ঢাকা ০৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জন

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসে ছয়টি সংস্কার কমিটির কাজ শুরুসহ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে ধীরগতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পোশাক শিল্পের শ্রমিক বিক্ষোভ, প্রশাসন ও চাকরি ক্ষেত্রে অস্থিতিরতা ব্যতিব্যস্ত রাখছে প্রতিনিয়ত। জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার যোগদান ও ভাষণ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানকে প্রশংসিত করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। তারপর তিন দিন ছিল না কোনো সরকার, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াই চলেছিল দেশ। এমন ক্রান্তিকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনুরোধ আর রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে তিন দিনের মাথায় দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসেই সরকারের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। আলোচনা-সমালোচনাও হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রশংসিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে অন্তর্বর্তী সরকার অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছাতে সক্ষম হলেও অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

সরকার গঠনের ৯ সপ্তাহ পরও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি। পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফেরাতে সময় লাগায় আইনশৃঙ্খলা পরস্থিতির উন্নতিও চলছে ধীরগতিতে। ফলে শুরুর দিকে কোথাও কোথাও দেখা যায়—লুটপাট, দখল, মন্দির-মাজারে হামলা, বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিসের নামে গণপিটুনিতে মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

মানুষ মরেছে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক বিক্ষোভেও। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতায় প্রাণ ঝরেছে পাহাড়ি-বাঙালির। কর্মক্ষেত্র বঞ্চিতদের দাবি আদায়ে বিক্ষোভ চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই। পতিত আওয়ামী লীগ সকারের আমলের নানা অসঙ্গতির পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে খানিকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সরকার।

সবচে সমালোচনা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে নিত্যপণ্যে দাম না কমে কেনইবা বেড়েই চলেছে? তাহলে কি চাঁদাবাজি বন্ধ করতে আর বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না সরকার? যদিও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার মনিটরিংয়ের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশা, সরকারের নানা পদক্ষেপে দ্রুতই দাম কমতে শুরুর করবে, লাঘব হবে মানুষের কষ্ট।

শপথ নেওয়ার একমাস পর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করে সরকার। পুরোদমে কাজ শুরু করেছে সংস্কার কমিশনগুলো। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিন দফা সংলাপ করেছেন ড. ইউনূস। মৌলিক সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি যেমন উঠে এসেছে, পাশাপাশি তাড়াহুড়ো না করে সরকারকে সময় দেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করে কোনো কোনো দল।

সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের অবসানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারকে মূল্যায়নের জন্য দুই মাস যথেষ্ট সময় নয়। যদিও ইতোমধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর ও বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রচারণাও মোকাবিলা করে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করছে সরকার। এখন সমতা ও ন্যায়বিচাররের ভিত্তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং পর্যায়ক্রমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে আসার পথ সুগম করাই হবে সরকারের সামনে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।

আরো পড়ুন : ‘রিসেট বাটন’ এর ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

দুই মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জন

আপডেট সময় ১০:৫৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসে ছয়টি সংস্কার কমিটির কাজ শুরুসহ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে ধীরগতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পোশাক শিল্পের শ্রমিক বিক্ষোভ, প্রশাসন ও চাকরি ক্ষেত্রে অস্থিতিরতা ব্যতিব্যস্ত রাখছে প্রতিনিয়ত। জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার যোগদান ও ভাষণ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানকে প্রশংসিত করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। তারপর তিন দিন ছিল না কোনো সরকার, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াই চলেছিল দেশ। এমন ক্রান্তিকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনুরোধ আর রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে তিন দিনের মাথায় দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসেই সরকারের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। আলোচনা-সমালোচনাও হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রশংসিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে অন্তর্বর্তী সরকার অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছাতে সক্ষম হলেও অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

সরকার গঠনের ৯ সপ্তাহ পরও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি। পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফেরাতে সময় লাগায় আইনশৃঙ্খলা পরস্থিতির উন্নতিও চলছে ধীরগতিতে। ফলে শুরুর দিকে কোথাও কোথাও দেখা যায়—লুটপাট, দখল, মন্দির-মাজারে হামলা, বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিসের নামে গণপিটুনিতে মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

মানুষ মরেছে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক বিক্ষোভেও। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতায় প্রাণ ঝরেছে পাহাড়ি-বাঙালির। কর্মক্ষেত্র বঞ্চিতদের দাবি আদায়ে বিক্ষোভ চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই। পতিত আওয়ামী লীগ সকারের আমলের নানা অসঙ্গতির পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে খানিকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সরকার।

সবচে সমালোচনা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে নিত্যপণ্যে দাম না কমে কেনইবা বেড়েই চলেছে? তাহলে কি চাঁদাবাজি বন্ধ করতে আর বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না সরকার? যদিও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার মনিটরিংয়ের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশা, সরকারের নানা পদক্ষেপে দ্রুতই দাম কমতে শুরুর করবে, লাঘব হবে মানুষের কষ্ট।

শপথ নেওয়ার একমাস পর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করে সরকার। পুরোদমে কাজ শুরু করেছে সংস্কার কমিশনগুলো। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিন দফা সংলাপ করেছেন ড. ইউনূস। মৌলিক সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি যেমন উঠে এসেছে, পাশাপাশি তাড়াহুড়ো না করে সরকারকে সময় দেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করে কোনো কোনো দল।

সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের অবসানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারকে মূল্যায়নের জন্য দুই মাস যথেষ্ট সময় নয়। যদিও ইতোমধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর ও বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রচারণাও মোকাবিলা করে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করছে সরকার। এখন সমতা ও ন্যায়বিচাররের ভিত্তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং পর্যায়ক্রমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে আসার পথ সুগম করাই হবে সরকারের সামনে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।

আরো পড়ুন : ‘রিসেট বাটন’ এর ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে