দেশের পশ্চিম ও পূর্ব-উত্তর অংশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে সরকার বনপাড়া-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের ৯৯.৪২ কিলোমিটার অংশকে চার লেনের মহাসড়কে রূপান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়বে, বাণিজ্য বাড়বে ও আন্তঃসংযোগ উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পে মহাসড়কের উভয় পাশে ভারি যানবাহনের জন্য আলাদা সার্ভিস লেন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা যানজট ও দুর্ঘটনা কমানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন সহজ করবে ও যাতায়াতের সুবিধা বাড়াবে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ‘হাটিকুমরুল-বনপাড়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প: বনপাড়া-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ অংশ (পর্ব ১)’ প্রস্তাবনা কমিশনে জমা দিয়েছে।
গত ১৫ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) এ প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে। এ সভায় পরিকল্পনা কমিশনের শারীরিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও প্রস্তাবিত সড়ক নির্মাণ ব্যয়ের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়।
চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা এ প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শুরু করার পরিকল্পনা করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (আরএইচডি)। এর মোট ব্যয় ৯ হাজার ৮৯৯.৫৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকার দেবে ৩ লাখ ৪৭৩.৪২ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণ আসবে ৬ হাজার ৪০৮.৫ কোটি টাকা ও অনুদান থেকে আসবে ১৭.৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
প্রস্তাবনা অনুসারে, এ মহাসড়কটি দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে এবং বেনাপোল স্থলবন্দর, ভোমরা স্থলবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দর, সুন্দরবন ও দর্শনা আইসিডির মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করবে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়বে ও সারা দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে।
আরএইচডির এক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, বর্তমান দুই লেনের সড়কটি প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার ৪০৭টি যানবাহন বহন করে, যা ভবিষ্যতে যানচলাচলের চাহিদা পূরণে অক্ষম। এ কারণে চার লেনের সড়কের সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা সড়ক থেকে ২০-৩০ মিটার দূরে অবস্থিত। ’
প্রকল্পে আইটি ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য ৬৯.৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শ অনুসারে, প্রকল্পের খরচ নির্ধারণে আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হবে, বিশেষ করে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনায়। জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও অন্যান্য ব্যয়ের সঠিক হিসাবের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের প্রধান স্থল ও সমুদ্রবন্দরগুলোর সঙ্গে সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে, যা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতি আনবে।