ঢাকা ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃত্যু ৩০৭, নিখোঁজ অগণিত পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকা থেকে নিখোঁজের ৪ দিন পর যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির বিষয় এড়িয়ে শান্তি চুক্তিতে জোর ট্রাম্পের রোগীদের নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হয় : আইন উপদেষ্টা বৈঠকে কোনো চুক্তি হয়নি, তবে অগ্রগতি হয়েছে; ট্রাম্প আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশকারীরা গণতন্ত্রের শত্রু : সালাহউদ্দিন আহমেদ ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই : ড. বদিউল আলম মোংলায় মাদকের খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতা কারা? সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে পুরোনো সমস্যা ফিরবে : সিএনএ টিভিকে অধ্যাপক ইউনূস রাজশাহীর পবায় একই পরিবারের ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার

ঘোড়ার শোকে মারা গেলেন সেই মনু মিয়া

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, তিন হাজার মানুষের শেষ বিদায়ের নিঃস্বার্থ সঙ্গী, ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ সেই মো. মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টায় নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

মনু মিয়ার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর তিনি ব্যয় করেছেন কবর খননের মহান কাজে, বিনিময়ে কখনো কিছু চাননি। আশপাশের গ্রাম ও জেলাজুড়েও পরিচিত ছিলেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে।

প্রায় ৪৯ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে তিনি কবর খুঁড়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষের। একটি ঘোড়ার পিঠে চড়ে তিনি ছুটে যেতেন মৃতের বাড়িতে, এই কাজের জন্যই তিনি একসময় দোকান বিক্রি করে কিনেছিলেন প্রিয় ঘোড়াটি।

ঢাকার আইনজীবী এবং এলাকার সন্তান অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা জানান, কিছুদিন আগে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মনু মিয়া। সেই সময় দুর্বৃত্তরা তার বহু বছরের সঙ্গী প্রিয় ঘোড়াটিকে হত্যা করে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।

রোকন রেজা বলেন, আমি হাসপাতালে তাকে দেখতে গেলে বলেছিলাম অনেকে আপনাকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চায়। তখন তিনি বলেছিলেন, আমি এই কাজ করি শুধু আল্লাহকে খুশি করতে। মানুষের কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না।

ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর বলেন, ঘোড়ার মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে এলেও আর আগের মতো হয়ে ওঠেননি। তার মৃত্যুতে আমরা একজন দয়ার সাগর, নিঃস্বার্থ মানুষকে হারালাম। এমন মানুষের অভাব কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

স্থানীয়রা জানান, মনু মিয়া শুধু একজন কবর খননকারী নন, তিনি ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। মৃত্যুর পরও বহু মানুষের দোয়া ও শ্রদ্ধায় বেঁচে থাকবেন তিনি।

 

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জনপ্রিয় সংবাদ

মোংলায় কোস্টগার্ডের অভিযানে ২৫০ কেজি কাঁকড়া জব্দ

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ঘোড়ার শোকে মারা গেলেন সেই মনু মিয়া

আপডেট সময় ১২:০৯:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, তিন হাজার মানুষের শেষ বিদায়ের নিঃস্বার্থ সঙ্গী, ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ সেই মো. মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টায় নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

মনু মিয়ার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর তিনি ব্যয় করেছেন কবর খননের মহান কাজে, বিনিময়ে কখনো কিছু চাননি। আশপাশের গ্রাম ও জেলাজুড়েও পরিচিত ছিলেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে।

প্রায় ৪৯ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে তিনি কবর খুঁড়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষের। একটি ঘোড়ার পিঠে চড়ে তিনি ছুটে যেতেন মৃতের বাড়িতে, এই কাজের জন্যই তিনি একসময় দোকান বিক্রি করে কিনেছিলেন প্রিয় ঘোড়াটি।

ঢাকার আইনজীবী এবং এলাকার সন্তান অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা জানান, কিছুদিন আগে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মনু মিয়া। সেই সময় দুর্বৃত্তরা তার বহু বছরের সঙ্গী প্রিয় ঘোড়াটিকে হত্যা করে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।

রোকন রেজা বলেন, আমি হাসপাতালে তাকে দেখতে গেলে বলেছিলাম অনেকে আপনাকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চায়। তখন তিনি বলেছিলেন, আমি এই কাজ করি শুধু আল্লাহকে খুশি করতে। মানুষের কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না।

ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর বলেন, ঘোড়ার মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে এলেও আর আগের মতো হয়ে ওঠেননি। তার মৃত্যুতে আমরা একজন দয়ার সাগর, নিঃস্বার্থ মানুষকে হারালাম। এমন মানুষের অভাব কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

স্থানীয়রা জানান, মনু মিয়া শুধু একজন কবর খননকারী নন, তিনি ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। মৃত্যুর পরও বহু মানুষের দোয়া ও শ্রদ্ধায় বেঁচে থাকবেন তিনি।