ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হজের পর ‘হাজী’ বা ‘আলহাজ্ব’ লেখা কি শরীয়তসম্মত?

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি হলো হজ । স্বাধীন এবং সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ ফরজ। সামর্থ্যবান অনেক মানুষই জীবনে বহুবার হজ করে থাকেন। অনেকেই আছেন হজ পালন শেষে নিজের নামের আগে হাজী বা আলহাজ্ব শব্দ যুক্ত করেন।

হজ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো, সংকল্প করা। পরিভাষায়- নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট কার্যাবলির মাধ্যমে বাইতুল্লাহ শরিফ জেয়ারত করা অথবা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে বাইতুল্লাহ যাওয়ার সংকল্প করাকে হজ বলা হয়। (কাওয়াঈদুল ফিকহ : ২৫)।

কারও কারও ধারণা, একবার হজ করলে হাজী এবং একাধিকবার হজ করলে আলহাজ্ব বলতে হয়। অনেকে আবার নামের সঙ্গে হাজী বা আলহাজ্ব শব্দ না বললে অসন্তুষ্ট হন।

ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এসবের ব্যাখ্যা কী, চলুন জেনে নেই :

ফতোয়া গবেষক মুফতি আবু সওবান নামের আগে হাজী বা আলহাজ্ব যুক্তের প্রসঙ্গে বলেন, হজ একটি ইবাদত। এটি কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই আদায় করতে হয়। পার্থিব কোনো স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয় না। নাম-যশ-খ্যাতির জন্য বা মানুষের সামনে ভালো সাজার জন্য হজ করা ইসলামসম্মত নয়। মহানবী (সা.) হজের সময় দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, তোমার জন্য হজ করতে শুরু করলাম, যশ-খ্যাতি যেন আমাদের উদ্দেশ্য না হয়।’ (ইবনে মাজাহ)

তিনি বলেন, মূলত উর্দু ও বাংলা ভাষায় হজ আদায়কারীকে হাজী বলা হয়। শব্দটি আরবি হাজ্জ বা আলহাজ্ব থেকে এসেছে। সাধারণত আরবি ভাষায় আলহাজ্ব শব্দই ব্যবহার করা হয়। এর অর্থ হজ আদায়কারী। হাজী অর্থও একই। তাই হাজী বা আলহাজ শব্দের অর্থগত কোনো পার্থক্য নেই। একবার হজ করলে তার জন্য যেমন হাজী বা আলহাজ শব্দ প্রযোজ্য, তেমনি একাধিকবার হজ করলেও দুটোই প্রযোজ্য।

মুফতি আবু সওবান আরও বলেন, তবে হজ করার পর হাজী বা আলহাজ্ব উপাধি গ্রহণ করা এবং তা রীতিমতো প্রচার করে বেড়ানো অহংকার ও রিয়ার অন্তর্ভুক্ত, যা ইবাদতের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা নষ্ট করে দেয়। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে হাজী বা আলহাজ্ব উপাধি গ্রহণ করা উচিত হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার রয়েছে।’ (মুসলিম: ৯১; মিশকাত: ৫১০৮)। এ ছাড়া একাধিক হাদিসে রিয়াকে ছোট শিরক বলা হয়েছে। (বুখারি: ৬৪৯৯; মুসলিম: ২৯৮৬; মিশকাত: ৫৩১৬)

তাই হজ আদায়কারীর নামের সঙ্গে হাজী বা আলহাজ্ব যুক্ত না করলে তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা শরিয়তসম্মত নয়। তবে কেউ যদি শ্রদ্ধা করে আলহাজ্ব বা হাজী সাহেব বলে ডাকেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং তা ইসলামে প্রশংসিত বিষয়। মহানবী (সা.) সাহাবিদের বিভিন্ন ভালো কাজের দিকে সম্বন্ধ করে উপাধি দিতেন। (ফাতহুল বারি, হাদিস: ৩৬৭৯), যুক্ত করেন তিনি। সূত্র-চ্যানেল২৪।

আরো পড়ুন : মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি আঙুলের ছাপ

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

হজের পর ‘হাজী’ বা ‘আলহাজ্ব’ লেখা কি শরীয়তসম্মত?

