মোংলায় এখন প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদক প্রতিরোধে পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝে মধ্যে মাদক বিরোধী সভা-সমাবেশ করলেও এতে কোন লাভ হচ্ছে না।
পুলিশ-প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। হাত বাড়ালেই মিলছে নানা ধরণের মাদকদ্রব্য। এক সময় গাজা হুইস্কি, বাংলা মদ, বিয়ারের রাজত্ব ছিলো মোংলায় । পাশাপাশি এখন ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবার রাজত্ব চলছে পুরো মোংলা উপজেলা জুড়ে।
আইনশৃঙ্খা কমিটির সভায় মাদক প্রতিরোধ নিয়ে সবাই ভাল ভাল কথা বলে দায় এড়িয়ে যায়। তবে বাস্তবে এর কোন ফল পাওয়া যায় না। এখন প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রসাশন উদ্যোগ নিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে মাদকের বিস্তার কমানো যাবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একজন মাদক ব্যবসায়ী আটক করা হলে অনেকে তদবির শুরু করে। পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করা হয়। তো বিভাবে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করবে পুলিশ।
জানা গেছে, মোংলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর গাঁজা, বাংলা মদ, হুইস্কি ও বিআরের পাশাপাশি হরদমে চলছে মরণ নেশা ইয়াবা। যা প্রকাশ্যে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। ইয়াবার ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে ভাল ভাল পরিবারের সদস্যরা ও উঠতি বয়সি তরুনরা।
তাই স্থানীয়রাও ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন না। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা সবাই অল্প বয়সী। এরা যে মাদকের ব্যবসায় জড়িত তা হঠাৎ কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ এরা সবাই ভাল সচ্ছল ও ভালো পরিবারের সন্তান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, মাদকের ভয়ানক থাবায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের আল্প বয়সী ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। তাদের মতে নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে বাড়ছে মাদক সেনবকারীর সংখ্যাও সাথে মোবাইল জুয়া তো রয়েছে।
এসব মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক তুলে দিচ্ছে উঠতি বয়সী যুবকদের হাতে। যার মধ্যে বেশিভাগ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। মা-বাবার চোঁখের সামনে মাদকাসক্ত হচ্ছে যুবক ছেলে। এ কষ্ট কিভাবে মেনে নিবে অভিভাবকরা। তাই মাদকাসক্ত সন্তানদের চরম দু:শ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে অভিভাবকরা। যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
মোংলা পৌর শহরের কবর স্থান রোড, শ্রমিক আবাসিক এলাকা, বন্দরের পরিত্যাক্ত ভবন, নতুন কলোনী সংলগ্ন তিন তলা ভবন, বালুর মাঠ, ছাড়াবাড়ি হেলথ, মেরিন ড্রাইভ রোড, ১ নং জেটি সংলগ্ন টিন শেড, তাহেরের মোড়, মাদ্রাসা রোড, শামসুর রহমান রোড, কুমারখালি, মাছমারা, নারিকেল তলা আবাসন এলাকা, রাজ্জাক সড়ক, বটতলা, কানাইনগর ক্যাফের পাশে ফাকা বিলে তিশার বাড়িতে, সিগনাল টাওয়ার এলাকা, কানাইনগর, মনপুরা বিজ্র সংলগ্ন, চৌকিদারের মোড়, মোংলা পৌর শহরের নতুন বাসষ্টান্ড, জয় বাংলা সড়ক, শাহজালাল পাড়া, মিয়া পাড়া, পৌর সভার পানির প্রজেক্ট এলাকা সংলগ্ন পুকুর পাড়, কবর স্থান পুকুর পাড়, শ্রমিক সংঘের মাঠ সংলগ্ন কৃষ্ণচুরা গাছ তলা, পিকনিক কর্নার, দিগরাজ বালুর মাঠ, দিগরাজ বাস স্ট্যান্ড সহ বহু স্পটে এ সকল মাদক কেনাবেচা হয়ে থাকে যা অনুসন্ধানে পাওয়া যায়। এছাড়া আরো জানা যায় ৮ থেকে ১০টি স্পট দিয়ে কৌশলে মোংলায় মাদকের চালান ঢুকানো হয়। মোংলা বাসস্ট্যান্ড, লাউডোব খেয়া ঘাট, বাজুয়া খেয়া ঘাট, জিউধারা, বৌদ্বমারি, বানিশান্তা ঘাট, রামপালের পেড়িখালি, বুড়িরডাঙ্গা ও পাকখালির খেয়া পারাপার এলাকা থেকে এ মাদকের চালান গুলো মোংলার বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের কাছে পৌছে দেয়া হয়।
সম্প্রতি পৌর শহরের রাজ্জাক সড়কের মাদক ব্যাবসায়ী তিশার বিরুদ্বে মাদক নিয়ে লেখালিখির কারণে মোংলার স্থানীয় সাংবাদিক মাসুদ রানা ( রেজা মাসুদ) কে মোবাইলে হুমকি ধামকি দেয়া হয় যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও রেকডটি মোংলার উপজেলা জুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে । এ বিষয়ে তিনি মোংলা থানার ওসিকে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানান। এছাড়া মাদক ব্যাবসায়ীরা হেয় করতে তার বিরুদ্বে তার ছবি ও নাম ব্যাবহার করে ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে তার সুনাম ক্ষুন্ন করার চেস্টায় লিপ্ত রয়েছেন এ বিষয়ে দিনি মোংলা থানায় সাধারণ ডাইরি করেছেন বলে জানায় সাংবাদিক রেজা মাসুদ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সুমী বলেন, বর্তমান যুব সমাজকে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে দূরে রাখতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার জন্য বলা হয়েছে।
এছাড়াও মোংলা উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে মাদকদ্র্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাগেরহাট, মোংলা থানা পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে মর্মে তিনি জানান।
তিনি বলেন আরো বলেন , আমরা মাদক নির্মূলে দ্রুত একটি মোংলা থানার ওসি কে অবহিত করে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর চেস্টা করবো।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, মাদকের সাথে পুলিশের কোন আপোষ নেই। খোঁজ পেলেই এসব মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হচ্ছে বা হবে । মাদকের ব্যাপারে মোংলা থানা পুলিশ কঠোরভাবে মাঠে কাজ করছে। যে কোন মাদক ব্যবসায়ীকে পাওয়া মাত্রই আটক করা হবে।