পৃথিবীতে মানুষের কোনো অধিকার এমনি আদায় হয় নাই, অধিকার আদায় এবং প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে কঠিন আত্মত্যাগ আন্দোলন, সংগ্রাম, এবং রক্তস্নাত ইতিহাস। আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস উপলক্ষে “মানবাধিকার তথ্য পর্যবেক্ষণ সোসাইটি” MTPS এর গণমাধ্যমে দেয়া বাণীতে সংস্থা মহাসচিব এম.এস.খান একথা বলেন। তিনি সংস্থার পক্ষ থেকে বিশ্বের সকল শ্রমজীবীদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিন্দন জানান । একই সাথে তাঁদের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করেন। তাঁদের ন্যায্য দাবি ও অধিকারের প্রতি সমর্থন জানান।
এম.এস.খান বলেন, মহান মে দিবস আমাদের সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে শেখায়। মহান মে দিবস শ্রমিক শ্রেণীর ওপর নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখায়। মে দিবস তাদের প্রতিরোধ করতে শেখায়, যারা শ্রমজীবি মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তাই এই আন্তর্জাতিক মহান শ্রমিক দিবসে অনুরোধ আপনার আপনাদের অধিনস্থ শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন এবং তাঁদের নিয়মিত বেতন ও বকেয়া বেতন সহ সকল টাকা পরিশোধ করে দিন। ঠুনকো অজুহাতে বেতন-ভাতা ও প্রাপ্য অধিকার থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা আরো ভয়ংকর অপরাধ।
মহাসচিব আরো বলেন, একটি সুখী-সম্বৃদ্ধশালী নতুন বাংলাদেশ গড়তে সকলে একযোগে কাজ করতে হবে। যেখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য, বঞ্চনা, নির্যাতন ও নিস্পেষণ থাকবে না। “শ্রমিক বৈষম্য নিপাত যাক,/শ্রমিক অধিকার মুক্তি পাক”
তিনি আরো বলেন, শ্রমজীবী মানুষরা এক সময় ১০/১২ ঘন্টা কাজ করতে হতো, তারা ন্যায্য মজুরীর বৈষম্যের শিকার ছিলো!
তাই ৮ ঘন্টা কাজ, ও ন্যায্য মজুরীর দাবীতে আন্দোলন শুরু করে, ১৮৮৪ সালে এক দল শ্রমিক, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে তাদের দাবী কার্যকর করার জন্য মিল মালিকদের কে সময় বেধে দেয় ১৮৮৬ সালের ১ লা মে। কিন্তু মিল মালিকগণ এই দাবী মেনে নিলো না! ৪ঠা মে ১৮৮৬ সাল সন্ধ্যা বেলায় হাল্কা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগো শহরের হে – মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। শ্রমিকরা ১৮৭২ সালে কানাডায় এক বিশাল শোভাযাত্রার সাফল্যে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ হয়ে আজকের এই আয়োজন করেছিলেন। আগস্ট স্পীজ নামক একজন শ্রমিক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্য কথা বলছিলেন, এমন সময় হঠাৎ, অজ্ঞাত একজন লোক দুরে দাড়ানো পুলিশের কাছে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়! এতে এক পুলিশ সদস্য মারা যায়। পুলিশ বাহিনী তৎক্ষনাৎ শ্রমিকদের উপর হামলা শুরু করে! এতে ১১ জন নিরীহ শ্রমিক শহীদ হন। পুলিশ হত্যা মামলা হয় মামলায় প্রহসনমূলক বিচারে আগস্ট স্পীজ সহ সাত জন শ্রমিকের ফাঁসির আদেশ দেন। একজন আগেই আত্মহত্যা করলে ৬ জনকে ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসি কার্যকরের সময় আগস্ট স্পীজ বলেছেন “আজ আমাদের এই নিঃশব্দতা, একদিন তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষায় অধিক শক্তিশালী হবে “।
২৩ জুন ১৮৯৩ সালে ইলিনয়ের গভর্ণর অভিযুক্ত হন, আটজনকেই নিরপরাধ ঘোষণা দেওয়া হয়! রায়টের হুকুম প্রদান কারি পুলিশ কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। অজ্ঞাত বোমা বিস্ফোরণকারীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। মানুষের ন্যায্য দাবী কখনোই বৃথা যায় না। শ্রমিক জনতার সকল দাবী আন্দোলনের মাধ্যমেই আদায় করে নিতে হবে।।
লেখক: মহাসচিব, “মানবাধিকার তথ্য পর্যবেক্ষণ সোসাইটি”MTPS. কেন্দ্রীয় কমিটি।