গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে আজ শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। এজন্য সহায়তার ত্রাণ সরবরাহে ইসরায়েলের ‘পরিকল্পিত বাধাকে’ দায়ী করেছে সংস্থাটি। ইহুদি অধ্যুষিত রাষ্ট্রটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজার বৃহত্তম শহরটি ধ্বংসের হুমকি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই এ ঘোষণা এলো। খবর এএফপির।
ইসরায়েল ক্ষোভ প্রকাশ করে এ দুর্ভিক্ষের দায় অস্বীকার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কায়েমী স্বার্থান্বেষী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে হামাসের মিথ্যাচারের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
রোম-ভিত্তিক আইপিসির বিশেষজ্ঞরা দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে বলেন, গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখ মানুষকে এটি প্রভাবিত করেছে, যা গাজা সিটিসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির প্রায় এক পঞ্চমাংশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েল চলতি সপ্তাহে গাজা সিটি দখলের জন্য নতুন করে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করেছে, কারণ তারা বলেছে, এটি হামাসকে পরাজিত করতে সাহায্য করবে।
আইপিসি ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দুর্ভিক্ষ দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে ছড়াবে, যা গাজার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশে পৌঁছাবে।
জাতিসংঘের সংস্থা ও সাহায্য গোষ্ঠীগুলো কয়েক মাস ধরে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করে আসছিল। অবরুদ্ধ গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে প্রায় দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল কঠোরভাবে ত্রাণ সরবরাহ সীমিত করেছে এবং কখনও কখনও তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ মাস ধরে চলমান বিরতিহীন সংঘাতে গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ৬ লাখ ১৪ হাজার মানুষ এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডের বেসামরিক বিষয়গুলো তদারকি করা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা সিওজিএটি প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটির পূর্ববর্তী সংস্করণগুলো ‘ভুল প্রমাণিত’ হয়েছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ভিক্ষ আমাদের সবাই তাড়া করবে। এটি এমন একটি দুর্ভিক্ষ, যা আমরা প্রতিরোধ করতে পারতাম যদি আমাদের অনুমতি দেওয়া হতো। তবুও ইসরায়েলের পদ্ধতিগত বাধার কারণে সীমান্তে খাদ্য আটকা পড়ে আছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেন, ‘অনাহারকে যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যুদ্ধাপরাধ’ এবং এটি ‘ইচ্ছাকৃত হত্যার মতো যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে’।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা এই পরিস্থিতিকে দায়মুক্তি দিয়ে চলতে দিতে পারি না।’