কিশোরগঞ্জে রেলওয়ের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টারের ওপর হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা। হামলায় রেলওয়ে থানা পুলিশের এক সদস্যের মোবাইল ফোন ভাঙচুরসহ স্টেশন মাস্টার এবং তার স্ত্রীর টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্টেশন মাস্টারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টা ১০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে এক ঘণ্টা আটকে থাকে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, শনিবার সকাল ১১টার দিকে স্টেশনে প্রবেশ করে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর এগারসিন্দুর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেন। এ ট্রেনে চরে ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ আসেন কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার খলিলুর রহমানের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা উম্মুল সায়েকা দিতি। ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করলে স্ত্রীকে ট্রেনের কামরা থেকে নামাতে যান কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার খলিলুর রহমান।
এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ যুবক তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা খলিলুর রহমানকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। ছিনিয়ে নেন মানিব্যাগ ও স্ত্রীর গলার সোনার চেইন।স্ত্রীর চিৎকারে পুলিশ ও আশপাশের লোকজন ছুটে গেলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় খলিলুর রহমানকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত স্টেশন মাস্টার জানান, তার স্ত্রী ভৈরব থেকে ট্রেনে করে কিশোরগঞ্জ ফেরার সময় ট্রেনের কেবিনে এক নারী যাত্রীর সাথে টিকিট কাটা নিয়ে বাক-বিতন্ডা হয়। কিশোরগঞ্জ স্টেশন এলাকার বাসিন্দা ওই নারী যাত্রী মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার স্বজনদের জানান। ট্রেন কিশোরগঞ্জ স্টেশন পৌঁছার পর স্ত্রীকে কামরা থেকে নামানোর সময় তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
স্টেশন মাস্টারের স্ত্রী বাজিতপুর উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষ উম্মুল সায়েকা দিতি। তিনি বলেন, ট্রেনের ভেতরে টুসি নামে মহিলা যাত্রী তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। একপর্যায়ে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। মোবাইল ফোনে তার ভাইকে স্টেশনে আসতে বলেন। আমি ট্রেন থেকে নামার সময় আমাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় তারা।
এ দিকে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার আহত হওয়ায় ক্লিয়ারেন্স না পেয়ে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে আটকা পড়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর গোধূলী এক্সপ্রেস ট্রেন। পরে বদলী স্টেশন মাস্টার আসলে একঘণ্টা পর ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি বাড়িতে ছিলেন। কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার হামলায় আহত হলে লাইন ক্লিয়ারেন্স দিতে না পারায় এগারসিন্দুর ট্রেন স্টেশনে আটকা পড়ে। আমাকে জরুরি ফোন করে আনা হয়। ক্লিয়ারেন্স দেয়ার পর নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।’
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লিটন মিয়া জানান, হামলায় সময় দুজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা একজন পুলিশ সদস্যের মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।