করের ভারে জর্জরিত বাংলাদেশের টেলিকম শিল্প। এতে সেবাগ্রহীতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ করহারের কারণে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের আগ্রহ বেশ কম। যা নতুন প্রযুক্তি প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এয়ারটেল, সিংটেল, ওয়ারিদসহ বেশ কিছু বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান।
মোবাইল ফোন সেবায় সমপর্যায়ের বাজার ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর বাংলাদেশে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতের ওপর সম্পূরক শুল্ক ছিল ৩ শতাংশ। এর পর থেকে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ নিয়ে আসে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এমন পরিস্থিতিতে, মোবাইল ফোন সেবার ওপর সম্প্রতি আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টদের অভিমত, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাপী টেলিকম খাতে বাংলাদেশের মতো এমন ট্যাক্স কম আছে। প্রতি বছরই আমাদের ওপর (টেলিকম খাতে) কর বাড়ে। কর বাড়ার কারণে গ্রাহকদের ওপর চাপ বাড়বে। কেননা কর বাড়লে গ্রাহকদের থেকে সেটা আমাদের নিতে হয়।
বর্ধিত কর হারের জন্য বিনিয়োগকারীরা অন্যত্র সরে যাওয়ার আশঙ্কা করে তিনি আরও বলেন, কর বাড়ার কারণে ভুল ইঙ্গিত যাচ্ছে আমাদের বিনিয়োগকারীদের মাঝে। আমাদের যারা মাল্টিন্যাশনাল বিনিয়োগকারী আছে। তারা যদি দেখে একটা দেশে বিনিয়োগ করে লাভ হচ্ছে না। তাহলে তারা তো ভাববে আমি কেনো এখানে বিনিয়োগ করবো। আমার মনে হয় তারা বিনিয়োগ অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে। এটা আমাদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
উচ্চ করহারের কারণে এ খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ হারাবে। যা নতুন প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগের প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন ডিজিটাল সেবা গ্রহীতিরা।
রবির চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদুল আলম বলেন, অনেক দেশে কিন্তু আলাদাভাবে মোবাইলে কোনো ট্যাক্স নেই। কিন্তু আমাদের দেশে মোবাইলে ট্যাক্স আছে। আমরা যেটা দেখছি, অন্যান্য দেশে যখন ট্যাক্স কমানো হয়েছে, ভোক্তাদের পরিসর বেড়েছে এতে সরকারের আয় বেড়েছে তেমনি বিনিয়োগও বেড়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখানে পুরো উল্টো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের ফলে করের বোঝা টানতে হবে গ্রাহককে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের খরচ কিন্তু কম। তার যখন খরচ বেড়ে যাবে। সে তখন তার খরচ কমায় নিয়ে আসবে। যার ফলে সরকার বিশ্বব্যাপী খরচের ব্যাপারে যে আশা করছে। তা সম্পূর্ণ বিফলে যাবে।
উল্লেখ্য, জিএসএমএ ২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের করনীতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, মোবাইল ফোন সেবায় প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় ২২ শতাংশ। বাংলাদেশে যা দ্বিগুণের বেশি।