ঢাকা ১১:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানের কাছে যেভাবে হেরে গেল ইসরায়েল

টানা ১২ দিন বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ইরানে কী অর্জন করলো? যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘লক্ষ্য অর্জন হয়েছে।’ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে তার এ বক্তব্যকে পুরোপুরি বিপরীত মনে হয়।

‘পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস’
নেতানিয়াহুর ঘোষিত প্রধান দুটি লক্ষ্য ছিল: ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস এবং শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরান ফরদো কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেয়। ফলে ‘পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস’ কথাটি শুধু মুখের বুলি হয়েই রইলো।

সরকার পরিবর্তনের বদলে উল্টো একতা
ইসরায়েল আশা করেছিল, সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে ইরানে শাসনবিরোধী আন্দোলন উসকে দেওয়া যাবে। কিন্তু ঘটেছে ঠিক তার বিপরীত। এমনকি যারা ইরান সরকারের কট্টর সমালোচক, তারাও দেশের ওপর হামলা দেখে সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।

‘বিশ্বমঞ্চে নেতিবাচক প্রভাব’
এভিন কারাগারে বোমা হামলা, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরইবিতে হামলা, অথবা তথাকথিত ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লক’ ধ্বংসের চেষ্টা—সবই আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েল এসব হামলাকে ‘গণতন্ত্রের পক্ষে’ আখ্যা দিলেও, এগুলোর বাস্তব প্রভাব হলো—যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ, বন্দিদের অবস্থা আরও খারাপ হওয়া এবং ইরানের প্রতিক্রিয়া আরও কঠোর হওয়া।

গাজা-প্রসঙ্গ ভোলাতে পারেনি
ইসরায়েলের ধারণা ছিল, ইরানকে নিয়ে উত্তেজনা বাড়ালে গাজার বিপর্যয় ও হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু আড়াল করা যাবে। বাস্তবে, আন্তর্জাতিক মনোযোগ গাজা থেকে কিছুটা সরে গেলেও, ইসরায়েলের অতিরিক্ত হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকলেও যুদ্ধের অংশ হয়নি
ইসরায়েল আশা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে। যুক্তরাষ্ট্র কিছু পারমাণবিক স্থাপনায় বাঙ্কার-বিধ্বংসী বোমা বর্ষণ করলেও, তাদের কৌশলগত বোমারু বিমান দ্রুত ফিরে যায়। বরং পরবর্তী সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার শান্তিচুক্তির কথাই বলেছেন।

যুদ্ধ শেষে কে কেমন অবস্থানে?
ইসরায়েলের মূল ভূমিতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অজস্র ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ কার্যকর ছিল না, এবং দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। ইরানের ক্ষতি বড় হলেও—সরকার টিকে আছে, জনগণ অধিকতর ঐক্যবদ্ধ, এবং ইসরায়েলের আক্রমণ বিশ্ববাসীর কাছে আগ্রাসন হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে।

ইসরায়েলের হামলায় ইরান হয়তো আহত হয়েছে, তবে ভেঙে পড়েনি। ইসরায়েল পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস বা ‘শাসন পরিবর্তন’—কোনোটাই অর্জন করতে পারেনি। যুদ্ধ শেষে ইরান দাঁড়িয়ে আছে, তার ভবিষ্যৎ প্রতিশোধ বা কূটনৈতিক সুযোগের জন্য অপেক্ষায়। ইসরায়েলের জন্য এ এক কৌশলগত ব্যর্থতা, এবং ইরানের জন্য এক তাৎক্ষণিক বিজয়।

(আল-জাজিরায় প্রকাশিত ওরি গোল্ডবার্গের মতামত অবলম্বনে)

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি : পেন্টাগন

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ইরানের কাছে যেভাবে হেরে গেল ইসরায়েল

আপডেট সময় ০৫:৪৪:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

টানা ১২ দিন বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ইরানে কী অর্জন করলো? যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘লক্ষ্য অর্জন হয়েছে।’ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে তার এ বক্তব্যকে পুরোপুরি বিপরীত মনে হয়।

‘পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস’
নেতানিয়াহুর ঘোষিত প্রধান দুটি লক্ষ্য ছিল: ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস এবং শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরান ফরদো কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেয়। ফলে ‘পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস’ কথাটি শুধু মুখের বুলি হয়েই রইলো।

সরকার পরিবর্তনের বদলে উল্টো একতা
ইসরায়েল আশা করেছিল, সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে ইরানে শাসনবিরোধী আন্দোলন উসকে দেওয়া যাবে। কিন্তু ঘটেছে ঠিক তার বিপরীত। এমনকি যারা ইরান সরকারের কট্টর সমালোচক, তারাও দেশের ওপর হামলা দেখে সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।

‘বিশ্বমঞ্চে নেতিবাচক প্রভাব’
এভিন কারাগারে বোমা হামলা, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরইবিতে হামলা, অথবা তথাকথিত ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লক’ ধ্বংসের চেষ্টা—সবই আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েল এসব হামলাকে ‘গণতন্ত্রের পক্ষে’ আখ্যা দিলেও, এগুলোর বাস্তব প্রভাব হলো—যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ, বন্দিদের অবস্থা আরও খারাপ হওয়া এবং ইরানের প্রতিক্রিয়া আরও কঠোর হওয়া।

গাজা-প্রসঙ্গ ভোলাতে পারেনি
ইসরায়েলের ধারণা ছিল, ইরানকে নিয়ে উত্তেজনা বাড়ালে গাজার বিপর্যয় ও হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু আড়াল করা যাবে। বাস্তবে, আন্তর্জাতিক মনোযোগ গাজা থেকে কিছুটা সরে গেলেও, ইসরায়েলের অতিরিক্ত হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকলেও যুদ্ধের অংশ হয়নি
ইসরায়েল আশা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে। যুক্তরাষ্ট্র কিছু পারমাণবিক স্থাপনায় বাঙ্কার-বিধ্বংসী বোমা বর্ষণ করলেও, তাদের কৌশলগত বোমারু বিমান দ্রুত ফিরে যায়। বরং পরবর্তী সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার শান্তিচুক্তির কথাই বলেছেন।

যুদ্ধ শেষে কে কেমন অবস্থানে?
ইসরায়েলের মূল ভূমিতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অজস্র ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ কার্যকর ছিল না, এবং দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। ইরানের ক্ষতি বড় হলেও—সরকার টিকে আছে, জনগণ অধিকতর ঐক্যবদ্ধ, এবং ইসরায়েলের আক্রমণ বিশ্ববাসীর কাছে আগ্রাসন হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে।

ইসরায়েলের হামলায় ইরান হয়তো আহত হয়েছে, তবে ভেঙে পড়েনি। ইসরায়েল পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস বা ‘শাসন পরিবর্তন’—কোনোটাই অর্জন করতে পারেনি। যুদ্ধ শেষে ইরান দাঁড়িয়ে আছে, তার ভবিষ্যৎ প্রতিশোধ বা কূটনৈতিক সুযোগের জন্য অপেক্ষায়। ইসরায়েলের জন্য এ এক কৌশলগত ব্যর্থতা, এবং ইরানের জন্য এক তাৎক্ষণিক বিজয়।

(আল-জাজিরায় প্রকাশিত ওরি গোল্ডবার্গের মতামত অবলম্বনে)

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি : পেন্টাগন