আপডেট সময় ০৭:৩৮:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি হলো হজ । স্বাধীন এবং সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ ফরজ। সামর্থ্যবান অনেক মানুষই জীবনে বহুবার হজ করে থাকেন। অনেকেই আছেন হজ পালন শেষে নিজের নামের আগে হাজী বা আলহাজ্ব শব্দ যুক্ত করেন।

হজ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো, সংকল্প করা। পরিভাষায়- নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট কার্যাবলির মাধ্যমে বাইতুল্লাহ শরিফ জেয়ারত করা অথবা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে বাইতুল্লাহ যাওয়ার সংকল্প করাকে হজ বলা হয়। (কাওয়াঈদুল ফিকহ : ২৫)।

কারও কারও ধারণা, একবার হজ করলে হাজী এবং একাধিকবার হজ করলে আলহাজ্ব বলতে হয়। অনেকে আবার নামের সঙ্গে হাজী বা আলহাজ্ব শব্দ না বললে অসন্তুষ্ট হন।

ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এসবের ব্যাখ্যা কী, চলুন জেনে নেই :

ফতোয়া গবেষক মুফতি আবু সওবান নামের আগে হাজী বা আলহাজ্ব যুক্তের প্রসঙ্গে বলেন, হজ একটি ইবাদত। এটি কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই আদায় করতে হয়। পার্থিব কোনো স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয় না। নাম-যশ-খ্যাতির জন্য বা মানুষের সামনে ভালো সাজার জন্য হজ করা ইসলামসম্মত নয়। মহানবী (সা.) হজের সময় দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, তোমার জন্য হজ করতে শুরু করলাম, যশ-খ্যাতি যেন আমাদের উদ্দেশ্য না হয়।’ (ইবনে মাজাহ)

তিনি বলেন, মূলত উর্দু ও বাংলা ভাষায় হজ আদায়কারীকে হাজী বলা হয়। শব্দটি আরবি হাজ্জ বা আলহাজ্ব থেকে এসেছে। সাধারণত আরবি ভাষায় আলহাজ্ব শব্দই ব্যবহার করা হয়। এর অর্থ হজ আদায়কারী। হাজী অর্থও একই। তাই হাজী বা আলহাজ শব্দের অর্থগত কোনো পার্থক্য নেই। একবার হজ করলে তার জন্য যেমন হাজী বা আলহাজ শব্দ প্রযোজ্য, তেমনি একাধিকবার হজ করলেও দুটোই প্রযোজ্য।

মুফতি আবু সওবান আরও বলেন, তবে হজ করার পর হাজী বা আলহাজ্ব উপাধি গ্রহণ করা এবং তা রীতিমতো প্রচার করে বেড়ানো অহংকার ও রিয়ার অন্তর্ভুক্ত, যা ইবাদতের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা নষ্ট করে দেয়। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে হাজী বা আলহাজ্ব উপাধি গ্রহণ করা উচিত হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার রয়েছে।’ (মুসলিম: ৯১; মিশকাত: ৫১০৮)। এ ছাড়া একাধিক হাদিসে রিয়াকে ছোট শিরক বলা হয়েছে। (বুখারি: ৬৪৯৯; মুসলিম: ২৯৮৬; মিশকাত: ৫৩১৬)

তাই হজ আদায়কারীর নামের সঙ্গে হাজী বা আলহাজ্ব যুক্ত না করলে তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা শরিয়তসম্মত নয়। তবে কেউ যদি শ্রদ্ধা করে আলহাজ্ব বা হাজী সাহেব বলে ডাকেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং তা ইসলামে প্রশংসিত বিষয়। মহানবী (সা.) সাহাবিদের বিভিন্ন ভালো কাজের দিকে সম্বন্ধ করে উপাধি দিতেন। (ফাতহুল বারি, হাদিস: ৩৬৭৯), যুক্ত করেন তিনি। সূত্র-চ্যানেল২৪।

আরো পড়ুন : মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি আঙুলের ছাপ