ফাইল ছবি
দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও কালোটাকা উদ্ধারে শিগগিরই যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এরই মধ্যে অভিযান পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মন্ত্রণালয় ও জেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানের ছক করা হচ্ছে।
গত ৫ই অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগপন্থি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাভোগী আমলা ও ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
দেশ ছাড়ার সুযোগ নিয়েছেন অনেকেই। অনেকে পারেননি। এছাড়া জীবন রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া কিছুসংখ্যক আছেন সরকারি হেফাজতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১-১১ এর সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়।
তখন আতঙ্কে দুর্নীতিবাজদের অনেকেই রাস্তায় গাড়ি ও টাকার ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার নজির আছে।
এর আগে ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা দেশে অভিযানে নেমেছিল যৌথবাহিনী।
তখন ভয়ে অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আবার অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু এবার এখনো সে ধরনের কোনো অভিযান দেখা যাচ্ছে না।
খুব দ্রুত সন্ত্রাস দমন ও দুর্নীতিবাজদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালালে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে। তবে বিলম্বিত অভিযান, দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের রক্ষার সুযোগ করে দিতে পারে।
তবে পলাতকদের ধরতেই অভিযানের ছক চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে পত্রিকাটি এই খবরে প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি ও বল প্রয়োগ এবং সরকার পতনের পর সহিংসতায় কতজনের প্রাণ গেছে, কতজন আহত হয়েছেন, পঙ্গু বা চোখের আলো হারিয়েছেন এসব নিয়ে এখনো রয়েছে ধোঁয়াশা।
কারো কাছে নেই নিহত আহতের সঠিক পরিসংখ্যান তবে হতাহত ব্যক্তির পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এজন্য ১৩ সদস্য একটি কমিটি করা হয়েছে।
জাতিসংঘ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, গত ১৬ই জুলাই থেকে ১১ই অগাস্ট পর্যন্ত অন্তত ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে তবে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন ছাত্র আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আন্দোলন ঘিরে হতাহতের তথ্য সংগ্রহে ছাত্রদের উদ্যোগে তৈরি করা শহীদ ইনফো নামের ওয়েবসাইট শনিবার পর্যন্ত ৪৯০ জন নিহতের নাম পরিচয় জানা গিয়েছে। আহত অন্তত ৩৩ হাজার। সমকাল অন্তত ৬২২ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হতে পেরেছে।
আন্দোলনে নিহত অনেকের লাশ হাসপাতালে নেয়া হয়নি আবার অনেকে হৃদরোগ বা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে নথিভুক্ত হয়েছে। কারোর লাশ দাফন করা হয় বেওয়ারিশ হিসেবে।
প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ টি নাম পরিচয়হীন লাশ দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম তবে ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় ৮৩ টি লাশ দাফন করে এই সংগঠন। যাদের শেষ ঠিকানা হয়েছে রায়েরবাজার ও জুরাইন কবরস্থানে।
এদিকে আন্দোলনে গিয়ে অনেকে এখনো ঘরে ফেরেনি। তাদের খোঁজে হাসপাতালে ঘুরছেন স্বজনরা আবার মেডিকেল কলেজের মর্গের কিছু লাশ পড়ে আছে এসব লাশের কোন দাবিদার পাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং পরবর্তীকালে সরকার পতনের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এখনো যারা হাসপাতালে আছেন, তাদের জন্য বিশেষ ইউনিট তৈরি করে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি সভায় এই বিশেষ ইউনিট করার সিদ্ধান্ত হয়।
যদিও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই। তাদের পরিবারগুলো বলছে, অনেক ক্ষেত্রে বিনা মূল্যের ওষুধের বন্দোবস্ত হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ব্যয় হচ্ছে। একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনেকেই গুরুতর আহত। তাদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দরকার।
সংঘাত-সহিংসতায় কত মানুষ আহত হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তাদের মধ্যে অনেকের পা কাটা গেছে, হাত কাটা গেছে,শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর ক্ষত আছে। অনেকের চোখে আছে ছররা গুলির আঘাত।
চিকিৎসকরা বলছেন, আহত ব্যক্তিদের অনেকের দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা প্রয়োজন হবে। একেক পর্যায়ে একাধিক অস্ত্রোপচার লাগবে। হাসপাতালে থাকা পর্যন্ত রোগীরা সেবা পাবেন।
এরপর কী হবে, সেটা চিকিৎসকেরা জানেন না। যদিও এসব রোগীর জীবনভর কিছু না কিছু জটিলতা থাকবে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গত ৫ই অগাস্ট শেখ হাসিনার ১৫ বছরের সরকারের পতনের পরে সচিবালয়ের পরিস্থিতি যে শব্দটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় সেটি হল, ‘বিশৃঙ্খল’।
যারা রাজনৈতিক কারণে বা খারাপ ট্র্যাক রেকর্ডের জন্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যাদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু তাদের পছন্দের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি এবং যারা ভালো অবস্থানে আছেন কিন্তু খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য বড় পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা সবাই ক্ষুব্ধ।
গত সপ্তাহ জুড়ে প্রতি ঘণ্টায় মিছিল হয়েছে। কিন্তু সবার দাবি ব্যক্তিগত সুবিধা বাড়ানো। এর বাইরে পাবলিক সার্ভিস উন্নত করার কথা নেই।
তাদের মতে, “এই প্রশাসন পচে গিয়েছে। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবের কারণে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা – সচিবরা – তাদের কাজ এবং নেতৃত্বে সততার উদাহরণ স্থাপন করতে সক্ষম হননি”।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, বিগত শাসনামলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা পদোন্নতি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শুধু সময় ব্যয় করেছেন।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে কোনো প্রশাসনিক সংস্কার করা হয়নি এবং যারা সংস্কারের জন্য চাপ দিতে চেয়েছিলেন তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি।
পরিস্থিতি এতটাই বিশৃঙ্খল যে সচিবালয়ে স্থাপিত মন্ত্রণালয়গুলো ৫ই অগাস্ট থেকে তাদের স্বাভাবিক কাজ করতে পারছে না।
তবে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন উপদেষ্টা বা সচিব রয়েছে সেগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।
সূত্র:বিবিসি বাংলা