত্মিক ও শারীরিক পরিচ্ছন্নতা আর জামাতে সালাত সমাজের বন্ধন দৃঢ় করে এবং পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা সালাতের হেফাজত করো আর আল্লাহর সামনে বিনয়ের সাথে দাঁড়াও। তিনি আরও বলেন, নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে। আল্লাহ আরও বলেন, অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে ভীত অবনত। তিনি আরও এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াও, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল, হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করো, পায়ের টাকনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করো। আল্লাহ আরও বলেন, আর আপনি সালাত কায়েম করুন, দিনের দুই প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংশে। নিশ্চয় সৎকাজ অসৎ কাজকে মিটিয়ে দেয়, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটি একটি উপদেশ।

ইসলামের আরও একটি স্তম্ভ হলো যাকাত প্রদান করা। মানুষের অর্জিত সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত সময় নির্ধারিত খাতে ব্যয় করা। এতে সমাজের কল্যাণ হয়, অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পায়। এতে রয়েছে মনকে কৃপণতা, লোভ ও স্বার্থপরতা থেকে পবিত্র করার শিক্ষা এবং নিজেকে দানদক্ষিণার প্রশিক্ষণ দেওয়া। এ ছাড়া এটি অভাবিদের প্রয়োজন মেটায়। সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করা এবং সমাজের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সামাজিক সংহতি অর্জনের কার্যকরী উপায় হিসেবে কাজ করে যাকাত।

আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা বলেন, আর তোমরা যাকাত দাও এবং তোমরা উত্তম কাজের যা কিছু নিজেদের জন্য পেশ করবে আল্লাহর কাছে তা পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা দেখছেন। তিনি আরও বলেন, আমার রহমত সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে, অতএব যারা তাক অবলম্বন করে যাকাত প্রদান করে এবং আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে, আমি তাদের জন্য তা লিপিবদ্ধ করে রাখব। তিনি আরও বলেন, আপনি তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।

আল্লাহ সুবহানহু তায়ালা আরও বলেন, শুধু ফকির-মিসকিন কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য তাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয়, যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয়, তাদের জন্য দাস মুক্তিতে ঋণে ভারাক্রান্তদের জন্য আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

চতুর্থ স্তম্ভ রমাদানের মাসে সিয়াম, তথা রোজা পালন করা। এতে রয়েছে ধৈর্য ও কুপ্রবৃত্তির প্রতিরোধে আত্মার প্রশিক্ষণ। অভাবগ্রস্তদের চাহিদা অনুভব করা ও আত্মাকে খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্ত করার শিক্ষা। এতে হৃদয়ের ওপর পার্থিব লোভ-লালসার প্রাধান্য কমে, বিনয় বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ঈমানদারগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। এ রোজা সংখ্যায় কয়েকদিন, তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্যদিন সে তা পূরণ করবে।

আল্লাহতালা আরও বলেন, রমাজান মাসেই কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং হেদায়েতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যা-সত্যের পার্থক্যকারী রূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কষ্ট চান না আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো। তিনি তোমাদেরকে যে হেদায়েত দান করেছেন, সেজন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো।

পঞ্চম স্তম্ভ হলো হজ পালন করা। যা আল্লাহ তায়ালা তার বাইতুল্লাহর হাজিদের হজের রীতিনীতি সম্পাদনের তৌফিক দেওয়ার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এতে রয়েছে আখেরাতের স্মরণ। আল্লাহ ও তার আদেশের প্রতি হৃদয়ের মহব্বত সৃষ্টি এবং বিনয় ও সন্তুষ্টির সাথে তা মেনে নেওয়া। হজে রয়েছে জামাতের সাথে একত্রিত হওয়া। কোরবানির পশু মানত ও ফিদিয়ার গোস্ত বিতরণ, সময়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং কল্যাণকর কাজে সঠিকভাবে সে সময়কে কাজে লাগানো ইত্যাদির পাঠ ও শিক্ষা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা আল্লাহর জন্য হজ-উমরা পূর্ণ করো। যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজলভ্য কোরবানি করো। তিনি আরও বলেন, হজের সময় নির্দিষ্ট, সুতরাং যে ব্যক্তি মাসগুলোতে হজের ইচ্ছা করে তার জন্য হজের সময় কোনো অশ্লীল কথা, পাপাচার ও ঝগড়া করা জায়েজ নয়। তোমরা যেকোনো ভালো কাজ করবে, আল্লাহ তা জানেন। এরপর তিনি বলেন, যখন তোমরা আরাফাত থেকে ফিরে আসবে, তখন মাশারুল হারামের কাছে আল্লাহকে স্মরণ করো। আর তাকে স্মরণ করো তেমনিভাবে, তিনি তোমাদেরকে যেরকম নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র বায়তুল্লাহর হাজিগণ হারামাইন শরীফ আইন এবং পবিত্র স্থানসমূহের সার্বিক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে সৌদি আরবের নেতৃত্ব চূড়ান্ত গুরুত্ব ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং নিরাপত্তা সংস্থা ও সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হজ যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত মনোযোগ ও যত্নের সাথে সেবা পেশ করে করছে বলেই হাজিগণ শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বস্তির সাথে তাদের দ্বীনি আচার অনুষ্ঠান পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

একজন মুসলমানের উচিত হজ সম্পর্কিত নিয়মাবলি নির্দেশনা এবং আইনকানুন যথাযথভাবে মেনে চলা। আর এটি হচ্ছে শরীয়তের উদ্দেশ্যসমূহের বাস্তবায়নের অংশ। ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব এবং সভ্য আচরণও বটে। যা সহযোগিতা ও শৃঙ্খলার চেতনাকে প্রতিফলিত করে। হজিদের চলাচল ও স্থানান্তরে স্বাভাবিকতা আনে এবং কষ্ট ও দুর্ভোগ ছাড়াই যাতে তারা হজের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারেন, সে নিশ্চয়তা প্রদান করে।

আল্লাহর পবিত্র ঘরের হাজিগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দেওয়ার পর আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন। অতঃপর জোহর ও আসর একসাথে ও সংক্ষিপ্ত করে আদায় করেন। সূর্যাস্তের পর তিনি মুজদালিফায় রওনা হন সেখানে মাগরিবের তিন রাকাত ও এশার দুই রাকাত একসাথে আদায় করেন, ফজরের সালাতের আগ পর্যন্ত সেখানে তিনি রাত্রি যাপন করেন এবং ভোর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে মাশগুল থাকেন। এরপর মিনায় এসে জামরাতুল আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। অতঃপর তিনি নিজের কোরবানির পশু জবাই করেন এবং মাথা মুণ্ডন করেন। পরে তিনি মহিমান্বিত কাবায় এসে তাওয়াফে ইফাদা অর্থাৎ ফরজ তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। এরপর মিনায় ফিরে এসে তাসরিকের তিন দিন সেখানে অবস্থান করেন এবং প্রতিদিন ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। এই দিনগুলোতে প্রতিদিন ছোট জামরায়, তারপর মধ্যম জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন এবং উভয়ের পর দোয়া করেন। এরপর জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। তিনি ১২ জিলহজ পর্যন্ত হজ শেষ করার অনুমতি দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা যখন তোমাদের হজের পালনীয় কর্তব্যসমূহ সম্পন্ন করবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে, যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে অথবা তার চেয়েও বেশি। কিছু মানুষ আছে যারা বলে—হে আমাদের প্রভু আমাদেরকে যা দেবার দুনিয়াতেই দিয়ে দাও, এরা পরকালে কিছুই পাবে না। মানুষের মধ্যে কেউ কেউ বলে—হে আমাদের রব আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দাও এবং পরকালেও কল্যাণ দান করো এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।

আল্লাহর ঘরের হাজি সাহেবগণ, সম্মানিত বায়তুল্লাহর হাজি সাহেবগণ, আপনাদের এই দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। এদিনে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে অসংখ্য বান্দাকে মুক্তি দেন, তিনি বান্দার নিকটবর্তী হন, ফেরেশতাদের কাছে আরাফার ময়দানে অবস্থানরত পূণ্যার্থীদের নিয়ে গর্ব করেন। কাজেই আপনারা এদিন অধিক পরিমাণে আল্লাহর প্রশংসা স্মরণ করুন এবং তার কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন, কারণ এটি এমন স্থান যেখানে দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমাদের রব বলেছেন—তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। হে আল্লাহ আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের কাজগুলো সহজ করে দিন, আমাদের সন্তানসন্ততিকে সংশোধন করুন, আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করান এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। হে আল্লাহ আমাদের হজ ও এবাদতসমূহ কবুল করুন। আমাদেরকে তৌফিক দিন, যাতে আপনার শুকুর আদায়, আপনাকে স্মরণ এবং উত্তমভাবে আপনার ইবাদত করতে পারি।

হে আল্লাহ পূর্ব-পশ্চিমের সকল মুসলিমের অবস্থা সংশোধন করুন। তাদের অন্তরসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করুন এবং তাদের সকল কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করুন এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি করুন।

হে আল্লাহ আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের সার্বিক বিষয়ের তত্ত্বাবধান করুন। তাদের আহার দান করুন। বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিন। ভীতদের নিরাপত্তা দিন এবং শত্রুদের অনিষ্ট থেকে তাদেরকে রক্ষা করুন।

হে আল্লাহ মুসলিম শাসকদেরকে সকল কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন। তাদেরকে হেদায়েত ও তাকওয়ার মাধ্যম বানিয়ে দিন।

হে আল্লাহ দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ও তার উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তৌফিক দিন। ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য তারা যে খেদমত দিয়ে আসছেন, তার জন্য তাদেরকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। সুবহানা রাব্বিকাল সালাম আলাল মুরসালিন আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন।