মোংলায় বিএনপির নেতা ছত্রছায়ায় আওয়ামীলীগ এক নেতার জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে চায় মোংলার কাচাঁ বাজার ব্যাবসায়ীরা। এসকল নেতাদের ক্ষমতায় সমিতির লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত, প্রতারণা করে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে গোপনে ভূয়া কমিটি তৈরিসহ তাদের অপরাধ মুলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে মোংলা ৫ শতাধিক ব্যবসাযীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের কাচাঁ বাজার সড়কে তাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এ কর্মসুচি পালন করা হয়।
ব্যবসায়ীদের দাবী, গত ১৬টি বছর আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে আ’লীগ নেতা শাহ-আলম ওরফে (আলু আলম) কাচাঁ বাজার সমিতির সভাপতি হয়ে সদস্যদের গচ্ছিত লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে। হিসাব বা সমিতির নির্বাচনের কথা বললেই তাদের উপর চালাতো অত্যাচার-নির্যাতন ও মামলা হামলা। এখন আবার নতুন করে যোগ হয়েছে আরেক বিএনপির নেতা নুরুজ্জমান কালু। তাদের জিম্মিদশা থেকে এ সকল ব্যাবসায়ীরা মুৃক্তি চায়, যার ফলে আন্দোলনে নেমেছে তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত আ’লীগ সরকারের আমলে মোঃ শাহ-আলম তালুকদার ওরফে (আলু আলম) নিজেকে আ’লীগ নেতা ও সভাপতি দাবীতে মোংলা বৃহত্তম কাচাঁ বাজার সমবায় সমিতি ও ব্যাবসায়ীদের জিম্মি করে রাজত্ব চালিয়েছিল। সে সময় থেকেই সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে শেয়ার ও সঞ্চয়ের নামের দৈনিক টাকা উত্তোলন করে তা নিজ পকেটেই রাখতো। দীর্ঘ ১৬টি বছর সদস্যদের কোন হিসাব না দিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ করে ব্যবসায়ীরা।
কাচাঁ বাজার সমিতির সভাপতি আলম নিজে আড়ৎ তৈরী করে তার নিজস্ব আড়ৎ থেকে মালামাল ক্রয় করতে বাধ্য করতো বলে অভিযোগ তাদের। এছাড়া বাজার এলাকায় নিজে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে গ্রামাঞ্চল থেকে ক্ষদ্র ব্যাবসাযীরা মানুষের নিত্য পন্য সবজী বা কাচাঁমাল বিক্রি করতে আসেল তাদের কাছ থেকে নেয়া হতো মোটা অংকের চাদাঁ। যারা দিতো না তাদের সবজী ও অন্যান্য মালামাল তার আড়তে অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য করতো আলম। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে নিত্যদিনের পন্যগুলো চরা দামে বিক্রি কতরতো বলেও বহু অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। আ’লীগ সরকার পতনের পর সদস্যরা হিসাব চাইতে গেলে তাল-বাহানা করতে থাকে সভাপতি শাহ-আলম।
পরবর্তীতে গত ৫ আগষ্টের পর সভাপতি আলমের কাছে সাধারন সদস্যরা হিসাব চাইতে গেলে হয়রানির স্বীকার হয় ব্যবসায়ীরা। পরে পৌর শহরের ৫ ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান কালু পুর্বের কমিটির নেতাদের কাছ থেকে টাকার হিসাব নিয়ে দেয়ার কথা বলে সকল সদস্যদের কাছ থেকে গোপনে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়। সাধারণ সদস্যদের না জানিয়ে সেই স্বাক্ষর দিয়ে উপজেলা সমবায় অফিসারের সহায়তা প্রতারনার মাধ্যমে কৌশলে কালু সভাপতি ও আ’লীগ নেতা শাহ আলমকে সাঃ সম্পাদক করে গোপনে একটি কমিটি গঠন করে। এর পর পরই নিজেদের সভাপতি ও সম্পাদক দাবী করে সমিতি ও বাজারের সকল ব্যবসায়ীদের দোকান নিজেদের দখলে নেয়। বিষয়টি জানা-জানি হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। পরে সমিতির সদস্যদের ১৭ বছরের সেয়ার-সঞ্চয়ের হিসাব, ভূয়া প্রতারনার মাধ্যমে কমিটি তৈরীর প্রতিবাদের বিক্ষোভে ফেটে পরে। সকালে ব্যবসাযীরা সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করে তারা। সদস্যদের দাবী, সমিতির পুর্ন হিসাব, স্বাক্ষর জাল করে গোপনে কমিটি বাতিল, প্রতারক নেতাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি ও দ্রুত সমিতির নির্বাচনের জন্য এ কর্মসুচি পালন করেণ তারা।
এ ব্যাপারে নুরুজ্জামান কালু বলেন, শাারীরিক অসুস্থতার জন্য খুলনায় অবস্থান করায় এব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে সাবেক সভাপতি মোঃ শাহ-আলম তালুকদার বলেন, আমি এক সময় বিএনপি ছিলাম, আওয়ামী লীগ নেতা টাইগার জলিল ও অন্যান্য নেতাদের হুমকিতে আওয়ামী লীগ করতে বাধ্য হয়েছি, তবে আমি কিন্তু এখন বিএনপি। আর আমার বিরুদ্ধে য়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা মিথ্যা। সমিতির টাকা আমার কাছে রয়েছে এবং হিসাব চাইলে দিয়ে দিবো। এছাড়া সদস্যদের কাছ থেকে স্বাক্ষর, গত ৮ মাসের সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের টাকা বর্তমান কমিটির সভাপতির কাছে রয়েছে। আর বর্তমানে যে কমিটি করা হয়েছে, সে ব্যপারে নুরুজ্জামান কালু সবই জানে। তার ইশারায় এবং সমবায় অফিসারের নির্দেশে গোপনে কমিটি করা হয়েছে এ বিষয় আমি কিছুই জানি না।
মোংলা কাচাঁ বাজারটি জিম্মি মুক্ত ও সাধার মানুষের কাছে সল্প মুলে নিত্যদিনের পন্য পৌছে দেয়ার জন্য প্রশাসনের সহায়তার দাবী ব্যবসাযীদের।