ব্রুকলিনের এক তরুণী অ্যানির জীবনকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে ‘আনোরা’ সিনেমার গল্প। তার জীবনের প্রেম, বিয়ে আর বিয়ের পরে দূর্বিষহ হয়ে ওঠা জীবনের গল্পের সিনেমাই এবার জয় করলো ৯৭ তম অস্কারের সেরা সিনেমার মুকুট।
আলোচক আর বিশ্লেষকরা মিলে চারটি সিনেমাকে রেখেছিলেন শীর্ষের কাতারে। মনোনয়নও পেয়েছিল সেগুলো। তবে, ‘কনক্লেভ’, ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’, ‘এমিলিয়া পেরেজ’কে পেছনে ফেলে সেরা হয়েছে ‘আনোরা’। সেই সঙ্গে পরিচালক শন বেকার পেয়েছেন সেরা নির্মাতার খেতাব আর ২৫ বছর বয়সী মিকি ম্যাডিসন হয়েছেন সেরা অভিনেত্রী।
এর আগে গত বছর কান উৎসবে স্বর্ণপাম জিতেছিল সিনেমাটি। তখনই থেকেই আলোচনায় ছিলো আনোরা।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে স্থানীয় সময় অনুযায়ী দোসরা মার্চ রোববার সন্ধ্যায় অস্কারের জমকালো আসরে সেরা এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তবে বাংলাদেশে আয়োজনটি উপভোগ করা যায় তেসরা মার্চ সকাল থেকে।
এবারের ৯৭ তম আসরে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন অ্যাড্রিয়েন ব্রডি। ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তার এই পুরস্কার। এর আগে চলতি বছর একই সিনেমার জন্য গোল্ডেন গ্লোবেও সেরা অভিনেতা হয়েছেন তিনি।
পুরস্কার গ্রহণ করে ব্রডি বলেন, ‘যুদ্ধ, নিপীড়নের দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা, ইহুদিবিদ্বেষ, বর্ণবাদ এবং অন্য বিষয়গুলোর প্রতিনিধিত্ব করতে আমি আবার এখানে এসেছি। আমি সবাইকে নিয়ে একটি সুখী পৃথিবীর জন্য প্রার্থনা করি।’
বলে রাখা ভালো ২০০২ সালে ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ সিনেমার জন্য সর্বকনিষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন ব্রডি। মাত্র ২৯ বছর বয়সে অস্কার জেতা ছিল এক অনন্য অর্জন। তারপর প্রায় ২২ বছর পর আবারও একই মঞ্চে অস্কার হাতে উঠলো তার। দুবার মনোনয়ন ও দুবাইর অস্কার জেতার রেকর্ডও তার।
এছাড়া পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন কিয়েরান কালকিন এবং পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন জোয়ি সালডানা।
সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেওয়া কালকিনের ক্যারিয়ার প্রায় দুই যুগের। তার অভিনীত ‘অ্যা রিয়েল পেইন’ সিনেমায় অভিনয় করে এবার তিনি অস্কার জয় করলেন।
মাঝে অবশ্য ব্যক্তিজীবন নিয়ে বেশ ঝামেলাতেই ছিলেন বলা যায়। অনেক কাজও ফিরিয়েছেন। তাই এবারের অস্কার জেতা তার ক্যারিয়ারে জন্য একটা গুরুত্ব বহন করে।
তিনি সিনেমার লেখক এবং পরিচালক জেসি আইজেনবার্গকে ধন্যবাদ জানিয়ে মঞ্চে বলেন, ‘এই সিনেমার জন্য ধন্যবাদ, তুমি একজন প্রতিভা।’
জ্যাক অঁদিয়ারের ‘এমিলিয়া পেরেজে’ সিনেমার জোয়ি সালদানা আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়া এক অভিনেত্রী।
হাতে অস্কারের ট্রফি নিয়ে পরিবারকে অস্কার উৎসর্গ করেন সালদানা। নিজেকে অভিবাসীর সন্তান হিসেবে গর্বিত বলে বর্ণনা করেছেন এই অভিনেত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি গর্বিত এবং অভিভূত। নারীর নীরব বীরত্ব এবং শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একাডেমিকে ধন্যবাদ।’
ফিলিস্তিনি তথ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’ সেরা তথ্যচিত্রের জন্য পুরস্কার জিতেছে।
এবার সেরা অ্যানিমেশন ছবি (স্বল্পদৈর্ঘ্য) হিসেবে অস্কার পেল ‘ইন দ্য শ্যাডো অব সাইপ্রেস’, আর ফিচার অ্যানিমেশন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ফ্লো’।
সেরা প্রযোজক হিসেবে অস্কার পেয়েছেন নাথান ক্রাউলি এবং লি স্যান্ডেলস উইকড। সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের জন্য অস্কার জেতেন ডেনিস ভিলেনিউভ।
কনক্লেভ চলচ্চিত্র সেরা রূপান্তরিত চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছে পিটার স্ট্রগান।
‘এমিলিয়া পেরেজ’ ছবিটির’ এল মাল’ গানের তিন সংগীতশিল্পী ক্লেমেন্ট ডুকল, ক্যামিল এবং জ্যাক অডিয়ার্ড সেরা মৌলিক গান ক্যাটাগরির অস্কারে ভূষিত হন।
বেস্ট কস্টিউম ক্যাটাগরিতে পুরস্কার ছিনিয়ে নিলেন উইকড’ ছবির ডিজাইনার পল টাজেওয়েল। সেরা মেকাপ এবং হেয়ারস্টাইল বিভাগে পুরস্কার জিতেছে গত বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’।
জেমস বন্ডকে নাচে গানে স্মরণ
এবারের অস্কারের মঞ্চে শ্রদ্ধা জানানো হয় জেমস বন্ড কে। তাও একেবারে নাচে গানে। দোজা ক্যাট, লিসা ও রে গানে গানে জেমস বন্ডকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। গানের সঙ্গে ছিল এ সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী মারগারেট কোয়ালির নাচ। অস্কার আয়োজনের শুরুতে এমন নাচ জমিয়ে দেয় পুরো আয়োজন।
১৯৭৩ সালের জেমস বন্ড সিনেমা ‘লিভ অ্যান্ড লিভ লিভ’-এর থিম সং ধরেন ব্ল্যাকপিংক গায়িকা লিসা, এরপর দোজা ক্যাট শোনান ‘ডায়মন্ডস আর ফরএভার’-এর থিম, সবশেষে রে পরিবেশন করেন ‘স্কাইফল’-এর গান।